চলো_রোদ্দুরে,26,27

0
661

#চলো_রোদ্দুরে,26,27
#ফাতেমা_তুজ
#part_26

দুটো দিন পেরিয়ে গেল ভোর এর কোনো খোঁজ পেলো না রাদ। ছেলেটা বাড়ি তে ও ফিরে নি। ইফতিহার কে ফোন করে রনিত বলেছে একটা পার্টি তে যাবে ওরা। তাই বাসায় ফিরে নি। দুটো দিন এক বারের জন্য ও চোখ বুঁজে নি রাদ। রাত এক টা নেই দুটো নেই পাগলের মতো খুঁজে চলেছে শহরের অলি গলি। রনিত নিজে ও বিধ্বস্ত হয়ে পরেছে। ফুলের মতো সুন্দর মেয়েটি হারিয়ে গেল?
রাদের চোখ দুটো কেমন স্থির, লাল আর ব্যথিত। হঠাৎ করেই ছেলেটার মাথায় উদ্ভট কিছু চিন্তা মাথায় আসে। মুহুর্তেই স্থির চোখ হয়ে যায় অস্থির। পাগলের মতো চেঁচিয়ে উঠে বলল
_রনিত, রনিত ভোর এর কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে না তো? ভোর, মেয়েটার ক্ষতি হবে না তো!

পাশ থেকে ছুটে আসে রনিত। রাদ কে জড়িয়ে ধরে বলল
_শান্ত হ তুই। কিচ্ছু হবে না ভোর এর।

_কি করে শান্ত হবো? পূর্ন মর্যাদা দিয়ে নিয়ে এসেছি আমি। যাতে ওর সম্মানের আঘাত না হয়। ওর কিছু হলে আমি নিজে কে ক্ষমা করতে পারবো না। কিছুতেই পারবো না।

_কিচ্ছু হবে না রাদ। চিন্তা করিস না। ভোর একদম ঠিক আছে। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ ভাই।

রনিত কে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে লাগলো রাদ। ছেলেটার চুল গুলো উলোট পালোট হয়ে আছে। দুদিন ধরে গোসল করে নি। অথচ এই ছেলেটা সব কিছু নিট এন্ড ক্লিন করে রাখতো।

একটু আগে রাদ কে ইনজেকশন পুশ করেছে রনিত। যাঁর ফলে ঘুমিয়ে আছে ছেলেটা। দৌড়া দৌড়ির সময় কয়েক বার হোচট খেয়েছে । শরীরের নানান জায়গায় ব্যথার ছাপ। খুব যত্ন নিয়ে মলম লাগিয়ে দিলো রনিত। থানা থেকে কল এসেছে তাই ইনায়া বলল
_তুমি যাও আমি ওর খেয়াল রাখছি।

_আচ্ছা।

এক পলক তাকিয়ে চলে গেল রনিত। রাদ এর পাশে এসে বসলো ইনায়া। মেয়েটার চোখ ঘোলাটে রূপ ধারন করেছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা। রাদ এর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
_একদম চিন্তা করবি না তুই।আমরা সবাই সব কিছু ঠিক করে দিবো। ভোর কে খুঁজে বের করবোই আমরা।

_ভাবি।

পেছন ঘুরে তাকালো ইনায়া। রূপ কে চোখ মুছলো। রূপ বলল
_ তোমরা সবাই আমার উপর রেগে আছো?

_এমন কেন বলছো রূপ?

_আম স্যরি ভাবি। ভাইয়া আমাকে সহ্য করতে পারছে না। একদম ই সহ্য করতে পারছে না।

_একি রূপ কাঁদছো কেন তুমি? কাঁদে না ভাই। তোমার ভাইয়া কে আমি বোঝাবো। বুঝতেই পারছো এখন পরিস্থিতি টা কেমন।

মাথা ঝাঁকায় রূপ। রাদ কে দেখে অবাক হয়। একজন মানুষ ঠিক কতো টা দায়িত্ববান হতে পারে তা রাদ কে না দেখলে বুঝতে পারতো না ওহ। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বেরিয়ে পরে ভোর কে খোঁজার উদ্দেশ্যে।
.

