#এল_এ_ডেইস
পর্ব ৪০
লেখনী মাহীরা ফারহীন
রুপোলী রঙের চকচকে ঝকঝকে মেট্রো। রেললাইন ফাঁকা। ট্রেন এসে পৌঁছোয়নি এখনো অব্দি। পরিষ্কার সুবিস্তীর্ণ আকাশ। পেলব সাদা গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘগুলো যেন স্থির দাঁড়িয়ে পৃথিবী বাসীদের দেখছে। আদতে মেঘগুলোও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে কোনো দুর অজানার পথে। অপেক্ষমান যাত্রীরা কেউ বসে লস এঞ্জেলস টাইমসের খবরের কাগজ পড়ছে। কেউ বা বসে সেলফোনে মুখ গুঁজে রয়েছে। রায়েদ অপেক্ষায় এদিক ওদিক চাইছে। মাহীনের দেখা মিলছে না। কিন্তু মনে হচ্ছে ও আশেপাশেই কোথাও আছে। ধীর গতিতে হাঁটতে হাঁটতে পরখ করছে সবটা। ভিড়ের মাঝে সদ্য ফুটে থাকা পেঁয়াজি রঙের স্নিগ্ধ পদ্ম ফুলের মতো মেয়েটির দিকে চোখ আঁটকে গেল। পেঁয়াজি রঙের সোনালী সুতোর হালকা কাজ করা কুর্তি ও জিনস পরেছে মাহীন। গলায় সোনালি ওড়না পেঁচানো। কাঁধের একটু নিচ পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো ঢেউ খেলানো। বোধহয় কার্ল করেছে। রায়েদ এগিয়ে যাচ্ছে সেদিকে। মাহীন ওকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসল। সাধারণত ওর চোখের নিচের পাতায় কাজলের এক ক্ষীণ আঁচড় সবসময়েই দেখা যায়। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে আজ গাড়ো করে কাজল দিয়েছে। ডান কানে সোনালী পাথরের একটা টপ পরেছে। সবমিলিয়ে স্নিগ্ধ লাগছে। অসংখ্য ভিড়ের মাঝে এক অনন্যা যেন। মাহীন এসে এক গাল হেসে বললো, ‘মর্নিং!’
রায়েদ পরিপূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থেকে বলল,’মর্নিং। তোমাকে অন্যরকম লাগছে।’
‘ভালো লাগছে না?’
‘অন্যরকম সুন্দর লাগছে।’
মাহীনের গাল গোলাপিবর্ণ ধারণ করল। কোনো ক্রমে বলল,’আর তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে।’
রায়েদ একটা সাদা টি-শার্টের ওপর কালো শার্ট পরেছে এবং জিনস। ছোট ছোট রেশমি চুলগুলোয় এলোমেলো ভাব। সুন্দর মুখখানায় প্রফুল্লতার ছোঁয়া।
রায়েদ মুচকি হেসে বলল, ‘ধ্যাৎ ছেলেদের আবার সুন্দর বলে?’
‘তো সুন্দর লাগলে কী বলবো? বোকা তুমি।’
রায়েদ আর কিছু বললো না। কিছুক্ষণ পর লস এঞ্জেলস গামি ট্রেন স্টেশনে এসে পৌঁছল। সাড়ে এগারোটা বাজে। ওদের যাত্রাপথে টুকটাক কথা হলো। কেউ কোনো কথাই খুঁজে পাচ্ছে না যেন। কেমন জানি এক অস্বস্তি ভাব। ট্রেনে বসার পর হঠাৎ মনে পরে গিয়েছে এবার ওরা অফিশিয়ালি ডেটে এসেছে। ব্যস! রায়েদ কিছু বললেই মাহীন লজ্জায় গুটিয়ে যাচ্ছে। ট্রেন লস এঞ্জেলস পৌঁছল প্রায় দেড় ঘন্টা পর। মেট্রোতে সবসময়ই বেশি সময় লাগে। তার চেয়ে গাড়িতে ত্রিশ মিনিটের মতো লাগত। তবে ট্রেন যাত্রায় ক্যালিফোর্নিয়ার নজরকাঁড়া ছবির মতো সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো স্মৃতি বদ্ধ করা যায়। ট্রেনের জানালাকে মনে হয় এক চলন্ত ছবির ফ্রেম। ফ্রেমের ভেতর সাই সাই করে দৃশ্য পাল্টে