অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_14

0
667

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_14

–“এই যে, আমার জান পাখিটা কি করে? সে কি ব্রেকফাস্ট করেছে?
–“হুম।”
–“এখনো রাগ করে থাকবে? প্লিজ! কথা বলো। আচ্ছা বাবা আমি কান ধরে বলছি সরি। আর এমন হবে না। প্লিজ! লক্ষী বউ আমার আর রাগ করে না।”
–“হুম”
–“কি তখন থেকে হুম হুম করছো? লক্ষীটি কথা বলো। তোমার গলার ভয়েস না শুনলে আমি মনে হয় এবার হার্ট এ্যার্টাক করব।”

বিভা না হেসে আর থাকতে পারলো না। রায়হানের এমন আদুরে কথা শুনে উচ্চশব্দে হো হো হো করে হেসে দিল। তনুকা ওয়াশরুমে গেছে। এজন্য বিভা তনুকার ফোনটা রিসিভ করেছে। রায়হান বুঝতেই পারেনি ওটা উনার বউ না, আদরের শালিকা। সে তো তার মত করে কথা বলে যাচ্ছিল। তনুকা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিভার কান্ড দেখছিল। বিভা মুখে ওড়না চেপে ধরে হাসছে। তনুকা নিজেও হেসে ফেললো। আর রায়হান ফোনের অপর পাশে জিভে কামড় দিয়ে বসে আছে। ইস! কি লজ্জা। আসলে কালকে রাতে রায়হানের একটা সার্জারির ছিল। এজন্য তনুকার ফোন রিসিভ করতে পারেনি। তনুকা বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো। পরে রায়হান ভেবেছে, তনুকা ওর উপর রাগ করে আছে। তাই এমন আদুরে কথাগুলো বলছিলো। কিন্তু সে তো জানে না যে এটা উনার বউ না; এটা আদরের শালিকা। আর দুষ্টু শালিকা ওর কথা শুনে মজা নিচ্ছিলো এতক্ষন।

নক্ষত্র, তিতিক্ষা, জেসিকা আর সাফওয়ান চারজন মিলে চা বাগানে ঘুরতে গেল। চা বাগানে ঢুকে যত দূর চোখ যায় কেবল সবুজের হাতছানি। চা বাগানের সারি সারি টিলা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর ঘন সবুজ অরণ্যের অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। চা বাগানের সতেজ সবুজ পাতায় পূর্ণ হয়ে আছে শ্রীপুরের নিসর্গশোভা। ওরা বাগানে ঢুকে চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। তিতিক্ষা এর আগে কখনো চা-বাগান দেখেনি। সে চায়ের পাতাগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। নক্ষত্রের পাশে তিতিক্ষা হাঁটছে, আর সাফওয়ানের পাশে জেসিকা। নক্ষত্র তিতিক্ষার বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। সবুজের সমারোহেরের মাঝে তিতিক্ষার লাল ড্রেস যেন ফুটে উঠেছে। সাফওয়ান নক্ষত্রের পাশে এসে কানে কানে বললো,
–“তোরা নিজেদের মতো টাইম স্পেন্ড কর। আমরা ওদিক থেকে আসছি।”

সাফওয়ান জেসিকা কে নিয়ে অন্য দিকে চলে গেল। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা পুরো চা বাগানটা ঘুরে দেখল। হঠাৎ করে নক্ষত্র তিতিক্ষার সামনে দুই পাতার এক কুড়ি নিয়ে তিতিক্ষাকে সিলেটি ভাষায় বললো,

–“আমি তোমাকে ভাল ফাই মিসেস নাহিয়ান।”
(আমি তোমাকে ভালবাসি মিসেস নাহিয়ান)

তিতিক্ষা লজ্জা পেলো নক্ষত্রের মুখে এমন ভাবে ভালবাসির কথা শুনে। নক্ষত্র তখন দুষ্টু হেসে বললো,

–“আমার দেকিয়া এতো লজ্জা ফাও খেনো? তুমার সরম মাখা মুখ খান আমার খুব বালা লাগে। আ… ।”

