#রঙিন_দূত – ২০,২১
লাবিবা ওয়াহিদ
২০
———————————–
বিয়ের আমেজে মুখোরিত কমিউনিটি সেন্টার। চারপাশে মানুষে’রা গিজগিজ করছে। সাথে আছে সকলের নন’স্টপ বকরবকর। এতো গুলো মানুষের কথায় যেন কানে কথার ঢোল পেটানো হচ্ছে। সবকিছু কেমন বিরক্তির ন্যায় লাগছে হৃধির। রিনা তো পটরপটর করেই যাচ্ছে। আজ হৃধি তার মা রাবেয়া খাতুনের থেকে এক পাও নড়েনি। তার আশেপাশের কাউকে এখন ভালো লাগে না। এর মাঝে শাফীনের সাথে দেখা হয় তার। টুকটাক কথাবার্তা হতেই শাফীন কারো ডাকে অন্যদিকে চলে গেছিলো। তবে হৃধির চোখ জোড়া কাউকে হন্য হয়ে খুঁজছে৷ মাহিনকে এতো ভীড়ের মাঝে পেলো না হৃধি। নিজে আসতে বলে নিজেই গায়েব? অদ্ভুত বিষয়। হৃধির সাথে রাইসার কয়েকজন কাজিনের দেখা হলেও হৃধি সকলকে না দেখার ভান করে চললো। কেন যেন এদের এড়িয়ে চলাই উত্তম মনে হলো তার। মাহিনকে না পেয়ে হৃধি দেরী করেনি। খাওয়া শেষ করে মায়ের সাথে বাড়িতে চলে আসে। রিনা তো বাড়ি ফিরেই খাবারের পতিক্রিয়া জানাতে ব্যস্ত।
হৃধি ক্লান্ত হয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ক্লান্ত লাগছে ভিষণ। পরিহিত ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো৷ নরম বিছানায় লেপ্টে যেতেই দু’চোখে ভর করলো রাজ্যের ঘুম।
ঘুম ভাঙ্গলো বিকালে। আড়মোড়া ভেঙ্গে ওয়াশরুমে ঢুকলো। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই রিনার বেপরোয়া কন্ঠস্বর শোনা গেলো। শব্দ ভেসে আসছে ড্রয়িংরুম হতে। হৃধি হাই তুলে সেখানে যেতেই দেখলো টিভিতে গানের সাথে তাল মিলিয়ে রিনাও গাইছে। তবে রিনার কন্ঠস্বর খুব বেসুরো। হৃধি চাইলো না এই বাক্যটি প্রকাশ করে রিনার ছোট মনকে আঘাত করতে। তাই হৃধি নিরবে সয়ে গেলো রিনার কর্মকাণ্ড! হৃধি চলে আসতে নিলেই রিনা চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
–“আরে আপা! এই নায়কটারে মাহিন ভাইয়ের মতো লাগে না?”
হৃধি তড়িৎ থেমে টিভির দিকে তাকালো। জিতের একটা গান দেখছে রিনা। কবে রিনার কোন আক্কেলে জিৎ কে মাহিন লাগছে? হৃধি ভ্রু কুচকে বলে,
–“তোমার চোখ কী ঠিক আছে? কোথায় জিৎ দা আর কোথায় মাহিন!”
–“কী জানি! ইদানীং চারপাশে খালি মাহিন ভাইরেই দেহি!”
দাঁত কেলিয়ে-ই বলে কথাটা। হৃধি এক তপ্তশ্বাস ফেলে। এই মেয়ের আবিজাবী কথাবার্তা আর গেলো না। হৃধি আশেপাশে তাকালো। রাবেয়া খাতুনকে দেখা যাচ্ছে না। রাবেয়া খাতুনকে খুঁজতে খুঁজতে হৃধি বলে ওঠে,
–“মা কোথায় রিনা?”
–“মাহিন ভাইয়ের বাড়ি! ও হ, ভালো কথা। আপনারে খালাম্মায় মাহিন ভাইয়ের বাসায় যাইতে কইসে! ঘুম থেইকা যেহেতু উইঠাই গেছেন তাহলে গিয়া দেহেন, খালাম্মায় কী করে!”
মাহিনের বাসায় হৃধির যেতে হবে? মুহূর্তে-ই সর্বাঙ্গ শিউরে ওঠে হৃধির। পরমুহূর্তে মাথায় আসে মাহিনকে তো আজ সারাদিনে একবারও দেখেনি। কোথায় ছেলেটা? কোনো মেসেজও দেয়নি, বিয়ে বাড়িতেও দেখা যায়নি। মনের সুপ্ত কোণে যেন মাহিনের জন্য চিন্তার দেখা মিলে। একপ্রকার আনমনা হয়েই অর্ধ মাথায় জড়ানো ওড়না টেনে নেয়। উদ্দেশ্য, মাহিনের বাসায় যাওয়া। হৃধি রিনার উদ্দেশ্যে বললো,
–“তুমি যাবে রিনা?”
