‘সুদর্শন শঙ্খচিল’
[২৪]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
তুয়া কিছু একটা ভেবে আবার চাঁদের কাছে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই প্রিয়মের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। তুয়া মুচকি হেসে বলল,”ভাইয়া, আমাদের জীবনটা বহমান নদীর মতো চলমান একটা ঢেউ। আর ঢেউয়ের মতো সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, আবেগ আর অনুভূতি নিয়ে ভেসে চলে আমাদের জীবন। খারাপ পরিস্থিতি যে খারাপ ফল বয়ে আনে তা কিন্তু নয়। সব ভুলে চাঁদকে নিয়ে অনেক ভাল থাকুন আর আপনাদের জন্য অনেক দোয়া এবং ভালবাসা রইল।”
কথাটা বলে তুয়া প্রিয়মের থেকে বিদায় নিয়ে আবার রুমে ঢুকে গেল। আর প্রিয়ম তুয়ার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে নিজের ভাগ্য দেখে মৃদু হাসল। চাঁদ প্রিয়মের রুমের বেলকণিতে দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ম রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেলকণিতে গিয়ে দাঁড়াতেই চাঁদ বলল, “প্রিয় মানুষটাকে অন্যের রুমে ঢুকতে দেখলে তোমার কষ্ট হয় না, প্রিয়ম?”
প্রিয়ম চাঁদের কথায় অবাক না হয়ে চাঁদকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলল। ওর বুকের ক্ষতটাকে এখন নতুন করে খোঁচাতে চাচ্ছেনা সে। এমনিতেই বিনা অনলে যথেষ্ট জ্বলে যাচ্ছে প্রিয়মের বুকের বাঁ পাশটা।
প্রিয়মের উত্তর না পেয়ে চাঁদ আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,”জানো প্রিয়ম আমিও ওই চাঁদটার মতো বড্ড একা। মেয়ে হয়ে জন্মানোর অপরাধে কখনও বাবার ছিঁটেফোঁটা আদরও কপালে জুটেনি, ছোট খালার কাছে লাথি ঝাড়া খেয়ে মানুষ হয়েছি। আমার পরে আমার বোন হওয়াতে মায়ের উপরে বাবার অত্যাচার দ্বিগুন বেড়ে গেল। একপর্যায়ে মা বাবার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করল। বাবা আবার বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করল। আর আমি ছিলাম খালার কাছে উটকো ঝামেলা তাই তারা সুযোগ বুঝে তোমার গলাতে আমাকে ঝুলিয়ে দিল। এখন তোমার জীবনে এসে তোমার জীবনটাও নষ্ট করে দিয়েছি, তাই না? আচ্ছা আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায়না প্রিয়ম?”
প্রিয়ম চাঁদের কথা শুনে বলল, ”চেষ্টা করছি বলেই
পুনরায় তোমাকে বিয়ে করে নতুন ভাবে পথচলা শুরু করলাম। আমাদের সম্পর্কটাকে আর একটু সময় দাও। আর তুয়া সম্পর্কে কি জেনেছ বা জানো জানতে চাচ্ছি না। তবে একটা কথা সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছি, এসব কথা আমার সামনে কেনো কারো সামনেই ভুলেও আর কখনও তুলবেনা।
এখন যাও ফ্রেশ হয় ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।”
প্রিয়মের কথা শুনে চাঁদ আর কথা বাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল। প্রিয়মও চাঁদের পাশে গিয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে ওর চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। কিছু কিছু কষ্ট এতটা তীব্র হয় যে কাউকে না বোঝানো যায় আর না দেখানো যায়। শুধু নিজের দীর্ঘশ্বাসের ভিড়ে বুকের গহীনে থাকা কষ্টটাকে আড়ালে রাখতে হয়। চাঁদ অনেকটা সাহস জুগিয়ে প্রিয়মের বুকের বুকে ওর মাথা রাখল। প্রিয়ম চমকে উঠে চাঁদকে সরাতে গিয়েও সরালো না। চাঁদের তখন ওর ঠোঁটের কোণে ফুটিয়ে আবেশে চোখ দুটি বন্ধ করে বিরবির করে বলল, “শুধু তোমাকে ভালবাসার সুযোগটুকু দাও।”