_ স্যুপ টা খেয়ে নে রাদ।

_খাবো না সুপ্তি।

_মার খাবি এখন। একটু খা প্লিজ।

_ভালো লাগছে না। প্লিজ একটু একা থাকতে দে আমায়।

_পাগলামি করার জন্য?

সরল চোখে তাকায় রাদ। সুপ্তির মুখ টা বরাবরের মতোই সহজ। মেয়েটা একদম ই সরল মনের। ইচ্ছে না থাকলে ও স্যুপ টা খেলো রাদ। হালকা হাসলো ইনায়া। বন্ধু মহলের সব থেকে ভালো মেয়ে সুপ্তি। এই রাগ করবে, অভিমান করবে আবার মিলে যাবে।মোট কথা সবাই কে নিয়ে মেতে থাকবে।

দ্বীপের কল আসতেই উঠে গেল সুপ্তি। দেশে নেই দুজনে। কিছু দিন পূর্বে রেজিস্ট্রি সম্পূর্ন করেছে দ্বীপ, রায়া। সেই সুবাদে হানিমুনে গেছে। কথা ছিলো হানিমুন থেকে ফিরে গেট টুগেদার করবে।
_একটু ভিডিও কল দে সুপ্তি। রাদ কে দেখবো এক পলক।

_ওকে দেখাচ্ছি।

দরজার আড়াল থেকে রাদ কে দেখালো সুপ্তি। রায়া আর দ্বীপ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই বিধ্বস্ত রাদ যেন সকলের অচেনা।দ্বীপ বলল
_আজকে রাতের ফ্লাইটেই আসছি আমরা। কাল দুপুরের মধ্য পৌছে যাবো।

_হুম। আচ্ছা রাখছি।

পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো রনিত। সুপ্তি বলল
_এই রনিত।

_হ্যাঁ বল।

_অফিসার কি বললেন?

_একটা লা/শ পাওয়া গেছে। চেনা যাচ্ছে না একদম ই। তবু ও শনাক্ত করার জন্য যেতে বলেছে।

কথা টা বলার সময় রনিত এর গাঁ ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। দু পা পিছিয়ে গেল সুপ্তি। রনিত ঘরে প্রবেশ করতেই রাদ বলল
_থানায় গিয়েছিলি? পুলিশ কি বললো।

_তেমন কিছু না। তবে কিছু কাজের জন্য তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।

_আচ্ছা চল।

_এখন না দুপুরে যাবো। আগে লাঞ্চ করে নে।

_এখন গেলে কি সমস্যা? আমি এখনি যাবো।

_এখন গেলে কাউ কে পাবি না। দুপুরেই যেতে বলছে।

_ওহ। আচ্ছা শোন আমি এখন কলেজের দিক টায় যাবো। ঐ দিকে খোঁজা হয় নি।

_বিকালে যাবো। এখন রেস্ট কর।

_আমি এখনি যাবো।

বেড থেকে উঠে বেরিয়ে পরলো রাদ। ইনায়ার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে রনিত ওহ পিছু নিলো।

তিন টে ঘন্টা কলেজের আশে পাশে অলি গলি সব খুঁজলো রাদ। সবাই কে ছবি দেখালো কিন্তু কেউ মেয়েটার খোঁজ দিতে পারলো না। রাদ যেন হার মানার পাত্র নয়। মন কে শক্ত করে খুঁজে চলেছে ওহ। রনিত বলল
_বাসায় চল রাদ। লাঞ্চ করে পুলিশ স্টেশনে যাবো।

_না আমি এখন কোথাও যাবো না।

_কি হচ্ছে টা কি? আঙ্কেল আন্টি কয়েক বার কল করেছে। প্রতি বার ই আমি অজুহাত দিয়েছি। এখন যদি লাঞ্চ ও না করিস তাহলে কি করে চলবে?

