#তুমিময়_প্রেম🥀♥,02,03,04
#Fabiyah_Momo
#পার্ট_দুই🍁
“মুগ্ধ!!!!” বলে চিৎকার দিয়ে দলবলে দৌড়ে এলো। তরল বেগে রক্ত পড়ছে। আঘাত পেয়েই মুগ্ধ সেন্সলেস!!!
মম হকিস্টিক ফেলে মুগ্ধের আহত নিরুপায় দৃশ্যপট সিচুয়েশনটা একবার অবলোকন করলো, অতঃপর হাটা দিলো ক্যাম্পাসের বাইরে, মেইন গেটের ওখানে। সবাই ড্যাবড্যাবিয়ে মমকে দেখে যাচ্ছে…মম বলিষ্ঠ বিশ্বাসে গলায় ওড়না ঠিক করে চলে যেতে নিলে মেইন দরজায় পাহারা দেওয়া পন্ঞ্চার্শোধ্ব বুড়ো দাড়োয়ান বলে উঠল-
–শুনেন,
মম বৃদ্ধ লোকের সন্নিকটে গেল। নরম গলায় মুখের তেজী ভঙ্গিমা পরিবর্তন করে বলল-
–জ্বী চাচা বলুন, কিছু বলবেন?
বৃদ্ধ মাথার খাদি টুপিটা ঠিক করে গলা ভিজিয়ে বলে উঠলো-
–আপনার নাম কি জানা যাইবো? মনে কিছু না করলে?
–অবশ্যই। আমার নাম মম। নতুন বর্ষের স্টুডেন্ট। ডিপার্টমেন্ট অফ কেমিস্ট্রি।
–ও আইচ্ছা আইচ্ছা। একটা কথা কই মা? বাপের বয়সী ভাইবা পরোখ করিও।
মম মুখে লম্বা হাসি টেনে প্রসারিত নরম সুরে হ্যা বোধক জানালো।
–মা একটু সামলায়া থাইকো। জমানা ভালো না, পোলাপাইন মেলা খারাপ। যারে তুমি মাথা ফাটায়া দিছো…হেয় কইলাম বড় সাবের ছেলে। টিসি দিবার পারে তোমারে। মাফ টাফ চাইয়ি নিও।
মম বৃদ্ধের উপদেশবাচক কথায় হালকা হেসে দিলো, হাসির অর্থ বৃদ্ধ না বুঝলেও মম পরিস্থিতিটা পরিস্কার বুঝতে সক্ষম। সে বৃদ্ধের বার্তায় অভয় দিয়ে বলে উঠলো-
–চাচা আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি আপনি আমাকে উপদেশ দিয়েছেন। ধন্য আমি। শুকরিয়া আপনাকে, তবে টেনশন নিবেন না। আমি ক্যাম্পাসে পড়তে এসেছি কারোর পা ধরে মাফ চাইতে নতুবা গোলামি করতে আসিনি। সামনের সিচুয়েশন দুর্গতি বয়ে আনতে পারে পুরোপুরি নিশ্চিত, আমার এসবে ভয় নেই চাচা। আসি। আসসালামুয়ালাইকুম।
বৃদ্ধ দারোয়ান সালামের উত্তর নিচু থেকে নিচুস্তরে নামিয়ে বলল, যেটা মমর কানে কি পিপড়ার কানেও আসবেনা। মম তৎপর ভাবে প্রস্থান করেছে তারা স্বীয় বাসা নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে, যা ঢাকা থেকে এক ঘন্টার দূরে অবস্থিত। মমর শেষ চিহ্ন টুকুতে একপানে চেয়ে বৃদ্ধ মাথা চুলকিয়ে বলে উঠলো-
–মাইয়া বড়ই টাউড!! একলাই একশো।
কলিংবেল বাজিয়ে অপেক্ষা করছি কখন আমার আম্মাজান দরজা খুলে স্বাগতম জানাবেন। নিশ্চিত জামার হাল দেখে ঝাড়ুর বারি বখশিশ মেরে ননস্টপ ভ্যা ভ্যা স্টার্ট করে দিবেন…কমন ব্যাপার! উফ আই উইল বি গন! ফাজিল বজ্জাত বড়লোকের চ্যাংড়া শয়তান!আরো দিতাম কয়টা ঘাড় ধরে! ছেড়ে দিলাম। ফাস্টদিনেই ইজ্জতের কাবাব ফালুদা বানিয়ে প্লাস্টিক মেরে লাটে উঠানোর মানেই হয়না। সময় যাক! ঠেলা বোঝাবো!আম্মু দরজা খুললেন, এক তীক্ষ্ম ধারালো শিং গজানো ডায়নির মতো চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছেন, তারপর সুরর…
–দামরি ধিংড়ি মেয়ে! আবার কার গলায় মাদুড় পেচিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছিস! গতবার মাফ করেছিলাম এবার ছাড় দিবো না। বল কি করেছিস! জামার অবস্থা নোংরা কেন!
