#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_৩৭_৩৮
#মিদহাদ_আহমদ
*গতকাল দিতে না পারায় আজকে একসাথে দুইটা পর্ব দিলাম প্রিয় পাঠক। আপনারা এখনও যারা গ্রুপে জয়ে না হয়ে গল্প পড়ছেন, আপনারা জয়েন হয়ে নিন।**
রাতে আসিফ ভাত খাওয়ার সময়ে ননাস আদ্যোপান্ত সবকিছু বললো। আমি নাকি এসব বেয়াদবি এখন সব সময়ে করি৷ আমার অভ্যাস হয়ে উঠেছে এসব। ঘরের জামাইকে নাকি সম্মান করতে জানি না। আগে আগে যা করেছি, এখনও যদি সমানে তা করি, তাহলে এই ঘর সংসার সবকিছু ভেস্তে যাবে। কোন মূল্যই থাকবে না এই ঘরের। শুধু পড়ালেখা শিখা না বরং কিছু আদব শেখাও আমার জরুরি। ননাসের এমন কথা শুনে সামনে থেকে চলে এলাম আমি। ভাত খেয়ে রুমে এসে একটা সিগারেট ধরালো আসিফ। তার কাছে গিয়ে বসলাম। আশা করছিলাম সে কিছু বলবে৷ হয়তো বুঝাবে আর না হলে অন্য সময়ের মতো বলবে এসব কথায় যেনো কোনকিছু মনে না করি। আসিফ কিছুক্ষণ কোন কথা বললো না। তারপর বললো,
‘এসব সন্দেহ করা এখন অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে তোমার? শেষমেশ আমার বোনের সংসারের উপরও তোমার সন্দেহ জেগে উঠলো? মানে আর কী কী করতে চাও তুমি? আর কী করে আমাকে যন্ত্রনা দিলে তুমি শান্তিতে থাকতে পারবা আমাকে ক্লিয়ার করে বলবা একটু?
‘আসিফ আসলে তুমি যা বুঝছো তা না…’
‘আমার কোনকিছু বুঝার দরকার নেই নুপুর। তোমাকে আমি যাস্ট শেষ বারের মতো রিকুয়েস্ট করছি, নেক্সট টাইম যেনো এমন কোনকিছু না হয়। আরে বদরুল দুলাভাই এই বাড়ির জামাই। তার কোন অসম্মান হোক এমন কোনকিছু আজ এত বছর ধরে আমরাও করিনাই৷ আর তুমি কিনা এখন তার উপরও?’
আমাকে এসব বলতে বলতে ব্যাগ থেকে হুইস্কির বোতল বের করে আসিফ বারান্দায় চলে গেলো। সাথে তার আঁকিবুঁকির সরঞ্জাম নিয়ে ঢুকলো। বারান্দার গ্লাস লাগিয়ে মোবাইলে গান বাজিয়ে ফুল সাউন্ড দিয়ে শুনতে লাগলো৷ আমার স্থবিরতা যেনো আর কাটছে না। এসব করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি তা আর টের পেলাম না। ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। আসিফ ঘুমিয়ে আছে। গভীর ঘুম যাকে বলে। তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে এলাম। রান্নাঘরে গিয়ে আলু পরোটা আর ক্যাপাচিনো কফি রেডি করতে বসলাম। আগের ডাল ছিলো। শুকনো করে ভেজে নিলাম। ডালপুরি আসিফের পছন্দ। সবকিছু ঠিকঠাক করে যখন রুমে নিয়ে এলাম, দেখলাম আসিফ ততক্ষণে রেডি হয়ে গিয়েছে। আমি তার টেবিলে কফি রাখতে রাখতে বললাম,
‘আজ কি দেরি হবে ফিরতে?’
‘কেন? দেরি হলে কি আগ থেকেই ইনভেস্টিগেশন করা শুরু করে দিবে? নাকি সাথে সাথে বের আসবা?’
