Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
………………… Part – 2……………………….
★
প্রায় অনেক ক্ষন দৌড়ানোর পর মায়া তাদের সৈন্যবাহিনীর মুখোমুখি পড়ল। সৈন্যরা তাকে খুজতেই বের হয়েছিল। এর পর তাকে তার পিতা রাজা মৈনাক এর কাছে নিয়ে গেলে মায়া তার পিতাকে জঙ্গলে দেখা হওয়া লোকটি সম্পর্কে সব বিস্তারে খুলে বলল। মায়ার কথা শুনে তার পিতা জঙ্গলে একদল সৈন্য পাঠালো লোকটার খোজে।। কিন্তু সেই দলটি ফেরত আসল। তারা নাকি তেমন কোনো কিছু পাইনি।। রাজা মৈনাক মায়াকে সান্তনা দিলেন হয়তো তার লোকজন এসে তাকে নিয়ে গেছে। আর মায়াও তাই ভেবে নিল।।
শিকার শেষে ওই দিন তারা প্রাসাদে ফিরে গেল।। বিভীষা আর রাণী অমরা তাদের জন্য সিংহদ্বারে অপেক্ষা করছিল।। সিংহদ্বারে পৌছতেই সবাই অভ্যর্থনা জানালো।। সবাই ভালো শিকার করেছে শুধু মাত্র মায়া ছাড়া। যাও একটা শিকার ধরতে গেল তাতে মানুষ ঘায়েল হয়ে গেলো।। বড় আফসোসের কথা।। মায়ার এই গোমড়া মুখ বিভীষা খেয়াল করল। সে প্রাসাদে যেতে যেতে মায়া কে জিজ্ঞেস করল
…… মায়া জান কি হয়েছে আপনার??
….. বিভীষা!! আজকে আমি একটা শিকারও করতে পারি নি।।
….. তাতে কি মায়া জান!! আগামী বার আপনি নিশ্চয় সিংহ ঘায়েল করবেন।। আর ওই দিন বেশি দূরে না।।
বিভীষার কথায় মায়ার মুখে হাসি ফুটে উঠল।। সে সায় দিয়ে বলল
….. ঠিক বলেছো বিভীষা।। আমি নিশ্চয় বড় সিংহ ঘায়েল করবো একদিন!!
.
মায়া হয়ত এটা জানেনা যে সে ওই দিন সিংহ ঘায়েল করেছিল। কিন্তু সেটা কোনো পশু ছিল না।। যেটা হবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল!!
.
ইদানিং রাজা মৈনাক খুবই চিন্তার মধ্যে পড়েছে।। চিন্তার নাম তার এক মাত্র কন্যা রাজকুমারী মায়া।। অনুষ্ঠানের পর হতে সমস্ত রাজা দের থেকে মায়া কে বিয়ের প্রস্তাব আসছে।। কিন্তু সেগুলো তেমন সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে অনেক দূরের রাজ্য ভয়ংকর ত্রাস সৃষ্টি করা বার্বান সম্রাটেরও প্রস্তাব এসেছে।। এই নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় গ্রস্থ।। কারন বার্বান সম্রাট নির্দয় সম্রাট। দয়া মায়া নেই বললেই চলে। এমন কারো সাথে তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে চান না। তাছাড়া মায়া মাত্রই ষোড়শী।। অত দূরের সম্রাট কিভাবে মায়ার সন্ধান পেল?? কোন ভাবেই মায়ার সন্ধান পাওয়া অসম্ভব ছিল।। কেননা বার্বান রাজ্য থেকে ঈরানভা নগরী কম হলেও ছয় মাসের পথ।। এখন প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে যদি রাজ্য আক্রমন করতে আসে???
.
.
—————————— ৫ বছর পর ————————–
—————————– সাল ১৮৮০—————————-
————————ঈরানভা রাজপ্রাসাদ——————–
.