জুতা খুলে ভেতরে ঢুকলাম আমি, আম্মুর হর্ণ বাজানো বিদঘুটে চিল্লানোর ঘ্যানঘ্যাননি শব্দে কানে তব্দা লাগিয়ে দিচ্ছে, জুতার আলমারিতে জুতাজোড়া রেখে গেলাম আমি কাপড় চেন্জ করতে। ততক্ষণে বাড়ি মাতিয়ে শেষ আম্মু! কার সাথে পাঙ্গা মেরে জামার দশা ছুটিয়ে এসেছি। কার গালের চামড়া ঠাটিয়ে পুরো লালে বানিয়ে এসেছি…ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।এর আগে কলেজের র্যাগ ডে’র দিন রাস্তার এক হারামজাদাকে ধরে পিটিয়েছিলাম জুতা ছিড়ে…এরপর বাসায় এসে আম্মুর কাছে জুতা ছিড়ার বকুনি।। রুমের দরজা চেপে পর্দা টেনে ওয়ারড্রব খুলতেই কর্কশকণ্ঠ ভেসে আসলো, আচ্ছা বকাঝকা করছেন আমাকে। প্রতিবারের মতো এবারও এক কানে ঢুকাচ্ছি অন্যকানের ছিদ্রপথে ফুরফুর করে বের করে দিচ্ছি।
ময়লা পোশাকে গোসল ছাড়া থাকা আর গোবরে হাত ডুবিয়ে ভু ভু শব্দ করা এক বিষয়। এই দাড়ান! গোবরে হাত ডুবিয়ে কেউ মুখ দিয়ে ভু ভু শব্দ করে? হাতের সাথে মুখের ভু ভু শব্দের কি কানেকশন? গোবরের যা গন্ধ না! ছি!! খাচ্চর মাইয়া কথা বলবি… বেক্কলের মতো কথা বলতেছিস কেন? ফোন বাজলো, ফুল ভলিউমে ডিসগাস্টিং উপায়ে। চরম বিরক্তিকর ! ভেজা চুলে তোয়ালে ঘষে বিছানার উপর ফোনের দিকে হাত বাড়ালাম। ‘আননোন’ উঠে আছে, অর্থাৎ অজ্ঞাত পরিচয়ধারী কোনো ব্যক্তি মানুষের কল। করলাম রিসিভ-
ওপাশ থেকে,
–হ্যালো, আমি কি স্নিগ্ধা মমর সাথে কথা বলছি?
পুরুষ মোটা ঘ্যারঘ্যার কন্ঠ, কলের বিপরীতে আমাকে চাচ্ছে,
–ইয়েস আমি মম বলছি। কে আপনি? কোথা থেকে কল করেছেন?
–আমি প্রফেসর আসাদ জামান বলছি, সামার ফিল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে। আই হোপ, চিনে গেছো কে এবং কোথা হতে বলছি।
–হেড স্যার? আসসালামুয়ালাইকুম স্যার।
–ওলাইকুমসালাম। নিউ স্টুডেন্ট অলসো এ্যা নিউকামার অফ দ্যা ডিপার্টমেন্ট। ডু ইউ নো, ইউ আর রাস্টিগেটেড?
–হোয়াট! রাস্টিগেটেড? স্যার মানে কি এসবের? হোয়াটস মাই ফল্ট?
–নো রিজন। আমার কাজ ছিলো তোমায় ইনফর্ম করা এন্ড গেট রেডি ফর রাস্টিগেট নোটিশ।
–স্যার প্লিজ…স্যার…
টুট টুট আওয়াজে স্যার কেটে দিলেন কল। তোয়ালে ছুড়ে ইসরাতকে কল করলাম। নাম্বার বিজি, নট এভেইএবেল অবস্থা। তোয়ালে দিয়ে চুল না মুছার পরিনতি আম্মুর আরেকদফা ধমক সেটা কলের তালে ভুলে বসেছি। একনাগাড়ে কলের পর কল ‘ইসরাত’ নামক বেস্টফ্রেন্ড জন্তুকে। সে রিসিভ করছেনা। আমার কাছে আরেকটা কল আসলো, যাকে আমি আগের মতোই ‘আননোন’ ভ্যালিডে দেখছি, তাকেও চিনি না।
–হ্যালো কে বলছেন?
–কাল ক্যাম্পাসে আসো হাইপার! ওয়েট এন্ড ওয়াচ!
.
.
হসপিটালে স্পেশাল কেবিনে দাড়িয়ে আছে সবাই। মাথায় ব্যান্ডেজ লাগিয়ে আধশোয়া হয়ে ইনজেকশন নিচ্ছে রাদিফ মুগ্ধ। জেনি কেবিনের মধ্যে পায়চারি করছে, ছটফটে অবস্থা কখন সে হকিস্টিক দিয়ে মাথা ফাটানো কালনাগিনীকে গলা চেপে শ্বাসরুদ্ধ করবে। রিমি ফোনের কলে হুংকার বাজিয়ে ব্যস্ত। তন্ময় নতুন আসা স্টুডেন্টের ব্যাপারে নানা দিক নিয়ে আলোচনা করছে। তৎক্ষণাৎ কেবিনের দরজা খুলে হুরমুড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো রামিম। হাটুধরে কুনো হয়ে হাফাচ্ছে সে…মুগ্ধ ডক্টরকে শক্ত চোখে ইশারা করলো, ডক্টর মুগ্ধের ভাবার্থ বুঝে চলে গেল কেবিন ছেড়ে। রামিমের হাপানোতে ইরিটেট ফিল করছে জেনি, পায়চারি থামিয়ে হাতভাজ করে রামিমের সামনে দাড়ালো।
–রামিম টাস্ক করেছিস? অর নট?
