সৎ_মা লেখঃ #মাহাবুবা_মিতু পর্ব: ১১

0
319

উপন্যাস : #সৎ_মা
লেখঃ #মাহাবুবা_মিতু
পর্ব: ১১

আমি কোন মতে নিজেকে সামলে অফিসে গেলাম। ১১ টায় জরুরী মিটিং। কোন কিছুতেই মন বসছে না। অস্থির আমির বুকটা ভারী হয়ে আসছিলো ক্রমশ। আমি কেয়ারটেকারের ফোনে কল করলাম। কথা বলে ম্যানেজারকে বলে বেরিয়ে পরলাম অফিস থেকে। বাইক নিয়ে রওনা দিলাম ঢাকা কলেজের উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে কল করলাম আদিলকে।
পরিচয় গোপন করে বললাম
: স্যার আপনার একটা পার্সেল আছে, আমি আপনার ক্যাম্পাসেই আছি, আপনি কাইন্ডলি বলুন কোথায় আসবো আমি।
: কিসের পার্সেল…! আমি তো কিছু অর্ডার করিনি,
: আপনি আমাদের ফেসবুক গ্রুপের মেম্বার অফ দা মান্থ সিলেক্ট হয়েছেন, তাই আপনার জন্য সারপ্রাইজ গিফ্ট,
: কোন গ্রুপ…
: ভাইয়া আসলেই বুঝবেন। ব্যাপারটা সারপ্রাইজ।
: ও…
আচ্ছা আমি বাসা থেকে বের হয়েছি, রাস্তায় আছি। আপনি মেইন গেইটের সামনেই থাকেন।
: ওকে…

মিনিট পনের পার হতেই দেখলাম কয়েকজন বন্ধু সহ কলেজ এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে গেট দিয়ে ঢুকছে।

আমি বড় একটা শ্বাস নিয়ে ওর কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। আদিল আমাকে দেখে বিরক্ত হয়ে আমাকে এড়ানোর জন্য হাটার গতি বাড়িয়ে দিলো। আমিও ওর গতির সাথে তাল মিলিয়ে পিছে হাটতে লাগলাম। পিছন থেকে ডাকলাম, আদিল..
এই আদিল, শোন..
ও অনিচ্ছাকৃত ভাবে দাড়ালো, মুখে তখন বিরক্তি চরম পর্যায় ফুটে উঠেছে।

: কি ব্যাপার…
: তোমার সাথে আমার কথা আছে…
: আমার তো কোন কথা নেই আপনার সাথে
: প্লিজ পাঁচটা মিনিট সময় দাও আমাকে, আমি পাঁচ মিনিটের বেশী সময় নিব না তোমার।
: আমার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে, আমি এখন ব্যাস্ত, কথা শোনার সময় নেই
: আমি তোমার বড় হয়ে তোমাকে রিকুয়েষ্ট করলাম, প্লিজ পাঁচটা মিনিট…
: বলুন…
: একটু এদিকটাতে আসো….

এরপর আমরা দুজন দাড়ালাম ঢাকা কলেজের বিখ্যাত শান বাধানো পুকুরের পাশে। ওর সাথে কথা হলে বেশ কিছুক্ষণ। চেয়ে নেয়ে সময়ের কয়েকগুন পার হওয়ার পর আমি আর আমি নাই, অপরাধবোধ পাহাড় তখন আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। আমার কথা বলা বন্ধ হয়ে গেলো। কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

প্রথম দিকে খুবই উত্তেজিত হলেও আদিলকে আমি বোঝাতে সক্ষম যে ঐ দিন সন্ধ্যায় এমন কিছুই হয় নি যার জন্য এমন শাস্তি ওর পরিবার ওকে দিয়েছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত ওর নামও জানি না আমি। কারন আদিল আমাকে কিছুটা হলেও চিনে আগে থেকে। আমি আদিলকে বললাম আমাকে নিয়ে যাবে তুমি ওদের গ্রামের বাড়িতে…! আমি শুধু একবার ওকে সরি বলতে চাই।

আদিল বললো
: ভাইয়া ঐ পরিবারে এখনও ঝামেলা হচ্ছে এসব নিয়ে, আপনার যাওয়া ঠিক হবে না এ সময়ে । তাছাড়া আপনি ওখানে গিয়ে কি করবেন, ওর হারিয়ে যাওয়া সম্মান কি ফিরে আসবে আপনি গেলে কিংবা সরি বললে…
আসবে না, ও এমনিতেই অভাগা। বিয়ের কথা হয়েছিলো মাস চারেক আগে, ছেলের পরিবারের কেও রাজি না ও খাটো তাই, ছেলে এক প্রকারে যুদ্ধ করেছে এ বিয়ের জন্য। শেষমেষ ঠিক হলো অস্ট্রেলিয়া থেকে ইদে আসলেই বিয়ে। খুবই খুশি ছিলো সবাই। বর বেচারা সময় মতো এসেছিলো ঠিকই, কালো রঙের কাঠের কফিনের ভেতরে করে।

আমি আর শুনতে পারছিলাম না। এজন্যই হয়তো চোখদুটো এতো গভীর থাকতো। সবসময় মনে হতো কি যেন ভাবছে…
তারপর ও আমাকে রেখে চলে গেলো চোখ মুছতে মুছতে।