**!!
তুয়া রুমে ঢুকতেই অতি যত্নে কারো বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে গেল। আচানক এমন হওয়াতে তুয়া চমকে উঠলেও তাৎক্ষণিক বুঝল এটা তারই প্রিয় মানুষটা। তাই মুচকি হেসে দুই হাত দিয়ে প্রত্যয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “কি জনাব এখনও ঘুমান নি কেন?” প্রত্যয় প্রত্যুত্তরে মুচকি হেসে বলল, ” বউ ছাড়া ঘুমালে বড় বড় পাপ হবে এজন্য।”
প্রত্যয়ের কথা শুনে তুয়া শব্দ করে হেসে প্রত্যয়ের পায়ের পাতার উপর উঠে দাঁড়াল। প্রত্যয় তুয়াকে নিয়ে ধীর পায়ে পুরো রুম জুড়ে হাঁটতে লাগল। তুয়া ভয়ে পেয়ে প্রত্যয়ের টি-শার্ট ধরে ভীত কন্ঠে বলল, “এই পড়ে যাব তো।” প্রত্যয় তুয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল, “পড়তে দিলে তো।” তুয়া প্রত্যয়ের গলা জড়িয়ে ধরে ভ্রু নাচিয়ে বলল, “কি ব্যাপার আসল কাহিনী কি, হুম হুম?” প্রত্যয় ফিচলে হেসে বলল,” কাহিনী ছাড়া বউয়ের কাছে আসা নিষেধ নাকি?”
তুয়া প্রত্যুত্তরে কিছু বলল না শুধু হাসল। দু’জনের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে অনেকটা সময় চন্দ্রবিলাশ করে ঘুমাতে গেল। পরেরদিন ওরা সবাই মিলে রাজশাহীর অনেক জায়গা ঘুরে ফিরে দেখল। হসপিটাল থেকে প্রত্যয়ের জুরুরী কল আসায়, ওরা ঢাকাতে ফিরে রোজকার মতো আবারও ব্যস্ত জীবনে ব্যস্ত হয়ে গেল। প্রিয়ম চাঁদকে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিল আর প্রত্যয়ের যুক্তির কাছে হার মেরে তুয়া কলেজে যেতে রাজি হল।
তুরাগের এনগেজমেন্টের ডেট ক্যান্সেল করা হয়েছে। কারন ইলার বাবা হঠাৎ সাইলেন্ট হার্ট এ্যার্টাক করেছেন। ইচ্ছে প্রত্যয়ের দেখে বেশ কয়েকবার উপরে এসেছে কিন্তু সঙ্গে কথা বলেনি। কেউ ডাকলেও কারো কাছে যায়নি কিছু জিজ্ঞাসা করলে কোনো উত্তর দেয়নি। একটা পুতুল হাতে নিয়ে একা একা ঘুরে আবার চলে গেছে। ওর ছোট্ট মনে ওদের প্রতি বেশ অভিমান জমেছে।
তুয়া আজকে ওর কলেজে এসেছে। কিন্তু মিতুকে ছাড়া ওর খুব একা লাগছে। স্কুল বা কলেজে বেস্টুর অনুপস্থিতে নিজেকে কেমন এতিম এতিম লাগে। কোনোকিছুতেই যেন মন বসে না। তুয়া মিতুর সঙ্গে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। আজকে কলেজে এসে শুনল মিতু নাকি টিসি নিয়ে অন্য কলেজে চলে গেছে। কথাটা শুনে তুয়ার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে অশ্রু ঝরে পড়ল, কোন অপরাধে মিতু এমন করল তুয়াও জানেনা। নাকি তুয়া ধর্ষিতা বলে মিতু ঘৃণা করে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করেনা? বেস্ট ফ্রেন্ড তো বোনের আরেকটা রুপ হয় তাহলে মিতু কিভাবে পারল এমনটা করতে? এসব প্রশ্ন তুয়ার মাথাতে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। ওর ক্লাস শুরু হতে এখনও বিশ মিনিট দেরী আছে। তাই সে ঘাসের উপর বসে মন খারাপ করে এসবই ভাবছে।
কয়েকটা মেয়ে এসে তুয়ার থেকে একদূরে বসে নিজেরা গল্প করতে লাগল। তাদের মধ্যে একজন হঠাৎ বলে উঠল, ” ধর্ষণ আর সঙ্গমের তফাৎ কি তোরা বলতে পারবি ?” ওদের মধ্যে একজন খিলখিল করে হেসে বলল,”যারা করেছে তাদের জিজ্ঞাসা কর।”
প্রথমজন আশেপাশে কিছু খুঁজার মতো করে তুয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “হেই তুয়া তুমি তো ধর্ষিতা তাই না? বলো! বলো! প্লিজ বলো না ধর্ষণ আর সঙ্গমের মধ্যে তফাৎ কি? তোমার তো এসবে দারুন একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে।”