–“না আপা। খালাম্মায় বাসায় থাকতে কইছে!”
–“আচ্ছা, দরজা লাগিয়ে দাও। আমি যাচ্ছি!”
বলেই কপালে ওড়নার বিচরণ চালিয়ে সদর দরজার দিকে অগ্রসর হয়। হৃধি অনুভব করতে পারছে বক্ষঃস্থলের তীব্র হৃদস্পন্দন! দরজা খুলে বেরিয়ে আসতেই দেখলো সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে তাঁরা। তাঁরার হাতে নজর যেতেই দেখলো কিছু ফল। হৃধি ভ্রু কুচকালো। তাঁরা হৃধিকে দেখতেই হাসি দিলো এবং বলে ওঠে,
–“আরে হৃধি, কোথাও যাচ্ছো?”
–“এইতো পাশের বাসাতেই! তুমি কোথাও যাচ্ছো নাকি আপু?”
–“হ্যাঁ, আমিও মাহিন ভাইদের বাসায় যাচ্ছি। ভাইয়ার জ্বর শুনলাম তাই মা বললো দেখা করে আসতে।”
হৃধি যেন আসমান থেকে পরলো। জ্বর মানে? মাহিন অসুস্থ অথচ হৃধি সামান্য টেরও পেলো না! মুহূর্তে-ই ধুকপুক শব্দ চিনচিন ব্যথায় রূপান্তর হলো। হাসি-খুশি ছেলেটার অসুস্থতা কেন যেন মানতে পারছে না হৃধি। হৃধির নিস্তব্ধতার মাঝে তাঁরা বলে ওঠে,
–“চলো একসাথেই ভেতরে যাই!”
——————————————
ফ্ল্যাটটা যেন বেশ বড় লাগছে হৃধির নিকট। গোছানো আসবাবপত্র সাথে রঙের তাজা ঘ্রাণ। দেয়ালে নানান ফ্রেমের সমাহার। বিখ্যাত কিছু দৃশ্য সেসব ফুটে উঠেছে। ফ্ল্যাটের আনাচে-কানাচে নানান সবুজ লতা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ফাতিমা বেগম কতটা সৌখিন এবং গাছ প্রিয়। লিভিংরুমে সটান হয়ে বসে সবটাই পর্যবেক্ষণ করছে হৃধি। লিভিংরুম ফাঁকা, একাই অবস্থান করছে হৃধি। তাঁরা ফল নিয়ে মাহিনের রুমে ঢুকেছে ডিরেক্ট। বিষয়টা কেন যেন মানতে পারেনি হৃধি। পরমুহূর্তে নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা বাণী দিয়েছে। রাবেয়া খাতুন ফাতিমা বেগমের সাথে কিচেনে। এদিকে হৃধির হাত দুটো যেন ঘামছে। গলাটাও শুকিয়ে কাঠকাঠ। মাহিন’রা এই ফ্ল্যাটে এসেছে প্রায় দশ থেকে বারো দিন হয়েছে। কিন্তু হৃধি একবারও তাদের বাসায় প্রবেশ করার মতোন সাহস সঞ্চার করতে পারেনি। অজানা আতঙ্কে তার বুক কাঁপতো। সেখানে হৃধি স্বয়ং মাহিনের ফ্ল্যাটের লিভিংরুমে বসে। অস্বস্তি একটু তো হবেই। তবে মাহিনের হুটহাট জ্বরের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। এর মাঝেই রাবেয়া খাতুন এবং ফাতিমা বেগম কথা বলতে বলতে লিভিংরুমে প্রবেশ করলো। হৃধি পিটপিট করে তাদের লক্ষ্য করে পুণরায় দৃষ্টি নত করে ফেলে। একরাশ জড়তা ঘিরে ধরেছে তাকে। ফাতিমা বেগম তার হাতের ট্রে-টি হৃধির সামনে থাকা টি-টেবিলে রাখলো। ট্রে-তে বিস্কিট, পায়েস এবং চা। হৃধি এসব দেখে আওড়ায়,
–“এসবের কী দরকার ছিলো আন্টি?”
–“প্রথমবার এলে আমাদের বাসায়। খালি মুখে বিদায় করবো ভাবলে কীভাবে?”
