‘সুদর্শন শঙ্খচিল’
[৩৮]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
প্রত্যয় উঠে দাঁড়াতেই ইচ্ছে ছোট ছোট হাতে থাবা দিয়ে ডেকে উঠল ,”প্রত্তুয়! প্রত্তুয়! আমি ডাকচি দলজা খুলো! আমি তোমাল কাচে ধুমাবো।”
প্রত্যয় একবার তুয়ার দিকে তাকিয়ে দরজা খুলে দিল। ইচ্ছে একটা পুতুল হাতে নিয়ে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তুয়া শুয়ে থেকে ইচ্ছেকে বলল,”ইচ্ছে গল্প শুনলে জলদি আয়। প্রত্যয় আমাদের গল্প শুনাবে।” গল্পের কথা শুনে ইচ্ছে দৌড়ে বিছানায় কাছে গেল। কিন্তু উঠে না পেরে বেডশীট ধরে ঝুলতে লাগল। প্রত্যয় হেসে ইচ্ছেকে বিছানায় উঠিয়ে নিজেও বসল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল প্রত্যয়কে নিয়ে। তুয়া ইচ্ছে দু’জনেই প্রত্যয়কে পাশে নিবে। এই নিয়ে দু’জনের সমানে ঝগড়া চলছে। প্রত্যয় বসে বসে ওদের ঝগড়া দেখে হাসছে। ওর কাছে বেশ লাগছে দু’জনের ঝগড়া। অবশেষে প্রত্যয়কে মাঝখানে রেখে তুয়া ইচ্ছে দু’জনে প্রত্যয়ের দুই বাহুতে মাথা রাখল। এবার দু’জনের মুখে ফুটল মিষ্টি হাসি।
প্রত্যয় দু’জনের কপালে আদর দিয়ে গল্প বলতে লাগল,” এক দেশে এক রাজা ছিল। তার একটা পুতুলের মতো রাজকন্যা ছিল। কিন্তু রাজকন্যা বড়দের নাম ধরে ডাকত। নিষেধ করলেও বারণ শুনত না। রাজকন্যা একদিন পুকুর পাড়ে বসেছিল। সেই পুকুরের একটা কচ্ছপ রাজকন্যার আঙ্গুল খেয়ে নিয়েছিল। সেদিন রাজকন্যা খুব কেঁদেছিল। তারপরেও রাজকন্যা বড়দের নাম ধরে ডাকত। কারো কথা শুনত না। রাজকন্যার ব্যবহারে কচ্ছপটা খুব রেগে ওর পুরো হাত খেয়ে নিয়েছিল।”
এতটুকু বলে তুয়া প্রত্যয় ইচ্ছের দিকে তাকাল। ইচ্ছে ছলছল চোখে ওর হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। তুয়া অবাক হয়ে ইচ্ছেকে জিজ্ঞাসা করল,
“কি রে তুই কাঁদছিস কেন?”
“আমাল হাত কুচ্ছুপ খেয়ে নিবে।”
প্রত্যয় হেসে ইচ্ছেকে জড়িয়ে ধরে বলল,”ইচ্ছেমণি তুমি আর বড়দের নাম ধরে ডেকো না। তাহলে কচ্ছপ তোমার হাত খাবেনা।” ইচ্ছে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়িয়ে কান্নারত কন্ঠে বলল,” প্রত্তুয় তুমাকে কি বলে ডাকব?” প্রত্যয় হেসে ইচ্ছেকে ওর বুকের উপর শুইয়ে বলল,”তোমার যেটা ডাকতে ইচ্ছে করে।” ইচ্ছে গালে হাত দিয়ে ভেবে বলল,”আচ্ছা! আমি পলে তোমালে বলব।” তারপর প্রত্যয় মজার একটা গল্প বলতে লাগল। গল্প শুনতে শুনতে তুয়া আর ইচ্ছে দু’জনেই ঘুমিয়ে গেল। কয়েকদিন পর ইচ্ছেকে স্কুলে ভর্তি করানো হবে। ওর আদুরে ডাক শুনতে ওর ভালো লাগে। কিন্তু বাইরের কোনো পরিবেশে সবাই ভাল চোখে দেখবেনা। ইচ্ছে বড় হবে! এখন থেকেই ওর ভুল গুলো ধরিয়ে দিতে হবে। আর অবশ্যই সেটা বুদ্ধি খাঁটিয়ে। মূলত একারণেই প্রত্যয় ইচ্ছেকে গল্পের মাধ্যমে বোঝাল।