মেয়ে গুলোর কথা শুনে কয়েকজন তুয়ার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। দুইটা ছেলে খোঁচা মেরে কিছু বলে হাসতে হাসতে স্থান ত্যাগ করল। তুয়া লজ্জা আর অপমান দুই হাতে মুখ ঢেকে শব্দ করে কেঁদে দিল। এতদিন প্রত্যয়ের সংস্পর্শে থেকে ভুলেই গিয়েছিল সে ধর্ষিতা নামক জঘন্য কালিমায় লিপ্ত মানবী। আজকে আবারও ওর মনে পড়ে গেল সেই কুৎসিত সময়টার কথা। সে ভুলেও গেলেও ওর আশেপাশে মানুষ যত্ন করে মনে করিয়ে দিল, “সে ধর্ষিতা।”
মেয়েগুলো তুয়াকে কাঁদতে দেখে আবারও বলল, “এই তুয়া তোমার ফিলিংস আমাদের সঙ্গে শেয়ার করো, তখন মজা তো পেয়েই গেছো। এখন আবার ঢং করে কাঁদছ কেন? আমাদের কে সবটা খুলে বলো না ইয়ার।”
একটুপরে, পিয়ন এসে ওই মেয়ে গুলোকে প্রফেসরের রুমে ডেকে নিয়ে গেল। ওরা তুয়ার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে প্রফেসরের রুমের ঢুকে তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। প্রফেসর ওদের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলল, “ধর্ষণ আর সঙ্গমের তফাৎ টিসি নিয়ে কলেজের বাইরে গিয়ে জেনে এসো, বেয়াদব মেয়ে। এসব করতেই তোমারা কলেজে আসো? তোমাদের শিক্ষা দীক্ষা বলে কি আদৌ কিছু আছে?”
টিসির কথা শুনে মেয়েগুলো কাঁদো কাঁদো হয়ে মাফ চাইল কিন্তু প্রফেসর মানতে চাচ্ছিল না। উনি এসব নোংরা কথাবার্তা মোটেও পছন্দ করেন না। মেয়ে গুলো কেঁদে বার বার নিজেদের ভুল স্বীকার করে মাফ চাইল। চাঁদের অনুরোধে প্রফেসর রাজি হয়ে ওদের ওয়ানিং দিয়ে চলে যেতে বলল।
চাঁদ আর তুয়ার স্কুল কলেজ পাশাপাশি হওয়াতে ওদের দু’জনের যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। চাঁদ ওর স্কুল ফাঁকি দিয়ে তুয়ার কলেজটা ঘুরে দেখতে এসেছিল। আর এসেই দেখে কয়েকটা মেয়ে তুয়াকে নোংরা কথা শুনাচ্ছে, তখন সে ঝটপট ফোনে ভিডিও করে সরাসরি প্রফেসরকে গিয়ে প্রমানসহ দেখায় আর এতেই কাজ হয়ে যায়। চাঁদ প্রফেসরের রুমে থেকে বের হয়ে তুয়াকে আর কোথাও খুঁজে পেল না, তাই তাকে একাই বাসায় ফিরতে হল।
**!!
কয়েকদিন ধরে পলক সামান্য কিছু খেলেও সবটা বমি করে উগলে দিচ্ছে। তাই সে বমির ভয়ে কিছু খেতে না চাইলেও রনিত ওকে ছাড় দিচ্ছেনা।
রনিত অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে পলকের কপালে আদর দিতে ওর কাছে গিয়েছিল। কিন্তু রনিতের পারফিউমের গন্ধ পলক সহ্য করতে না পেরে পলক রনিতের গায়ে বমি করে দিল। এখন খাবার সহ সবকিছুতেই ওর গন্ধ লাগে। রনিতের এত সুন্দর পারফিউমে গন্ধটাও ওর কাছে এখন বিশ্রী লাগছে। গায়ে বমি করাতে রনিত বকবে ভেবে পলক ভয়ার্ত দৃষ্টিতে রনিতের দিকে তাকাল। রনিত পানি এনে পলককে কুলি করিয়ে মুখ মুছিয়ে বলল, “খালি পেটে থাকা যাবেনা এখন কিছু একটা খেতে হবে।”
খাওয়ার কথা শুনে পলক শব্দ করে কেঁদে দিয়ে বলল,”খেলেই বমি হচ্ছে আর আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি। আমাকে কষ্ট পেতে দেখতে তোমার ভাল লাগছে, তাই না?” রনিত কিছু না বলে অন্য রুমে গিয়ে অফিসে ফোন করে দু’টো দিন ছুটি নিল। তারপর ফ্রেশ হয়ে পলকের জন্য ফল কেটে নিয়ে এসে বলল, “ভালো মায়েরা বাবুকে ক্ষুধার্ত রাখেনা। তাই বমি পেলেও আপনাকে খেতে হবে।”
