এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_30

0
688

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_30
🍁🍁

মজা করতে করতে সবাই বিয়ে বাড়ি এসে পৌঁছায়!তারপর ওখানে গিয়ে সবাই খাওয়া দাওয়া,হাসি ঠাট্টা মজা,সেলফি এসবের মাঝেই কাজি এসে আদিলের আর শিমুর বিয়ে সম্পূর্ন করে!যারা সেজে গুজে এসেছিলো তাদের অবস্থা দেখে আলো মুখ টিপে টিপে হাসছে!কারন মেকাবে যারা মুখ আবৃত করছিলো গরমে তাদের মেকাব নষ্ট হয়ে গেছে!আলো এবার বুঝলো যে রোদ কেন সাজগোজ করতে নিষেধ করছিলো।

বেশ কিছুক্ষন ধরে রোদ আলোকে চোখে চোখে রাখছে! আর আলো সব জায়গাটা ঘুরে ঘুরে দেখছে এর মধ্যে রোদ খেয়াল করে আলোর মুখটা লাল হয়ে গেছে!আর কেমন জানি বিরক্তকর ভাব মুখে ফুটে উঠেছে।রোদ ওর আম্মুকে গিয়ে বললো কখন ওরা বাসায় ফিরবে! রোদ ওর আম্মুকে আলোর কথা বলতেই রোদের আম্মু রোদকে বললো আলোকে নিয়ে বাসায় চলে যেতে!কারন আলোকে নিয়ে কোন রিস্ক নিবে না।রোদ আর দেরী না করে আলোকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল!এর মধ্যে মেঘও কখন দুম করে গাড়িতে ঢুকে পড়ছে কেউ খেয়াল করে নি!আলো গাড়িতে বসে কেমন ছটফট করতে থাকে!রোদ এটা ওটা বলে বলছে আর আলো থম মেরে বসে আছে!আলোর শরীর প্রচন্ড জ্বালাপোড়া করতে শুরু করছে!

আলো ওর হিজাব খুলে ফেলে আর চুল ছেড়ে দেয়!রোদের আম্মু দীদানকে ফোন দেয়!রোদ দ্রুত ড্রাইভ করছে কারন রোদেরও এখন বুক দুরুদুরু করছে।মেঘ কিছু বুঝতে পারছেনা কুটুরকুটুর করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে!মেঘ বুঝতে পারছে আলোর মনে হয় শরীর খারাপ তাই এমন করছে!রোদ বাসায় পৌঁছাতেই দেখে দীদান বেরিয়ে আসে! দীদান আলোকে নিয়ে রুমে গিয়ে শাড়ি বদলে কামিজ পড়তে সাহায্য করে!রোদ মেঘকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে অবাক হয়! আর রোদ ওর আম্মুকে ফোন দিয়ে বলে মেঘ ওদের সাথে আছে!এখন না বললে পরে ওর আম্মু মেঘ না পেলে টেনশন করবে!রোদের আম্মু সবাইকে কোন রকম বুঝিয়ে বাসায় আসার জন্য রওনা দেয়…..!!

মেঘ বার বার জিজ্ঞাসা করছে আলোর কি হয়েছে?আলো বাইরে এসে দাড়ায়! তখন মেঘ দৌড় গিয়ে জিজ্ঞাসা করে…

মেঘঃ বউমনি তোমার কি হয়েছে?তোমার চোখ লাল হয়ে আছে কেন?তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে বউমনি..!!(আলোর হাত ধরে)

মেঘ কথা শেষ করতে না করতেই আলো মেঘকে স্বজোরে একটা ধাক্কা দেয়!মেঘ দুরে ছিটকে পড়ে আর রোদ দৌড়ে গিয়ে মেঘ তুলে বুকে জড়িয়ে নেয়!মেঘ খুব ব্যাথা পেয়েছে এজন্য ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। আলো বার বার মেঘকে আঘাত করতে যাচ্ছে ঠিক তখন এজন্য হুজুর আসে। হুজুরকে দীদান ডেকে আনে!উনাকে দেখে আলো আরো রেগে যায়। মেঘ আলোর এমন রুপ দেখে ভয়ে রোদের বুকের সাথে লেপ্টে থাকে!হুজুরটি এসে আলোর চারপাশে একটা রেখা টেনে দেয় সূরা পাঠ করতে থাকে!