কাওকে লুকিয়ে দেখার এমন শাস্তি কেওই হয়তো পায়নি কোনদিন। যা ও ভোগ করছে অথচ আমি জানতেই পারি নি।

অবশেষে বাসায় ফিরলাম রাত দশটায়। বাবা তখনো বাইরে। আমি সোজা মার ঘরে গেলাম। দেখি উনি নামজ পরছেন। পেছনের চেয়ারটাতে বসে নামাজ শেষ হওয়া অপেক্ষা করলাম। এরি মধ্যে বাবা রুমে এসে পরায় আমি চলে আসি মার ঘর থেকে।

নিচে নামার পর থেকে দেখছি বাসার অবস্থাও কেমন যেন। উপরে প্রয়া মাস চারেক থাকার কারনে কিছুই বুঝে উঠতে পারিনা বর্তমান অাবহাওয়ার কারন। সীমান্তর বউ সম্ভবত জয়েন ফ্যামেলিতে থাকতে চায় না। প্রায় রাতেই দরজা আটকানোর ধুম ধাম শব্দ হয়। তবুও বোঝার চেষ্টা করি না আমি। সব ঠিক হয়ে যাবে এটা মনে মনে ভাবি। মাকে পড়ার চেষ্টা করি, অপেক্ষায় থাকি মা নিজ থেকে কিছু বলেন কিনা আমাকে। বাড়ির এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে মাকে জিজ্ঞেস করবো এসব কথা আমি সারাদিন ভেবেও কোন কিনারা করতে পারলাম না।

আমার রুমে এসে কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলাম। মা দড়জা নক করলেন আধঘন্টা পর। আমি দড়জা খুললে মা রুমে ঢুকে বললেন
: তোমার কি শরীর খারাপ নাকি…!
: না মা, এমনিই শুয়ে ছিলাম
: কিছু বলতে গিয়েছিলে ঘরে…
: আমি বললাম মা আপনি আমার কাছে একটু বসেন তো, আমি দেখি একটু আপনাকে…
মা গম্ভীর হয়ে বললেন,
: আমাকে দেখার কি আছে,
: বসেন না,
: আরেহ্ পাগল তো…

বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমি ক্ষীণ কন্ঠে বলি
: মা আমি আপনাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করবো,
: কি কথা…!
: আপনি কি আমাকে বিশ্বাস করেন
: এটা কেমন কথা….! বিশ্বাস করি না মানে…!
: শুনতে খারাপ শুনালেও এটাই সত্য আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন না,
: কি বলছো তুমি, আমি তো কিছু বুঝতে পারছিনা।

: মা আপনি আদিলদের বাসায় গিয়ে ওদের বলেছেন বাসা ছেড়ে চলে যেতে, কেন বলবেন আমায়….?
মা মূহুর্তেই রাগান্বিত ভঙ্গিতে বললেন…
: কেন তুমি জানো না,
: না আমি জানি না।
: শোন আমি তোমার মা, আর একজন মা সবসময়ই তার সন্তানের ভালো চান, আর আমি যা করেছি তা তোমার ভালোর জন্যই করেছি,
: আমার জিজ্ঞেস করা প্রশ্ন পর্যন্ত যদি ঘটনাটা হতো, তাহলে আপনি অবশ্যই আমার ভালো চান, কিন্তু ঘটনাটা ঐ পর্যন্ত যে না তা আপনি আমার চেয়ে ভালো জানেন
: তোমার কি হয়েছে বলবে আমাকে, আমার সাথে এভাবে কেন কথা বলছো তুমি
: মা আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন না, তাই আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে,
: বার বার বিশ্বাস বিশ্বাস করছো কেন, বুঝলাম সব মিথ্যা, তুমি শুধু আমাকে এটুকু বলো- ঐ মেয়ে সেদিন রাতে যায় নি ছাদে…!
: হুম গিয়েছিলো, কিন্তু আপনার কি উচিত ছিলো না একটাবার আমাকে জিজ্ঞেস করা কি, কেন, কিভাবে….!

মা রেগে কর্কশ কন্ঠে বললো-
: আমি আবার বলছি আমি যা করেছি তা তোমার ভালোর জন্যই করেছি,
: আমার ভালো, আর একজন নির্দোষ মেয়ের কথা ভাবলেন না, কাওকে লুকিয়ে দেখার অপরাধে যদি ওর পরিবারে এত ঝড় হতে পার, তবে আমার ও বিচার হওয়া উচিত কেন ছাদের দড়জা লক করলাম আমি, কে দিবে আমাকে শাস্তি, আপনি…? নাকি ওর পরিবার…!

মা বিরক্ত চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে,

আমি মার হাতদুটো ধরে বললাম মা আপনার বোঝা উচিত ছিলো আপনার ছেলেটা কেমন, আমাকে জিজ্ঞেস ও করা দরকার ছিলো কি হয়েছিলো সেদিন। আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন আমি জানি, কিন্তু ওর কোন দোষ নেই,

হুম বুঝলাম দোষ নেই, এখন কি করতে হবে…!
ওদের কাছে গিয়ে মাফ চাইতে হবে….?

মা সমস্যাটা আপনাকে বললাম, এর সমাধান আপনাকেই করতে হবে….

বলে আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।

চলবে…

Previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/908755916252267
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/910127196115139/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here