শীতল চোখে তাকালো রাদ। মনে পরে গেল রামিসা আর ইফতিহারের কথা। ছেলে টা চোখ বন্ধ করে নিজ ব্যক্তিত্ব কে স্মরন করলো। কাঁপা হাতে রামিসার নাম্বার ডায়াল করলো। রিসিভ করতেই বকা ঝকা করলেন রামিসা। ওনার দু চোখে যেন অশ্রুর ধারা নেমেছে। শান্ত কন্ঠে রাদ বলল
_এমন করছো কেন মম? আমি তো ঠিক আছি। শুধু ক্লান্ত থাকায় কল করতে পারি নি।

_অজুহাত দেখাবে না রাদ। মম ড্যাড কে ভুলে গেছো তুমি।

_ভুলি নি মম।

_খেয়েছো?

_হ্যাঁ।

_রাতে ড্যাড কে কল করবে। আর দ্রুত তোমাদের বন্ধু মহলের পার্টি শেষ করো। তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না আমার।
একা একা মনে হয় বেটা।

অধর কোনে ছোট করে হাসলো রাদ। মায়ের সাথে আর কিছু কথা বলে কল টা কেঁটে দিলো। ধপ করে রাস্তায় বসে পরলো। দৌড়ে এলো রনিত। রাদ কে উঠানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলো।

পুলিশ স্টেশনে এসে রনিতের শরীর বেয়ে শীতল নোনা জল নেমে গেল। প্রতি টা লোমকূপ জেগে উঠেছে। রাদ বলল
_কোথায় অফিসার?

_আসবে ওয়েট কর।

কিছুক্ষন পর অফিসার এলেন। বললেন
_ওহ আপনারা এসে গেছেন। চলুন বডি শনাক্ত করতে হবে।

রাদের শরীর কেঁপে উঠলো। বিস্ফোরিত চোখে রনিতের দিকে তাকালো। রনিতের দৃষ্টি নত। ছেলেটা ব্যস্ত হয়ে বলল
_কি বললেন আপনি?

_বডি শনাক্ত করার কথা। আসলে বডি টা এমন ভাবে নষ্ট হয়ে গেছে যে ছবির সাথে মেলানো যাচ্ছে না।

অফিসার চলে গেলেন। রনিতের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসলো রাদ। এক মন কষ্ট নিয়ে রনিত বলল
_থিংক পজিটিভ রাদ।

_ ভোরের কিছু হতে পারে না রনিত। মেয়েটা আমার দায়িত্বে ছিলো। ওর কিছু হবে না। হতে পারে না।

বকবক করতে করতে অফিসারের পিছু গেল রাদ। লা/শ কাঁটার ঘরে এসে যেন পা থমকে গেল। একজন ডাক্তার হয়ে ও আজ প্রচন্ড অসহায় বোধ হচ্ছে। মনে হচ্ছে পৃথিবী টা ওর থেকে বহু দূর। কয়েক টা শুকনো ঢোক গিললো ছেলেটা। ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো সাদা কাপড়ে জড়ানো লা/শ এর দিকে। একজন স্টাফ মুখ টা খুলে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে নিলো রাদ। মেয়েটার মুখের অবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। মুখের চামড়া ঝলসে গেছে। সাদা মাংস দেখা যাচ্ছে। চোখ গেলে যা তা অবস্থা। যেকোনো সাধারন মানুষ জ্ঞান হারাবে।
হঠাৎ করেই কিছু একটা খেয়াল হলো। বডির পায়ের অংশ টা উঁচু করলো রাদ। নেই কোনো কাঁটা দাগ। ছেলেটার বুকের ভেতরে জমে থাকা পাথর টা নেমে গেল। জানালো বডি টা ভোর এর নয়। রনিতের চোখ চকচক করে উঠলো। রাদের বাহু তে হাত রেখে আশ্বস্ত করে বলল
_দেখবি কিচ্ছু হয় নি ভোর এর। সী ইজ ফাইন।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_27