হৃধি মায়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। রাবেয়া খাতুন ইশারায় আশ্বাস দেয় এবং খেতে আদেশ করে। মায়ের আদেশ পেয়ে হৃধি শুধু একটি বিস্কিট হাতে নেয় এবং ছোট করে কামড় বসায়। দৃষ্টি তার বরাবরের মতোই নত। এর মাঝে শুনতে পেলো রাবেয়া খাতুন এবং ফাতিমা বেগমের কথোপকথন।
–“ছেলেটাকে যে কী করবো বুঝে উঠতে পারি না ভাবী। বারবার বলেছিলাম, রাতে বের হলে সোয়েটার বা জ্যাকেট গায়ে দিবি। রাতে শীতের প্রকোপ থাকে। কিন্তু ছেলে আমার কথা শুনলে তো! এখন বাঁধলো তো জ্বর।”
–“জুয়ান ছেলে। এরকম ভুলত্রুটি থাকেই। আপনি চিন্তা করবেন না ভাবী, ইনশাল্লাহ মাহিন দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। আপনি শুধু ভালোভাবে খেয়াল রাখবেন তাতেই হবে!”
উত্তরে ফাতিমা বেগম শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মুখশ্রীতে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ। এসব শুনে হৃধি যেন আরও নেতিয়ে পরলো। গতকাল রাতে মাহিন যে তার জন্যেই বেরিয়েছিলো! নির্ঘাত হৃধির চিন্তায় জ্যাকেট গায়ে পরতে ভুলে গেছে। হৃধির চোখে-মুখে অপরাধবোধ ভীড় জমালো। স্বীকার না করলেও এটাই সত্যি, মাহিনের এই জ্বর তার জন্যেই এসেছে। কিন্তু হৃধি তো এরকমটা চায়নি! তাহলে কেন মাহিন এতটা কেয়ারলেস হলো? কই হৃধির বেলায় তো তার চিন্তার শেষ থাকে না, অথচ মানুষটার নিজের দিকেই খেয়াল নেই?
হৃধি তপ্তশ্বাস ফেললো। ফাতিমা বেগমের হতে যা শুনলো তাতে বুঝলো সকাল থেকে নাকি চোখ-নাক লাল হয়ে ছিলো ঠান্ডায়। জ্বরটা নাকি সাড়ে বারোটার পর গিয়ে গায়ে ভর করে। এর মাঝেই তাঁরাকে আসতে দেখা গেলো৷ তাঁরা রাবেয়া খাতুনকে সালাম জানিয়ে ফাতিমা বেগমের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
–“আন্টি, মাহিন ভাইয়ার জন্যে কিছু ফ্রুট’স এনেছি৷ খাইয়ে দিয়েন। উনি তো ফ্রুট’স খেতেই চান না। এমন হলে চলে নাকি বলুন তো? জোর করে খাওয়াবেন!”
–“জোর করেই তো খাওয়াই। এখন কী করছে মাহিন?”
–“উঠে বসেছে। আমি-ই তো সাহায্য করলাম!”
হৃধির ভেতরটা কেমন যেন ধ্ক করে উঠলো। তাঁরা কী কোনো ভাবে তাকে শুনিয়ে কথাটা বললো নাকি? তাঁরার ব্যবহারটা ইদানীং অনেক বদলে গেছে। হৃধি তার মায়ের দিকে তাকালো। তার এমন ভাব যেন তাঁরার কোনো কথা কান দিয়ে ঢুকে-ইনি। তাঁরা হৃধির পাশে বসে ফাতিমা বেগমের সাথে আলাপে ব্যস্ত হবার পূর্বেই তার মুঠোফোনটি বেজে উঠলো। হৃধি কোণা চোখে তাঁরার ফোন চেক দিতেই দেখলো তাঁরার মায়ের কল। তাঁরা কল রিসিভ করে কথা বললো। কল কাটতেই ফাতিমার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
–“আজ উঠতে হবে আন্টি। আম্মু বলেছে এখনই বাসায় যেতে!”
–“তাহলে আবার এসো। খুব কথা হবে!”
