#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-০৫|
সন্ধ্যার পরে মিতা বেগম সালমার সঙ্গে বসে নাস্তা খাচ্ছিলেন। সালমা তো বকবক করেই যাচ্ছে। এটা যে ওর স্বভাব। মিতা বেগম নিজের খাওয়া শেষ করে সালমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ কাল সকাল সকাল দারোয়ান কে বাজারে পাঠিয়ে দিস। লাবিদ আর বৌমা আসবে কাল।’
সালমা মুখে খাবার নিয়ে বলল,
‘ লাবিদ বাবা আসবে? তাহলে তো মেলা কাজ আছে।উফ একটু আগে তো বলবেন আপনি।’
মিতা বেগম মৃদু হেসে বলল,
‘ তোর যা ইচ্ছে কর আমি আমার রুমে আছি।’
মিতা বেগম নিজের রুমে গিয়ে খাটের কোনায় বসে। কাল অনেক দিন পর লাবিদ রা আসবে এ বাড়িতে। লাবিদ ওর কাজের জন্য বউ নিয়ে আলাদা হয়েছিল। এখান থেকে লাবিদের অফিসে যেতে মিনিমাম দুই ঘন্টা সময় লাগে। বাড়ির কাছের অফিসটার দেখাশোনা করে বড় ছেলে। আর দূরের অফিসটার দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে লাবিদের উপর। প্রতিদিন এত ঘন্টার জার্নি করার পরে লাবিদ প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে পড়তো। ওদের সুবিধার জন্যই মিতা বেগম অফিসে আশেপাশের ভালো দেখে একটা ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন। এরপর থেকে সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা মাসে দুই এক বার এসে ঘুরে যায় লাবিদ আর ওর বউ। মিতা বেগমের বড় ছেলের বউয়ের তুলনায় মেজ ছেলের বউ বেশ ভালো। ফোন করে শাশুড়ির হালচাল জিজ্ঞেস করে। এ বাড়িতে আসলে তো ব্যতিব্যস্ত হয়ে শাশুড়ি যা যা খেতে পছন্দ করে তা নিজে হাতে তৈরি করে। রুমি মানে মিতা বেগমের মেজো ছেলের বউ, তাঁকে অনেকবার বলেছে তিনি যেনো ওদের সাথে থাকে। কিন্তু মিতা বেগম স্পষ্ট ভাষায় না করে দিয়েছেন। এই বাড়ির সঙ্গে যে তার হাজারো স্মৃতি। বললেই তো আর এই সব ছেড়েছুড়ে নতুন ঠিকানায় বাসা বাঁধা যায় না। যত্ন করে তার স্বামীর ব্যবহৃত জিনিস গুলো আগলে রেখেছেন তিনি। প্রতিদিন নিয়ম করে সেসব জিনিস গুলো তে হাত বুলান তিনি। এত এত স্মৃতি ফেলে তো আর যাওয়া যায় না। এসব ভেবে ছোট নিঃশ্বাস ফেলে মিতা বেগম। মায়াবী চোখে তাকায় সামনের দেয়ালের দিকে। তার আর তার স্বামীর একটা মুহূর্ত ছবি বন্দি হয়ে আছে দেয়ালে। মিতা বেগম সোফায় বসে আছেন তার ঠিক পেছনে তার স্বামী তার কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছবিটা ইভান ক্যামেরাবন্দী করে, ছবিটা বাঁধিয়ে এই ঘরে টাঙিয়ে দিয়ে যায়। মিতা বেগমের যতদূর মনে পড়ে তখন ইভান ছুটি কাটাতে দেশে এসেছিল। এসব ভেবে আনমনে হাসে মিতা বেগম।
সন্ধ্যার পরে বাড়ির দিকে ফিরছে অভি। হাতে একটা স্মার্টফোনের প্যাকেট। সকালে সম্রাটের দেওয়া পাঁচ হাজার টাকার সাথে নিজের টাকা মিলিয়ে এই ফোনটা কিনেছি অভি। এই ফোনটা কেনার জন্যই সকল সকল শহরে ছুটেছে অভি। নিজের জন্য নয়। আদরের ছোট বোনটার জন্য। এই সামান্য ফোনটার দৌলতে হয় তো বোনের মুখে হাসি দেখতে পারবে। এসব ভেবে আনমনে হেসে দেয় অভি।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে অভি ধারা কে সম্রাটের রুমে ডেকে নিয়ে যায়। ধারা আর অভিকে একসাথে আসতে দেখে সম্রাট বিছানায় শোয়া থেকে উঠে আলমারি খুলে ফোনের প্যাকেট টা বের করে। সম্রাট অভিকে চোখের ইশারায় বলে, ধারার চোখ হাত দিয়ে চেপে ধরতে। সম্রাটের কথা অনুযায়ী অভি ধারার চোখ হাত দিয়ে চেপে ধরে। ধারা উৎকণ্ঠা হয়ে বলল,
‘ ভাইয়া তুই আমার চোখ চেপে ধরলি কেন? উফ ছাড় না চোখটা কিছু দেখতে পারছিনা।’
অভি ধারাকে ধমক দেওয়া অভিনয় করে বলল,
‘ এই তুই এত ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছিস কেন? একটু সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিস না?’
ধারা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
‘ তুই আমাকে ধমক দিচ্ছিস? তোর এত বড় সাহস তুই আমাকে ধমক দিচ্ছিস? বড় ভাইয়া তুমি দেখতে পাচ্ছো না এই ছাগলটা আমাকে ধমক দিচ্ছে!’