চাঁদ কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আর প্রিয়ম বেলকণিতে বসে আকাশ দেখছে। এখন চাঁদ আর ওর সম্পর্কটা একধাপ এগিয়ে গেছে। যদিও সে ইচ্ছে করেই এগিয়েছে। তবে এটাও সত্যিই, প্রিয়ম সেদিন চাঁদকে ভালবেসে কাছে টানেনি। শুধু দায়িত্ব আর মায়ার টানে আপন করেছিল। ওরা এতোদিন একসঙ্গে আছে। চাঁদের প্রতি ওর ভালবাসা না জন্মালেও মায়া সৃষ্টি হয়েছে। এটা প্রিয়ম কখনই চাঁদকে বুঝতে দেয়নি। কারন সে তার অনুভূতি কখনই প্রকাশ করতে পারেনা। এতোদিন প্রিয়ম চাঁদকে শাষণ করলেও ঘৃণা করেনি। আর ছন্নছড়া গতিতে কারো জীবন চলেনা। প্রিয়ম এটাও বুঝে, সে ভালো থাকলে বাসার সবাই ভালো থাকবে। বিশেষ করে কলিজার টুকরো ভাই প্রত্যয়! ওর সুপ্ত ভালবাসা আর আবেগ ওর মধ্যেই থাকুক। ওর আপনজনদের জন্য ওকে ভালো থাকতে হবে। এখন হয়তো চাঁদের প্রতি ওর মায়া কাজ করছে। কিছু দিন পর এই মায়া হয়তো ভালবাসায় পরিণত হবে।
পরেরদিন নতুন দিনের সূচনা হলো। প্রিয়ম বিকালের দিকে চাঁদ আর ইচ্ছেকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে। চাঁদ এই প্রথম প্রিয়মের সঙ্গে পার্কে এসেছে। পার্কে অনেক বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করছে। বাচ্চাদের বাবা মাও তাদের সঙ্গে আছে। ইচ্ছে একটা বেলুন নিয়ে একটু দূরে খেলছে৷ চাঁদ আর প্রিয়ম ঘাসের উপর বসে আছে। চাঁদ বাদাম খাচ্ছে আড়চোখে প্রিয়মকে দেখছে। ইচ্ছে একা একা খেলছে আর হাসছে। হঠাৎ একটা বাচ্চা খেলার ছলে পড়ে গিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। সে ব্যাথা পেয়ে, ‘বাবা! বাবা!’ করে কাঁদছে। বাচ্চার বাবা বাচ্চাটাকে কোলে তুলে আদর করতে লাগলেন।
ইচ্ছে তখন প্রিয়মের কাছে দৌড়ে আসল। কিছু একটা ভেবে ইচ্ছে ওর হাতের দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বলল,”প্রিউুম! আমি তোমালে বাবা বললে লাগ করবা? আমি তোমালে বাবা বলি?” প্রিয়ম একথা শুনে থমকে গেল। সে ইচ্ছেকে কোলে তুলে পুরো মুখে আদর দিয়ে বলল,” না সোনা একটু রাগ করব না। তোমার যতোখুশি তুমি বাবা ডাকো।”
ইচ্ছে প্রিয়মের গলা জড়িয়ে ধরে ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে বলল,”সুত্যিই প্রিউুম! সলি সলি তুমি লাগ কলবা না বাবা?” প্রিয়ম খুশিতে ছলছল চোখে বলল,”উহুম! একদম সত্যি সোনাপাখিটা।” চাঁদ কিছু বলল না শুধু চোখের কোণে পানিটুকু মুছে নিল। সে জানে বাবা মা না থাকার কষ্ট। ইচ্ছে এখন ক্ষণে ক্ষণে প্রিয়মকে বাবা ডাকছে। প্রিয়ম বাবা ডাকের অনুভূতি অনুভব করতে পারছে। তারও যেন খুশির অন্ত নেই। সন্ধ্যায় পর বাসায় ফিরে সবাই ইচ্ছের ডাক শুনে অবাকের সঙ্গে খুশিও হলো। (আমার দেরীতে গল্প দেওয়ার জন্য সাইলেন্ট পাঠক/পাঠিকারা দায়ী। যেমন আপনাদের মনমতো আপনারা সাইলেন্ট থাকেন। তেমনি আমিও আমার মনমতো গল্প পোষ্ট করি। তাই আমার দিকে অযথা আঙ্গুল তুলবেন না। আপনারা রেসপন্স বাড়ান, তাহলে আমিও গল্প রেগুলার দিব।)
এই ঘটনার বেশ কিছুদিন পর, প্রত্যয় অনেকগুলো পেশেন্ট দেখে জামিলকে জিজ্ঞাসা করল,” আর কতজন আছে?” জামিল একবার বাইরে তাকিয়ে বলল,”স্যার, দুইজন স্পেশাল পেশেন্ট বাকি আছে। এখন কি উনাদের পাঠাব?” প্রত্যয় মৃদু হেসে ইশারায় পাঠাতে বলল। ওর কাছে সব পেশেন্ট সমান। এ বিষয়ে সে যুক্তি তর্ক করতে ইচ্ছুক নয়। আর বুদ্ধিমানরা সহজে তর্কে জড়ায় না। তাদের মধ্যে প্রত্যয় একজন। জামিল বাইরে গিয়ে পেশেন্টদের পাঠাল। ইচ্ছে দরজায় উঁকি মেরে ভেতরে ঢুকে বলল,”ডাকতাল আমাল আপুকে সূচ দাও।” প্রত্যয় ইচ্ছেকে দেখে উঠে কোলে তুলে নিল। তুয়া তখন ভেতরে প্রবেশ করে বলল,”তোকে দিবে।” প্রত্যয় ওদের দেখে হেসে বলল,” বাহ! দুই জান্নাত একসঙ্গে বেশ তো।”