তাঁরা ফাতিমা বেগমকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। তাঁরার ব্যবহার এমন যেন পাশে বসা মেয়েটিকে সে চিনেই না। এতে হৃধির কিছুটা কষ্ট হলেও নিজেকে সামলে নিলো।
রাবেয়া খাতুনের সাথে হৃধি মাহিনের রুমে গেলো। মাহিনের রুমে পারফিউমের অর্থাৎ মাহিনের নিজস্ব এক ঘ্রাণ বিরাজমান। হৃধি পিটপিট করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। যতোই মাহিনের ত্রি-সীমানায় যাচ্ছে ততোই যেন হৃধির অবাধ্য মন ধুকধুক শব্দ করেই চলেছে। ভেতরে প্রবেশ করতেই হৃধি বিছানায় মাহিনকে আবিষ্কার করলো আধশোয়া অবস্থায়। রাবেয়া খাতুনকে দেখতেই ধীরে ধীরে উঠে বসলো। হৃধি মায়ের পেছন থেকে উঁকি দিয়ে মাহিনকে দেখলো। কী করুণ অবস্থা ছেলেটার। চেহারার তেঁজী ভাবটা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে। সম্পূর্ণ মুখশ্রী লাল আভায় আবৃত। নাকটা তো অসম্ভব লাল। কী আদুরে লাগছে মাহিনকে। মাহিন জোরপূর্বক হেসে রাবেয়া খাতুনকে আহত কন্ঠে সালাম জানালো।
মাহিনের সালামে রাবেয়া খাতুন যেন চমৎকার হাসলেন। হেসেই সালামের উত্তর দিলো।
–“এখন কেমন আছো বাবা?”
–“জ্বী আন্টি, কিছুটা ব্যাটার!”
বলেই রাবেয়ার পিছে অবস্থানরত প্রেয়সীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। মুহূর্তে-ই দৃষ্টি আদান-প্রদান হয় দুই জোড়স আঁখির, দু জোড়া অনুভূতির! হৃধির ভেতরটা কেমন মুচঁড়ে উঠলো। তড়িৎ দৃষ্টি ঘুরিয়ে ফেলে হৃধি। মাহিনের দৃষ্টিতে কিছু ছিলো। এই দৃষ্টি হৃধিকে পাগল করে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট।
–“আপনারা দাঁড়িয়ে কেন, বসুন।”
বলতে বলতেই অসুস্থ হাতে নিজের পাশের অংশটুকু ঝেড়ে গুছিয়ে দিলো। হৃধি শুধু মাহিনের রুমটা দেখছে। এই প্রথম মাহিনের রুমে এসেছে। তাইতো ভেতরের অনুভূতিগুলো বড্ড পোড়াচ্ছে হৃধিকে। রাবেয়া খাতুন মাহিনের পাশেই বসলো। আর হৃধি বসলো মাহিনের টেবিলের চেয়ারটিতে। রাবেয়া খাতুন পরম মমতায় মাহিনের কপাল ছুঁয়ে দেখলো।
–“আরে জ্বর তো এখনো আছে। ওষুধ নিচ্ছো তো?”
–“জ্বী আন্টি। ইনশাল্লাহ দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবো!”
বলে আড়চোখে হৃধির দিকে দৃষ্টি ঘোরায়। হৃধির কাঁপা হাত মুঠিবদ্ধ করে চুপ করে বসে রয়। এর মাঝে রাবেয়ার হাতে থাকা ফোনে কল আসলো। রাবেয়া খাতুন কানে ফোন নিয়ে বাহিরে চলে যায়। রাবেয়া খাতুন যেতে দেরী কিন্তু মাহিনের লাগামছাড়া কথা বলতে দেরী নেই!
–“পাশে এসে বসুন হৃধি!”
–“আমি এখানেই ঠিকাছি!”
–“আপনি আসবেন।”
–“না!”
–“হ্যাঁ!”
–“না!”
–“পানি খাবো পানি দিয়ে যান!”
হৃধি নিশ্চুপ হয়ে পানির জগ থেকে পানি ঢেলে মাহিনের কিছুটা কাছে রেখে দেয়। দ্রুত আসতে নিলে মাহিন খপ করে হৃধির হাত ধরে ফেলে। মাহিনের উষ্ণ স্পর্শ হাতে পেতেই হৃধির সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো। হাত ছাড়াতে নিলে মাহিন সর্বশক্তি দিয়ে হৃধিকে বসিয়ে দিলো। হৃধির বসার ঝাকুনি বিছানায় থাকা গ্লাসের সব পানি বিছানাতেই পরে ভেসে গেলো। মাহিন অপলক দৃষ্টিতে হৃধিকে দেখতে লাগে এবং থমথমে মুখে আওড়ায়,
–“অসুস্থ আমাকে কই সেবা করবেন তা না করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন?”
–“ছাড়ুন আমায় মাহিন, আম্মু এখনই এসে পরবে!”
–“আমার কাছে আসলে কেন কৈ মাছের মতোন ছটফট করেন আপনি? আমি তো আপনাকে নিষিদ্ধভাবে স্পর্শ করি না। নিষিদ্ধ স্পর্শ করলে তখন কী করবেন শুনি?”
–“ভাষায় লাগাম দিন!”