‘আসিফ তুমি এরকম বলছো কেন? আমি কি এমন কিছু বলেছি?’
‘সবকিছু বলতে হয় না। কিছু বিষয় মানুষ নিজ থেকেই বুঝে ফেলতে পারে।’
আসিফ চলে গেলো। টেবিলে পড়ে রইলো তার জন্য বাবানো ক্যাপাচিনো। ডালপুরি যেনো আমার দিকে মুখিয়ে আছে। আলু পরোটা যেনো কার একটা অপূরণ টের পাচ্ছে নিজের সবটা জুড়ে।
বুঝতে পারলাম না আমি কী করবো। আসিফ এমন এর আগে কখনো করেনি। তামান্না আমার রুমে এলো এমন সময়। তামান্না টেবিলের উপর খাবার দেখে বললো,
‘ভাইয়া খেয়ে যায়নি?’
‘না।’
‘ভাইয়ার সাথে কিছু হয়েছে কি?’
আমি বিস্তারিত সবকিছু খুলে বললাম তামান্নাকে। তামান্না সব শুনে বললো,
‘টেনশন নিও না। ভাইয়ার রাগ একটু বেশি। এই দেখবা সবকিছু আবার গলে উবে যাবে। বুদ্ধুটার রাগ কখন উঠে আর কখন যায় সে নিজেও টের পায় না। এতদিনে যখন সে একটা দিক নিচ্ছে, দেখবে ধীরেধীরে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে। আচ্ছা ভাবি শুনো, তোমাকে বলতে আসছিলাম মেহেদিতে তুমি আর আপা একই শাড়ি পরবা আমি ঠিক করেছি। আমি মেহেদি রঙের ড্রেস, আর তোমরা দুজনে শাড়ি। হলুদেও একই। আমি হলুদ কাতান পিন আপ করে পরবো, আমার ওড়না থাকবে মাথায়। তোমরা দুজন শুধু ওড়না ছাড়া। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সাথে কথা হয়েছে। আর ঢাকা থেকে চিত্রগল্পের ফুল টিম আসবে। তারাই বিয়ের সব ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি কভার করবে।’
তামান্না এসব বলে চলে গেলো রুম থেকে। আমি খাবারগুলো নিয়ে বের হলাম৷ রান্নাঘরে ঢুকতেই ননাস পথ আটকে বললো,
‘খেয়ে যায়নি তাইতো? খাবে কীভাবে? একটা ছেলের জীবনে যদি এমন যন্ত্রনা নিয়ে আসো, তাহলে তার খাওয়ার মুড রইবে বলে বুঝো? এখনও সময় আছে নুপুর৷ সময়ের কাজ সময়ে করে ফেলো। নিজের অবস্থানটা বুঝে নাও। আর নাহলে খুব বেগ পোহাতে হবে তোমায়।’
দুপুরে খেয়েদেয়ে বিছানায় এসেছি মাত্র৷ কলিংবেলের আওয়াজ শুনে বের হয়ে এলাম নিচে। দেখলাম ঘটক সাহেব এসেছেন। আমি নিচে নামলাম। শ্বশুর শাশুড়িও গেলেন। ঘটক বললো, বিয়ে নাকি এই সপ্তাহের ভেতরেই করে ফেলতে হবে৷ জামাইর আমেরিকা এই মাসের শেষেই ফিরে যাওয়া লাগবে। আর জামাইর ছোট বোন, যে লন্ডন থেকে এসেছিলো ভ্যাকেশনে, তারও ছুটি শেষ হয়ে আসছে। শাশুড়ি মা বললেন, এত তাড়াতাড়ি কীভাবে সম্ভব! কার্ড ছাপানো, দাওয়াত দেয়া সহ সকল আয়োজন তো এখনও বাকি। ঘটক এক কথায় বললো, তাকে তারা খবর দিয়ে পাঠিয়েছেন বিয়েতে লেইট করা যাবে না। আমি বললাম, পানচিনিতেই তো বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে এখনও সপ্তাহ তিনেক বাকি। কিন্তু এর আগে এমন করে করলে তো আমাদের জন্য চাপ হয়ে যাবে।