ভোর হলো দোর খোল
খুকুমনি ওঠে রে,
ঐ ডাকে জুঁই-শাখে
ফুল-খুকি ছোট রে।
খুলি হাল তুলি পাল
ঐ তরি চলল,
এইবার এইবার
খুকু চোখ খুলল।
আলসে নয় সে
ওঠে রোজ সকালে,
রোজ তাই চাঁদা ভাই
টিপ দেয় কপালে।

ভোরের কপালে হাত দিয়ে কথা টা বললো নাহিদ। বিস্ফোরিত চোখে তাকালো ভোর। যাঁর ফলে হেসে কুটি কুটি নাহিদ। মুখ দিয়ে চ এর মতো শব্দ করে ভোর বলল
_আপনি কি সবসময় এমন?

_কেমন বলো তো?

_ফ্লাটিং করেন সবসময়?

_অলোয়েজ না বাট প্রায় সময় করি।

_আশ্চর্য।

_আচ্ছা অনেক হয়েছে। এখন তোমার হাতের কি অবস্থা দেখি তো।

_এখনো ব্যথা হচ্ছে প্রচন্ড।

_চিন্তা করো না দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। তা তোমার ডাক্তার সাহেব কে পেলে?

_উহহু ফোন অফ বলছে।

_নিশ্চয়ই খুব টেনশনে আছেন তিনি? আফটার অল তিন দিন ধরে নিখোঁজ হয়েছো।

ক্ষন কালের জন্য হাসলো মেয়েটি। রাদ ওর প্রতি ভীষন সেনসেটিভ বটে।তবে কতো টা টেনশনে আছে এটা ও ভাবার বিষয়।
_আচ্ছা একটা কথা বলো তো ম্যানহলে পরলে কি করে?

_রাত ছিলো আমি খেয়াল করি নি হঠাৎ করেই পা ফসকে পরে যাই। চেঁচানোর সুযোগ ও পাই নি।

_হুম বুঝলাম। ভাগ্যিস ম্যানহল টা এখনো অন হয় নি। নতুন তৈরি করা হচ্ছিলো। তাই পানি দিয়ে ওয়াস করা হচ্ছিল। ভাগ্য ভালো ছিলো। তাই তো পানির সাথে অন্য ম্যানহলে এসে পরেছো।

_আপনি না থাকলে হয়তো আজ আমি বেঁচেই থাকতাম না।

_আরে ধ্যাত কি যে বলো না। আমি না থাকলে অন্য কেউ নিশ্চয়ই বাঁচিয়ে নিতো।

_তবু ও থ্যাংকস।

_নো থ্যাংকস ভোর। ভাই বলে সম্বোধন করেছো না?

কিছু টা হাসলো ভোর। মেয়ে টার হাতের স্যালাইন খুলে দিয়ে নাহিদ বলল
_আসো তোমাকে পৌছে দেই। ঠিকানা জানো তো?

নাহিদ এর এমন কথায় হেসে ফেললো ভোর। নাহিদ বলল
_আরে বুঝবে না। ডাক্তার রা সব রকম প্রশ্ন করে। অনেক সময় পেশেন্ট এর মেমোরি লস হয়ে যায় কি না।

_হুম বুঝলাম তো। আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা বলুন তো আমি কি তিন দিন ই জ্ঞান হারিয়ে পরে ছিলাম?

_না। তবে পূর্ন জ্ঞানে ছিলে না। কথা বলার মতো পরিস্থিতি তে তো একদম ই ছিলে না।

_আসলে গত তিন দিনের কথা আমার কিছুই মনে নেই। আচ্ছা আপনার ফোন?