–“আপনাকে দেখলে লাগাম কোথায় যেন হারিয়ে যায়। যাকে বলে মস্তিষ্ক পুরোই ফাঁক হয়ে যায় আমার।”
~চলবে, ইনশাল্লাহ।
#রঙিন_দূত – ২১
লাবিবা ওয়াহিদ
—————————-
ইদানীং সময়টা যেন হৃধির বিপক্ষে অবস্থান করছে। রাবেয়া খাতুন গিয়েছেন তার ভাইয়ের বাড়িতে। সকালে হুট করেই মামা চলে আসেন এবং বোনকে নিয়ে যান। হৃধিকে রাবেয়া খাতুন নেয়নি। বলা বাহুল্য হৃধি যেতে চায়নি। আত্নীয়দের বাসায় আসা-যাওয়া খুব কম হয় হৃধির৷ তার উপর মাহিন যা কান্ড ঘটিয়েছে, এতে রক্তিমের মুখোমুখি হওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। তাইতো শরীর খারাপের ভান ধরে বাসাতেই থেকে গেলো। আজ হৃধির ভার্সিটি নেই। কোনো এক কারণে আজ ক্লাস হবে না, এমনটাই জানিয়েছে ত্বোহা। রাবেয়া খাতুন রিনাকে হৃধির নিকট রেখে যায়। এবং হৃধিকেও নানান উপদেশ দিয়ে যায়। যেহেতু আগামীকাল সকালেই করিম উল্লাহ ফিরবেন সেহেতু রাবেয়া খাতুনও আজকের দিনটা ভাইয়ের বাড়িতে কাটানোর চিন্তা করলেন। কারণ, করিম উল্লাহ’র অফিসের জন্যে এবং খাবার-দাবারের জন্যে রাবেয়া খাতুন কোথাও নিশ্চিন্তে বেড়াতে পারেন না। তাইতো বেশিরভাগ সময় বাসাতেই কাটান। আজ যেহেতু সুযোগ এসেছে তা হাতছাড়া করা যায় বুঝি?
হৃধি শুয়ে বসে কাটাচ্ছে রুমে। তার বারংবার স্মরণে আসছে গতকালের মাহিনের আচরণ। মাহিনের জন্য-ই পানি দিয়ে অর্ধেক বিছানা ভিঁজে একাকার হয়ে গেছিলো। হৃধি মাহিনের থেকে সরে আসতেই রাবেয়া খাতুন ভেতরে প্রবেশ করেছিলো। আরেকটুর জন্য হৃধির প্রাণপাখি উড়ে যায়নি। কী ভয়ানক এই ছেলের কাজ কারবার! ভাবতেই সর্বাঙ্গ শিউরে উঠে। এসবের মধ্যে আবার মাহিনের লাগামছাড়া কথাবার্তা। জ্বরে কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে? এতো ঠোঁটকাটা মানুষ কীভাবে হয়? মাহিন কী উপলব্ধি করতে পারে না, তার এসব লাজহীন কথাবার্তায় হৃধি কতটা লজ্জা পায়? হৃধির যে ইচ্ছা করে মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে। ইচ্ছা করে নিজেকে কঠিন কোনো জায়গায় লুকিয়ে ফেলতে যেখানে মাহিনের মতো নির্লজ্জর দেখা পাবে না। মাহিনের এসব কর্মকান্ডে হৃধি মাহিনের সম্মুখীনও হতে হিমশিম খায়।
হৃধির এত এত ভাবনার মাঝে অনুভব করলো আবারও তার গাল জোড়া জ্বলছে, চোয়াল আলতো আলতো কাঁপছে। গালে হাত দিতেই বুঝলো তার গাল গরম নয়তো তার হাত প্রচন্ড রকম ঠান্ডা। হৃধির হাত ছিটকে আসলো গাল হতে। এসব আর সহ্য হচ্ছে না তার, একদম না।
এর মাঝে ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। সেকেন্ডের মধ্যেই সেই রিংটোনের শব্দ বিলুপ্ত হয়। বোঝা যাচ্ছে, মেসেজ এসেছে। হৃধি শোয়া থেকে উঠে বসে। অতঃপর বিছানা ছেড়ে টেবিল থেকে মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে পুণরায় বিছানায় শুয়ে পরলো। ফ্যান ধীর গতিতে চলছে। ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূতিও আসছে। হৃধি শুয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই চমকে উঠলো।
–“আমার ফ্ল্যাটে আসুন হৃধি! আর্জেন্ট!”
হৃধি হকচকালো, ভড়কালো। কী বলছে এই আধ পাগল? সে কোন সুখে মাহিনের বাসায় যাবে? পাগল নাকি পেট খারাপ? এছাড়া ফাতিমাও নেই বাসাতে। কার ভরসায় ওই ভয়ংকরের চৌকাঠে পা রাখবে? কখনোই না, মরে গেলেও না!
