#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_29
🍁🍁
________রোদ গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে আনে আর আলোর সামনে এসে গাড়ির দরজা খুলে দেয়!আলো গাড়িতে উঠে বসলো….রোদ মেঘকে না দেখে বুঝলো এটা রোদের হিটলার আম্মু কাজ!মেঘকে উনিই আসতে দেয়নি!একদিক থেকে রোদও মনে মনে খুশিও হয়!আলো গাড়িতে উঠে বসে আর রোদ আলোর দিকে টিস্যু এগিয়ে দিলো! কারন আলোর নাকে থুতনিতে হালকা ঘাম জমেছে যেটা রোদকে ঘায়েল করার জন্যই যথেষ্ট ।আলো টিস্যুটা হাতে নিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো…..!!রোদ মুচকি হেসে গাড়ি স্টাট করলো…!!আলো বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে মুখ গোমড়া করে!রোদ ভালো করেই বুঝতে পারছে তার তিলোকন্যা তার উপরে অভিমান করেছে!রোদ মুচকি হেসে বললো…!!
রোদঃমুখটা এমন পেত্নীর মত করে আছেন কেন শুনি?? আপনার কত নাম্বার হাবি মারা গেছে যে মুখটা এমন করে ফুলিয়ে রাখছেন…!!
আলোঃ…..
রোদঃ যা বাবা বোবা হয়ে গেলে নাকি??আহারে তোমার জন্য তো এখন কষ্টই হচ্ছে! শেষে কি না বোবা হয়ে গেলে তুমি!এখন তো কেউ তোমাকে বিয়েও করবে না..!! (দুষ্টু হেসে)
আলোঃ…
রোদঃ ওমন শাকচুন্নির মত সাজতে দেয়নি! তাই মুখ ফুলিয়ে রাখছেন বুঝি ম্যম..!!(মুচকি হেসে)
আলোঃ সবাই কত সুন্দর করে সেজেছে! শুধু আমিই…!! (অভিমানী গলায়)
রোদঃহুমম তুমি কি বলো??
আলোঃ ওদের সবাইকে কত সুন্দর দেখাচ্ছে! শুধু আমাকেই পঁচা দেখাচ্ছে। ওরা কেমন করে তাকাচ্ছিলো আমার দিকে।(মুখ ফুলিয়ে)
রোদঃ ভারী মেকাব,গাঢ় করে লিপস্টিক, এত এত গয়না, এসব পড়লেই সুন্দর দেখায় বুঝি..?
আলোঃহুমম দেখায় তো!(অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে)
রোদঃ উহুম! তাহলে বলবো তুমি ভুল জানো!অনেকে মনে করে বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই ঝাকানাকা কিছু ড্রেস পড়লেই হয়! সবাই যা করে তুমিই বা কেন সেইম কাজই করবে? সব সময় আলাদা কিছু করার ট্রাই করবে।আর একটা মানুষের ড্রেস, সাজগোজ বলে দেয় মানুষটা ঠিক কতটা রুচি সম্পূর্ন একটা মানুষ! সাধারণ থেকেই অসাধারণ কিছু হওয়া যায় জানো!আর অসাধারণ মানে এই না যে নিজের আসল রুপটাকে মেকাবে আবৃত করে সং সাজা!
আলোঃ….
রোদঃ আলো একটু সামনে তাকাও!আর সামনের কালো ড্রেস পড়া মেয়েটার চোখের দিকে তাকাও! দেখো মেয়েটা চোখের উপর কালো কি যেন দিসে??
আলোঃহুমম ওটাকে স্যাডো বলে..!!
রোদঃ সে যাই বলুক আমাকে এত চিনে লাভ নাই!এবার বলো যদি এমন স্যাডো দেওয়া মত কালো চোখ নিয়ে কোন বাচ্চার জন্ম হয় তাহলে সবাই কি করবে..??
আলোঃ সবাই অবাক হবে!ভয় পাবে! চিৎকার চেচাঁমেচি করবে!বাচ্চাটাকে দেখতে সাংবাদিক আসবে! কত শত মানুষ ফেসবুকে বাচ্চার ছবিটা পোষ্ট দিবো!হাজারো বানোয়াট কথা এড করে ক্যাপশন দিবে।কারন এমন তো বাচ্চা তো কারো হয় না..!!
রোদঃরাইট!আর এমন বাচ্চা কেন হয়নি জানো??(মুচকি হেসে)
আলোঃ আল্লাহ চাইনি বা দেয়নি তাই…!!