রামিম পকেট থেকে টিস্যু নিয়ে মুখটা মুছে মুগ্ধের বেডের ওখানে বসলো-
–বস! সব ডিটেইলস নিয়ে আসছি!!
মুগ্ধ একটা হাসি দিল! রামিমের সাথে হাই ফাইভ করে বলল,
–নাও দ্যা গার্ল ইউল বি গন ডুড!
-চলবে
#তুমিময়_প্রেম🥀♥
#PART_03
#FABIYAH_MOMO
আম্মু বিছানার ঝাড়ু নিয়ে সারা বাড়ি দৌড় লাগিয়েছে!! আমি ধাওয়া খেয়ে চোরের মতো একবার সোফা থেকে লাফিয়ে টেবিলে উঠছি, আরেকবার আম্মুর ঝাড়ুর ঠেলা হটিয়ে রুমের পর রুমে ছুটছি! মানে আজকে আমি শেষ ভাই!! চুল কেটে দিছে চ্যাংড়া শয়তানে!আর বাশের লম্বা ঠেলা খাচ্ছি আমি!
–তুই আজকে বলেই ছাড়বি কার সাথে মাতলামি করছোস! তোরে আমি কতদিন বলছি কাপড় চোপড় নোংরা করবি না! আমি তোর কাপড়ের দাগ উঠাইতে উঠাইতে হাতের চামড়া লাল করে ফেলি! তোর কানে বাতাস ঢুকে না! দাড়াইস তুই! তোর কপালে যদি ঝাড়ু না ভাঙছি! তোর একদিন কি আমার একদিন!
আমি দৌড়াতে দৌড়াতে হাফিয়ে কাহিল, আম্মু আমার পিছু পিছু ঝাড়ু নিয়ে দৌড়ানি দিচ্ছে!!কত করে বোঝাচ্ছি আমি কারোর সাথে উচুনিচু কিছু করিনি। ভালো মানুষের মতো বাসায় আসছি। রাস্তায় এক বিলাতি কুত্তা পথ আটকে বায়োভেন্ট করেছিলো… আমি যেয়ে হাতটান করে এসেছি!!ব্যস!! কিন্তু নাহ্…উনি আমার কথা শুনলেন না শুনলেন ভুট্টু সাহেবের কথা!! ডায়লগের একচুয়েল প্রার্থী ছিলো শেখ মুজিবুর রহমান!! বাট উনি পাকিস্তানি ভুট্টো সাহেবের কথা বললেও আমি এখানে আম্মুর দোটানায় ঝাটার বারি ইঙ্গিত করছি!! দৌড়াতে যেয়ে পিঠের উপর ঝপ করে ঝাড়ুর এক বারি পড়লো! টেস্ট পুরা ঝাল মশলার মতো! আম্মু এখনো বাঘের মতো আরেকদফা দেওয়ার জন্য হাত উচিয়ে বেকেছে….আমিও রুমে যেয়ে দরজা লাগিয়ে ঠাই!! উহআহ্করে হাত উল্টিয়ে পিঠের জ্বলা জায়গায় টাচ করার চেষ্টা করছি। ওইদিকে আম্মু দরজা ধাক্কিয়ে “আইলা” ঝড়ের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে ধূলিকনা বানিয়ে দিচ্ছেন! দরজা খুললে আম্মু ঝপাঝপ ঝাড়ুর আনলিমিটেড বারি দিবেন সিউর!
–দামরি কোথাকার! তোর মতো বয়সে আমি মায়ের সব কাপড় ধুয়ে, থালাবাসন ধুয়ে, কাটাকুটা করে কাজ এগিয়ে দিতাম! তুই ধিংরি হইছিস একটা মহারানি! নায়িকা পাভেলা! পায়ের উপর পা তুলে খাও ! টিভির রিমোট ধরে বসো!
আমি বিছানায় ল্যাং ছেড়ে শুয়ে পড়লাম। ক্লান্ত সুরে বলে উঠলাম-
–আম্মু তুমি বিশ্বাস করলে করো…না করলে বসে থাকো। আমি তোমাকে লাস্ট বার বলতেছি রাস্তার এক বিলাতি কুত্তারে চটকনা মারতে যেয়ে পিছলা খেয়ে কাদার মধ্যে পড়ে গেছি, ফলাফল আমার ধৌত পরিস্কার ইস্ত্রি করা জামাখানা কাদার সৌন্দর্যে গলাগলি করে ফেলছে। আর এখন তুমি ঝাড়ু নিয়া ঘর পরিস্কার না করে আমার পিঠের চামড়া জলিয়ে দিতেছো।
কিছুক্ষণ আরো বকবক করে দরজার ওপাশ থেকে চলে গেল আম্মু।
.
.