যাচ্ছে। কোনো দক্ষ শিল্পীর অতি যত্নে আকা নিখুঁত ছবিগুলো। পরিষ্কার আকাশের নিচে কখনো চোখে পরে সুবিস্তৃত সবুজ ঘাসের মাঠ। কখনো থোকা থোকা হাজারো লাল টসটসে আঙ্গুরের বাগান। ওয়াইন ফ্যাক্টরি। আবার কখনো ছোট ছোট পাহাড়। পাহাড়ের সারা গা জুড়ে ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে পাইন কিংবা সিডার গাছ। মাঝেমধ্যে গোলাপি ফুলে মোড়া ঝাঁকড়া ক্র্যাবঅ্যাপলের গাছও চোখে পরল। এল এতে নামার পর ওরা প্রথমেই ঠিক করল আগে লাঞ্চটা সেরে ফেলবে। পেট খালি থাকলে ঘুরেফিরে মন ভরবে কী করে? মাহীনের খুব ইচ্ছা ছিলো মুসো এন্ড ফ্র্যাঙ্ক থেকে লাঞ্চ করবে। কিন্তু তা আর হলো কোথায়। মুসো এন্ড ফ্র্যাঙ্কের মতো বিখ্যাত শৌখিন রেস্টুরেন্টে সপ্তাহ খানেক আগে থেকেও বুকিং দিলে মাঝেমাঝে আসন পাওয়া যায় না। সেখানে ওরা হঠাৎ হাজির হয়েই আসন পেয়ে যাবে তা তো আকাশকুসুম ব্যাপার। ওরা অন্য একটা রেস্টুরেন্ট থেকে খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে স্টারলাইনের লাল রঙচঙে সিটি স্ট্রলিং বাস ধরল। স্টারলাইন সিটি স্ট্রলিং বাস বিশেষ ভাবেই পর্যটকদের সারা শহর দর্শন করানোর জন্যে। ওরা সোজা হলিউড ‘ওয়াক অফ ফেম’ এ গিয়ে পৌছলো। মাহীনের আনন্দ যেন গায়ে ধরে না। বাস থেকে নামার পর থেকেই প্রায় উড়ে উড়ে হাঁটছে। ‘ওয়াক অফ ফেম” মূলত রাস্তার পাশের চওড়া কালো টাইলস করা প্রশস্ত বোর্ডওয়াক। কালো টাইলসের মাঝে সারি সারি গোলাপি রঙা বড় বড় তাঁরা। এসব একেকটা তাঁরায় হলিউডের মোটামুটি সমস্ত তারকাদের নামই স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করা আছে। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ এই তারকাদের নাম খচিত কালো টাইলসের রাস্তা ধরে হেঁটে যায়। কোনো তাঁরা আবার খালি বসে থাকে নতুন তারকাদের অপেক্ষায়। কেনো যে এত টাকা খরচ করে ঘটা করে নিজের নাম তারকারা এই রাস্তায় লিখতে যায় কে জানে! দিন শেষে তো মানুষ তাদের নাম মারিয়ে হেঁটেই যাচ্ছে। ফুটপাথের পাশেই লম্বা বেড়ার মতো তাল গাছগুলো সারি সারি দাঁড়িয়ে। মাহীন হাঁটতে হাঁটতে বলল, ‘হাহ ওয়াক অফ ফেম থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামের তারাটা না ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল?’
‘হ্যা তা তো হয়েছিলোই। তবে ওটা এখন ফাঁকা তাঁরা। দেখে বিশেষ কিছু মনে হয় না।’
‘ইশ কী দশা।’ শেষের কথাটা আফসোস ভরা কন্ঠে বলল। রায়েদ জিজ্ঞেস করল,’এর আগে এল এ তে আসোনি কখনো?’
‘নাহ আমি তো ইউএসএ তেই এলাম ছয় মাস হতে চললো। বাই দ্যা ওয়ে তুমি কোন কোন স্টেট ঘুরেছো?’
রায়েদ প্রসন্ন কন্ঠে বলল, ‘ডিসি, ওয়েমিং, নিউ ম্যাক্সিকো,কেনটাকি, আটলান্টা, আরকানসাস ও টেক্সাসে গিয়েছি।’
‘ওয়াও তুমি তো অনেক জায়গা ঘুরেছো। নিউইয়র্ক যাওনি?’
‘নাহ ওখানে কখনো কেন জানি যাওয়া হয়নি।’
‘আচ্ছা তোমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর স্টেট কোনটা ছিল?’