শেষমেশ শ্বশুর রাজি হলেন৷ ঘটক মারফত জানিয়ে দিলেন, বিয়ে এই সপ্তাহেই হবে। সন্ধ্যার পর বাধলো আরেক বিপত্তি। তামান্নার শ্বশুর বাড়ি থেকে কল করে তামান্নার হবু শ্বশুর আমার শ্বশুরকে বললেন তারা ওয়ালিমা আমান উল্লাহ কনভেনশন হলে করবেন। অথচ আজ বিকালেই আমাদের আলাপ হয়েছিলো যে আমান উল্লাতে বিয়ের ভেন্যু সেট করে ফেলা হবে। দাওয়াত সব মিলিয়ে হাজার দুয়েক লোকের হবে। আমান উল্লাহ কনভেনশন হলের এক দিনের ভাড়া দেড় লক্ষ টাকা গুণতে হয়। তামান্নার হবু শ্বশুরের কথা শুনে আমার শ্বশুর জানালেন, আমরাও সেখানে বিয়ের ভেন্যু ফিক্সড করতে চাচ্ছিলাম। তামান্নার হবু শ্বশুর সাফ জানিয়ে দিলেন, বিয়ে আর ওয়ালিমা একই জায়গায় হলে মানুষের সামনে আর মুখ দেখানো যাবে না।
এর কিছুক্ষণ পর তামান্নার ননাস আমার মোবাইলে কল দিলেন। তামান্নার শপিং করা হয়নি। আগামীকাল যেনো আমরা বের হয়ে যাই সকাল সকাল। আল হামরা থেকে বিয়ের শপিং করে ফেলা হবে। সাথে তিনি এও জানিয়ে দিলেন, বিয়ের ভেন্যু সিলেটের সবচেয়ে বড় কনভেনশন হল, কুশিয়ারা কনভেনশন হলে যেনো ফিক্সড করে নেই৷ কল কেটে আমি তামান্নার ননাসের কথাটা জানালাম শ্বশুরকে। অগ্যতা আর কোন উপায় না দেখে আড়াই লাখ টাকায় শ্বশুর বিয়ের দিনের জন্য কুশিয়ারা কনভেনশন হল বুকিং দিয়ে দিলেন৷
রাতে আসিফ বাসায় আসলো যথারিতি৷ সে আমার সাথে কোন কথা বললো না। কয়েকবার তার সাথে কথা বলতে গেলেও আসিফ আমার কথা শুনেও না শোনার বাহানা করে বসে রইলো। একেবারে ইগনোর করা যাকে বলে।
(চলবে)
#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_৩৮
#মিদহাদ_আহমদ
সকাল এগারোটা নাগাদ ননাস, আমি আর তামান্না মার্কেটে চলে গেলাম। যাওয়ার আগে শাশুড়ি আমার হাত ধরে বললেন,
‘দেখো নুপুর, তামান্না যেনো কোন অঘটন না ঘটায় সেখানে।’
তামান্না তার মাকে বললো
‘কেন? আমি অঘটন ঘটাবো কেন সেখানে? আমার যা যা কেনার আমি তাই তাই কিনবো৷ এতে তারা আপত্তি দেখালে তো আমারও আপত্তি আসবে।’
ননাস তখন তামান্নাকে বললো,
‘বিয়ের সময় শ্বশুরবাড়ি থেকে যাই দিবে, তাই ভালো ভেবে নিতে হবে। ওসব করার সময় এখন না। তারা যদি কোনকিছু নাও দেয়, তার পরও আমাদের আপত্তি করার কোন জায়গা থাকে না।’
আগ থেকে তামান্নার হবু ননাস ননদেরা মার্কেটে ছিলো৷ তামান্নার ননাস তামান্নাকে জিজ্ঞেস করার নামে অভয় দিয়ে বললো,
‘শুনো তামান্না, বিয়ের দিনের জন্য নরমালের মধ্যে একটা কাতান শাড়ি কিনে নিবো লাল রঙের আর ওয়ালিমার দিনের জন্য একটা বেগুণি রঙের শাড়ি৷ আর কাতান দেখে দুইটা, সুতির মাঝে তিনটা এক্সট্রা কিনে ফেলবা। ঠিক আছে?’