হৃধির রিপ্লাই না পেয়ে মাহিন সোজা কল করলো হৃধিকে। হৃধি ধরবে না বলে ঠিক করলেও মাহিনের অসুস্থতার জন্যে নিরবে সয়ে গেলো। কাঁপা হাতে কল রিসিভ করতেই মাহিন খুঁক খুঁক শব্দে কাশতে কাশতে ভিন্ন গলায় আওড়ালো,
–“বাসায় আসুন হৃধি। মা নেই, নাস্তাও করিনি। প্লিজ আসুন, আমার খুব খারাপ লাগছে!”
হৃধি চট করে উঠে বসলো। আবারও ফোনের অপরপ্রান্ত হতে কাশি এবং হাঁচির শব্দ পেলো। শব্দ পেলো কঠিন ভাবে নাক টানার। একদিনের ব্যবধানে কন্ঠ কতটা পাল্টে গেছে মাহিনের। এতো গুরুতর অবস্থা? হৃধির ছোট্ট হৃদয়টা হুট করেই মুঁচড়ে উঠলো। কেন জানি না মাহিনের এই অসহায়ত্ব সে মানতে পারছে না। খায়ও নি কিছু। হৃধি এসব কীভাবে মেনে নিবে? যতোই সে নিজ অবস্থানে অটল থাকুক, কারো করুণ সময়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকে না সে। হৃধি কম্পনরত কন্ঠে আওড়ায়,
–“শা..শাফীন নেই?”
–“মেডিসিন আনতে গেছে। এছাড়া বুয়া আসেনি। শাফীন কখনো রাঁধেনি। আপনি আসবেন না?”
শেষোক্ত বাক্যটিতে যেন একরাশ আকুতির সন্ধান পেলো হৃধি। এই আকুতিতে হৃধি কেন, পাহাড়ও গলতে প্রস্তুত। হৃধি কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ওভাবেই বসে রইলো। নিশ্চুপ হয়ে শুনতে লাগলো মাহিনের ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ। সর্দিতে নিঃশ্বাসের শব্দ যেন তীব্র হয়ে গেছে। হৃধি বেশ সময় নিয়ে মিনমিন স্বরে আওড়ায়,
–“আসছি!”
পরপরই কলের অপরপ্রান্ত হতে কয়েকজনের চিৎকারের শব্দ শোনা যায়। পরমুহূর্তে শোনা গেলো মাহিনের ধমকানোর শব্দ!
–“শা*** ইডিয়েট গুলা, শাট আপ! এতো কষ্টে রাজি করালাম আর তোরা লাস্ট মোমেন্টে সব ভেস্তে দিচ্ছিস?”
হৃধির শ্রবণে সবটাই এলো। মুহূর্তে-ই হৃধির ঠান্ডা মেজাজ ক্রোধে পরিণত হলো। মাহিন তাহলে এতক্ষণ নাটক করছিলো? কই, হৃধি তো ঠিকই রাফিদ, সাব্বির এবং সিফাতের কন্ঠস্বর শুনতে পেলো! এরকম ড্রামার মানে কী? রাগে – ক্ষোভে হৃধি কল কেটে বন্ধ করে দিলো। আয়নার চোখ যেতেই দেখলো হৃধির চোখ দু’টো লাল, প্রচন্ড লাল! অপমান বোধ আর লজ্জা তাকে ভালোরকম চেপে ধরেছে। এদিকে মাহিন কলের উপর কল দিয়েই চলেছে। হৃধি একটা কলও ধরলো না। ফোন সাইলেন্ট করে রুম থেকেই বেরিয়ে গেলো। মাহিন এবার তার সীমা অতিক্রম করে গেছে।
সকাল সাড়ে এগারোটা। হৃধি নাক লাল করে লিভিংরুমে বসে রইলো। ভেতরটা তার দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। রিনা তখন কাজে ব্যস্ত। কাজের সাথে তার গুণগুণিয়ে গান গাওয়া বন্ধ হচ্ছে না। এর মাঝে কলিংবেল বেজে ওঠে। হৃধি একই ভাবে টিভির দিকে তাকিয়ে। তার ধ্যান আশেপাশের কোথাও নেই। রিনা ঝাড়ু ফেলে দ্রুত সদর দরজার দিকে ছুটলো। দরজা খুলতেই হৃধির কান খাড়া হয়ে গেলো।
–“হৃধি আপু আছেন?”,
–“হ, আছে আপায়। আপনের কী কাম?”