আলোর চুল গুলো মাটিতে লেপ্টে একাকার অবস্থা!আলো মাটিতে বসে রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।রোদের আব্বু আর আম্মু তখনই চলে আসে!হুজুরটি আলোকে জিজ্ঞাসা করে..!!

হুজুরঃ তোমরা যেখান থেকে এসেছো সেখানে চলে যাও।মেয়েটাকে আর কষ্ট দিও না।ভালোই ভালোই আমি যা জানতে চাইছি সেটা বলো! আমাকে রাগীও না! তাহলে তোমাদের জন্য সেটা ভালো হবে না।

আলোঃ….

হুজুরঃকি হলো কথা বলো!আর আমি যা জিজ্ঞাসা তাই বলো।(সূরা পড়া পানি আলোর গায়ে ছিটিয়ে)

আলোঃ কিছু বলবো না আমরা!তুই চলে যা আমরা এই মেয়েকে কিছুতেই ছাড়বো না।

হুজুরঃকেন?এই মেয়ে কি এমন ক্ষতি করছে যে তোমরা ওকে ছাড়বে না।কি পেলে তোমরা যাবে সেটা বলো…!!

আলোঃআমরা ওর জান নিবো(মেঘকে দেখিয়ে)

হুজুরঃওই বাচ্চাটি তোমাদের কি করলো?ওকে কেন টানছো তোমরা।আচ্ছা তোমরা কতজন আছো এখন…!!

আলোঃআমরা এখন মোট সাতজন আছি!

দীদানঃতোমরা তো চারজন ছিলে তাহলে আর তিনজন আসলে কেন??

আলোঃ এই মেয়ে যথেষ্ট সুন্দরী! এর সাথে আগে থেকেই দুইটা ভাল জ্বিন ছিলো!এখানে যেদিন আসে তার পরেরদিন সকালে ছাদে তিনজন ওর শরীরে ভর করে!আর আমি আর আমার ভাই এসেছি সেইদিন দুপুরের উঠানে যখন ওর চুল ছাড়া অবস্থায় ছিলো!এই মেয়ের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে আমরা এসে ভর করছি !আর ওর চুল দিয়ে ওর শরীরে প্রবেশ করেছি।কারন পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে কারো শরীরে ঢুকতে আমাদের সুবিধা হয়!

হুজুরঃএক মেয়ের শরীরে এতজন জ্বিন ভর করছো!এটা কি ঠিক কাজ?

আলোঃ এতকিছু জানিনা আর বুঝিও না।আমরা এর শরীর থেকে যাবো না।আর কিছুতেই ওকে আমরা ভাল থাকতেও দিবো না।

হুজুরঃ সবই বুঝলাম! তাহলে মধ্যেখান থেকে ওই বাচ্চাটাকে টানছো কেন?

আলোঃ ওই বাচ্চার জন্যই তো এই মেয়েকে এত কষ্ট পেতে হচ্ছে! ওই বাচ্চার উপর রেগেই তো আমরা এই মেয়েকে এত কষ্ট দিচ্ছি।(রেগে মেঘের দিকে তাকিয়ে)

হুজুরঃকেন বাচ্চাটি কি করছে তোমাদের?

আলোঃ কারন সেইদিন সকালে ওই বাচ্চাটাই ছাদ থেকে ফুলের টব ফেলে আমাদের ছোট বোনকে মেরে ফেলছে।ওকে এর শাস্তি দিতেই আমরা মেয়ের শরীরে এসেছে।

আলোর কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়!সেইদিন সকালে আলো চলে যাওয়ার পর যখন রোদ আর মেঘ ছাদে ছিলো তখন মেঘ প্রজাপতি ধরতে গিয়ে ভুলে করে একটা টব ফেলে দিসিলো।রোদ এজন্য মেঘকে বকাও দিয়েছিলো।

আলো চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে! হুজুর সূরা পাঠ করে সব জ্বিনকে হাজির করে!একে একে সব জ্বিনরা হাজির হয়! এর মধ্যে আলো বলে উঠে…!!