নক্ষত্র কথাটা পুরো শেষ করতে পারেনি। অবাক হওয়ার দৃষ্টিতে বাম দিকে তাকিয়ে আছে। নক্ষত্রের দৃষ্টি অনুসরণ করে তিতিক্ষাও সে দিকে তাকিয়ে থ।
সাফওয়ানের গলাতে জেসিকার হ্যান্ড ব্যাগ ঝুলানো। সাফওয়ানের এক হাতে পানির বোতল আর অন্য হাতে জেসিকার মেকাপ বক্স। আর জেসিকা সেলফি তুলতে ব্যস্ত। জেসিকা সেলফি তুলছে আর সাফওয়ান জেসিকার পেছন পেছন ঘুরছে। সাফওয়ানের এমন করুন অবস্থা দেখে নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকাতেই দুজনেই হো হো করে হেসে দিলো। ওদের দু’জনের হাসি দেখে সাফওয়ান মুখ কাচুমাচু করে বললো,

–“কথাতে আছে, কপাল ওয়ালার কপাল। আর মুরগি ওয়ালার ডিম।”

সাফওয়ানের কথার মানেটা জেসিকা বুঝতে পারেনি। এজন্য কিছু বললো না। কিন্তু নক্ষত্র আর তিতিক্ষা বুঝতে পেরে আবার হো হো করে হেসে দিলো। চারপাশটা ঘুরে ওরা জাফলংয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। সিলেট থেকে জাফলং এর দূরত্ব প্রায় ষাট কিলোমিটার। সিলেট থেকে সরাসরি জাফলং যেতে সময় লাগবে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা। বিরতিহীন বাসের টিকিট কেটে চারজনেই উঠে বসলো। বাস ছুটে চললো তার গন্তব্যে। তিতিক্ষা জানালার পাশে বসে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার কানে ফিসফিস কানে বললো,

–“তোমার এলোকেশ আমাকে ভদ্র থাকতে দিচ্ছে না। অভদ্র হলে পরে আমাকে দোষ দিও না।”

নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা এবারও মুচকি হাসলো। এই নিয়ে নক্ষত্র চার বার তিতিক্ষার চুল নিয়ে অভিযোগ জানালো। নক্ষত্র তিতিক্ষার চুল গুলো বাধতেও দিচ্ছে না। কিন্তু ঠিকই অভিযোগের ঝুলি নিয়ে বসেছে। ওরা সারাদিন ঘোরাঘুরি করবে, এজন্য তিতিক্ষা শাওয়ার নিয়েছে। হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকানোর পরও চুলের গোড়া একটু একটু ভেজা আছে। তাই ভেজা চুলের জন্য চুল ছেড়ে দিয়েছে। এদিকে তিতিক্ষার ভেজা চুল দেখে, সাফওয়ান নক্ষত্রকে খোঁচাতে একটুও কার্পণ্যতা করেনি। তখন নক্ষত্র সাফওয়ানের খোঁচা মার্কা কথা শুনে বিড়বিড় করে বললো,
–“একেই বলে বিনা দোষে অপরাধী।”

নক্ষত্র বাসের সিটে হেলান দিয়ে তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর কোমর সমান লেয়ার কাটের চুলগুলো অবাধ্য হয়ে বাতাসে উড়ছে। তিতিক্ষার ফেসের সাথে লম্বা চুলের লেয়ার কাট’টা বেশ মানিয়েছে। তিতিক্ষা বাইরের সৌন্দর্য দেখতে বিভোর। আর ওর অবাধ্য চুলগুলো উন্মুক্ত বাতাসে উড়ে নক্ষত্রের চোখ মুখে আছড়ে পড়ার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। তিতিক্ষা নামক মায়াবতীর বাতাসে উন্মুক্ত এলোকেশের মোহনীয় নৃত্যের ছন্দটা নক্ষত্রের হৃদয়ে ক্ষণে ক্ষণে যেন নামহীন অনুভুতি হয়ে ঢেউ খেলে যায়।