ওদের কথোপকথনের মধ্যে জোনাকি এসে রুমে ঢুকে। ওদের এমন খুনসুটি দেখে জোনাকি চুপ করে রুমের কোনায় দাঁড়ায়। সম্রাট ধারা এবং অভি কে থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ অভি তুই ওকে নিয়ে এদিকে আয়।’
অভি ধারাকে নিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে ওকে বিছানার এক কোনে বসিয়ে দেয়। ধারার চোখ থেকে হাত সরাতে সরাতে বলল,
‘ আমি এখন তোর চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে দিচ্ছি কিন্তু খবরদার এখন একদম চোখ খুলবি না। আমি আর ভাইয়া যখন তোকে চোখ খুলতে বলবো তখন তুই চোখ খুলবি।’
ধারা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
‘ হয়েছে, হয়েছে, তোকে আর ঢং করতে হবেনা। যা করার তাড়াতাড়ি কর নাহলে কিন্তু আমি এক্ষুনি চোখ খুলে দিলাম।’
অভি তাড়াতাড়ি করে বলল,
‘ এই না না একটু অপেক্ষা কর। আমরা বলার পরে চোখ খুলিস।’
ধারা আর কিছু না বলে চুপ করে বসে থাকে। বিশ সেকেন্ডের মাথায় অভি এবং সম্রাটের কন্ঠ একসঙ্গে শুনতে পায় ধারা। ওকে চোখ খোলার জন্য বলেছে। চোখ করে তাকায় ধারা। ধারার দুই ভাই একটা ফোনের প্যাকেট হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
‘ এটাকি ভাইয়ারা!’
সম্রাট মজা করে বলল,
‘ আলাউদ্দিনের চেরাগ, পছন্দ হয়েছে তোর?’
ধারা আলতো চোখে তাকায় দুজনের দিকে। মৃদু স্বরে বলল,
‘ আমার জন্য!’
সম্রাট ফোনের প্যাকেটটা নিয়ে ধারার পাশে বসে বলল,
‘ কে বলল এটা তোর জন্য? এটাতো আমাদের আদরের ছোট বোনের জন্য।’
ধারা ফট করে ফোনের প্যাকেটটা নিজের কাছে নিয়ে বলল,
‘ এটা আমার, সত্যিই!’
অভি হালকা হেসে বলল,
‘ হ্যাঁ রে এটা তোর জন্য।’
ধারা খুশিতে কী করবে বুঝতে পারছে না। ফোনের প্যাকেট টা রেখে ধারা ওর বড় ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে। তা দেখে অভি মন খারাপের অভিনয় করে বলল,
‘ এত কষ্ট করে রোদে পুড়ে গিয়ে আমি ফোনটা কিনে আনলাম আর যত ভালোবাসা বস বড় ভাইয়ার! বাহ কী দারুণ দৃশ্য!’
ধারা সম্রাটের কাঁধে মাথা রেখে বলল,
‘ ভাইয়া কোথাও থেকে কিছু পোড়ার গন্ধ আসছে তাই না!’
সম্রাট ধারার সাথে হেসে দিয়ে বলল,
‘ তাইতো মনে হচ্ছে।’
জোনাকি এগিয়ে এসে অভির পাশে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বলল,
‘ তোমরা আমার ছোট ভাইকে নিয়ে কী শুরু করলে? তোমাদের জন্য তো অভির মন খারাপ হয়ে যাবে।’
জোনাকির কথা শুনে ধারা উঠে অভির এক হাত জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ আমি জানি আমার ভাইয়া কখনো মন করে থাকতেই পারে না। তাই না ভাইয়া।’
অভি মুচকি হেসে বলল,
‘ তাই না দুষ্টু, খুব জানিস।’
ধারা বুক ফুলিয়ে বলল,
‘ আমার ভাই আর আমি জানবো তাই কখনো হয়!’
ধারা ওর ভাবির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ভাবি শোনো না আমি তো লেখাপড়ার চাপে ব্যস্ত থাকবো। তখন না হয় তুমি ফোনটা ব্যবহার করো।’
সম্রাট মৃদু স্বরে বলল,
‘ এটা তোর জন্য কিনেছি আমরা। আর তোর ভাবির জন্য তোকে ভাবতে হবে না। কাল না হয় এই একই রকম আর একটা ফোন তোর ভাবির জন্য আমি কিনে আনব।’
ধারা হেসে দিয়ে বলল,
‘ তাহলে তো খুব ভালো হবে ভাইয়া। আমাদের দুজনেরই এক ফোন।’
অভি ওদের কথার মাঝে বলল,
‘ এই শোন কাল সকালে ফোনটা আমার কাছে দিয়ে দিস কি কি একাউন্ট খোলা লাগবে আমি খুলে দেবো। তোর একটা বান্দর বান্ধবী আছে না। তার ও তো কীসব অ্যাকাউন্ট খোলা আছে।’
ধারা সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ ঘটনা কি ভাইয়া? হঠাৎ করে তুই আমার বান্ধবীর খোঁজ নিয়েছিস? বিষয় টা যেনো কেমন কেমন লাগছে আমার কাছে।’
অভি পরিস্থিতি সামলোর জন্য বলল,
‘ ধুর তোর সাথে কথা বলার আর না বলা সমান কথা।’
এইটুকু বলে অভি আর দাঁড়ায় না। হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অভি বেরিয়ে গেলে তিনজনেরই হেসে দেয়।
চলবে….