আমি মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম, তামান্না কিছু বলে ফেলে কিনা। আসার সময়েই তামান্না বলেছিলো, বিয়ের দিনে সে আড়ং এর জামদানি পরবে। কালো রঙের জামদানি। সাথে রূপোর গহনা। গত সপ্তাহেই জুয়েলার্সে অর্ডার দেয়া চল্লিশ ভরি রূপার সেট ডেলিভারি দিয়েছে৷ ভারতীয় কোন মডেল এই সাজ সেজেছিলো বিয়েতে। তাই তামান্নাও এমন করে সাজবে আগ থেকে ঠিক করে নিয়েছিলো। শেষমেশ তামান্না কোন কথা বললো না আর। ছেলের বাড়ির লোকেরা যা যা দিলো পছন্দ করে তাই হ্যাঁ সূচক বেছে নিলো৷ বাসায় ফিরে এসেই এক তুলকালাম কাণ্ড! সে এই বিয়ে করবে না। কোন মতেই না৷ কান্নাকাটি করে সবকিছু মাথায় তুলে নিলো। শাশুড়ি মা বুঝালেন যে বিয়ে একটা নিয়ম শুধু৷ আর বিয়ের দিন কি পরা হলো আর কি পরা হলো না তা নিয়ে জীবন কাটানো যায় না। এর পরের জীবন সুন্দর হলেই হলো।
বেশ কিছুক্ষণ আমিও বুঝালাম তামান্নাকে। শেষমেশ সে তার রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো৷ ঘন্টাখানেক পর রুম থেকে বের হয়ে ড্রাইভারকে বলে গাড়ি বের করে একা একা চলে গেলো মার্কেটে। কিছুক্ষণ পর একটা কালো রঙের উপর লাল পাড় করা জামদানী শাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরলো৷ শাশুড়িকে ডেকে বললো,
‘বিয়েতে আমি এই শাড়িই পরবো৷ দেখি কে আমাকে কী বলে।’
এদিকে আমি তড়িঘড়ি করে শাশুড়ি মায়ের রান্না করা ইলিশ ভূণা আর গরুর কলিজা বক্সে ভরলাম। ড্রাইভারকে বলে গাড়ি বের করে আসিফের অফিসে গেলাম। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছি আর একে একে আশেপাশের ছেলে মেয়েরা আমাকে সালাম দিচ্ছে। জিজ্ঞেস করছে, ‘ভাবি কেমন আছেন’
আমি মুখে হাসি এনে সবাইকে ভালো আছি বলতে বলতে আসিফের রুমের সামনে গেলাম। বেল চাপতেই একটা মেয়ে বের হয়ে এলো রুম থেকে। এসে বললো,
‘ম্যাডাম আপনি একটু ওয়েট করেন৷ আমি স্যারকে জানাচ্ছি।’
কয়েক সেকেন্ড পর মেয়েটা এসে জানালো, আসিফ বলেছে অপেক্ষা করতে। আমি বাইরে সোফায় বসা রইলাম প্রায় ঘন্টাখানেক। ঘন্টাখানেক পর মেয়েটা এসে জানালো, এবার ভেতরে যেতে পারি। আমি ধীরপায়ে রুমে ঢুকলাম। ঢুকতেই আসিফ বলে বসলো,
‘কোন দরকার? কেন এসেছো এখানে?’