মাহীন ভাইবা পরীক্ষার মতো একের পর এক প্রশ্ন করেই চলেছে। এ প্রশ্নের উত্তরে রায়েদকে কিছুটা ভাবতে হলো। ভেবে বলল, ‘প্রতিটা স্টেটেরই নিজস্বতা এবং সৌন্দর্য রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে ওয়েমিং গিয়ে। স্টেটটা বড় সুন্দর।’ মাহীন সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। ওরা ব্লেক লিভলি ও নিনা ডভরেভের নাম খচিত তাঁরা পার করে গেলো। ফুটপাথের পাশে আবার বড় বড় ছাউনি দিয়ে দোকান তৈরি করা হয়েছে। এসব দোকানে নানা রকম খুটিনাটি বর্ণিল জিনিসপত্র পাওয়া যায়। ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টের তাঁরার ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মাহীন বলল, ‘একটা মজার বিষয় হলো প্রথম প্রথম আমাদের যখন দেখা হয়েছিল তখন সত্যি বলতে তোমার বাড়ি ঠিক কেমন হতে পারে তা ভাবলেই আমার মাথায় অদ্ভুত একটা জায়গার ছবি ভেসে উঠতো।’
রায়েদ ভ্রু জোড়া উঁচু করে কৌতূহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,”কিরকম জায়গা মাথায় আসতো?’
মাহীন হাসল। অকপটে বলল, ‘এডওয়ার্ড কুলিনের অন্ধকার অন্ধকার ঠান্ডা নির্জন পরিবেশ ওয়ালা বাড়িটা।’ রায়েদ হেসে উঠল। হাসতে হাসতে বলল,’কেন কেন?’
মাহীন আমুদে গলায় বলল, ‘উম দেখো, তো আমার সবসময় মনে হতো তোমার সাথে এডওয়ার্ডের অনেক কিছু মিলে যায়। যেমন ও খুব ঠান্ডা ছিল এবং সকলের থেকে দূরত্ব বজিয়ে চলতো। তাছাড়া রহস্যময়ও ছিলো। আর তুমিও কী কম ছিলা নাকি? কতদিন পর্যন্ত আমিই রহস্যের মধ্যে ছিলাম তোমাকে নিয়ে। তাই আমার মনে হতো তোমার বাড়িও বুঝি নির্জন জায়গায় অমন টাইপের হবে। এমনকি তুমি দেখতেও খানিকটা রবার্টের মতো। সবই মোটামুটি মিলেছিল তুমিও ভ্যাম্পায়ার হলে তো হয়েই গিয়েছিল।’
রায়েদের সশব্দে হাসল। হাসি থামিয়ে বলল,’আমি আর ভ্যাম্পায়ার? তুমি পারোও বটে এত কিছু ভাবতে।’ মাহীন হেসে ঘাড় উচালো। হাঁটতে হাঁটতে জিমি ক্যামেল লাইভ এর স্টুডিও পার করল ওরা। অফ হোয়াইট রঙের নান্দনিক বিল্ডিং। রাস্তায় অনেকেই স্কেট বোর্ডিং করছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তায় কোথাও সামান্য ধুলাবালির লেশমাত্র নেই। অনেকে ফোন স্ক্রলিং করতে করতে কিংবা গান শুনতে শুনতে হাঁটছে। অদ্ভুত হলেও ছেলেরা বেশির ভাগ হাফ প্যান্ট ও টি-শার্ট পরে আছে। রায়েদ জিজ্ঞেস করল,’তোমার প্রিয় এক্ট্রেস কে?’
মাহীন সাথে সাথে বলল, ‘এমা ওয়াটসন এবং জেনিফার লওরেন্স।’
‘এবং প্রিয় এক্টোর?’
‘রবার্ট পেটিনসন।’
রায়েদ হঠাৎ হাসল। মাহীন জিজ্ঞেস করল,’এতে হাসির কী হলো?’