হৃধি চট করে ঘাড় বাঁকালো। পিছে ঘুরে তাকাতেই শাফীনের ঘর্মাক্ত মুখটা নজরে এলো। হৃধি পুণরায় সটান হয়ে বসে পরলো এবং টিভিতে সকল ধ্যান দেয়ার প্রচেষ্টা চালালো। সে উঠবে না, মাহিনের মুখোমুখি তো হবেই না।
–“আসলে মাহিন ভাইয়ের তাকে প্রয়োজন। হুট করে ভাইয়ের সর্দি আর জ্বরটা বেড়েছে। সকাল থেকে নাস্তাটাও করেনি। এদিকে মাকে কল করেছি, মা আসতে আসতে প্রায় দুপুর হয়ে যাবে। যদি আপু রান্না করে দিতো তাহলে ভাইয়া খেত!”
রিনা যেন আসমান হতে পরলো। সকল উত্তেজনা যেন তাকেই ঘিরে ধরলো। মাথায় হাত দিয়ে বলে ওঠে,
–“নাউজুবিল্লাহ! এসব কী কন আপনে? ভাইয়ে অসুস্থ আপনে আগে কইবেন না?”
শাফীন করুণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো হৃধির দিকে। হৃধি কিছুটা এগিয়ে এসেছে। হৃধি দ্রুত দৃষ্টি ঘুরিয়ে ফেলে।
–“ভা..সরি আপু, প্লিজ আসুন। ভাইয়া কিচ্ছু খেতে চাইছে না! দেখেন, আমি নাস্তা অবধি কিনে এনেছি। এগুলো না খেলে মেডিসিন কীভাবে নিবে বলুন তো?”
–“আপা! আপনে একদম দেরী কইরেন না। জলদি যান, ভাই নিশ্চয়ই কোনো কারণে আপনারে খুঁজতাসে!”
–“যা জানো না তা নিয়ে কথা বলো না রিনা। শাফীন, তুমি তোমার ভাইরে ধীরে-সুস্থে খাইয়ে দাও। এখানে আমায় টানছো কেন?”
–“টানছি কী আর সাধে? ভাই যে…”
শাফীন বাকিটুকু বললো না। হৃধির যেন বুঝতে অসুবিধা হলো না শাফীন কী বলতে চাইছে? হৃধি লম্বা করে নিঃশ্বাস ফেললো। অতঃপর মাথায় ওড়না জড়িয়ে রিনার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
–“দরজা ভালো ভাবে লাগিয়ে দেও, আমি আসছি!”
————————-
মাহিনদের ফ্ল্যাটের কোথাও মাহিনের বন্ধুদের দেখলো না হৃধি। হৃধি ওড়নার এক অংশ মুখের আশেপাশে বিচরণ করতে করতে আওড়ায়,
–“রাফিদ ভাইয়ারা না এসেছিলো?”
–“হ্যাঁ, ভাইয়া বের করে দিয়েছে।”
হৃধি পুণরায় কোনো কথা বললো না। আজ সে মাহিনকে কঠিন কথা শুনাবেই। পেয়েছে টা কী? এভাবে অনুভূতি নিয়ে মজা করা কোনো মহৎ কাজ নয়! শাফীনকে রেখেই মাহিনের নির্ধারিত রুমে চলে যায়। কিন্তু এটাই যেন হৃধির সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিলো। হৃধি অস্ফুট স্বরে চিৎকার করে পেছনে ফিরে গেলো। মাহিন তড়িৎ হাতের টি-শার্টটা পরে নিলো। মাহিন নিজেও বুঝতে পারেনি হৃধি হুট করে তার রুমে ঢুকে যাবে।
–“আপনি হুট করে রুমে ঢুকেছেন কেন?”
–“আমি জানতাম নাকি এরকম কিছু হবে!”
–“এদিকে ফিরুন, আমি টি-শার্ট পরিহিত!”
হৃধি ঘাড় বাঁকিয়ে পিটপিট করে মাহিনের দিকে তাকালো। নাহ, মাহিন সত্য বলছে। অদ্ভুত অজানা কারণে হৃধির গাল জোড়া লাল হয়ে গেলো৷ রাগটাও কোথায় যেন উবে গেলো। হৃধি ধীরে ধীরে সামনে ফিরলো। আহহ!! এই অনুভূতি! মাহিনকে দেখে হৃধি কেন লজ্জা পাচ্ছে? আশ্চর্য! আস্ত বে’য়া’দ’প এই অনুভূতি। মাহিন এক গাল হেসে ভাঙ্গা গলায় আওড়ায়,
–“আরে রে! উদোম শরীরে ছিলাম আমি আর লজ্জায় লাল হচ্ছে উনি। এতো লজ্জা কই পান আপনি হৃধি?”
হৃধি নিশ্চুপ। গলা দিয়ে একটা শব্দও বের হলো না। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে হৃধি তার পূর্বের রূপে ফিরে এলো।
–“আপনি আমায় নিয়ে গেম খেলছেন মাহিন? এসবের মানে কী?”