‘আমার উপর এখনও রাগ করে থাকবা? আই এম সরি আসিফ।’
‘কাজের কথা কিছু থাকলে বলতে পারো৷ আর নাহয় আসতে পারো এখন ‘
‘সকালে কিছু না খেয়েই চলে এসেছো। এখন অবধি কোনকিছু খাওনি সে আমি জানি। এখন কাজ রাখো আর ভাত খেয়ে নাও।’
‘এসব সন্দেহের মানুষকে ভাত খাইয়ে দিতে নাই। তুমি তোমার কাজ করতে পারো।’
আসিফের অভিমানের সুর ভাঙ্গতে বসেছে সে আমার বুঝতে বাকি রইলো না। তড়িঘড়ি করে টিফিন বক্স থেকে খাবার আসিফের টেবিলের সামনে সাজিয়ে নিলাম। আসিফ বলে বসলো,
‘আরে আরে এসব কী হচ্ছে। এইটা আমার ওয়ার্ক প্লেইস।’
আমি শুনেও না শোনার বাহানায় প্লেইটে ভাত নিলাম৷ তারপর আসিফকে বললাম,
‘হাত ধূয়ে খাবে নাকি আমি খাইয়ে দিবো?’
আসিফ ল্যাপটপে কাজ করতে লেগে গেলো৷ আমিও আর অপেক্ষা করলাম না। হাত লাগিয়ে দিলাম। ভাত মেখে ইলিশ মাছের কাটা বেছে এক লুকমা ভাত সামনে এনে ধরলাম আসিফের। আসিফ আমার দিকে তাকালো একবার। চোখ ইশারায় ভাত খেতে বললাম তাকে৷ কয়েক সেকেন্ড কী যেনো মনে করে সে ভাত মুখে নিলো। আমার ভেতরে ভেতরে অনুভব হতে লাগলো, এক বিশাল পাহাড় যেনো আমার উপর থেকে সরে গিয়েছে৷ এক পৃথিবী সমান অভিমান যেনো তার গলতে শুরু করেছে। তিন লুকমা ভাত মুখে তুলে দেয়ার পর আসিফ আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
‘তুমি খেয়েছো?’
আমিও এবার যেনো অভিমান করার সুযোগ পেলাম। অভিমান ভেঙ্গে বললাম,
‘কেউ খাইয়ে দেয়ার নাই। সবাই অভিমান করার আছে৷ অভিমান বুঝার কেউ নাই। আর এই অভিমানে অভিমানেই আমি একদিন টুপ করে হারিয়ে যাবো।’
হারিয়ে যাবো আমি যেই না বললাম, সাথে সাথে আসিফের সে কী রাগ আর অগ্নিশর্মা চোখ! কঠোর গলায় বললো,
‘তুমি এখানে সিন ক্রিয়েট করতে এসেছো নুপুর? এসব বলার হলে চলে যেতে পারো।’.
আসিফের মনের কথা আমি বুঝতে পারি। অগ্যতা তার রাগে আর আগুন না ঢেলে বললাম,
‘সরি। এই কান ধরলাম। কান ধরতে পারবো না, এক হাতে প্লেইট অন্য হাতে ভাত৷ বাসায় গিয়ে ধরলো। কেমন? এখন ভাতটা মুখে নিন মিস্টার।’
আসিফ ভাত মুখে নিলো।
অন্যদিকে বদরুল তানিয়াকে ডেকে বললো,
‘তানিয়া, আমার মা বাবা কে কি বিয়েতে নিমন্ত্রণ করা হবে না? না মানে, ভুল মানুষের ই হয়৷ এই অবস্থায় দেখো, আমার নাহয় তোমার সাথে থাকা হচ্ছে কিন্তু এভাবে আমার বাবা মাকে তোমার বোনের বিয়েতে নিমন্ত্রণ না দেওয়া মানে আমাকেই এক প্রকারের অপমান করা না?’
‘তুমি কী করতে বলছো আমাকে?’