সাফওয়ানরা পেছনের দুই সিট আগে বসেছে। সাফওয়ানের কাঁধে মাথা দিয়ে জেসিকা বাইরে তাকিয়ে আছে। জেসিকার চুল এসে সাফওয়ানের নাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। কিছুক্ষণ একই ভাবে সুড়সুড়ি লাগাতে সাফওয়ান হাঁচ্চু বলে হাঁচি দিলো। আর জেসিকা সাফওয়ানের বুকে কিল বসিয়ে দিলো।
প্রায় দুই ঘন্টা পর ওরা জাফলং পৌঁছালো; যেই স্থানটা প্রকৃতির কন্যা হিসাবে সবার কাছে পরিচিত। সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে একটি হল জাফলং । প্রকৃতির দানে রুপের পসরা সাজিয়ে আছে জাফলং। পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা জাফলংকে করেছে অনন্য। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে জাফলংয়ের সৌন্দর্য্য। সবুজের বুকে নেমে আসা ঝর্ণাধারায় সূর্যের আলোর ঝিলিক‌ আর পাহাড়ে ভেসে বেড়ানো মেঘমালার দৃশ্যটা ও মন্ত্রমূগ্ধ। এক এক ঋতুতে জাফলং এর সৌন্দর্য একেক রকম। তবে এই শীতে অন্য রূপে নিজের সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়েছে জাফলং। চারিদেকে সবুজের সমারোহ, পাহাড় চূড়ায় গহীন অরণ্য। জাফলংয়ের বুক চিড়ে বয়ে গেছে দুই নদী। তিতিক্ষা ওর গালে দুই হাত রেখে ধরা গলায় বললো,

–“হে আল্লাহ! তোমার অপার সৌন্দর্যের বর্ণনা করার ভাষা আমার জানা নেই। আল্লাহ তোমার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে তুমি তোমার মনোহর সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য আমাকে দিয়েছো।”

নক্ষত্র তিতিক্ষার মুখের দিকে তাকালো। তিতিক্ষা বহুদূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত কন্ঠে বলল,

–“আমাদের জীবনটা আসলেই খুব সুন্দর। শুধু আমরা আমাদের জীবনটাকে উপভোগ করতে জানি না। নিজেদের লাইফ স্টাইল, ব্যস্ততা, পড়াশোনা, জব, হাজারটা সমস্যা এসব নিয়েই জীবন শেষ করে দিয়ে বলি,’এই জীবনে কি পেলাম?’ ”

তিতিক্ষার কথা শুনে নক্ষত্র মুচকি হাসলো। নক্ষত্র পেছনে তাকিয়ে দেখলো, সাফওয়ান আর জেসিকা এখানে এসেও সেলফি তুলতে ব্যস্ত। নক্ষত্রও কিছু একটা ভেবে ওর ফোনটা বের করে, ওদের দুজনের কয়েকটা পিক তুলে নিল। হঠাৎ নক্ষত্রের এমন করাতে তিতিক্ষা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। নক্ষত্র মিটিমিটি হেসে বললো,
–“এই পিক গুলো অবসর সময়ে আমার এনার্জির কারন হবে।”

নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে সামনের দিকে এগোলো। ওদের সামনে ধলাই ও পিয়াইন নদী। এই নদী দুইটি অন্যন্যতা এনে দিয়েছে জাফলংকে। ধলাই ও পিয়াইনের স্বচ্ছ জলে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় নানা জাতের ছোট মাছ। তিতিক্ষা নদীর পানিতে পা ডুবালো। নক্ষত্র তিতিক্ষার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। পায়ের নিচে স্বচ্ছ পানি। আর পানির নিচে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, ছোট ছোট মাছ এসে তিতিক্ষার পায়ে টোকা দিচ্ছে। তখন সুড়সুড়ি লাগলে তিতিক্ষা খিলখিল করে হেসে উঠছে। শব্দ পেয়ে মাছ গুলো ছুটে পালাচ্ছে। আবার একটু পর এসে তিতিক্ষার পায়ে টোকা দিচ্ছে। তিতিক্ষার মাছদের সাথে এমন খেলাতে মেতে থাকতে অদ্ভুত রকমের ভালো লাগছে। নক্ষত্র এক হাত দিয়ে ওর ফোনটা ধরে এমন মুহূর্তটাকে ক্যামেরা বন্দী করে নিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার হাতটা এখনো শক্ত করে ধরে আছে; যেন তিতিক্ষা পা পিছলে পড়ে না যায়।
হঠাৎ নক্ষত্র মুচকি হেসে বললো,

–“গার্লফ্রেন্ডের হাত আর বউয়ের হাত ধরার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। তিতিক্ষা তুমি কি বলতে পারবে পার্থক্যটা কি?