–“কোন সব?”
মাহিন বোকার মতো চাহনি দিয়ে হৃধিকে পাল্টা প্রশ্ন করলো। হৃধির যেন গা জ্বলে উঠলো মাহিনের নির্দোষ মনোভাব দেখে!
–“নাটক করবেন না। আপনি মিথ্যা বলে আমায় আনতে চাইছিলেন?”
–“আমি মিথ্যা বললে শাফীন কেন আনলো আপনায়?”
মাহিনের ভঙ্গিতে হৃধির কোনটাই নাটক মনে হলো না। যেই ছেলে রাত দুটোয় তার বারান্দা টপকে রুমে ঢুকতে পারে, সেই ছেলে অন্তত এই ধরণের নাটক করবে না। তার সামর্থ্য থাকলে সে নিজেই হৃধির বাসা থেকে হৃধিকে ধরে নিয়ে আসতো। হৃধি আটকে গলায় আওড়ায়,
–“তা..তাহলে আপনার বন্ধু..রা?”
–“আমি কল লাউড স্পিকারে দিয়েছিলাম। আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন আমি কাশছিলাম? আমার কাশির শব্দে আপনার মিইয়ে যাওয়া কন্ঠস্বর শোনা মুশকিল ছিলো। তাই মূলত লাউড স্পিকার ছিলো। আপনি যখন বললেন আসবেন তখনই বে’য়া’দ’প, বা’ন্দ’র গুলা চেঁচাতে চেঁচাতে রুমে ঢুকে এবং আপনার কথাটাও শুনে ফেলে। আপনি কী আমায় অবিশ্বাস করেছিলেন হৃধি?”
হৃধি শুকনো ঢোঁক গিললো। ভেতরটা ভিষণ রকম কাঁপছে তার। মাহিনের আদুরে মুখশ্রী দেখে হৃধির সব রাগ ধুঁয়ে মুছে গেলো। নিজের কান্ডে হৃধি নিজেই অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে। সে তো সচরাচর রাগে না, তাহলে আজ এতো রাগলো কীভাবে? হৃধি অনুতপ্তে মুখটা ছোট করে রাখলো। রেগে ফোন রেখেছিলো দশটার দিকে। এখন তো সাড়ে এগারোটার বেশি বাজছে। তার জন্য ছেলেটা এখনো না খেয়ে। হৃধি আধো কন্ঠে আওড়ালো,
–“স..সরি!”
–“মানবো না!”
–“কেন?”
–“আপনি নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ালে আমি মানবো। এর আগে নয়!”
হৃধি বেক্কলের মতো মাহিনের দিকে তাকালো। চোখ বড় বড় করে বললো,
–“শাফীন না খাবার এনেছে?”
–“ওগুলা তিতা, মেয়াদহীন, অখাদ্য! আমি আপনার হাতের রান্না খাবো! নয়তো আমি না খেয়ে আছি এবং থাকবাও!”
হৃধি খেয়াল করলো মাহিনের চোখ-মুখ আগের তুলনায় আরও লাল হচ্ছে। আচ্ছে, কোনোক্রমে মাহিনের জ্বর কী বাড়ছে? হৃধি আর দেরী করলো না। দ্রুত ছুটলো মাহিনদের রান্নাঘরের দিকে।
শাফীন একে একে সব দেখিয়ে দিলো। এও বললো মাহিন আলু পরোটা বেশি ভালোবাসে। হৃধি দ্রুত আলু সিদ্ধ বসালো৷ শাফীনদের কাজের মহিলাটা এসেছে। শাফীন তাকে বলে দিলো হৃধিকে যেন সাহায্য করে। এই বলেই শাফীন নাচতে নাচতে রান্নাঘর থেকে বিদায় হলো। আর হৃধির নাকে-মুখে অবস্থা। মহিলার সামনে অস্বস্তি হলেও নিজের রান্নাটা দ্রুত করতে লাগলো। মহিলাও হৃধিকে হাতে হাতে সাহায্য করছে। পরমুহূর্তে হৃধির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেও ভুলছে না। একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেই আলু পরোটা আর মুরগির তরকারি রান্না করলো হৃধি। খাবার বেড়ে শাফীনের হাতে খাবার ধরিয়ে দিয়ে হৃধি বিদায় হলো। যাওয়ার আগে মাহিনের রুমে গিয়ে এও বলে এসেছে।
–“আমার রান্না খেতে চেয়েছেন, রেঁধেছি। এখন আমি আর থাকছি না, যেকোনো মুহূর্তে আন্টি চলে আসবে! সেই আপনার খেয়াল রাখবে!”
~চলবে, ইনশাল্লাহ।