#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_৩৫

0
600

#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_৩৫

#মিদহাদ_আহমদ

*গ্রুপ প্রাইভেট করে ফেলা হবে। তাই যারা গ্রুপে যুক্ত না হয়ে গল্প পড়ছেন, আপনারা আর পড়তে পারবেন না। আগে জানিয়ে রাখলাম। গল্প পড়ার আগে গ্রুপে জয়েন হয়ে নিন।*

‘জানতে চাও এসব কী? বুঝতে পারছো না এসব কি? সবকিছু ক্লিয়ার হতে চাও? ক্লিয়ার? আচ্ছা সব ক্লিয়ার হবে। সবকিছু ক্লিয়ার হবে। যাস্ট ওয়েট।’

আসিফ তার টেবিলের উপরে থাকা বেল চাপ দিলো৷ কয়েক সেকেন্ডের ভেতরে একটা যুবতী মেয়ে দরজায় এসে বললো,

‘মে আই কাম ইন স্যার?’

‘হুম। তুমি পরিতোষকে ডাক দাও। বলো আসতে।’

‘অকে স্যার।’

মিনিট খানেকের ভেতর একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

‘কী মিস্টার? হুটহাট ডেকে পাঠালেন কেন? ম্যাডামকে নিয়ে এসেছেন। ঘুরেফিরে দেখান ওসব৷ কাজ কীভাবে হচ্ছে না হচ্ছে এসব দেখান।’

আসিফ ওনার কথার কোন জবাব না দিয়ে বললো,

‘আজ কয়টা এসে জমা পড়েছে আমাদের সাইটে? কয়টায় আমার টাচ করতে হবে?’

‘আজ জমা পড়েছে একশো প্লাস৷ তবে আজকের জমা পড়া কাজ তো আজ করা যাবে না। আজ লাস্ট উইকের কাজে হাত দিতে হবে। ডেলিভারি আগামীকাল দুপুরে। সবাইকে মেইল করে দিতে হবে৷ আজকে একটু বেশি। দুইশোটার মতো হবে।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান।’

লোকটা চলে গেল। আমি একেবারে থ বনে বসে রইলাম৷ কোনকিছু বুঝতে পারলাম না। আসিফ উঠে দাঁড়ালো। একটা থাবা দিলো ডেবিলে। দিয়ে বলল,

‘বুঝেছো কেন রাত করে বাড়ি ফিরি? উত্তর পেয়েছো কীভাবে গাড়িতে চড়ি? বোনকে কীভাবে হীরার ফিঙ্গার রিং কিনে দেই? উত্তর পেয়েছো বাসায় বাজার কীভাবে করি? নাকি আরও কোনকিছু জানাতে হবে। আরও কিছু বলতে হবে? প্রথম যেদিন বলেছিলাম যে আমি হোটেলে কাজ পেয়েছি, আরে ওইটা ছিলো মিথ্যা। হোটেল কাজের কোন এক্সপেরিমেন্ট আমার ছিলো? সারাক্ষণ মদে ডুবে থাকা ছেলে হোটেল সামলাবে? এখন প্রশ্ন জাগতে পারে এসব কীভাবে করেছি?’

আসিফ এসে আমার গালে ধরলো। দুই হাত দিয়ে আমার গালে ধরে আমার চোখে চোখ রেখে অপ্রস্তুত হয়ে বললো,