–“উমম! গার্লফেন্ডকে যদি বিয়ে করে তাহলে গার্লফেন্ড তো বউ হয়ে গেলো। আর হাত তো হাতই এখানে পার্থক্য কিভাবে আসলো?”

তিতিক্ষার এমন কথা শুনে নক্ষত্র মিটিমিটি হাসছে।
তিতিক্ষা নদী থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল নক্ষত্রের হাসির কারণ। নক্ষত্র তিতিক্ষার হাতটা আলতো করে ধরে হাঁটতে শুরু করল, তারপর বললো,

–“বিয়ের আগে গার্লফ্রেন্ডের হাত ধরলে মনে হয়, কেউ দেখবে? কে কি বলবে? বাসায় বলে দিবে কি না? এরকম একটা অস্বস্তি কাজ করে মনের মধ্যে। কিন্তু বউয়ের হাতটা ধরার পর মনে হয়, আমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা অবধি, আল্লাহ! তুমি এই হাতটাকে শক্ত করে ধরে রাখার তৌফিক দান করো।”

নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা মনে মনে বললো, –“আমিন।”

তিতিক্ষা মাঝে মাঝে খুব অবাক হয়। নক্ষত্র এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে কিভাবে? এটা ও কিছুতেই ভেবে পায় না। নক্ষত্রের সাধারণ একটা কথার মাঝেও অসাধারণ কিছু যুক্তি লুকিয়ে থাকে। নক্ষত্র স্বল্পভাষী হলেও ওর কথার মাঝে অসাধারণ একটা ব্যাক্তিত্বের পরিচয় ফুটে ওঠে। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা তখন পাশাপাশি হাঁটছিলো। হঠাৎ সাফওয়ান হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো,

–“সারাদিন অনেক ঘুরাঘুরি করেছি। এবার চল আমরা ফিরে যায়। ব্রো আমার খুব টায়ার্ড লাগছে।
আমি আর এই প্যারা থুক্কু জেসিকে নিয়ে ঘুরাঘুরি করতে পারছি না। সে আমার জান জীবন পুরোটাই ন্যাতা ন্যাতা করে দিয়েছে।”

সাফওয়ানের এরকম কথা শুনে জেসিকা পিছন থেকে এসে সাফওয়ানের পিঠে কিল বসিয়ে দিলো। সাফওয়ান পেছনে তাকিয়ে জেসিকাকে দেখে অসহায় চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। ওদের কান্ড দেখে তিতিক্ষা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তবে নক্ষত্র মোটেও অবাক হলো না। কারণ সে এসব দেখে দেখে অভ্যস্ত। চারজন মিলে ওখান থেকে বেরিয়ে গেল। একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে এরপর বাসে ওঠে বসলো। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা আপাতত নূরজাহান গ্র্যান্ড হোটেলে উঠবে। ওখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তারপর নানুর বাসার উদ্দেশ্যে যাবে । বাসে থেকে নেমে নক্ষত্র সাফওয়ানকে বললো,

–“আমরা ফ্রেশ হয়ে তো নানুর বাসায় যাব। তুইও চল আমাদের সাথে। কয়েকদিন ওখানে থেকে আমাদের সাথে ব্যাক করিস।”

–“না রে ভাই! ওইদিকে আপাতত আর যাচ্ছি না। আমার কাজ পড়ে গেছে। আজকেই আমাদের রওনা দিতে হবে। তোরা আস্তে ধীরে ঘুরে ফিরে তারপরে ফিরিস।”

