তুমিময়_নেশায়_আসক্ত #পর্ব- ৩

0
750

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত
#পর্ব- ৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মাঝরাতে নিজের স্বামীকে দেখে ভরকে গেলো রিমি। যার কয়েকদিন পর অন্য একটি মেয়ের সাথে বিয়ে সে হঠাৎ এতো রাতে তার ঘরে কি করছে? নানা প্রশ্ন রিমির মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সে এদিক ওদিক তাঁকাচ্ছে। বই নিয়ে পড়ছিলো সে।কালকে তার প্রথম ক্লাস মেডিকাল কলেজে। বেশ উত্তেজ্জিত আজ সে। কিছুটা খুশিও। অবশেষে সে তার লক্ষ্যের দিকে পা বাড়াতে চলেছে,কিন্তু দরজায় নিজের স্বামীকে দেখে বই রেখে সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ায়। অয়ন সাদা ব্লেজার গাঁয়ে জড়িয়ে ঢুলু ঢুলু পায়ে রিমির দিকে এগিয়ে আসছে। রিমি বুঝতে পারছে অয়ন অতিরিক্ত মদ্যপান করে ফেলেছে, যার ফলে সে এতো রাতে রিমির ঘরে এসেছে ভুলে।নাহলে রিমি এই বাড়িতে এসেছে তিনদিন হলো কই অয়ন তো একবার ও রিমিকে দেখার কিংবা রিমির খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। যদিও এতে রিমির কিছুই যায় আসেনা। অয়ন ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে দেখে রিমিও ভয়ে পিছাতে শুরু করে। যতই হোক সে তো একজন মেয়ে। রিমি পিছাতে পিছাতে দেয়ালে তার পিঠ ঠেকে যায়। অয়নও এক হাত দেয়ালে রেখে রিমিকে নিজের বন্ধী করে ফেলে। রিমির ছটফট করতে করতে বলে উঠে,

‘ কি করছেন কি? শুরুন বলছি। এতো রাতে আপনি আমার ঘরে কেন? কেউ দেখলে কি ভাব্বে? ‘

অয়ন নিরত্তর। সে কোনপ্রকার জবাব দেয়না। সে আপনমনে তার সামনে থাকা রমনীকে দেখে যাচ্ছে।
সকালে সার্ভেন্ট এর কাছ থেকে রিমির কথা শুনার পর। রিমিকে একপলক দেখার লোভ সামলাতে পারেনি সে। অয়ন খুব ভালো করেই দেখতে পায়
তার সামনে থাকা রমনীর মুখশ্রীতে ভয় স্পষ্ট। কেউ ভয় পেলেও তাকে এতোটা স্নিগ্ধ লাগে আজে জানতো না অয়ন। ভীত চেহারায় রমনী এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। যুবক আরেকটু এগিয়ে নরম গলায় বললো,

‘ ভয় পেলে যদি তোমাকে এতোটা স্নিগ্ধ লাগে। তবে আমি তোমাকে প্রতিবার প্রতিদিন ভয় দেখাবো। ‘

রিমি আরেকদফা ভরকে যায় অয়নের কথায়। লোকটা বলছে কি? অয়ন রিমির কাছাকাছি এসে বলে,

‘ তুমি আমার ওয়াইফ রাইট? কিছুদিনের জন্যে হলেও তুমি মিসেস অয়ন চৌধুরী। সেই কিছুদিনের
অয়ন চৌধুরীকে দেখতে চলে এলাম এতো রাতে।
আমি কিন্তু ড্রিংক করে ভুলে চলে আসেনি। অয়ন চৌধুরী ড্রিংকটাকে কন্ট্রোল করতে পারে।
কোন নেশা তাকে নেশাগ্রস্ত করতে পারেনা।’

রিমি কিছু বলেনা শুধু পিটপিট করে চেয়ে থাকে অয়নের পানে। অয়নের মতিগতি বুঝার প্রচেষ্টায় থাকে কিন্তু সে ব্যর্থ। কিছুই বুঝতে পারলো না সে।
অয়ন এইবার ধীর গলায় বলে,

‘ পরীর থেকেও অধিক সুন্দর তুমি। আমি তোমায়
রিমিপরী বলে ডাকবো।’

অয়নের কথাটি শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় রিমির।
অয়ন বলছে টা কী? সে কঠোর গলায় বলে,