রাজা মৈনাক দুশ্চিন্তা গ্রস্থ ভাবে প্রাসাদের বাগানে বসে আছে। যেন গভীর মনোযোগ দিয়ে কোন কিছু ভাবছেন।। রাণী অমরা পাশেই ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন
….. মহামান্য কি হয়েছে আপনার?? অনেকক্ষণ ধরে দেখছি কিছু নিয়ে চিন্তা করছেন।।
…. অমরা আমি ভাবছি মায়া কে।। আমাদের একমাত্র কন্যা কে নিয়ে।।
…. মায়া কি কোন ভুল করেছে?? করলে আমাকে বলুন। আমি তাকে বোঝাবো।।
…. তেমন কিছু না অমরা। মায়া কোনো ভুল করে নি।। কিন্তু সমস্যা টা মায়া কে নিয়ে।।
….. কি সমস্যা মহামান্য??
…. বার্বান সম্রাট অলোক এই নিয়ে গত পাচ বছরে দশ বারের ও বেশি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছে।।
….. তাতে সমস্যা কোথায় মহামান্য?? আরো অনেকেই তো প্রস্তাব পাঠিয়েছে।।
….. হ্যা পাঠিয়েছে তবে। ২/৩ বারের বেশি পাঠায় নি।। আর বার্বান সম্রাট গত পাঁচ বছর ধরে লেগে আছে। আর কালকে আবার ও প্রস্তাব পাঠিয়েছে।।
….. তাহলে নাকোচ করে দিন। এমনিই তে বার্বান সম্রাট খুবই নিষ্টুর বলে শুনেছি।।
….. এতদিন তো তাই করে এসেছি। কিন্তু গতকালের চিঠিতে বার্বান সম্রাট আমাকে হুশিয়ার করেছে। সে এবার যদি রাজি না হই তাহলে ভালো হবে না বলেছে।।
….. তাহলে তো অনেক বড় সমস্যা মহামান্য।। এখন কি করবেন??
….. সেটাই তো ভাবছি।।
….. মহামান্য একটা কাজ করলে হয় না??
…. কি কাজ অমরা??
…. মায়া কে বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হয়?? রাজকুমারী মায়া অবিবাহিত সুন্দরী কন্যা। যে কোন রাজারা প্রস্তাব পাঠাবে সেটা স্বাভাবিক। তার চেয়ে বরং মায়া কে বিয়ে দিলে আর কেউ মায়ার দিকে ফিরে তাকাবেনা।।
….. কিন্তু মায়া যদি রাজি না হয়??
….. ওটা আমার উপর ছেড়ে দিন। আমি দেখবো। আপনি ভালো পাত্র দেখুন।।
….. ঠিক আছে অমরা!!
.
রাজকুমারী মায়া!! আজ সম্পুর্ন রুপে রুপময়!! তার সৌন্দর্য্য যেন শরীর বেয়ে ঠিকরে পড়ছে।। আশে পাশের সমস্ত রাজা আর রাজকুমার রা মায়া কে বিয়ের স্বপ্ন দেখে।। তার সবুজাভ চোখ আরো গভীর সবুজ হয়ে তার সৌন্দর্য্য কে কয়েক গুন বৃদ্ধি করেছে।। কন্যার এরুপ সৌন্দর্য্য রাণী অমরা আর রাজা মৈনাক এর দুশ্চিন্তার কারন হয়েছে। পারত পক্ষে প্রাসাদের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না মায়া কে।। কিন্তু তার পরেও যেন পুরো রাজ্যময় মায়ার সৌন্দর্য্যের চর্চা হতে থাকে।
মায়া বসে বীণা বাজাচ্ছিল। তার অনেক বড় শখ এটা।। প্রতিদিন এটা সে বাজাবেই। আর বীণার সুরের মূর্চনা প্রাসাদের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে।। সবাই মুগ্ধ হয়ে রাজকুমারী মায়া বীণার সুর শুনে।।
তন্ময় হয়ে বীণা বাজাচ্ছিল মায়া। পিছন থেকে কেউ একজন পিঠে হাত রাখায় মায়া চমকে উঠে বীণার সুর কেটে গেল। পিছন ফিরে দেখল তার মা রাণী অমরা।। মাকে দেখে একটু হেসে মায়া বলল
…… মা তুমি!! আসো এখানে বস।।
মায়ার কথায় হেসে মায়ার পাশে বসল রাণী অমরা।।
…… মায়া তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি।।
….. বল মা।।
….. মায়া আমি কোন ভণিতা না করেই বলতে চাই।। আমি আর তোমার পিতা মিলে ঠিক করেছি যে আমরা তোমাকে জলদি বিয়ে দিতে চাই!!
….. মা!!