রোদঃইয়াহ্ একদম রাইট!আমাদের প্রতিটা মানুষকে কার কতটুকু সৌন্দর্য দিলে ভালো হবে! আল্লাহ আমাদের ততটুকু সৌন্দর্য দিয়েই তৈরী করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।তাহলে এসব কৃত্রিম হাজিবাজি দিয়ে নিজের আসল রুপ কেন ঢাকবে বলো।এমন তো না মেকাব একবার করলে আর জীবনেও আর মেকাব করা লাগবে না তাহলে।বরং এসব স্যাডো ফ্যাডো দিলে চোখেরই সমস্যা হয়।তাই বলছি নিজে যতটুকু সুন্দর আছো এটা নিয়েই শুকরিয়া করো..!!
আলোঃ….
রোদঃ আর আজকে যারা বেশি বেশি সাজগোজ করছে তাদের কথা বললে তো! তো যখন বাসায় ফেরার সময় হবে বা ফিরবে তখন তাদের অবস্থা দেখো! তাহলে বুঝবে কেন সাজগোজ করতে দিলাম না।
আলোঃ….
রোদঃসবাই কেমন করে তাকাচ্ছিলো বললে না এর উওরটা হচ্ছে! ওদের মত জোকার না সেজেও অসম্ভব সুন্দর দেখা যায়! এটা ওদের মে বি জানাছিলো না তাই ওমন করে তাকাচ্ছিলো।
আলোঃ……
রোদঃ কে কি করলো?কে কি বললো এটা ভাবতে গেলে জীবনে কিছু করতে পারবে না।সব সময় নিজের মনের কথা শুনবে!সবাই যা করে তুমি সব সময় অন্য রকম কিছু করার চেষ্টা করবে!যারা আজকে এত এত সাজগোজ করছে তাদের মধ্যে তুমি গিয়ে দাড়ালে সবাই তোমার দিকে তাকাবে কারন কি জানো??
আলোঃ না…!!
রোদঃ থাক এত জানতে হবে না!বেশি জেনে গেলে পরে সমস্যা হবে!শেষবার বলে দিলাম আর কোনদিন যদি দেখি সং সেজে বাইরে গেছো বা হিজাব ছাড়া যাচ্ছো বাসার বাইরে!তাহলে সেইদিনই বুঝবে বাকিটা! কেমন…!!
আলোঃ…
শেষের বলা কথাটা ছাড়া রোদের বলা বাকি কথাগুলো আলোর খুব ভালো লাগলো!রোদ এই প্রথম আলোর সাথে এত সহজে এত কথা বললো! তার একটা কারন আছে সেটা হলো যাতে আলো এখন রোদের সাথে থাকতে আনইজি ফিল না করে!আলোর জানা ছিলোনা রোদ এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে!আর এত সুন্দর করে কাউকে কিছু বোঝাতে পারে!আলো এটাও বুঝলো যে আসলেই সবার থেকে রোদের চিন্তা ভাবনা আলাদা!আলো অবাক হয়ে রোদের কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে! কারন রোদের বলা প্রতিটা শব্দ প্রতিটা বচনভঙ্গি অবাকের সাথে সাথে আলোর মনে অন্য রকম একটা অনূভূতির সৃষ্টিও করছে..!!
রোদ গাড়ি থামিয়ে পাশের দোকান থেকে ওর জন্য স্প্রাইট আর আলোর জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসলো!আলো আইসক্রিম খাচ্ছে আর আড়চোখে রোদের দিকে তাকাচ্ছে!
আলোঃ হুঁকোমুখো আপনি এতটা সুন্দর না হলেও পারতেন!আপনার এমন এটিটিউড বার বার আমাকে ঘায়েল করে।(মনে মনে)
রোদঃ আইসক্রিম গলে যাবে! আগে খেয়ে নাও তারপর আমাকে দেখো..!!(সামনে তাকিয়ে)
রোদের কথায় আলো খুব লজ্জা পায়!আলো সাথে সাথে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়!রোদ আলোর লজ্জা মাখা মুখ দেখে মুচকি হাসে!রোদদের গাড়িটা অনেক পেছনে!রোদ ইচ্ছে করেই গাড়িটা অনেক পিছিয়ে রাখছে।যাতে আর কিছুটা সময় আলোর সাথে থাকতে আর আলোকে জ্বালাতন করতে পারে।রোদ হঠাৎ করে ওর মুখে গম্ভীর ভাবটা ফুটিয়ে বললো….!!