‘ আমি কী পরী নাকি? নাকি তাদের মতো উড়তে পারি? আমাকে কেন রিমিপরী বলে ডাকবেন? ‘

অয়ন বিরক্ত হয়। প্রচন্ডরকমের বিরক্তিতে তার মুখশ্রী লাল টগবগ করে। সে হঠাৎই রিমির গাল চেপে ধরে বলে,

‘ আমার মুখের উপর একটা কথা বলবে না তুমি।
আমি তোমার থেকে পারমিশন চাইনি। জাস্ট বলে দিলাম। অতিরিক্ত কোন কথা বলবে না। মুখের উপর কথা বলা আমার পছন্দ নয়। মাইন্ড ইট। ‘

কথাটি বলেই অয়ন রিমিকে ছেড়ে দেয়। দূরে সরে গিয়ে গটগট করে বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে। রিমি গালে হাত দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে, গালে
আঙ্গুলের ছাপ পড়ে গিয়েছে। লোকটা কি পাগল নাকি অন্যকিছু? এইভাবে তার উপর হুকুমজারি করলো। এতো সাহস হলো কী করে লোকটার?
রিমির প্রচন্ড রাগ হলেও সে তা কিছুক্ষন এর জন্যে দমিয়ে রাখে। লোকটা আবারোও অসভ্যতামী করলে পরের বার ছাড় দিবে না সে।

__________

রুহানা চৌধুরী নিজের ছেলের সাথে বসে কফি খাচ্ছেন এবং অফিসের ব্যাপারে কথা বলছেন।
পায়েল ও তাদের সাথে রয়েছে। রিমি কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে এবং ডক্টরের এপ্রোন হাতে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামছে। রিমিকে দেখে পায়েলের ভিষন রাগ হয়। মেয়েটাকে একদম দেখতে পারেনা সে। মেয়েটার সাথে অয়নের বিয়ে হওয়ায় তার সাথে অয়নের বিয়ের ডেট টা পিছিয়ে গিয়েছে৷ নাহলে সে কবেই পেয়ে যেত তার অয়নকে। পায়েল কিছু বলতে নিলে,
হাত চেপে ধরে রুহানা চৌধুরী। চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলে। পায়েলও চুপ হয়ে যায়। রুহানা চৌধুরী
রিমির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর সুরে বললেন,

‘ তুমি কি কলেজে যাচ্ছো? ‘

‘ জ্বী। আজকে থেকেই আমার প্রথম ক্লাস শুরু। ‘

আলতো হাঁসেন রুহানা চৌধুরী। গাম্ভীরতাকে দূর করে অতি ক্ষীন্ন সুরে বললেন,

‘ কলেজে যাচ্ছো ভালো কথা। পড়াশোনা করো থাকো খাও আমার সমস্যা নেই।ডিভোর্সের কথাটি মনে আছে তো? ‘

রিমিও প্রতিত্তরে মুচকি হেসে বলে,

‘কখন কোথায় সাইন করতে হবে বলে দিয়েন আমি করে দিবো। আসছি। ‘

কথাটি বলেই রিমি ধীর পায়ে স্হান ত্যাগ করে নিজের গন্ত্যবের দিকে রওনা হয়।

পায়েল রিমি যাওয়ার পানে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। মেয়েটার মনে নিশ্চই কিছু চলছে কিন্তু কী?
পরক্ষনেই নিজের ভাবনাকে দূরে রেখে আবারোও
রুহানা চৌধুরীর কথায় মনোযোগী হয় পায়েলের চৌধুরী ফ্যাশন থেকে শ্যুট আছে সামনের সপ্তাহে। তাও আবার সেই ক্যানাডায়। এমনিতেই অয়নের গলায় একটা মেয়ে ঝুলে আছে। যতক্ষন পর্যন্ত অয়নের ওই মেয়েটার সাথে ডিভোর্স না হয়ে পায়েলের সাথে বিয়ে হচ্ছে ততক্ষন পায়েল কিছুতেই শান্তি পাবে না। রুহানা চৌধুরী তাকে ভরসা দিলেন। যেন পায়েল নিশ্চিন্তে ক্যানাডায় চলে যায়। অয়নের ডিভোর্সটা যেন সঠিক সময়ে হয়ে যায় সেদিকে সম্পূর্ন খেয়াল রাখবেন তিনি।