‘না মানে, তোমার বাবা মাকে বলে বাসায় দাওয়াত পাঠাতে পারো। মাকে বলতে পারো যে তিনি নিজে গিয়ে যেনো দাওয়াত দিয়ে আসেন।’
তানিয়া বদরুলের সব কথায় মোহমুগ্ধ হয়ে উঠে। এবারও বললো,
‘আচ্ছা আমি মাকে বলছি গিয়ে৷ আর অবশ্যই দাওয়াত যাবে। দাওয়াত যাবে না কেন?’
‘তুমি আবার কিছু মনে করছো না তো তানিয়া?’
‘আরে কেন? কী মনে করবো আবার? তুমি কি কখনো কোনকিছু ভুল বলেছো? বরং পুরো পরিবারের কথার অমতে গিয়ে তুমি আমার হাত ধরেছো৷ আমার জন্য তুমি কী সেইটা একমাত্র আমিই জানি।’
‘আরেকটা কথা তানিয়া।’
‘কী?’
‘আমার দুই বোনকেও তো দাওয়াত দেয়া হয়নি। তাদের স্বামীর ঘর আছে। সেখানে যদি…’
‘তুমি কোন চিন্তা করো না বদরুল। আমি দেখছি। দরকার পরলে বাবা মা দুজনেই যাবে৷ তবুও তোমার উপর কোন আচড় আমি লাগতে দেবো না। আচ্ছা শুনো, তোমার স্যুটের সাইজ দিয়ে এসো সানমুন টেইলার্সে। কাপড় আমি চুজ করে দিবো৷ দেখি আসিফ কী পরে। তারপর তোমার আর আসিফের জন্য একই কালারের স্যুট করে দিতে বলবো। ঠিক আছে তো?”
‘ওকে মহারাণী। যথা আপনার আজ্ঞা।’
তানিয়া একটা হাসি দিয়ে উঠে চলে গেলো তার মায়ের রুমে। বদরুলের মোবাইলে কল এলো তার মায়ের। বদরুল কল ধরে বললো,
‘হ্যাঁ মা। এখন দেখবা তারা নিজে তোমার ঘরে যাবে। আর তখন তোমার যা করার, যা ঝারার সবকিছু একসাথে ঝেড়ে ফেলো। তারা বুঝতে পারছে না, তাদের জন্য সামনে কী না কী অপেক্ষা করছে৷ আর গতদিন এক বাঁচা বেঁচেছি না। এইযে তোমার ভাইঝিকে বারবার বলি না যে দেখা না করতে, গতদিন ওর কারে উঠার সময়ে এখানের ডায়নি নুপুর দেখে ফেলেছিলো আমাকে। শার্ট দেখেই সন্দেহ করা শুরু করেছিলো! একবার যখন এর মনে সন্দেহ ঢুকে গিয়েছে তখন আর সন্দেহ থেকে বের হওয়া যাবে না৷ যা করার তড়াতাড়ি করে নিতে হবে। এতদিনের সেক্রিফাইজ নাহলে এক নিমিষে উবে যাবে। কী তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলছিলো! ভাগ্য ভালো যে তানিয়া সবকিছু ইগনোর করে গিয়েছে। ইভেন আমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছে নুপুর। বড় বাঁচা বেঁচে গেলাম। আমাদের যা করার খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলতে হবে মা।’
‘আর তোর শাশুড়ি? সে কি বললো?’
‘না। সেও কিছু বলেনাই৷ বিশ্বাস করে তো আমাকে। তাই।’
কথাটা বলেই একটা পাশবিক হাসি হাসলো বদরুল৷
[রোজরোজ রিচ হয়, লাইক কমেন্ট হয় না। সবাই পড়েন ঠিকই কিন্তু লাইক দেন না। লাইক দিলে গ্রুপের রিচ হয়৷ আর কিচ্ছু না। এজন্যই লাইক কমেন্ট করতে বলি। আজকের পর্বে মিনিমাম ৩ হাজার লাইক আর ১ হাজার কমেন্ট চাই মাস্ট। ]
(চলবে)