_ঐ টার কথা বাদ দাও। ঐ ফোন জলে ভেসে গেছে। ঐ টা অলরেডি ডেথ। তোমাকে পৌছে দিয়ে নতুন ফোন কিনে নিবো। এবার আসো তো। তোমার ডাক্তার সাহেব টেনশনে টেনশনে পাগল না হয়ে যায়।

কথা টা বলেই হো হো করে হেসে উঠলো নাহিদ। আশ্চর্য হয় ভোর। একটা মানুষ কি করে এতো টা হাসে? প্রতি টা কথায় ফ্লাটিং থাকবেই।

হোস্টেলের বাইরে থেকেই চলে যায় নাহিদ। তিন দিন যাবত সকলের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে ওহ। ভোর কে নিয়েই কেঁটে গেছে প্রতি মূহুর্ত।মেয়েটা কে বাঁচাতে পেরে গর্ব বোধ হলো। ডাক্তার হিসেবে এই প্রথম এতো বড় কাজ করেছে ওহ। না হলে লাইসেন্স পেয়ে ও কাজে জয়েন করে নি ওহ।

মেয়েটা খোঁড়াতে খোঁড়াতে ভেতরে আসতেই ছুটে এলো তিন্নি। ভোরের বাহু ধরে বলল
_ম্যাম কি হয়েছে আপনার?

_তেমন কিছু নয় আপু।

ভোর কে ছেড়ে ছুটে গেল তিন্নি। মুহুর্তেই হাজির হলেন আশা। ভোর কে দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন তিনি। মেয়েটার মাথায় হাত রেখে বললেন
_কোথায় ছিলে তুমি? হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ কেন? তিন্নি রাদ কে খবর দাও।

_ইয়েস ম্যাম।

মেয়েটা কে ধরে ঘরে নিয়ে গেলেন আশা। ভোর কিছু টা অসুস্থ। তাই তিনি একটা ও প্রশ্ন করলেন না। বরং একজন স্টাফ কে দিয়ে পাতলা খাবার নিয়ে আসলেন। মেয়েটা খেতে চাইলো না। তবে তিনি ও নাছোড়বান্দা সুরে বললেন
_এমন করলে তো হবে না। তুমি প্রচন্ড উইক। হাত টা কতো টা ফ্র্যাকচার হয়েছে কে জানে। আসো খাইয়ে দিচ্ছি আমি তুমি চুপটি করে বসো তো।

কেন যেন মা নামক ছায়া কে খুব বেশি মনে পরছে ওর। আশা কে মায়ের মতো ভালাবাসা দিতে দেখে কেঁদে উঠলো ওহ। আশা কে কিছু বুঝতে না দিয়েই এক হাতে ওনাকে জড়িয়ে নিলো মেয়েটা। হতভম্ব হয়ে গেলেন তিনি।তবে মেয়েটার মাথায় হালকা হাতে স্পর্শ করলেন। রাদ এর কাছ থেকে অনেক কিছু শুনেছেন ওনি।মেয়েটা কতো টা অসহায় সব ই জানেন। ভেতর থেকে এক ফালি দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো। জীবন কতো অদ্ভুত তাই না?কেউ রাখে না আর কেউ পায় না।
.
কতো টা উচ্চ গতিতে গাড়ি চালিয়েছে রাদ তা নিজে ও জানে না। উত্তেজনায় শরীর কাঁপছে ছেলেটার। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নানান প্রশ্ন। হোস্টেল এর বাইরে গাড়ি টা রেখেই ছুটে গেল হোস্টলের ভেতর। উদভ্রান্তের মতো ছুটে চলেছে ওহ। সেভেন ফ্লোর এ ভোর এর রুম। লিফ্ট নিচে আসার সময় টুকু ও সহ্য হলো না ওর। এতো গুলো সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে লাগলো। আশে পাশে কে আছে না আছে তাঁতে যেন ধ্যান ই নেই । একদম ভোর এর রুমের ডোর এর কাছে এসে থামলো ছেলেটা। মেয়েটা কে বেডে আধশোয়া হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে যেন ওর জ্বলন্ত চোখে শীতলতা নেমে এলো। মনের কোনে থাকা সকল ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর হয়ে গেল। ছেলেটার পায়ের আওয়াজ শুনে পাশ ফিরে তাকালো ভোর। রাদ কে দেখে ভারী অবাক হলো। চুল গুলো এলো মেলো। পরনে টাউজার আর টি শার্ট। মনে হচ্ছে রাতের পোশাক পরেই চলে এসেছে। মেয়েটার পাশে বসলো না রাদ। গভীর দৃষ্টি লেপন করে বলল
_কেমন আছো ভোর?