ওরা প্রত্যয়কে না জানিয়ে হসপিটালে এসেছে। প্রত্যয় আসার সময় বলেছিল, ‘সে দুপুরে বাসায় আসবেনা। পেশেন্ট দেখে ওটিতে ঢুকবে।’ এজন্য তুয়া হালকা খাবার নিয়ে এসেছে। ইচ্ছে ওর গলায় থ্যাথোস্কোপ ঝুলিয়ে সবকিছু ঘেঁটে দেখছে। ওটি থাকলে প্রত্যয় ভারী খাবার এড়িয়ে চলে। এজন্য ওদের নিয়ে হালকা নাস্তা করল। প্রত্যয় এখন ওটিতে ঢুকব। তাই জামিলকে বলল ওদের বাসায় পৌঁছে দিতে। তিনজনে একসঙ্গে বের হয়ে দেখল, একটা মেয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর বলছে, “বাবাই! আমি যাবো না বাবাই। আমি খুব ভয় পাচ্ছি, প্লিজ বাবাই।” এই মেয়েটার অপারেশন করতে যাচ্ছে প্রত্যয়। মেয়ের হার্টে মেজর সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইচ্ছের ‘বাবাই’ ডাকটা পছন্দ হলো। তাই সে প্রত্যয়ের শার্টের বোতাম খুঁটরে বলল,”প্রত্তুয় বাবাই মেয়েতা তাঁদছে কেন? ওলে কি সূচ দিয়েচো?”
ইচ্ছের মুখে ‘প্রত্তুয় বাবাই’ ডাক শুনে তুয়া প্রত্যয় দু’জনে অবাক হলো। তুয়া ইচ্ছেকে কোলে নিয়ে বলল,”কী বললি আবার বল?” ইচ্ছে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বলল,
“বাবাই বলেচি, সলি।” প্রত্যয় ইচ্ছেকে কোলে নিয়ে আদর দিয়ে আদুরে কন্ঠে বললে,”সরি না সোনা। আমি মোটেও রাগ করিনি। আজ থেকে আমি তোমার বাবাই আর তুমি আমার আম্মু, কেমন? তোমার এই ডাকে আমার প্রাণ জুড়িয়ে গেছে, আমার সোনা আম্মুটা।” ইচ্ছে পাশে ফিরে দেখল মেয়েটা সেখানে নেই। ততোক্ষণে নার্স তাকে ওটিতে নিয়ে গেছে। ইচ্ছে কিছু বলার আগে, ডক্টর ঈশান ইচ্ছেকে দেখে বলল,”ওয়াসিক স্যার বাবুটাকে কে? খুব কিউট তো!” প্রত্যয় মৃদু হেসে অকপটে উত্তর দিল,”আমার মেয়ে।”
রনিতের বস এখনও রনিতকে অপমান করে। কিন্তু রনিত কখনও প্রত্যুত্তর করেনা। উনি যা বলে সবটা সে মেনে নেয়। অফিসের অনেকে রনিতকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলে। কিন্তু রনিতের জেদ,’ সে বসের মন জয় করেই ছাড়বে।’ অকারণে বকা খাওয়া পরও সে এই সিধান্তে অটল। আজকাল বস রনিতকে দ্বিগুন খাটায়। কারণ বসের কাছে বাঙালী মানে, সুবিধাবাদী, লোভী, অক্ষম, গেঁয়ো এক জাতি। তাছাড়া বিশেষ এক কারণে বাঙালী উনার চোখে বিষ। রনিত আজ দুই মিনিট লেটে অফিসের পৌঁছেছে। এজন্য পানিশমেন্ট হিসেবে সে পাঁচটা ফাইল রেডি করে বাসায় ফিরতে পারবে। নাহলে ওর পুরো মাসের স্যালারি কাটা হবে।
দুই সপ্তাহ হলো চাঁদ আর তুয়ার পরীক্ষা শেষ। তুয়া, চাঁদ আর ইচ্ছে তুরাগদের বাসায় বেড়াতে এসেছিল। ওরা তিনদিন থাকবে ভেবে এসে সেদিনই ফিরে গেল। এখানে আসার পর ইচ্ছে আব্বু আম্মুর জন্য কান্না করছিল। তাই তুয়া ভেবেছে এখানে আর আসবে না। বরং আব্বু আম্মুকে বলবে ওকে দেখতে আসতে। চাঁদ তুয়া দু’জনে ইচ্ছেকে খুব ভালোবাসে। এজন্য তারা ইচ্ছের দিকটা আগে ভেবেছে। এদিকে, তিন্নি তুরাগের সাথে বেশ সুখে আছে। তিন্নি এখন ইলার কথা জানে। তুরাগে থেকে সব শুনে তিন্নি বলেছিল,”পূর্বের কথা বাদ এখন আপনি শুধু আমার।” তুরাগ কথাটা শুনে ছলছল চোখে হেসেছিল। এখন তুরাগের সঙ্গে ইলার যোগাযোগ নেই। তুরাগও আর পিছু ফিরে তাকাতে চাই না। এভাবে সে বেশ ভালো আছে।