এরপর তিতিক্ষা আর নক্ষত্র ওদের থেকে বিদায় নিয়ে হোটেলে গেল। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে, হালকা নাস্তা করে বাসার দিকে রওনা হলো। আর যাওয়ার আগে সবার জন্য অনেক কিছু সাথে নিলো। বিশেষ করে পাতা আর অদ্রির জন্য। সিনএনজিতে দু’জন চুপ করে বসে আছে। জানা নেই, আবার কবে এভাবে একে অপরকে সময় দিতে পারবে। এত এত ভাল লাগার মুহূর্ত গুলোর পেছনে দু’জনই মন খারাপের ভাবটা আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে। কেউ কাউকে বুঝতে না দিলেও, ওদের মনে একই ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে বললো,

–“তিতিক্ষা, আপাতত আমাদের বিয়ের কথাটা কাউকে জানিও না। সবাই ভালভাবে ব্যাপারটা নাও নিতে পারে।”

তিতিক্ষার মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। বাসার সামনে সিএনজি এসে থামলো। সিএনজি থেকে নেমে বিল মিটিয়ে নক্ষত্র আর তিতিক্ষা বাসায় ঢুকলো। তখন সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। দুজনকে দেখে সবাই অনেক খুশি হল। চারদিন পর ওরা বাসায় ফিরেছে। এই চারদিনে বাসাটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো। এখন যেন শূন্য বাসাটা ওদের আগমনে পূর্ণ হলো। তিতিক্ষা সবাইকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো। হঠাৎ অদ্রি একটু জোরেই বলে উঠলো,
–“ভাবিমণি এই চার দিনে তুমি তো অনেক সুন্দর হয়ে গেছো? আমি তো নিজেই তোমার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না।”

অদ্রি কথাটা বলতেই নক্ষত্র ওর দুই হাত উপরে তুলে বললো,

–“আমি নির্দোষ! এর পিছনে আমার কোনো হাত নেই।”

নক্ষত্রের বলা কথাটা শুনে বড়রা হো হো করে হাসতে লাগলো। নক্ষত্রের আম্মুও মিটিমিটি হাসলো। উনি নক্ষত্রের মুখের দিকে তাকালো। নক্ষত্রের মুখে অদ্ভুত একটা সুখের ছাপ স্পষ্ট। উনি মা হয়ে জানে, যে নক্ষত্র যখন খুব ভালো মুডে থাকে, তখন একটু দুষ্টু কথাবার্তা বলে। আজকে অনেকদিন পর নক্ষত্রকে উনি এই রুপে দেখলো। তবে নক্ষত্রের বলা কথাটাতে এরকম হয়ে গেল,’ ঠাকুর ঘরে কে? আমি তো কলা খাইনি।’ সবাই হাসছে আর তিতিক্ষা মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। নক্ষত্রের ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসির রেখা স্পষ্ট। নক্ষত্র তিতিক্ষার পাশে দাঁড়িয়ে বিড় বিড় করে বললো,

–“লজ্জা পেলে? একটু লজ্জা পাও তো। তোমার লজ্জা মাখা মুখশ্রীটা আমি দু’চোখ ভরে দর্শন করি।”

নক্ষত্রের কথার প্রতি উত্তরে তিতিক্ষা লজ্জা মাখা কন্ঠে বিড়বিড় করে বললো,

–“আপনি কি জানেন? আপনার চোখ বলে আপনি খুব ভদ্র। কিন্তু আপনার ঠোঁট বলে আপনি মারাত্মক দুষ্টু।”

এমন কথা শুনে নক্ষত্র ওর হাসিটা কোনো রকমে কন্ট্রোল করে নিলো। বাসার সবাই ওদের আনা জিনিস গুলো দেখছে। আর ওরা নিজেরা নিজেদের কথা বলায় ব্যস্ত। নক্ষত্র সবার দিকে একবার তাকিয়ে আবারও বিড়বিড় করে বলল,

–“এই রে! বিয়ের পরে দেখি আমার বউটা একটু বেশি চালাক হয়ে গেছে।”

নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা আর কিছু বললো না। সে বুঝে গেছে, এই ছেলেটার সাথে ও কথাতে পেরে উঠবে না। তিতিক্ষাকে চুপ করে থাকতে দেখে, নক্ষত্র মুচকি হাসলো। আর যাওয়ার আগে তিতিক্ষাকে মৃদু একটা ধাক্কা মেরে রুমের দিকে এগোলো।

To be continue….!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here