আলোঃআমি লবণ খাবো!লবণ খাবো! তারাতারি আমার সামনে লবণ হাজির কর।(চিৎকার করে)

আদিলের বিয়ের জন্য আনা লবনের সব প্যাকেট এনে আলোর সামনে হাজির করা হয়!আলো লবন দেখে জোরে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে!এর মধ্যে হিন্দু জ্বিনটা এসে মিষ্টি আর ধুপ খাওয়ার জন্য বলে!আলোর সামনে মিষ্টি আর ধুপ হাজির করা হয়!আরেকটা জ্বিন এসে বলে কলা খাবে!এই রকম ভাবে সবাই এক এক করে হাজির হয় আর বাট দুইটা জ্বিন আর আসে না।তারা কিছুতেই ধরা দিবে না!আলোর কাছে আগে থেকেই থাকা দুই জ্বিন হাজির হয়!হুজুর জিজ্ঞেস করে….!!

হুজুরঃতোমরা চলে যাও!মেয়েটাকে আর কষ্ট দিও না।

আলোঃআমরা আলোর তিনদিন বয়স থেকে ওর কাছে আছি!আলোর আম্মুও খারাপ জ্বিনের অত্যাচারেই মারা গেছে!আলোর মত ওর মা ও অনেক সুন্দরী ছিলো যার কারনে খারাপ জ্বিনের নজরে পড়ে! আমরা আলোর কাছে আছি কারন আলো খুব ভালো পরিষ্কার আর নামাজী একটা মেয়ে।আর আমরা ওর কোন ক্ষতি করিনি আর করবো না।আমাদের জন্য এতদিন খারাপ কিছু ওর কাজে আসতে পারেনি! কারন আমরা সব সময় আলোকে পরিষ্কার পরিছন্ন আর নামাজ ছাড়তে দেয়নি !কিন্তু এখানে এসে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ের জন্যই আমরা বাকি জ্বিনদের আটকাতে পারিনি!আলোর ভালোর জন্য আমাদের থাকার অনুমতি দেন।

হুজুরঃ এই মেয়ের শরীরে তোমরা আছো জানলে এই মেয়ের শশুড়বাড়ির লোক সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকবে!তোমরা ওর ক্ষতি না করলেও ওকে নিয়ে সবার মনে একটা ভয় থাকে।তোমরা বাকিদের নিয়ে চলে যাও….!আমি তোমাদের ভালো ভাবে বলছি।

আলোঃ আমরাও চলে যাবো! বাকিরা আগে যাবে তারপর আমরা যাবো।কথা দিলাম…!বাকি জ্বিনগুলো আলোকে নিয়ে যাওয়ার বুদ্ধি এটেছে! তাই বলছি আমরা চলে গেলে আলোর আরো ক্ষতি করবে ওরা।

হুজুর আর কিছু না বলে জোরে জোরে সূরা পড়তে থাকে!আর আলো মাটিতে ছটফট করতে থাকে!সূরা পড়তে শুরু করার সাথে সাথে আলোর মনে হচ্ছে কেউ ওর শরীরে আগুনের লাভা ঢেলে দিয়েছে!হুজুর হিন্দু জ্বিনসহ তিনটা জ্বিনকে বোতলে ভরে ফেলে!বাকি থাকলো চারটা জ্বিন তার মধ্যে দুই ভালো আর দুই খুব খারাপ বদরাগী জ্বিন।ওরা কিছুতেই যাবে না বলে পণ করে!হুজুরও ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নই জমজমের পানি আনে আর আরো সূরা পাঠ করে আলোর শরীরে সেই পড়া পানি ঢেলে দেয়।হুজুরের আকানো সেই রেখার মধ্যেই আলো এপাশ ওপাশ মাটিতে গড়াগড়ি করতে থাকে!আলোর এই অবস্থা দেখে রোদের কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে! কি করবে আর কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।এর আগে জীবনেও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি রোদ!আবার সবকিছু অস্বীকার করাও যায় না।যদি হুজুর কুরআনের সূরা পাঠ না করে অন্য কিছু করতো তো।রোদ এখানে রুখে দাঁড়াতো বাট এখন যা হচ্ছে কুরআনের আয়াত আর সূরা পড়ে হুজুর তার কাজ করে যাচ্ছে! রোদ, রোদের আম্মু, আব্বু, আর মেঘের চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে কারন তারা কেউ আলোর এত কষ্ট সহ্য করতে পারছেনা।আলো শরীরে থাকা খারাপ জ্বিন দুটোই বলতে থাকে…..!!