সকালে রেডি হয়ে ভার্সিটি গেলাম, হেড স্যার আমাকে রেস্টিগেট লেটার আনতে রিকুয়েস্ট করেছেন। কিন্তু আমি ভার্সিটিতে যাচ্চি ঠিকই ওই বিলাতি কুত্তার ঠাট্টা মেরে ইজ্জত মেরে দিতে। কাল ক্যাম্পাসে আমাকে র্যাগিং নিয়ে যা টর্চার করলো! চুল কেটে দিলো! আমি আজকে ছাড়বোনা।
সকালে মমর আম্মু রান্নাঘরে কাটাকুটার জন্য ছুড়ি খুজছিলেন। উনি সবজি কুটে চুলোয় রান্না বসাবেন বলে দেড়ঘন্টা ধরে ছুড়ির হদিস তন্নতন্ন করে পুরো বাড়ি খুজছেন কিন্তু পেলেন না। চোর কি তাহলে ছুড়ির চুরি করলো? কি সাংঘাতিক!! চোর দেখি গতি পাল্টিয়ে ছুড়ি চুরি করতে লেগেছে!! মানুষ খুন করবে নাকি! পরে তো ছুড়ির মালিকানাধীন হিসেবে মমর আম্মুকে গ্রেফতার করবে পুলিশ!!
মুগ্ধ তার হান্টার’স গ্যাং নিয়ে সেকেন্ড ফ্লোরের একটা ক্লাসরুমে আড্ডা দিচ্ছে। জেনি, রিমি, তন্ময়, আহাদ, নাসিফ সহ হৈ হুল্লোড়ে হাসিঠাট্টা। হুট করে দৌড়াতে দৌড়াতে দরজাটা ঠাস করে খুলে হাফাতে হাফাতে ঢুকলো রামিম। কপালে ঘামের ছড়াছড়ি, মুখ খুলে হো হো করে শ্বাস ছাড়ছে। মুগ্ধ হাই বেন্ঞ্চে বসে কপালে ভাজ ফেলল, জেনি রামিমের পায়ে হালকা লাত্থি দিল,
–হেই রামিম! হোয়াট হেপেন্ড! এভাবে রাস্তার কুকুরের মতো জিহবা বের করে হাপাচ্ছিস কেন! সে সামথিং!
–জেনি, জেনি ওই মেয়েটা…..মাথা ফাটানো মেয়েটা….ওই মেয়ে ক্যাম্পাসে মুগ্ধকে খুজছে…
জেনি বেন্ঞ্চের লোহাগাড়া পায়ে লাত্থি দিল,
–ড্যাম! হোয়াট রাবিশ! স্টুপিড মেয়েটার সাহস কি করে হয় মুগ্ধকে খোজার! হোয়াট দ্যা বুলসিট সি ইজ!
নাসিফ সিগারেটে এক টান দিয়ে তন্ময় কে খেতে দিলো, ধোয়া ছেড়ে বলল-
–ব্রো, ইফ ইউ গিভ দ্যা পারমিশন মে আই? তুলে এনে গেম ফিনিশ করে দেই? হোয়াট সে?
–অলরাইট! তুলে নিয়ে আসো ডুড! আমিও দেখতে চাই মেয়েটা একচুয়েলি কি চিজ আছে!
রামিম, নাসিফ, তন্ময়, আহাদ গেল….সাথে মজা নিতে রিমিও গেল। ক্লাসরুমের মধ্যে থাকলো মুগ্ধ ও জেনি। হাত মোচড়াচ্ছে জেনি, বুঝাচ্ছে মেয়েটা আসলেই দিয়ে বসবে কয়েক চাবুক থাপ্পর! হুট করে খালি ক্লাসরুমে ঢুকলো কেউ, ওড়নার সাহায্যে মুখ ঢাকা, চোখ দুটি ছাড়া কিচ্ছু দেখা যায় না। একহাত পিছনে লুকিয়ে রেখেছে, অপর হাত দিয়ে জেনিকে আঙ্গুল উচিয়ে বাইরে যেতে বলছে। জেনি রেগেমেগে আগুন! প্রথম কোনো মেয়ে এসে তার উপর আঙ্গুল দেখিয়ে বাইরে যেতে বলছে!! কে এই মেয়ে? ওড়নার আড়ালে কে সে? জেনি ও মুগ্ধ দুইজনে গোলমাল পাকিয়ে ফেলছে, তাদের প্রাইভেট আস্তানার আড্ডার আসরে কে মুখ ঢেকে এলো।
মুখ ঢাকা মেয়েটা এগিয়ে আসলো।লুকানো গুটানো হাতটা বের করতেই জেনির দিকে তাক করে ধরলো! মুগ্ধ ঘটনাক্রমে হাই বেন্ঞ্চ থেকে নেমে দাড়িয়ে পড়েছে। জেনি তোতলিয়ে বলল-
–এএএই…মেমেয়ে, ককে তুতমি….ছুছুড়ি নননামাও ববলছি…
ছুড়ি হাতে মেয়েটা এক কদম এগোলো, জেনির অবস্থা ছুড়ি দেখেই কাপাকাপি। এখনি বুঝি জেনিকে ছুড়িকাঘাত করে ছাড়ে!! মুগ্ধ জেনির কাছে যেতে নিলে মেয়েটা তাকেও ছুড়ি তাক করে থামতে বলল!
–নো মিস্টার! ডোন্ট ডু! ওর দিকে এক পা এগোতে গেলে ছুড়ি বসিয়ে গা ছিদ্র করে দিব! জায়গা মতো থাক্! আর তুই? (জেনির দিকে তাকিয়ে)তুই আমার দিকে তাকা! এক্ষুনি কানে হাত দিয়ে রুম থেকে পালা! নইলে তোর চামড়া ছিড়ে কুত্তাকে খাইয়ে দিবো! এক……দুই…….ততি
‘তিন’ বলার আগেই জেনি ভোদৌড়! ওকে আর পায় কে! মেয়েটা ছুড়ির তাক নামিয়ে নিল। পাকরাও করলো মুগ্ধের চারিদিকে ঘুরঘুর করে। মুগ্ধ ভ্রু কুচকে গম্ভীর হয়ে আছে।
–হেই ইউ!