কথাটা শুনে পলক মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে তাকাল। রনিত হেসে পলকের পাশে শুয়ে নিজেও ফল খাচ্ছে আর পলককেও কথা তালে খাইয়ে দিচ্ছে। পলক খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করল, “বাবুর কথাটা কি বাড়িতে জানিয়েছ?” রনিত অকপটে বলল,”না সময় হলে জানাব।”
রনিতের আম্মুর কোমরে ব্যাথাটা খুব বেড়েছে তাই শুয়ে ছিলেন। দিশা রান্নাঘরে রাগের চোটে থালা-বাসন গুলো শব্দ করে রাখছে। তার রাগের কারন তাকে আজকে রান্না করতে বলা হয়েছে। কালকে সে ফুড ফেসিয়াল, পেডিকিউর আর মিনিকিউর করে এসেছে আর আজকে রান্না করলে সব টাকা জলে যাবে।
দিশা রাগের চোটে বলেই ফেলল, ” আমি পারব না রান্না করতে, আমার এতো ঠেকা পড়েনি। একজন তো চলে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে আর আপদগুলো আমার ঘাড়ে এসে জুটেছে। যার গিলার প্রয়োজন হবে সে রান্না করে গিলুক। আমি দাসী বাদীর মতো আর খাটতে পারব না।”
কথাটা বলে দিশা ওর রুমে গিয়ে শব্দে করে দরজা আঁটকে দিল। রনিতের আম্মু এসব শুনে নিজেই রান্না করতে আসলেন। চোখের পানি ফেলে চুলার উপরে ভাত বসিয়ে আলুর খোসা ছড়াতে ছড়াতে বললেন,”এখন শাশুড়ি হয়েছি। ছেলের বউয়ের লাথি ঝাটা তো সহ্য করতেই হবে, কি আর করার।”
**!!
তুয়া কলেজ থেকে ফিরে প্রত্যয়দের ফ্ল্যাটে আর যায়নি। ওর রুমে গিয়ে বালিশে মুখে গুঁজে ইচ্ছেমতো কেঁদেছে। তুয়ার আম্মু আব্বু এতো ডেকেও দরজা খুলাতে পারেনি। তুরাগ বোনকে আদুরে আদুরে কথা বলেও দরজা খুলাতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রত্যয়ের সঙ্গে মনমালিন্য হয়েছে ভেবে তুয়ার আব্বু আম্মু প্রত্যয়কে ফোন করে জানানোর সাহস করলেন না। প্রতিটা সংসারে স্বামী স্ত্রী মনমালিন্য হয়েই থাকে কিছুক্ষণ পর ওরাই এক হয়ে যাবে। প্রত্যয়ের আম্মু তুয়াকে ডাকতে এসেছিলেন, তুয়া ঘুমাচ্ছে বলে তুরাগ ব্যাপারটা কোনো মতো
সামলে নিয়েছে।
তুয়া সারাদিন না খেয়ে শুয়ে শুয়ে শুধু কেঁদেছে। এমনকি প্রত্যয়ের কলটা অবধি রিসিভ করেনি। প্রত্যয়ের পেশেন্টের সংখ্যা আজকে অনেক বেশি ছিল, তারপর একটা অপারেশনও করেছে। জুরুরী বিভাগের হার্টের পেশেন্টের দেখে আসতে না আসতেই নতুন হার্টের পেশেন্ট এসে ভর্তি হয়েছে। উনার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে চিকিৎসা শুরু আগেই উনি মৃত্যুবরণ করেছেন। এসব নিয়ে সারাটা দিন প্রত্যয়ের খুব ব্যস্ত সময় কেটেছে। তুয়া কল না ধরায় দুপুরে সে ঠিকমতো খেতেও পারেনি।
এই কয়েকদিনে তার অনুপস্থিতে হসপিটালের প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সব তথ্য জেনে রাত সাড়ে বারোটায় প্রত্যয় বাসায় ফিরল। সারাদিনের ছোটাছুটিতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে ঢুকে তুয়াকে কোথাও খুঁজে পেল না। বেশ কয়েকবার কল দিল কিন্তু রিসিভ হলো না। এতো রাতে তুয়াদের ফ্ল্যাটে কলিংবেল বাজানোটাও ওর কাছে দৃষ্টিকটু লাগছে।
হঠাৎ তুয়ার এমন ব্যবহারে প্রত্যয়ের মনটা বিষাদে ছুঁয়ে গেল। ওর কোন ভুলে তুয়া অভিমান করেছে প্রত্যয় বুঝতে পারছেনা। প্রত্যয় ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলল, “এটা আমার কোন অপরাধে শাস্তি দিচ্ছ? দোষটা দেখালে মনটাকে তো অন্তত বুঝ দিতে পারতাম।”
To be continue….!!