আলোঃআমরা প্রান নিয়েই তারপর যাবো! এই মেয়ের রাশির সাথে আমাদের রাশি মিলেছে তাই ওর শরীরে সহজে ঢুকতে পেরেছি আমরা।এর শরীরে থেকেই আমরা ওই বাচ্চার প্রান নিবো!এই হুজুর সূরা পাঠ করা বন্ধ কর বলছি।না হলে এই মেয়েকে মেরে ফেলবো।আমরা এখন রক্ত শুষে তারপর যাবো…!আমাদের বোনের প্রান গেছে তাই আমরাও প্রান নিয়ে তারপরেই যাবো।(রেগে আলো নিজের চুল নিজেই টেনে ছিড়ে আর শরীরে খামচাতে থাকে)

হুজুরের কথা মত দুইটা ধবধবে সাদা কবুতর এনে দীদান আলোর সামনে রাখে!জ্বিনগুলো কবুতর নিতে রাজি না তারা মেঘকেই নিবে!আলো এখনো রাগী চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে!আর মেঘ রোদের বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
হজুর আবার সূরা পড়তে শুরু করলে জ্বিনগুলো চিৎকার করতে থাকে। আলো আর উপায় না পেয়ে উঠে বসে আর দেখে ওর সামনে নিখুঁত দুই জোড়া কবুতর!কবুতর গুলো একদম নিখুঁত হওয়ার কারনে জ্বিন দুটোর খুব পছন্দ হয়!কবুতর গুলো কি সুন্দর করে হেঁটে বেড়াচ্ছে আর সামনে রাখা বাটিতে থেকে ধান খাচ্ছে! আলো লাল চোখে কবুতরের দিকে তাকাতেই কবুতর জোড়া ঠাস্ করে মাটিতে পড়ে যায়।কবুতরের মুখের ধান মুখে থেকে যায় শুধু ওদের প্রান চলে যায়।

রোদ সহ সবাই অবাক হয়!হুজুর আবার সূরা পড়ে খারাপ জ্বিন দুটোকে বুদ্ধি খাঁটিয়ে বোতলে ঢুকিয়ে নেয়!ওই জ্বিনগুলোকে বোতলে ঢুকানোর সাথে সাথে আলোও সেন্স হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে!রোদ আলোকে এভাবে পড়তে দেখে দৌড়ে যেতে নিলে হুজুর রোদকে থামিয়ে দেয়!তারপর আবার সূরা পড়ে কয়েকদিনের জন্য আলোর শরীর বন্ধ করে দেয়…..!!আর আলোর শরীরে ফু দিয়ে দেয়।

হুজুর রোদকে ইশারা করে আলোকে নিয়ে যাওয়া জন্য! রোদ মেঘকে কোলে থেকে নামিয়ে আলোকে কোলে নিয়ে ওর রুমে নিয়ে যায়….!!

To be continue…..
(বানান ভুল হয়ে থাকলে নিজেরাই শুধরে নিবেন! আর কেমন লাগছে গল্পটা জানাবেন।যাদের ভালো লাগছে না তারা ইগনোর করুন! সন্ধ্যায় টা এখন দিলাম…..!!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here