‘এই চোখ আমাকে বলেছিলো আমি যেনো আমার নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেই। নিজের স্বপ্নের জায়গাকে কাজে লাগাই। এই কাজটাই আমি করছি৷ এই কাজের দিকেই আমি হাঁটছি। কীভাবে কী করেছি জানতে চাচ্ছো তো? সব জানাবো। সব। এতো সকাল এতকিছু হয়ে যায়নি নুপুর। এতকিছু হওয়া সম্ভব ও না। এইযে টিভিতে দেখেছিলে না একটা নিউজ? দেখেছিলে না যে বাংলাদেশের একজন তরুণ প্রচ্ছদশিল্পী ‘রুহান মেহরা’ দেশ বিদেশে নাম ছড়িয়েছেন কিন্তু এখনও মিডিয়ায় আসেননি? তাকে কেউ দেখেনি? সেই রুহান মেহরা আমি। দেখো নুপুর তোমার সামনেই আমি বসে আছি। প্রথমে প্রকাশনীতে গিয়ে যোগাযোগ করেছি তাদের প্রচ্ছদশিল্পী লাগবে কিনা। আরে কত রাতের পর রাত জেগে কাজ করেছি। নিজের স্ট্রাগল না, এটাকে নিজের ড্রিম ভেবে কাজ করেছি। সেই কাজের ফল এত তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো আমি বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি। বাসায় আসার পর বাবার একাউন্ট থেকে পাঁচ লাখ টাকা তুললাম। বাবা টেরও পায়নি। সেই টাকা দিয়ে এডভান্স দিয়ে এখানে আমার এই প্রজেক্ট দাঁড় করালাম। জানো আমার এই প্রজেক্টের পেছনে ব্যাংক লোন কত? হয়তো শিল্পপতির সন্তান বলে ব্যাংক লোন নিতে কোন বেগ পোহাতে হয়নি। আবেদন করার সাথে সাথে পনেরো লাখ টাকার লোন ইস্যু হয়ে যায়।
যাক সেই কথা৷ এতো বিস্তারিত এখন বলার সময় নেই। এইযে এখানে দেখছো এত এত মানুষ কাজ করছে, সবাই ঢাবির চারুকলার ছাত্র। সবাই এক একটা প্রতিষ্ঠান হওয়ার যোগ্যতা রাখে। নিজে হয়তো এককালে চারুকলায় চান্স পেয়েছিলাম। সেই সুবাধে এদের সবার সাথে কানেক্টেড হওয়ার সুযোগ হয়েছে। নাহলে হয়তো তাও সম্ভব হতো না। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রচ্ছদ সাপ্লাই হচ্ছে আমার এই কোম্পানি থেকে। প্রতিটা প্রচ্ছদে নাম যাচ্ছে, ‘রুহান মেহরা’। আর রোজরোজ রাত হয় কেন জানো? সব প্রচ্ছদে আমার একটা না একটা কাজ করাই লাগে৷ একাডেমি সব কাজ করে, সিগনেচার কাজটা আমার করা লাগে। আরও শুনবা কিছু? ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়ার নামকরা সব প্রকাশনীর প্রচ্ছদ আমার এখান থেকে সাপ্লাই হয়। বইয়ের ভেতরের ইলাস্ট্রেটর এর কাজ আমার এই একাডেমির ছেলেরাই করে। শুধু তাই? বইয়ের ভেতরের মেকাপ, গেটাপ থেকে শুরু করে আঁকিবুঁকির সবকিছুই এখান থেকে হয় ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ক তো আর যেই সেই করে করা যায় না। রাতের পর রাত যায়, ছবির উপর ছবি যায়। আর তারপর আমার চোখের সামনে আমার ড্রিম সত্য হয়ে উঠে।’

এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে আসিফ আবার চেয়ারে বসে যায়। হুইস্কির বোতল থেকে হুইস্কি ঢাললো পাশে রাখা গ্লাসে। আমি উঠে গেলাম তার পাশে। গ্লাসটায় ধরলাম। আসিফ আমার হাত ছাড়িয়ে নিলো। এক ঢুকে খেয়ে নিলো পুরোটা। তারপর মাথা হেলিয়ে দিলো চেয়ারে।

কয়েক মিনিট পর সেই মেয়েটা আবার রুমে এলো৷ আসিফকে বললো,

‘স্যার নেক্সট উইকের স্লট রেখে দিয়েছি৷ আপনার ফ্যামিলি প্রোগ্রাম ই তো তাইনা? দশ জনের ইস্টিমেট দিয়ে দিয়েছি তাদের।’

‘ক্যানসেল করে দাও। লাগবে না।’

‘কিন্তু স্যার আপনি না বলেছিলেন আপনার ফ্যামিলি মেম্বারকে ওইদিন…’

‘আপনি আসতে পারেন। আর ক্যানসেল করে দিয়েন।’

আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আসিফ আমাদেরকে এতদিন জানায়নি কেন। আসিফ বললো,

‘এখন আপনি আসতে পারেন৷ আমার কাজ আছে ‘

আমি আর আসিফের অফিসে বসার মতো অবস্থায় রইলাম না। একদিকে রাগ, অন্যদিকে ক্ষোভ আর ভালোবাসার দোলনায় দোল খেতে খেতে একেবারে বিষিয়ে উঠেছি যেন।

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় একজনকে কলে কথা বলতে শুনলাম কাকে যেনো বলছে,

‘হ্যাঁ আসিফ স্যারের স্ত্রীর জন্যই একজন স্যার লাগবে। সামনে মেডিকেল এডমিশন। আর তিনমাস বাকি আছে।’

কথাটা শুনে আমার কান যেনো সেখানে আরও আটকে রইলো গভীরভাবে। গাড়ির ড্রাইভার বাসার গাড়ি নিয়ে নিচে এসেছে। আমি গাড়িতে উঠে বসলাম। মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো, তাহলে ওই আকাশি রঙের শার্ট পরা ছেলেটা তাহে কে? ওই শার্টটা তো আসিফের। তাহলে কি আসিফের মদের নেশার সাথে সাথে নারীর নেশা এখনও রয়ে গিয়েছে?

বাসায় আসতে আসতে একটা বেজে গেলো। ননাস জানালো, বিকালে তামান্নার শাশুড়ি বাসায় আসবেন তার বোন দুইজনকে নিয়ে। তারা লন্ডন থেকে এসেছেন। তারা দেখবেন তামান্নাকে। আমি যেনো এক্ষুণি নাস্তা রেডি করতে যাই।

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি দিলাম। রুমে গিয়ে কাপড় চেইঞ্জ করে রান্নাঘরে গেলাম। এই কম সময়ে পিৎজা আর নারিকেল পুলি বানাবো বলে ঠিক করলাম। শাশুড়ি এসে যুক্ত হলেন আমার সাথে। ননাস রান্নাঘর পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললো,

‘আসিফের সাথে কোথায় গিয়েছিলা নুপুর?’

আমি শুনেও না শোনার বাহানা করে ময়দা মাড়লে লাগলাম। শাশুড়িও কোন সায় দিচ্ছেন না দেখলাম আমার ননাসের কথায়।

কিছুক্ষণ পর বাসার কাজের মেয়ে মরজিনা দুইটা শার্ট এনে আমার সামনে ধরলো। সামনে ধরে বললো,

‘ভাবি ভাইয়ের কোনটা আর দুলাভাইয়ের কোনটা?’

আমার চোখ চড়কগাছ। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। দুইটা একই কালারের শার্ট! ওই শার্ট যেইটা আমি দেখেছি রাস্তার সেই ছেলেটার গায়ে যে ছেলেটা কারে উঠেছিলো!

আমি মরজিনাকে জিজ্ঞেস করলাম,

‘দুইটা এক কালারের শার্ট? দুইটা কার কার?’

‘আরে ভাবি আমার মনে আছে আফা একটা দুলাভাইরে দিছিলো আর একটা ভাইরে। আফনে বাড়িতে আছিলেন৷ এহন দুইটা ধুইতে দিছে খালাম্মা। এহন দুইডাই দেখি এক৷ কোন পার্থক্য নাই৷ একই মাপের। কোনডা কার এইডা বুঝমু কেম্নে কন দেহি?’

‘তোর এতসব বুঝতে হবে না। তুই এক কাজ কর চা বানিয়ে নিয়ে আয়। আমি বারান্দায় যাচ্ছি। এলোভেরা গাছ দুইটা টবে দিতে হবে আলাদা করে। ছানাপোনা দিয়ে একদম ভরিয়ে দিয়েছে। শার্ট দুইটা আমাকে দে। আর মা শুনো, তোমার জামাইর জন্য কাতলা মাছের মাথা রেখে দিয়েছি। তোমার হাতের মুগডাল ওর ভালো লাগে। রাতে একটু মুগডাল আর দেশি মোরগ ভূণা করে দিও। নুপুর তোমার দুলাভাইয়ের জন্য একটু ফিরনি করে দিও কেমন?’

তামান্না এসে বললো,

‘আপা দুলাভাইকে বলে দিও আইসক্রিম আনতে। খালি হাতে যেনো না আসে।’

‘খালি হাতে আসছে সে? আসছে কখনো?’

বাজখাই গলায় কথাগুলো বলে, ননাস শার্ট দুইটা মরজিনার হাত থেকে নিয়ে নিলেন। মরজিনার দিকে আবার তাকিয়ে তাড়াতাড়ি আসার আদেশ দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন তিনি। আমার অবাক চোখ, আশ্চর্য হওয়া মন, সন্দেহের তীর সব যেনো নিমিষেই বদলে গেলো!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here