দুইদিন পর, ইচ্ছের রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
ইচ্ছের তো খুশির অন্ত নেই। ইচ্ছে এখন একা থাকতে পারবেনা। তাই ইচ্ছের সঙ্গে প্রত্যয়, প্রিয়ম, চাঁদ অথবা তুয়া থাকে। এভাবেই দিন দিন ইচ্ছে মানিয়ে নিতে শিখে যাবে।
সময় একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে। দিন পেরিয়ে মাসকে বিদায় জানিয়ে বছর ছুঁই ছুঁই। ইচ্ছে এখন বুঝতে শিখছে বড় হচ্ছে! ইচ্ছেকে স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে। সে প্রত্যয়কে বাবাই আর প্রিয়মকে বাবা ডাকে। আর তুয়া ডাকে মাম্মা আর চাঁদে মামনি। প্রত্যয়ের বাবাকে ডাকে দাদুজান। আর আম্মুকে ডাকে দাদুন। এখন ইচ্ছের নিজের পরিবার এটা। সে এখানে বেশ ভালো আছে। সায়ন মাঝে মাঝে ইচ্ছেকে দেখে যায়। এবং মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলে। আর রনিতের তো ইচ্ছের সঙ্গে কথা না বললে দিন কাটেনা। কারন ইচ্ছে এখন রনিতের প্রাণ।
সময়ের চাঁকা ঘুরতে ঘুরতে পাঁচটা বছর পেরিয়ে গেল। এই পাঁচ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। প্রিয়ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যয়ের নাম ডাক চারদিকে ছড়িয়েছে। চাঁদ তুয়া নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন চাঁদ প্রিয়মের সম্পর্কটা স্বাভাবিক। তুরাগের একটা ছেলে হয়েছে। ইচ্ছে আর মডেলিং শো করেনি। মূলত প্রত্যয় আর করতে দেয়নি। গত পাঁচ বছরে, এতোগুলো মানুষের কার্যক্রমেও পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু মানুষগুলো একই রকম আছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে একে অপরের প্রতি ভালবাসা, শ্রদ্ধাবোধ, মায়া, এবং স্নেহশীলতা। ইচ্ছে এখন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ছে। সে পড়াশোনাতে যেমন মেধাবী, তেমন দুষ্টু। এখন ইচ্ছের দূর্বল পয়েন্ট প্রত্যয় আর প্রিউম। ওরা ছাড়া ইচ্ছে কারো কথা শুনতে নারাজ।
রাতে সবাই একসঙ্গে খেতে বসেছে। প্রত্যয় ইচ্ছের প্লেটে মুরগির রান তুলে দিল। ইচ্ছে শরীর ঝাঁকিয়ে হেসে প্রিয়মকে বলল,”বাবা রান খাবে নাকি, হুম হুম?” প্রিয়ম হেসে ইলিশ মাছের কাঁটা বেছে ইচ্ছেকে দিয়ে বলল,”না আম্মাজান বাবাদের রান খেতে নেই। রান খাওয়ার বয়স থাকে।” কথাটা শুনে প্রত্যয়ের আব্বু খাওয়া থামিয়ে প্রিয়মের দিকে তাকালেন। প্রিউম ছোট থাকতে একদিন ওর বাবাকে বলেছিল, “আব্বু তুমি রান খাও।” তখন উনি প্রত্যুত্তরে একথাটাই বলেছিলেন। প্রত্যয়ের আব্বু হেসে খাওয়াতে মনোযোগী হলেন। ইচ্ছে খেতে খেতেও চাঁদের সঙ্গে দুষ্টু করছে। প্রত্যয় ইচ্ছের মুখে ভাত দিয়ে বলল,”ইচ্ছেমণি, এবারের মেধা তালিকায় তোমার নামটা আমি প্রথম স্থানে দেখতে চাই।” ইচ্ছে মুরগী হাড্ডি চিবুতে চিবুতে অসঙ্কোচে বলল,
“না পারলে?”