_ভালো।আপনার এ অবস্থা কেন?

নিজের দিকে তাকালো ছেলেটা। এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেল। পরক্ষনেই হাসি ফুঁটিয়ে বলল
_এই আর কি। হাতে কি হয়েছে?

_ভেঙে গেছে।

ঠোঁট উল্টিয়ে কথা টা বললো ভোর। ওর মুখের ভঙ্গিমা দেখে হেসে উঠলো রাদ। হঠাৎ করেই মেয়েটার কাছে চলে আসলো। বুকে জড়িয়ে ধরে ঘন ঘন শ্বাস নিলো। বিস্মিত হলো ভোর। তবে কিছু বললো না। শুধু চোখ থেকে দু ফোঁটা শীতল নোনা জল নেমে গেল।

_আই মিস ইউ ভোর। আই মিস ইউ। খুব বেশি মিস করেছি তোমায়। মনে হয়েছিলো আমি এই ধরা তে নেই। তোমাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভাঙার আশংকায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। আম স্যরি ভোর। তোমাকে দেখে রাখতে পারি নি আমি।

_শান্ত হোন ডাক্তার সাহেব। অসুস্থ হয়ে যাবেন আপনি।

_আমি ঠিক আছি মেয়ে। এখন বলো তো কি হয়েছিলো। আর এই শরীরের আঘাত গুলো। কোনো ভাবে খারাপ কিছু হয় নি তো? একদম ভয় পাবে না। আর কিছু হলে ও চিন্তা করবে না। লুক, তুমি সব থেকে পবিত্র। একদম নিষ্পাপ আর শুভ্র।

ছেলে টার এহেম কথা তে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো ভোর।অধর কোনে হাসি ফুঁটিয়ে বলল
_ আপনি থাকতে আমার ক্ষতি হতে পারে ডাক্তার সাহেব? তেমন কিছু হয় নি। আমি জানি আমার পাশে সব সময় আছেন তো আপনি, অন্ধকার থেকে রোদ্দুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

_বড় হয়ে গেছো তুমি?

_হতেই হতো। আঠারো পূর্ন করে ফেলেছি কি না।

অদ্ভুত কোমল দৃষ্টি তে চেয়ে রইলো রাদ। মেয়েটা সত্যিই আঠারো পূর্ন করে ফেললো?

_ডাক্তার সাহেব। কোথায় হারিয়ে গেলেন?

_হ্যাঁ বলো।

_আপনাকে খুব টেনশনে ফেলে দিয়েছিলাম তাই না?

রাদ উত্তর করলো না। বা হাত টা উঁচু করে কানে হাত দিলো ভোর।বলল
_স্যরি।

_নো ফরমালিটিস ভোর। দেখি ডান হাতের অবস্থা। আর কোথায় ব্যথা পেয়েছো?

_পুরো শরীরেই ব্যথা আছে।

_কোথাও কেঁটে গেছে?

মাথা টা ঝাঁকালো ভোর। রাদ অনলাইনে কিছু ঔষধ পত্র অর্ডার করলো। মেয়ে টাকে ভালো করে চেক আপ করে নিলো। একটা মলম দিয়ে বলল যেখানে কেটেছে লাগিয়ে নিও।
_আচ্ছা।

মেয়েটার ঘাড়ে কয়েক টা দাগ দেখতে পেলো। মোটামুটি গভীর ই বটে। আলগোছে চুল গুলো সরিয়ে দিলো রাদ। মলম নিয়ে হালকা হাতে ঘাড়ে লাগিয়ে দিলো। তৎক্ষনাৎ কেঁপে উঠলো ভোর। পুরুষালি স্পর্শ যেন ওর বুকে ঝড় তুলে দিয়েছে। আগে তো কখনো এমন হয় নি। তবে এখন কেন এমন লাগছে?

** রাদ ভীষন আন রোমান্টিক 😒। **

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here