অনুভূতিরা মৃত সতেরো পর্ব .

0
206

গল্প- অনুভূতিরা মৃত
সতেরো পর্ব
.
এই কী করলাম আমি? নিজের ভালোবাসার মানুষকে রক্ত ঝরালাম। যার জন্য এতদিনের অপেক্ষা। অপেক্ষার অবসান বুঝি এভাবেই হয়? লজ্জায় ডুবে যাচ্ছি, দুই বছর পর দেখা যেখানে একে অপরের ভালো লাগা তৈরি হবে সেখানে রক্তাক্ত বনলতা দাঁড়িয়ে আছে। নিরবতা ভেঙ্গে বলে উঠলাম, চলো। বনলতার হাত ধরে টেনে রিকশায় তুললাম। অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল সে। জানি না তখন কি হয়েছিল। এভাবে হাত ধরার সাহস কখনো আমার হতো না। ভালোবাসা রক্তাক্ত বুক ক্ষত-বিক্ষত৷ অজানা সাহস ভর করেছিল। রাস্তার পাশের ফার্মেসী থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে বের হলাম।
.
বনলতা তখনও নিরব। মাঝেমধ্যে খুব অবাক হচ্ছে, রিকশা ঘুরিয়ে চলে আসলাম পূর্বের জায়গায়। ভেবেছিলাম মেয়েটি শাড়ি পরবে। না সে শাড়ি পরেনি। যেটাই পরেছে এতে আমার কিছু যা-ই আসে না। সবকিছু আমার মন মতো হবে না। পৃথিবীর সব মানুষ আমার মতো না বা সবার রুচি তাও এক না৷ তারপরও সে শাড়ি পরলে ভালো লাগতো। আচ্ছা সে শাড়ি পরবে কেনো? সে কেন আমার মন রক্ষা করতে যাবে৷ আমি তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছি কি-না তাও নিশ্চিত নয়। তাহলে কেন এতসব চিন্তা করছি। বনলতার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা আমার আজন্ম দুর্বলতা। তার বাম চোখের মধ্যে একটা তিল আছে, একবার জ্বলে নিভে৷ খুব ইচ্ছে করে চোখের ভিতর তার এই তিলটিকে ছুঁয়ে দিতে, কখনো হাত দিয়ে কখনো আবার ঠোঁট দিয়ে। পৃথিবীতে এই একটি ইচ্ছে বোধহয় ইচ্ছেই থেকে যাবে যা কখনো পূরণ হবার নয়৷ আজন্ম এক আফসোস নিয়েই পৃথিবী ত্যাগ করতে হবে৷
.
বনলতার চোখের তিলটি একবার জ্বলছে নিভছে, আমি কবিতা মনে করতে লাগলাম। এই মূহুর্তে একটি কবিতা আবৃত্তি করতে পারলে মন্দ হতো না। কিন্তু খুব নার্ভাস লাগছে কবিতা আবৃত্তি সম্ভব নয়। প্রেমটা একবার হয়ে যাক৷ অসংখ্য কবিতা আবৃত্তি করে শুনানো যাবে৷ মূল-কথাগুলো বলার পিপারেশন নিচ্ছি বারবার গুলিয়ে যাচ্ছে। এক পা দু পা করে বনলতা থেকে একটু দূরে অবস্থান করলাম কেননা তার এই মায়াবী চোখের মায়ায় যে কোন মূহুর্তে ঘায়েল হতে পারি। আমার পিছুপা দেখে কিছুটা অবাক সে৷ বনলতা বলতে শুরু করল।
— দুই বছর পর এসে তোমায় থাপ্পড় দিয়েছে তুমি হয়তো এটা আশা করোনি। আমায় রক্তাক্ত করেছো এই কারণেও থাপ্পড় দেয়নি। কেনো করলে এমনটা? দুইটা বছর নিজের পরিবার পরিজন ছেড়ে দূরে অবস্থান করছো। বিশ্বাস করো আমি এটা কখনো চাইনি। ভেবেছিলাম আরো আট-দশ ছেলের মতোই তোমার ভালোবাসা মিথ্যে ফেইক। ক্ষমা করো আমায়। জিতেছো তুমি, জিতেছে তোমার ভালোবাসা। ভালোবাসার অনন্য এক ইতিহাস তৈরি করলে। অদ্ভুত এক ইতিহাস।
.
বনলতার এমন আবেগি কথায় আমার পরবর্তী কথা কী হতে পারে ভেবে পাইনি আমি। শুধু বলেছিলাম, তুমি চেয়েছো তাই করেছি সবকিছুর বিনিময়ে হলেও তোমাকে চাই কেননা আমি তোমায় আসক্ত। এরপর বেশ কিছুসময় নিরব ছিলাম দুজন। নিরবতা ভেঙে বনলতার উচ্চারণ- হাতটা ধরতে পারি?
.
পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষের তালিকায় নিজেকে রেখেছিলাম। সুখি কে না হতে চায়? সারাজীবন আমরা সুখের পিছনে ছুটতে যেয়ে দুঃখের সাগরে হারিয়ে যায়৷ এই যেমন বনলতা কে নিজের করে পেতে অজস্র দুঃখ সাগরে ডুবেছিলাম। বনলতা পেয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলাম পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ ম্যাথু রিকার্ড এর পাশে। চৌষট্টি বছর বয়সী ম্যাথু রিকার্ড বিশ্বের সবচেয়ে সুখি মানুষ। এ মানুষটি একসময় কাজ করেছেন অণুজীব বিজ্ঞানী হিসেবে। বর্তমানে তিনি একাধারে লেখক আলোকচিত্রী গবেষক অনুবাদক ও একজন ধর্মপ্রাণ ভিক্ষু। এতগুলো উপাধি তার নামের পাশে। নতুন করে আবার যুক্ত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষের উপাধি। রীতিমতো বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত। গবেষণাকালে বিজ্ঞানীরা তার পুরো মাথা মুড়ে ফেলেছিলেন ২৫৬টি ইলেকট্রোড দিয়ে। কয়েক ধাপবিশিষ্ট গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, তার মধ্যে রয়েছে আনন্দপূর্ণ জীবনের এক অভাবনীয় ক্ষমতা। A Guide to Developing Life’s Most Important Skill বইতে সুখের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ম্যাথু রিকার্ড লিখেছেন, সুস্থ সুন্দর মন থেকে উৎসারিত এক গভীর অনুভূতিই হলো সুখ। ২০০৭ সালে প্রকাশিত এ বইটি পরবর্তীতে বিশ্বে বেস্ট সেলার-এর সম্মান লাভ করে। মূলত সুখ নিয়ে তার অনুভূতি উপলব্ধিগুলোই রিকার্ড তুলে ধরেছেন এ বইটিতে।
.
এতটুকু বলতেই রুয়েল থামল। মিহির মনে নানা প্রশ্ন ঘিচিঘিচি করতে লাগল। সকল প্রশ্নের উত্তর হয়তো পেয়ে যাবে। তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে কিছু সময়। মনের অজানা প্রশ্নগুলো জানতে বলে উঠল, এরপর! এরপর কী হয়েছিল? রুয়েল বলতে শুরু করল৷ এরপর………. এরপর অনেক কিছুই হয়েছিল।
.
বনলতার সাথে রোজ দেখা হতো। দেখা করার পূর্বে একটি করে গোলাপ নিয়ে যেতাম। লাল কিংবা সাদা নয় বনলতার পছন্দ কালো গোলাপ৷ লাল-হলুদ-সাদা গোলাপ তো অহরহ মেলে। জিনীয় পরিবর্তন করে বর্তমানে সৃষ্টি হচ্ছে হলুদ-নীল রঙের গোলাপ। তবে কালো গোলাপ পৃথিবীর এক বিশেষ জায়গায় জন্মে। উক্ত জায়গা ছাড়া কালো গোলাপের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। বিখ্যাত সেই জায়গাটি তুরস্কের ফোরাত নদীর পূর্ব উপকূলে সানলুরফা প্রদেশের হালফেতি জেলা। এই কারণেই কালো রঙের গোলাপটি পৃথিবীতে আকাশচুম্বী। ফুলের রাণী গোলাপ। লাল-গোলাপ ভালোবাসার প্রতীক, সাদা গোলাপ- পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা ও শান্তির প্রতিক। কালো গোলাপ শোক মৃত্যু বা শোকের বার্তা বাহক।
.
চলবে…………….
— সাকিব হাসান রুয়েল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here