–স্টপ! নট ইউ! নাম আছে আমার! শুনছিস! ইউ মিউ করবিনা!
–ওয়াও ! ‘তুই’ ? মাথা ঠিক আছে?
–তুই আমার কোন অগাধ জলের পানি রে তোকে ‘তুই’ বলে ডাকা যাবে না! তোর মতো বান্ডুল্লা বিলাতি কুত্তাকে ‘তুই’ ছাড়া আমার মুখে ভাষা আসে না বুঝছিস!
–একবার জাস্ট ফেসটা দেখি! বায় গড ! নাম ঠিকানা কোথায় ভেনিশ করবো! নিজেও জানবে না! তুমি মেবি ভুলে গেছো কার সামনে দাড়িয়ে হুমকি দিচ্ছো!
–তুই একটা জাওড়া! বিলাতি কুত্তা শয়তান বজ্জাত! র্যাগিংয়ের নামে তুই আমাদের সাথে অন্যায় অত্যাচার করবি! আর আমরা দিনের পর দিন চুপ মেরে তামাশা দেখবো! কি ভাবছিস! ফাজলামির দ্বারপ্রান্তে তোদের কেউ সাইজ করবে না? তুই আমার স্টুডেন্টশিপ খাইছিস! ছাড় দিবো? জুতা দিবো!
মুগ্ধ সুযোগ বুঝে দিলো এক টান! ওড়না মুখ থেকে সরে বাধন খুলে বেরিয়ে আসলো মেয়েটার চেহারা। মুগ্ধ থ হয়ে গেছে। ওরই মাথা ফাটানো মেয়েটা ফের হমকির দরজা খুলেছে।
— তুমি !
মম চুলের এলোমেলো ভাব ঠিক করতে লাগলো যেটা মুগ্ধের ওড়না টান দেওয়ার ফলে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। ছুড়ির মোটা হ্যান্ডেলটা মুখে আকড়ে চুলের খোপা করতে লাগল সে। কোনো কারন ছাড়াই বাকা হাসলো মুগ্ধ। অপলক চাহনিতে হাসছে সে। বিষয়টা দেখেই খোপা পেচানো থমকে গেল মমর, কপাল কুচকে ছুড়ির হ্যান্ডেল মুখে নিয়ে চোখ নাচিয়ে মুগ্ধকে ইশারা বোঝালো- ”কি হয়েছে তাকিয়ে কেন?”
মুগ্ধের ধ্যান ভাঙতেই সে মাথা নাড়াচাড়া দিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল। মনে মনে বলল,
–ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম? হোয়াট? তাকিয়ে স্মাইল দিচ্ছিলাম? হাও শেম মুগ্ধ! শেম অন ইউ!
মাথায় খোপা পেচিয়ে মুখ থেকে ছুড়ি নিয়ে হাতের পাচ আঙ্গুলে ধরলো মম,
–ওই তাকা এদিকে ! তাকা বলছি! তুই ডিসেন্ট ছেলের মতো হেড স্যার আসাদ জামানকে বলবি আমার টিসি ক্যানসেল করতে! না করলে এই ছুড়ি দেখছিস না? ক্যাচ করে ঢুকিয়ে মাংস খুবলে দিবো! কাল সকাল পযর্ন্ত টাইম দিলাম! টাস্ক যেন হয়ে যায়। তোর সাঙ্গুদের বলিস আমার রাস্তা ছেড়ে কথা বলতে! নেক্সটে কোনো বলার অপশন দিবো না! ডিরেক্ট এ্যাকশন! ক্লিয়ার? বায় !
মম ঝাঝালো গলায় মুখবানী শুনিয়ে ছুড়িটা নিয়ে অভিনয় করে গলায় জবাই করার দৃশ্য বোঝালো, বলল- “বুঝছিস তো? জবাই করে গলা কেটে দিবো! মাথায় থাকে যেন”
হেনতেন দলের র্যাগিং লিডারকে থ্রেড দিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলাম। সেকেন্ড ফ্লোরের তিনটা ক্লাস পেরিয়ে যেতেই চোখে পড়লো হেনতেন দলের চ্যাংড়া চ্যালাগুলো হন্তদন্তে এগিয়ে আসছে। আমাকে দেখেই যার যার স্ব স্থানে ফ্রিজড হয়ে দাড়ালো। রামিম হা হয়ে তন্ময়কে কনুই গুতিয়ে কিছু একটা সায় বোঝালো। বাট আমি আমার মতোই ওদের সাইডে ফেলে চলে আসি।
সন্ধ্যা ছয়টা। ছোট বদমাইশের সাথে ফোনের এ্যাপসে লুডু খেলছি। আম্মু আমার সাথে সকাল থেকে কথা বলা বন্ধ করে রেখেছেন। কারন, ওই জামার নোংরা আর চুলের এক তালু পরিমান সাথে না থাকা। চুলের যত্ন আমার চেয়ে বেশি আম্মু পরিচর্যা করেন। বড্ড শোকাহত আম্মু!! ফোনের এ্যাপসে লুডু খেললে মজা একটাই ধুমধারাক্কা পাকা গুটি খাওয়া যায়। বর্তমানে ছোট ভাইয়ের সাথে সেটাই চলতেছে। ওর পাকা গুটি খাবো ওমনেই ইসরাতের কল। কেটে দিলাম। আঙুল ফুটিয়ে আবার পাকা গুটির খাওয়ার জন্য রেডি হলাম কলের সাগর বানিয়ে দিচ্ছে ইসু(ইসরাত)! বিরক্তির শরবত গুলিয়ে ধরলাম কল-
–দোস্ত দোস্ত দোস্ত তুতুই বাসার নিচে নাম… তাড়াতাড়ি নিচে নাম দেরি করিস না দোস্ত….জীবন মরনের সওয়াল দোস্ত…..নিচে নাম….ও বরবাদ করে দিবো দোস্ত….নিচে নাম প্লিজ
-চলবে
-Fabiyah_Momo
#তুমিময়_প্রেম🥀♥
#PART_04
#FABIYAH_MOMO🍁
–দোস্ত দোস্ত দোস্ত তুতুই বাসার নিচে নাম তাড়াতাড়ি নিচে নাম দেরি করিস না দোস্ত….জীবন মরনের সওয়াল দোস্ত…..নিচে নাম….ও বরবাদ করে দিবো দোস্ত….নিচে নাম প্লিজ!!
একটুও সুযোগ পেলাম না আমি কলের বিপরীতে ইসুকে বলবো, “কি হয়েছে?”। ও কেটে দিলো। ছোট ভাই আমার সন্দেহের নজরে ছোট চোখে ঘটনা বুলাচ্ছে। আমি ওর মাথায় চাট্টি মেরে বললাম,
–কিরে শয়তান! তোর পড়া নাই! লেখা নাই! কেমনে তুই লুডুর জন্যে হন্য হয়ে আছিস!যা পড়তে বস যা!
মাথায় থাবড়া খেয়ে ঠোট ফুলিয়ে ও চলে গেল, দরজায় তাকিয়ে আমদানি দুশমনের মতো খাজুরা কি কি বললো ও-ই জানে। আমি গলার ওড়না টেনে মাথায় ঘোমটা দিলাম। আম্মুকে শুনিয়ে জোরে বললাম,
–ইসরাত নিচে ট্যামলা(টমি) কুত্তার দৌড়ানি খাইছে, আমি ছাড়িয়ে নিয়ে আসতেছি। বাসার কেউ যেন আমার তলব না বসায়।
জুতা পড়ে নিচে গেলে ইসরাত আমাকে টেনে ধরে বাসার গলির রাস্তায় এনে দাড় করায়। আঙ্গুল উঠিয়ে রাস্তার ওপাশে থামানো কালো গাড়িটায় দেখায়। ওই বিলাতি কুত্তা চ্যাংড়া শয়তান গাড়ির দরজায় পিঠ লাগিয়ে হাত ভাজে দাড়িয়ে আছে। ডেকির উপর নাসিফ বসে সিগারেটে মধ্যে টানের পর টান ফুকছে। রামিম সুপারম্যানের মতো কোমরে হাত দিয়ে কামলার মতো দাড়িয়ে আছে। পুরাই একখান কামলা! ইসরাতের কবজি ধরে খামচি মেরে বলি,
–খাচ্চর মহিলা! এই সন্ধ্যায় আমাকে চামার,কামার, চ্যাংড়া দেখানোর জন্য নিচে ডাকছিস! তুই জানিস আমার কত্ত স্বাদের পাকা গুটিটা খেতে নিছিলাম! ফালতু বেডি!
ইসরাত “আহ্ মম ছাড়” বলে হাত সরিয়ে নিল,
–তুই চোখ মেলে দেখছিস তোর বাপ এসে দাড়ায়া আছে! তোর বাসায় যদি একটাও পৌছায় কি সর্বনাশ ঘটবো, জানোস!
মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো! ওরা আমার বাপ! আরে চাক্কু একটা এইদিক দিয়া ঢুকালে ওইদিক দিয়া শেষ, আমাকে বুঝায় বাপ! রামিম দ্যা সুইপারম্যান! থুক্কু! আপনারা আবার থুতু ফেলবেন না!! আমি থুক্কু বলছি! দ্যা সুপারম্যান রামিম রাস্তার ওপার থেকে বলে উঠলো,
–এই মম এইদিকে তাকাও!
–ওই শালা তুই কারে মম ডাকোস! আপু ডাক আপু! “তুই” ডাকবি এক্কেবারে তোর গোষ্ঠী-গ্যারাজের নাম ভুলায়া রাস্তায় সাপ্লাই দিবো!
–আপা একটু তাকাবেন, আমরা আপনাকে ভয় দেখাতে আসছি,
ইসরাত রামিমের কথায় আমার পিছু যেয়ে লুকালো, ভীতু বনে বলে উঠলো-
–দোস্ত, দোস্ত, দোস্ত….কত ডেন্জারাস দেখছিস….প্লিজ ওদের কাছে মাফ চা দোস্ত…আমায় ভয় করতেছে মম, ওরা ভালো না,
যা বাবা! কার কথায় ডরায় কে? আমি এইগুলাকে জুতাপেটা করে বিদায় করতাম, ইসরাত দেখি ভয়ে পুরো পানি পানি।
–ওই হারামজাদা! তুই আমাকে তুলবি! পারলে আয় না! আয়! দেখি তোর বুকের পাঠা কতো!