_____________ (লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

রিমি এপ্রোন হাতে নিয়ে মেডিকেল কলেজের সামনে
দাঁড়ায়। সে তার স্বপ্নের অনেকটাই কাছে চলেছে। এই মেডিকেল কলেজেই তাকে তার স্বপ্নের দিকে ধাবিত করবে। রিমি আল্লাহর নাম করে কলেজের ভিতরে ঢুকে পড়ে। ঢুকেই তার সর্বপ্রথম চোখ যায় তার বেস্টফ্রেন্ড জয়িতার দিকে। জয়িতা রিমিকে দেখেই জড়িয়ে ধরে। রিমিও জয়িতাকে পরম আনন্দের সাথে জড়িয়ে ধরে। কতদিন পর দুই বান্ধুবির দেখা। জয়িতা হাঁসিমুখে বলে,

‘ তুই একা যে? জিজু কোথায়? সেদিন তো তোর বিয়েতে অসুস্হার জন্যে থাকতে পারেনি। শুনলাম তোর বর নাকি এক্সচেঞ্জ হয়ে গেছে মানে অন্য কারো সাথে হয়েছে। যতটুকু শুনেছি সে ঢাকাতেই থাকে।
তোদের মধ্যে সব ঠিক তো? মানে সেই জিজু তোকে মেনে নিয়েছে তো? ‘

একসাথে এতো প্রশ্ন করায় কিছুটা বিরক্ত হয় রিমি। জয়িতাকে দেখে বেশ আগ্রহী মনে হচ্ছে। হওয়াটাই স্বাভাবিক নিজের বেস্টফ্রেন্ড এর বিষয় বলে কথা। রিমি জয়িতাকে শান্ত করে বলে,

‘ একটু শান্ত হও। সব বলবো আমি তোকে। এখন আপাতত ক্লাসে চল। ফার্স্ট ক্লাস লেট হওয়াটা ঠিক না। ‘

জয়িতা সায় দিলেও তার বকবক কমেনা। সে আপনমনে বলতে থাকে। এইবারের বিষয়টি হচ্ছে তাদের প্রফেসরকে নিয়ে।

‘ জানিস রিমু? আমাদের প্রফেসর মানে এই মেডিকালের মালিক দ্যা গ্রেট হার্ট সার্জন এআরসি
আজ আমাদের ক্লাস নিবে। তুই ভাবতে পারছিস?
উনি তো মিডিয়ার সামনে আসেই না। উনাকে নিয়ে যা লেখালিখি হয় সব কাগজেই। কেমন একটা
রহস্যময়ী হয়ে থাকেন সবসময়। উনার ক্লাস আজ পর্যন্ত যারা যারা করেছে সবাই উনার টিচিং স্কিলে মুগ্ধ! শুধু তাই? মেয়েরা তো বলতে গেলে উনাকে চোখ দিয়ে গিলে খায়। আমিও আজকে
উনাকে দেখতে পাবো। ইসস ভাবতেই কেমন একটা লাগছে। বাই দ্যা ওয়ে রিমু তুই কিন্তু উনার দিকে তাকাবি না বুঝলি? তুই এখন বিয়াত্তা মহিলা।পারলে উনাকে জিজুর নজরে দেখবি। দেখি উনাকে আমি পটাইতে পারি নাকি।’

জয়িতার কথা শুনে রিমি হাঁসতে হাঁসতে ক্লাসে ঢুকে।সে জানে তার বান্ধুবী এমনই। যদিও ডক্টর এয়ারসিকে নিয়ে তারও বেশ কৌতহল রয়েছে। খবরের কাগজে তার ব্যাপারে অনেক পড়েছে রিমি।
রিমি কথাটি ভাবতে ভাবতে ক্লাসের পিছনের বেঞ্চে বসে পড়ে।ক্লাসে লাস্ট বেঞ্চে সে এবং জয়িতা বসে আছে। ক্লাস রুম টা বেশ বড়।
সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলো। কিন্তু হঠাৎ তারা চুপ হয়ে যায়। কেননা কিছুক্ষন আগে একজন স্টাফ এসে জানায় প্রফেসর এসিএইচ কিছুক্ষন এর মধ্যেই ক্লাসে ঢুকবেন। সবাই যেন চুপ থাকে। তাই সবাই চুপই আছে। তখনি প্রফেসরের আগমন ঘটে।
অত্যান্ত স্টাইলের সাথে হেটে সে ক্লাসে ঢুকে। তাকে দেখেই রিমি……..

চলবে কী?

কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন 💙। ঘটনমূলক কমেন্ট করবেন🥴ওখে?

লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here