রায়েদ হাসি থামিয়ে বলল, ‘নাহ কী হবে? একটা ছোট ছেলে স্কেট বোর্ড থেকে পরে যাচ্ছিল।’
‘কোই আমি তো দেখলাম না।’
‘তুমি রবার্ট পেটিনসনের কথা মনে করছিলা তাই দেখোনি।’
মাহীন চোখ ছোট করে তাকাল ওর দিকে। রায়েদ বলল,’চলো আমরা দ্যা পাই হোলে যাই।’
রায়েদের দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলো রাস্তার অপর পারে ‘দ্যা পাই হোল’ নামক একটি ডেসার্ট পার্লার রয়েছে। রায়েদ বলল, ‘এখানকার ডেসার্ট অসাধারণ।’
‘তাহলে চলো দেখি কেমন।’ সায় জানিয়ে বলল মাহীন।
আরেকটু সামনে এগিয়ে গিয়ে রোডক্রসিং এলো। সিগন্যাল বারে সবুজ বাতি জ্বলতেই সকলে রাস্তা পার হতে উদ্ধুদ্ধ হলো। রাস্তার অপর পারে এসে আবার পেছনে হেঁটে চললো। এখানে রাস্তার দুইপাশের ওয়াক অফ ফেমের কালো টাইলস করা বোর্ডওয়াক। ডেসার্ট পার্লারে ঢুকতেই আকর্ষণীয় মিষ্টি মিষ্টি এক ঘ্রাণ নাকে এসে ঢাক্কা দিলো। কোথাও মৃদু স্বরে গান চলছে। তবে অতিরিক্ত কোলাহলের তোরে সেই গান চাপা পরে গিয়েছে। প্রতিটা টেবিলই ভরা। ওদের টেবিল পেতে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। এর মধ্যে ওরা ডেসার্টের অর্ডারটাও সেরে ফেললো। কিছুক্ষণ পর দুই আসন ওয়ালা টেবিল পেয়ে বসে পরল ওরা। বেশ জাঁকজমকপূর্ণ বাতি জ্বলছে। মাহীন চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক চাইছে। এই জায়গাটায় সব কিছুতেই অন্যরকম একটা ব্যাপার আছে। বোধহয় হলিউড বলেই এমনটা লাগছে। অন্যান্য কাস্টোমাররা বেশ উচ্চস্বরে কথা বলছে। কাজেই খুব বেশিই শব্দ হচ্ছে। তবে তা শুধু এখানেই নয়। এই মার্কিনীরা স্বভাবতই একটু উঁচুস্বরেই কথা বলে। রায়েদ এখনো মেনুই ঘাটছে। এবং মাঝেমাঝে মাহীনের দিকে চাইছে। মেনুটা রেখে দিয়ে বলল,’আচ্ছা তো এবারও বিলটা আমিই দিব।’
মাহীন সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি সামনের দিকে ঘুরালো। তীব্র কন্ঠে বলল, ‘হেল নো!’
‘হেল ইয়েস!’
‘না না দেখো লাঞ্চের বিলটা কিন্তু তুমিই দিয়েছিলা।’
বলল মাহীন।’
সো হোয়াট? এবারও আমি দিতে পারি না?’
‘হোয়াট দ্যা হেল? ডেটের প্রস্তাব তুমি দিয়েছ বলে কী সব বিল তুমিই দিবা!’
‘হ্যা আমি…ওয়েইট.. ওয়াট?’ হঠাৎ চমকে উঠল রায়েদ কথাটা শুনে। দ্বিধান্বিত হয়ে চেয়ে রইল। তারপর জিজ্ঞেস করল,’কী বললা আমি ডেটের প্রস্তাব দিয়েছি?’
‘হ্যা তো আর কী বলবো? তুমিই তো ডেটের প্রস্তাব দিয়েছো। ভুলে গিয়েছো নাকি?’
মাহীনের কপালেও বিভ্রান্তির ছাপ। রায়েদ বলল, ‘এক মিনিট এক মিনিট, ডেটের প্রস্তাব তো তুমি আমাকে দিয়েছো।’ মাহীন চোখ বড় বড় করে চাইল। চমকিত কন্ঠে বলল,’হোয়াট দ্যা হেল! আমি তোমাকে কোনো প্রস্তাব দেইনি। তুমি আমাকে দিয়েছো।’
‘তাই নাকি? কিভাবে দিলাম? কখন দিলাম?’ অবিশ্বাস্যের সঙ্গে বলল রায়েদ।
‘গতকাল দিয়েছো। চিঠি দিয়ে।’ রায়েদ চোখ সরু করে বলল,’চিঠি দিয়ে? আমি চিঠি লিখেছি? কিন্তু চিঠি তো তুমি আমাকে দিয়েছো।’
‘আমি কাউকে কোনো চিঠি দেইনি। তুমি দিয়েছো আমাকে।’ উৎকন্ঠিত স্বরে বলল মাহীন। রায়েদ কিছু বলতে যাচ্ছিল মাহীন তার আগে বলল, ‘এক মিনিট, তার মানে দাঁড়াচ্ছে আমরা কেউই একে অপরকে চিঠি লিখি নি।’
রায়েদ শান্ত কন্ঠে বলল, ‘তবে আমরা দুইজনই চিঠি পেয়েছি।’
মাহীন ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘তাহলে মাঝখান দিয়ে চিঠিগুলো দিল কে?’