–আপা আপনাকে রিসপেক্ট করে আসতে বলছি আপনি বোধহয় নিতে পারলেন না। আমরা কিন্তু কাউন্টিং করবো,…এক…
–তুই “দুই” টা খালি বলোস না দেখ আমি কি করি!! বল বল বল….কিরে বলা বন্ধ হলো কেন, ওই চামার বলোস না কেন!
ওই বিলাতি কুত্তা মুগ্ধ, রামিমের কানে কানে কি যেনো বলল। নাসিফ সিগারেটে আরেকটান দিয়ে অবশিষ্ট জলন্ত অংশটুকু ফেলে দিল। রামিম দেখি রাস্তার ওপার থেকে এপার আসার জন্য পা বাড়িয়েছে! আমিও পায়ের জুতা খুলে দেই ফিক্কে, “ধরাস” করে রামিমের গালে লেগে জুতা ওইটা পড়লো মাটিতে। রামিম “ও মাগো” বলে এক চিৎকার দিলো!! এদিকে ইসরাত “দোস্ত” বলে আমার দিকে তাকালো! ইসরাত আমার ডানপাশটায় আমার হাত ঝাকিয়ে বলল,
–তুই এইটা কি করলি! জুতা মারলি! ওই জুতা ফিরে পাবি! কি করলি….ওদের তো রাগের গন্ডি পেরিয়ে যাবে!
–আরে চিল মার! বাথরুমের স্যান্ডেল ওইটা। আমার রুমে বাথরুমে যাওয়ার আগে পড়ি, দাম বিশ টাকা। তাও নানির ইউজ করা অর্ধ ক্ষয় মারা মাল। যাহ্ জুতাটা আজকে মনিবের কাজে দিলো।
ইসরাত হ্যাবলা থেকে একটু পর হো হো করে হেসে দিলো, লুটিয়ে লুটিয়ে হাসি। ছেলে হলে মেবি লুঙ্গি উঠিয়ে হাসির নাচুনি দিতো!!বাট বেচারি মেয়ে এজন্য ঢঙ করে ন্যাকান্যাকা সুরে হাসি দিল। রামিম গালে জুতার বারি খেয়ে গাল ধরে “মুগ্ধ” না কি ওর কাছে গেল। নাসিফ-ও ডেকি থেকে নেমে গোল করে মিটিং বসালো। মুগ্ধের পুরো দৃষ্টি আমার দিকে, ওইযে একভাবে হাতভাজ করে দাড়িয়ে আছে এখনো ওভাবেই স্থির। পাশ থেকে রামিম ও নাসিফ নানা কথার ঝুড়ি বসালো, এরপর যার যার মতো একপলক আমার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। মুগ্ধ ড্রাইভিং সিটে বসে সিটবেল্ট লাগিয়ে জানালার কাচ সম্পূর্ণ নামিয়ে দিল। ড্রাইভিং হুইলে দুইহাত রেখে জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। এখনো তাকিয়ে আছে, চোখের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র থাকলে ডিগ্রি উঠতো ১০৫° তাপমাত্রা। চোখ থেকে আগুনের তীক্ষ্মতর দৃষ্টি ঝড়ছে, “চোখ দিয়ে গিলে খাওয়া” কথাটা সত্যি সত্যি বাস্তব হলে এই বেটা মেবি প্রয়োগ করতো!
ইসরাতকে নিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম। আম্মু ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে ছোট বদমাইশকে পড়া রেডি করে দিচ্ছে। ইসরাতকে দেখে আম্মু বলে উঠলো,
–ইসরাত, এখনো টমির ভয় পেলে চলবে? ও তো কিছুই করেনা, অতিথি আসতে দেখলে এই খালি ভেউ ভেউ করে আমাদের সংকেত পাঠিয়ে দেয়।
ইসরাত জুতা খুলে ভেতরে ঢুকে সোফায় যেয়ে বসলো। কপালে জমা ঘামের কনা ওড়না দিয়ে মুছে বলল,
–আন্টি আর বলবেন না, আপনাদের বাসার নিচে টমির লয়েলিটি দেখে আমারই অন্তর কাপিয়ে ছাড়ে….আমাকে এখনো চিনলো না।
আমি একপায়ের জুতা খুলে ভেতরে যেতে নিলে আম্মু পেছন থেকে ডেকে থামালো,
–দাড়া!
–কিছু বলবা?
–আরেক জুতা কই? এক জুতা কেন ওখানে?
–আম্মু রাস্তার মোড়ে কালাচান আছে না? ওই কালাচান জুতা নিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে বুঝছো? আমি অনেক খুজছি পাইনি, এজন্য স্মৃতি হিসেবে এটাও নিয়ে আসছি।
–কালাচান কি ওই যে তিয়াশাদের বাসার কুকুর? আজকেও ধাওয়া দিলো?