রোদঃ তখন তুমি এভাবে সেজেছিলে কেন??তোমাকে এর আর আগে নিষেধ করছিলাম না(ধমকের সুরে)
আলোঃজ জ জি (চমকে উঠে).
রোদঃ তাহলে সাজলে কেন?নিজের রুপ মানুষকে না দেখালে চলে না তাই না। বড় চুল সবাইকে না দেখলে পেটের ভাত হজম হয় না তাই না!থাটিয়ে থাপ্পড় খাওয়ার শখ জেগেছে তাই না।(দাঁতে দাঁত চেপে)
আলোঃআস আসলে আম্মু সাজিয়ে দিয়েছে।তাই না করতে পারিনি।
রোদঃএকদম চুপ!আবার মুখে মুখে কথা তাই না।বলিনি আমার মুখে মুখে কথা বলবা না।(জোরে ধমকের সাথে)
রোদের ধমক শুনে আলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে!রোদের এক একটা ধমকে আলো কেঁপে কেঁপে উঠছে!আলোও বুঝতে পারছেনা হঠাৎ কি এমন করলো যে রোদ এখন এমন করে ধমক দিচ্ছে। আলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। আর রোদ মনে মনে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে!রোদ সামনে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে মনে মনে বলে..!!
রোদঃ শুনেছি কাঁদলে নাকি মায়াবতীদের দেখতে অনেক ভালো লাগে!আমার তিলোকন্যাকে দেখে তার প্রমান পেয়েছি এজন্য তো ইচ্ছে করে তোমাকে কাদায়!আরো কাঁদাবো আমি তোমাকে শত শত বার কাঁদাবো…..!! আর তুমি ঠোঁট ফুলিয়ে বাচ্চাদের মত করে কাঁদবে আর আমি তোমাকে বসে বসে দেখবো!দোষ না করলেও তোমাকে অকারণে বকা দিবো আর তোমাকে কাঁদাবো কারন তোমার কান্না মাখা মুখের প্রেমে পড়ছি আমি!কাঁদো তিলোকন্যা বেশি করে কাঁদো আর আমি দুচোখ ভরে দেখি! তোমার কান্নামাখা মুখ…!! (মনে মনে)
আলো ওর হাতের আইসক্রিম টা রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিতে গেলে রোদ আলো হাত ধরে ফেলে!আলো রোদকে তো কিছু বলতে পারবে না তাই অসহায় আইসক্রিমটার উপরে রাগ দেখাতে চাচ্ছে! রোদ আবার ধমক দিলো আর তারাতারি আইসক্রিমটা শেষ করতে বললো!আলো বাইরের দিকে মুখ করে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে!
আর রোদ দেখেও না দেখে ভান করে মুচকি হেসে বসে থাকলো!
ওদিকে _____!!
মেঘেরা যে গাড়িতে আছে সেই গাড়িতে সবাই মজা করতে করতে যাচ্ছে! এর মধ্যে কলি আর মেঘের ঝগড়া লেগেছে!কলি আর মেঘ ফিসফিস করে ঝগড়া করছে যাতে কেউ শুনতে না পায়।ওদের ঝগড়া লাগার কারন মেঘের চকলেট খেতে মন চাচ্ছে কলির কাছে চকলেট আছে! তাও কলি মেঘকে দিচ্ছে না।মেঘ অনেকক্ষণ যাবত কলিকে পটানোর পরেও কলি মেঘকে চকলেট দিতে নারাজ!মেঘ কিছু বলতেও পারছেনা কারন গাড়িতে কলির আম্মু আছে!মেঘ রাগী চোখে বার বার কলির দিকে তাকাচ্ছে আর কলি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে!মেঘের মন চাচ্ছে কলির সামনে থাকা দাঁত দুটো টেনে তুলে দিতে…!!যাতে পানি খেতে গেলে সব পানি মুখ থেকে পড়ে যায়।
মেঘ তো রাগে কিছু বলতেও পারছেনা আবার কলিকে মারতেও পারছে না।তাই মেঘ দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে গান ধরলো….
ব্যত্তামিজ গার্ল! ব্যত্তামিজ গার্ল
এমনটা করিস না করিস না…!!
একবার বাগে পাই
থাপ্পরাইয়া লাল কইরা দিমু তোর গাল
তখনই আমার কোন দোষ
দিবি না দিবি না
To be continue…..
(বানান ভুল হয়ে থাকলে নিজ দায়িত্বে শুধরে নিবেন…!!)