ওরা দুজনই হঠাৎ কিছু একটা ভাবতে শুরু করল। মাহীন ভ্রু কুঁচকে টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন জানি একটা লাগছে। হঠাৎ কিছুটা বিব্রত ও বিচলতার হাওয়া তিরতির করে মনের আঙ্গিনায় নাড়া দিয়ে গেল। চিঠিটা পেয়ে কী আনন্দটাই না হয়েছিল অথচ সেটা রায়েদ দেয়ই নি। কী হবে যদি রায়েদকে নিয়ে ও যা ভাবত তাই সত্যি। হয়তো আসলেই রায়েদ ওকে সেরকম ভাবে দেখেই না। অথচ ও এত যত্ন নিয়ে তৈরি হয়ে চলে আসল। কী লজ্জা জনক ব্যাপার!
কিছুক্ষণ পর রায়েদ বলল,’তোমার ফ্রেন্ডরা যেমন কারসাজি করে জেনেট ও লিওকে ব্লাইন্ড ডেটে পাঠিয়েছিল। তেমনটাই আমাদের সাথেও করেনি তো।’
মাহীন মুখ তুলে চাইল। থমথমে মুখভঙ্গি। প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে পানসে কন্ঠে বলল, ‘কী জানি হতে পারে। গতকাল যখন চিঠিটা পেলাম তখন তো ওরা বেশ অবাকই হয়েছিল। জানতেও চাচ্ছিল এটা কার চিঠি। মনে তো হয়নি ওরাই এটা দিয়ে থাকতে পারে।’
রায়েদ জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি চিঠিটা আসলে পেয়েছ কোথা থেকে?’
‘রাবিত এসে দিয়ে গিয়েছে। এবং তুমি কোথা থেকো পেয়েছ?’
রায়েদ অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে চাইল। বলল, ‘রাবিত দিয়েছে? আমি আমার টেবিলে রাখা অবস্থায় পেয়েছি।’
তখনই একজন সুন্দরী ব্লন্ড ওয়েট্রেস এসে ওদের ডেসার্টগুলো টেবিলে রেখে গেল। আমেরিকান চিজকেক, চকলেট ক্রিসেন্ট এবং ডেম ব্লেঞ্চ। মাহীন বিরস মুখে বললো,
‘ওহ তাহলে মূল কথা হলো আমরা কেউই কাউকে কোনো প্রস্তাব দেইনি বাট ইভেনচুয়ালি ডেটে এসে পরেছি। এটা তো কিছু হলো না। কী আশ্চর্য!’ বলে এক লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো। ও রায়েদের দিকে একবারও তাকাচ্ছে না। তবে রায়েদ সরাসরি ওর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছে। মাহীনের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, কী যেন এক বিশাল ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। প্রফুল্ল ভাবটা কেটে গিয়ে এক রাশ বিষন্নতার ছায়া ওর চোখে মুখে। রায়েদ টেবিলের ওপর রাখা মাহীনের হাতটা ধরল। মাহীন কিছুটা চমকে উঠে ওর দিকে দৃষ্টি ফেরাল। রায়েদের হাত থেকে যেন শিরশিরে অনুভূতিরা মাহীনের সারা শরীরে প্রবাহিত হয়ে গেল। মাহীন উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রায়েদ মাহীনের চোখে চোখ রেখে শান্ত কন্ঠে বলল, ‘মাহীন হয়তো আমরা কেউই একে অপরকে প্রস্তাব দেইনি। বাট ডেটে তো স্বেচ্ছায়ই এসেছি তাই না? তাহলে কে মাঝখান দিয়ে এসব করেছে তাকে পরে ধরা যাবে। এখন ডেটটা এভাবেই কন্টিনিউ করতে কী কোনো সমস্যা আছে?’
মাহীনের মুখটা ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। অন্ধকারাচ্ছন্ন মনের আকাশের মেঘ কাটিয়ে রোদ উঠল। আবারও মনটা প্রফুল্লতায় ভরে উঠল। ফুলের ঘ্রাণে মাখা আনন্দময় অনুভূতিরা জোড় বাতাসের মতো কৃষ্ণ মেঘগুলোকে টেনে নিয়ে গেল। মাহীন হালকা হাসল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,’ঠিক আছে!’
রায়েদ বলল, ‘দেখলাম কিভাবে তোমার মন একদম ভালো থেকে খারাপ হয়ে যায়। আবার একদম মন খারাপ থেকে একদম মন ভালো হয়ে যায়। ‘
মাহীন বিচলিত ভাবে হাসল। তারপর খেয়াল হলো ওদের ডেসার্ট ইতোমধ্যেই দিয়ে যাওয়াও হয়েছে। মাহীন বলল,
‘তাহলে এবার ডেসার্ট এনজয় করি?’ রায়েদ সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল।
ইনশাআল্লাহ চলবে।