–মনটা চাইছিলো কি জানো! এই জুতাটা ওর উপর ছুড়ে দিয়ে আসি। কিন্তু আমার মন ভালো, ওই কুত্তার মতো খারাপ না। তাই কিছু করিনি চলে আসছি।
আম্মু কিছু বলল না, আমি ইসরাতকে আমার রুমে আসতে বলে বিছানায় যেয়ে বসলাম। ও পিছু এসে আমার বিপরীতে এসে বসলো,
–দোস্ত ওরা কিন্তু গেছে ঠিকই কাল দেখিস আবার আসবো। আচ্ছা তুই ওদের করছিস টা কি? এমন পিছনে কাঠালের আঠার মতো লেগে আছে কেন?
–ওই হিস্টোরি তোকে বলার টাইম পাইনি, শোন তাহলে……ওই লিডারের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখছিস না? কিভাবে ব্যান্ডেজ আসছে জানিস?
–শুনলাম তো তুই যেয়ে ফাটায়া দিয়ে আসছিস!
–তাহলে তো ঘটনা জানিসই!! ওই লিডারের বাচ্চায় ভার্সিটির হেড স্যারকে বলে আমার রাস্টিগেট নোটিশ পাঠাইছে। আর তুই তো জানিস ভালো, আমার জিনিসে কেউ বা-হাত ঢুকাইলে ওই বান্দা শেষষ! আমি জাস্ট টোকা দিতে ওই লিডারের কাছে গেছিলাম আরকি…
–সর্বনাশ! তুই কি থাবড়া দিয়ে আসছিস আবার?
–আরে ধুর! থাপ্পর কেন দিবো? আম্মুর সবজি কাটার ভোঁতা ছুড়ি দিয়ে ভয় দেখিয়ে আসছি। আর কিছু না। তুই দেখ, আমার চুলগুলিকে কেমনে কাটছে! আম্মু কথা বলা অফ করে দিছে। আমার মায়ের শখের চুল….
ইসরাত এবং আমি সারারাত হরর মুভি দেখার জন্য আমার বাসায় ব্যবস্থা করেছি। “The Nun” মুভি। আব্বু ফুপির বাসায় গিয়েছে কাজে, কাল সকাল অবধি ফিরবেন। আম্মু ছোটকে নিয়ে উনার রুমে ঘোড়া বেচে ঘুম। এক মগ পানি ঢাললেও আম্মুর ঘুম সজাগ হবেনা। দুইজনে রুম অন্ধকার করে মোবাইল নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেখছি। ইসরাত ভয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার বায়না ধরে পেট চেপে বসে আছে, কারন, আমি এখন মুভি দেখবো। ওয়াশরুমে যেয়ে তথাকথিত দ্যা নান মুভির ভূত এসে ইসুকে খেয়ে ফেলবে বলে আমি আর পাহাড়া দিতে পারবো না। ইসরাত কাতরানো সুরে বলে উঠলো,
–তোর পায়ে ধরি মম, আমার সাথে ওয়াশরুমে আয়…আমার একলা যেতে ভয় করতেছে….আজকে কিন্তু অমাবস্যার রাত…
–চটকনা খাবি ইসরাত! যা বলছি! বাচ্চাদের মতো টুকুটুকু করা লাগবে না। ভূত বলতে কিছু নেই, জাস্ট ইমেজিনেশন! ভূত নেই! গো স্টুপিড ফুল!
–প্লিজ…
–নো! নো মিনস নো!
–দেখিস তোর জামাই শান্তি পাইবো না!! তোর জামাই একটা ভূতের কেদানি হইবো! ভূত!
— হ হ যা….ভূত হইলেই জামাইর সাথে ভূত-ভূত খেলবো! কুত্তার মুখে গরুর ডাক মানায় না। যা ফট!
ইসরাত বিছানা থেকে নামার মধ্যেই একশোবার আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। আমি তো একবাক্যে অটল! না করেছি মানে না- ই। ও চলে গেল। রুম অন্ধকার, পুরো বাসা অন্ধকার, আম্মুও দরজা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে, ইসরাত ওর ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে ওয়াশরুমে গিয়েছে, ওকে লাইট জ্বালাতে বারন করেছি। জাস্ট ওয়াশরুমের লাইট জ্বালাতে বলে দিয়েছি। মুভি দেখতে দেখতে পুরো দুই-ঘন্টা পারলাম কিন্তু ইসরাত আর আসলো না। আমি খেয়ালই করিনি ইসরাত এখনো রুমে ফিরেনি। রাতের আকাশে চাদ নেই, বিদঘুটে কালো অন্ধকার। আমি ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে রুমের সুইচে লাইট জ্বালানোর জন্য ক্লিক করেছি। “অন” জায়গায় সুইচ টিপছি সুইচের অনে লাইট জ্বলছে না! কি আশ্চর্য! পরশুই আব্বু নতুন লাইট লাগিয়ে দিয়েছে, আজই ফিউজ হলো? কয়েকবার “টুসটুস” করেও ফলাফল হলো না। জ্বললই না লাইট। আমি ফ্ল্যাশলাইট নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেলাম ইসরাতকে দেখতে।
আমি চোখের সামনে যে দৃশ্য দেখলাম তাতে মোবাইলের হাত কাপতে কাপতে যুদ্ধ করলো। হাত পা ঠান্ডা হয়ে জমে আসছিলো…..
-চলবে
-Fabiyah_Momo