কিছুটা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল মায়া। তারপর ধীরে ধীরে বলল
……. মা আ-আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।। আমি তোমাদের সাথে থাকতে চাই।।
…… মায়া।। আমরা ও তোমাকে আমার সাথে রাখতে চাই। কিন্তু মায়া আমাদের রাজ্যের ভালোর জন্য তোমাকে বিয়ে করতে হবে।। এখানে থাকা তোমার জন্য নিরাপদ না।।
…… মা কি হয়েছে??
….. বার্বান সম্রাটের কথা নিশ্চয় শুনেছ?? সে তোমাকে বিয়ে করতে চাইছে। আমরা তার কাছে তোমাকে দিতে চাই না।। কিন্তু কাল তার কাছ থেকে হুশিয়ারী আসছিল।। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের এই সিগ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।।
মায়ার চোখের পানি টল মল করছিল এই কথা শুনে।। তার জীবন টা এভাবে বন্দীর মত কেটে যাবে।। রুপ টাই যেন অভিশপ্ত।।
মায়া তার মায়ের দিকে তাকালো।। তারপর বলল
…..আমাকে কিছুটা সময় দিন।। আমি জানাবো আপনাদের।।
….. ঠিক আছে।। তবে বেশি সময় নিয়ো না।
.
রাতে প্রাসাদের বাগানে বসে চুপচাপ কান্না করছিল। তাকে কান্না করতে দেখে বিভীষা এগিয়ে আসল। তাকে জিজ্ঞেস করল
…… মায়াজান!! কি হয়েছে আপনার!! কান্না করছেন কেন??
…… বিভীষা!!!
এই বলে মায়া বিভীষা কে ধরে কান্না করতে লাগল।। মায়ার এরকম আচরনে বিভীষা হতচকিত হয়ে গেলো।। মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল
….. কি হয়েছে মায়া জান।। আমাকে খুলে বলেন!!
….. বিভীষা আমি বিয়ে করবো না!!
বিভীষা একটু হাসল। তারপর বলল
….. মায়া জান মেয়ে হলে পরের ঘরে যেতে হবে। রাজকুমারী হোন আর সাধারন মেয়ে হোন।।
……. বিভীষা আমি জানি কিন্তু””””””
….. মায়া জান আপনি”””””” আপনি কাউকে পছন্দ করেন??
মায়া শুধু নিষ্পলক চাহনির মধ্য দিয়ে বিভীষাকে জবাব দিয়ে দিল।। বিভীষা কেপে উঠলেও নিজেকে সামলিয়ে নিল।। তারপর জিজ্ঞেস করল
….. কে সে মায়া জান??
….. ক্রিস্টার রাজা কালক!!
…. হুম!! দেখি মায়া জান!! আমি কিছু করতে পারি কিনা?? তবে আপনি কান্না করবেন না। আমার উপর ভরসা রাখুন।।
….. ঠিক আছে।।
.
সেদিনই বিভীষা রাজা মৈনাক আর রাণী অমরা কে মায়ার কথা জানালো। মায়ার পছন্দ আছে শুনে তারা রাগ করল না। বরং খুশি হল।। কারন তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মায়ার বিয়ে দিতে চান।। খবর পাঠালেন ক্রিস্টা তে।। ক্রিস্টারর রাজা কালক খবর পেয়ে প্রতি উত্তরে সম্মতি জানালেন।। আর বিভীষার মুখে এ কথা শুনে মায়া অত্যন্ত আনন্দিত হল।। কারন রাজা কালক আর মায়া একে অপর কে ভালো বেসে আসছে অনেক আগে থেকে। আজ সেটা পূরন হওয়ার পথে।। কিন্তু কেউ ভেবে দেখল না এটার পরিণতি কি হতে পারে???
এদিকে খবর টা দ্রুত চলে গেল বার্বান সম্রাট অলোকের কাছে।। সে শুনে শুধু একটা ক্রুর হাসি হাসল আর সেনাপতি শেরা কে তৈরি হতে নির্দেশ দিল। তারপর অলোকে মনে মনে বলল
….. যা হবে সেটার জন্য আমি দায়ী থাকবো না ঈরানভা!!!
.
(চলবে)
.
কেমন লাগল জানাবেন??
Home “ধারাবাহিক গল্প” Every Thing Is Fair In Love And War Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera...