অনুভূতিরা মৃত আঠারো পর্ব .

0
148

গল্প- অনুভূতিরা মৃত
আঠারো পর্ব
.
ফুলের রাণী গোলাপ। লাল-গোলাপ ভালোবাসার প্রতীক, সাদা গোলাপ- পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা ও শান্তির প্রতিক। কালো গোলাপ শোক মৃত্যু বা শোকের বার্তা বাহক। যেদিন বনলতার উদ্দেশ্যে বের হতাম একটি লাল গোলাপ পকেটের বাম পাশে নিতাম। পৃথিবীর সবকিছু ভুলে গেলেও তা ভুলা অসম্ভব। বনলতাকে নিয়ে নৌকায় সুরমার জলে ভাসতাম। সুরমার শান্ত বুকে ভেসে যেতাম। নৌকা ভাসতে ভাসতে অজানা এক ঘাঠে এসে আটকে যেতো। বনলতা গান ধরতো, এখন তো সময় ভালোবাসার, এই দু’টি হৃদয় কাছে আসার। তুমিও যে একা, আমিও যে একা, লাগে যে ভালো…… অপ্রিয়। বনলতার মাতাল করা কণ্ঠ বারবার মুগ্ধতা ছুঁয়ে যেতো। আমার চুলে বিলি কেটে দিতাে। অসম্ভব সুন্দর এক শান্তির দেখা মিলতো।
.
সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ একটি ছবি সবকিছু এলোমেলো করে দিলো। পুরনো একটি ছবি বনলতার হৃদয় ভেঙে যায়। আহতদের তালিকায় নিজের হৃদয় রাখে। আমার সাথে কোনরকম যোগাযোগ করছিল না। কল কিংবা মেসেজের রিপ্লাই করতো না। বনলতা ভেবেছিল, ছবির মেয়েটা বুঝি প্রাক্তন। প্রাক্তন থাকতেই পারে কিন্তু তার থেকে লুকানো মেনে নিতে পারেনি৷ রাগ অভিমানে আমায় এড়িয়ে যেতো। কষ্ট হতো খুব। একবার সে আমার সাথে কথা বলুক। তাকে একটিবার বুঝিয়ে বলি কে এই ছবির মেয়েটি। যোগাযোগের কোন উপায় নেই, সবকিছু বন্ধ। হাজার চেষ্টা করেও বনলতার দেখা মিলছে না। কোন উপায় না পেয়ে নিজেকে দাঁড় করলাম মিথ্যের আদালতে। বন্ধুকে খবর জানালাম আমি দুর্ঘটনা করেছি। এই খবর শুনে রাগ অভিমান আটকে রাখেনি। অভিমানের ভেদ ছেদ করে চলে আসে বনলতা। যখন জানতে পারে মিথ্যে নাটক বানিয়েছি তার রাগ অভিমানের পাল্লা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কেননা সে মিথ্যে বলতে পছন্দ করত না। তার চোখ গুলাে বড় করে আমার দিকে চেয়েছিল। আমি ভয়ে নাস্তানাবুদ। মায়াবী চোখ রাগলে ভয়াবহ লাগে। সে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। আমি হাত চেপে ধরলাম। গম্ভীর স্বরে বলে উঠল।
— হাত ছাড়ো রুয়েল।
— চলে যাওয়ার জন্য তো তোমার হাত ধরিনি।
বনলতা নিশ্চুপ। কোনরকম শান্ত করলাম। বলার দুই মিনিট সময় নিলাম। যা বলার এই দুই মিনিটের মধ্যে বলতে হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি, সময় নির্ধারিত সময় নিয়ে বলা বা বুঝানো। নির্ধারিত সময়ের মাঝে যদি অপরপক্ষ বুঝতে না পারে সেইক্ষেত্রে অসহায় হরিণের মতো নিঃস্বাস ছাড়তে হয়৷ খুব ভালোভাবে তৈরি করলাম নিজেকে দুই মিনিট সময়ে তার ভুল ভাঙাতে হবে।
.
ঘড়ির কাটা ঘুরছে, মূহুর্তেই পাঁচ সেকেন্ড অতিক্রম হয়ে গেছে। বলতে শুরু করলাম, সাদা-কালো ছবিতে আমার সাথে যাকে দেখছো সে আমার প্রাক্তন নয়৷ তুমিই আমার প্রথম। তুমি ছাড়া জীবনে আর কেউ আসেনি। বিশ্বাস করো ছবির মেয়েটি নিশি আপু৷ চট্টগ্রামের নিশি আপু। দুইটা বছর নিশি আপুর ছায়াতলে কাটিয়েছি, তুমি চাইলে অজস্র অসংখ্য মেসেজ দেখাতে পারি। কথা বলাতে পারি ভিডিও কল৷ এক মিনিট বায়ান্ন সেকেন্ডে কথাগুলো বলে শেষ করলাম। হাঁপিয়ে উঠলাম আমি। পানি এগিয়ে দিল বনলতা। চোখে অশ্রু টলটল করছে, ইমোশনাল মেয়ে। অল্পতে ইমোশনাল হয়ে গেছে, ভুল বুঝতে পারে সে। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমি হাত বাড়াতে শব্দ করে কেঁদে উঠে।
.
নিজ হাতে গাড়ি চালাবে। ড্রাইভিং সিটে বসবে, পাশে থাকব আমি আবদার করে সে। বেরিয়ে পড়লাম তাকে নিয়ে খোলা আকাশ, খোলা মাঠ, বিশালতায় ছেয়ে গেছে চারপাশ। ডাইভিং সিটে বনলতা। তার হাতের উপর আমার হাত। বনলতা ডাইভ করছে, সফল হয়েছে, পাকাপোক্ত গাড়ি চালক সে। কৃতজ্ঞতা জানায় আমার প্রতি। আমি তাকাতেই হেসে উঠে৷ তার ঠোঁটের নিচের হাসি সকল ক্লান্তি মুছে দিতো। ভয় হয়। ভয়ংকর রকম ভয়। এইতো হারাতে বসেছি থাকে, এমন ভাবে হাসবে না আর। অজানা এক ভয় তাড় করে বেড়াতো। কেননা আমাদের সবচেয়ে বড় বাধা সমাজ৷ এই দেশে সমাজের বিরুদ্ধে যেয়ে কিছু করার নেই। ধর্মের বাধা অতিক্রম করে সমাজ কি আমাদের মেনে নিবে? এমন সব প্রশ্ন যখন আমার মনের ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক তখনি বনলতা জানিয়ে দিলাে ধর্মত্যাগ করতে রাজি সে। ইতিমধ্যে ইসলাম ধর্ম নিয়ে ঘাটতে শুরু করেছে। আমি মুচকি হেসে বলি, আবার ভেবে দেখো৷ বনলতার উত্তর অনেক ভেবেছি আর না। আনন্দ হয় আমার। যে আনন্দে শরীক হয় বনলতা।
.
বনলতা আজ তৃতীয় বারের মতো শাড়ি পরে আমার সামনে আসছে, চোখ-মুখী হয়ে নিশ্চয় জানতে চাইবে শাড়িতে তাকে কেমন লাগছে? ও আসছে আমি রং চিনি না। ওকে শাড়ি পরা দেখে আজ আরাে চিনছি না। শাড়ির কুচিতে তাকানাে কাজল পরা চোখগুলাে বড্ড মায়াবতী হয়। শাড়ি নিয়ে খুব ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে আসছে বনলতা। হাত দিয়ে কপালে উড়ে আসা বেহায়া চুলগুলো সরাতেই যেন, চুড়িগুলাে আওয়াজ করে তাকে ইশারা দিচ্ছে, শাড়ির কোন ভাজ খুলে যাচ্ছে না তো। শাড়িতে একটা অদ্ভুত ঘ্রাণ আছে, এই ঘ্রাণটা সরাসরি নাকে লাগে না। শাড়ির আঁচল ধরলে পাওয়া যায়। হ্যাঁ, বনলতা আমার সামনে এখন। খুব আহ্লাদী হয়ে চোখের কাজলটুকু দেখিয়ে জানতে চাইছে– শাড়িতে কেমন লাগছে আমায়? আর খুব শক্ত গলায় বলে দিচ্ছে, একদম সবসময়ের মতাে বলবা না যে পরীর মতো লাগছে। ওর কথা থামিয়ে নিজের অচেতনে বলে ফেললাম, আজ একদম পরিদের রানীর মতো লাগছে। বনলতা হাসছে আর ওর লাজুক নাকটা কাপছে।
.
চলবে…………….
— সাকিব হাসান রুয়েল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here