“একটু কষ্ট পাব।”
“ইনশাল্লাহ! তোমার মেয়ে পারবে বাবাই।”
“আমি জানি সোনা আম্মু।”
তখন প্রত্যয়ের আম্মু গলা পরিষ্কার করে বললেন,”উহুম! উহুম! আমাদের বাসায় ছোট্ট মেহমান আসতে চলেছে।”
একথা শুনে সবার দৃষ্টি তুয়ার দিকে। তুয়া যেহেতু বড় বউ সবার প্রত্যাশা তুয়া প্রেগনেন্ট। কিন্তু প্রত্যয়ের আম্মু হেসে বললেন,” আগে আমাদের চাঁদের ঘরে চাঁদের কণা আসতে চলেছে।” সবাই এবার ঘাড় ঘুরিয়ে চাঁদের দিকে তাকাল। চাঁদ লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। সবাই এ খবর শুনে একসঙ্গে বলল,’আলহামদুলিল্লাহ!’ প্রত্যয়ের আম্মু আরেক গাল হেসে বললেন, “ডাবল সুখবর হচ্ছে, আমাদের তুয়াও মা হবে।”
এবার সবাই চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।
প্রত্যয়ের আম্মু যে মজা করছে না। এটা উনার ছলছল চোখ আর হাসি দেখে বোঝা যাচ্ছে। গত দুই সপ্তাহ থেকে প্রত্যয় তুয়ার ব্যাপারটা আন্দাজ করেছিল। কিন্তু তুয়াকেও কিছু বলেনি। সব মেয়ে এই খবর আগে বরদের জানায়। কিন্তু
চাঁদ তুয়া আগে ওদের বন্ধুরুপী শাশুড়িকে জানিয়েছে। শাশুড়ির কথায় হসপিটালে টেস্ট করে সিওর হয়ে সবাইকে জানাল। চাঁদের এখন তিন মাস। ওর পিরিয়ড অনিয়মত হওয়াতে সে বুঝতে পারেনি। আর তুয়ার চলছে দেড় মাস। সবার মুখে তৃপ্তি হাসি। তবে প্রিয়ম প্রত্যয়ের দিকে আর লজ্জায় তাকায়নি। যদিও এটা কাকতালীয় ঘটনা।
প্রত্যয়ের আব্বু খুশি হলেও মুখে কিছু বললেন না। উনার কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট ফুঁটে উঠেছে। এ ব্যাপারটা তুয়ার দৃষ্টি এড়ালো না। প্রত্যয়ের আব্বু একজন বুদ্ধিমান মানুষ। উনার চিন্তা একটাই! এবার ইচ্ছের কি হবে? চাঁদ তুয়া নিজেদের বাচ্চা পেয়ে ইচ্ছেকে দূরে সরাব না তো? ইচ্ছে
ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হবে না তো? আর নিজের বাচ্চা কাঁদলে কেউ অন্যের বাচ্চার জন্য দৌড়ায় না। একথা চরম সত্যি। সেখানে ইচ্ছে তো…। এতোদিন সব ঠিক ছিল। এখন দু’টো বাচ্চা এসে যদি প্রত্যয় প্রিয়মসহ সবার মন বদলে যায়? মানুষের মনের উপর কারো হাত থাকেনা। তেমনি মানুষের মনও বদলাতেও সময় লাগে না।
উনার কপালের ভাঁজ আর চিন্তিত ফেস দেখে তুয়া মৃদু হেসে বলল,”আব্বু ইচ্ছের আদর কখনও কমবেনা, কথা দিলাম।”
To be continue…..!!