#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত
#পর্ব- ৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
প্রফেসর রুপে নিজের স্বামীকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায় রিমি। তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। মাথা কেমন করে যেন তার ঘুড়াচ্ছে।প্রফেসর ডক্টর এআরসি আর কেউ নয় বরং তার সদ্য বিবাহিত স্বামী অয়ন চৌধুরী। রিমি এখনো হতভম্ব হয়ে তাঁকিয়ে আছে।
অয়নকে দেখে সবাই একসাথে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানালোও, রিমি এখনো ঠায় বসে আছে,যেন সে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য কিছু দেখছে। হ্যা অয়নকে সে চিনে শহরের নামকরা বিসনেজ ওম্যান রুহানা চৌধুরীর ছোট নাতি হিসেবে,কিন্তু যাকে নিয়ে সে এতো খবরের কাগজ পড়েছে। যার ক্লাস পাওয়ার জন্যে সে কত কাঠপোড় পুড়িয়ে এই মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে সে অয়ন নিজেই! নিজের কাছে নিজেকেই কেমন বোকা লাগছে রিমির। সে আদোও ঠিক দেখছে নাকি অতিরিক্ত উত্তেজনায় তার চোখে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। রিমি বার বার চোখ কচলাচ্ছে কিন্তু না কোন কিছুর পরিবর্তন হচ্ছেনা বরং বার বার
অয়নকেই স্পষ্ট দেখতে পারছে সে। জয়িতা রিমির এমন ব্যবহারে কিছুটা হচকিয়ে রিমিকে বারবার খোঁচাতে শুরু করে। রিমি তৎক্ষনাৎ নিজেত ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে। জয়িতা ফিসফিস করে বলতে থাকে,
‘কি শুরু করছিস কি? এইরকম করছিস কেন? ‘
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
‘ ডক্টর এয়ারসি কীভাবে অয়ন চৌধুরী হতে পারে?
উনি তো রুহানা চৌধুরীর ছোট নাতী। ‘
রিমি কিছু অবাক হয়েই অয়নের দিকে তাকিয়ে কথাটি বলে। জয়িতাও কিছুটা অবাক হলে পরক্ষনে বলে উঠে,
‘ হ্যা কিছুটা আশ্চর্যের বিষয় হলেও এইটাই সত্যি।
উনার পুরো না তো ডক্টর অয়ন রওযাক চৌধুরী।
সবাই উনাকে ডক্টর এয়ারসি বলেই চিনে। ‘
রিমি জয়িতার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অয়ন লোকটাকে কেমন যেন রহস্যময়ী চরিত্র মনে হচ্ছে তার কাছে। রিমি ঘাড় ঘুড়িয়ে ক্লাসের সবাইকে পরখ করে নিলো। অনেকেই হা হয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন সাদা এপ্রোন পড়ে দাঁড়িয়ে
সবার উদ্দেশ্য লেকচার দিচ্ছে। সবাই কি সুন্দর তা গিলছেও। গিলাটাও স্বাভাবিক ইয়াং প্রফেসর বলে কথা। কিছু কিছু মেয়েরা তো ডক্টর এয়ারসির ফাস্ট ক্লাস মিস করবে না বলে সকাল সকাল এসে ক্লাসে পৌছে গিয়েছিলো। রিমি নিজের পাশে জয়িতার দিকে একবার তাঁকায়। জয়িতাও গালে হাত দিয়ে এক ধ্যানে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। রিমি জয়িতাকে মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে বলে,
‘ এত্তো বড় হা করিস না মশা ঢুকে যাবে কিন্তু। ‘
জয়িতা বিরক্ত হলো। যাকে বলে চরম বিরক্ত। তবুও রিমির কথায় উত্তর দিলো। নাক মুখে খিচে অয়নকে দেখতে লাগলো। হঠাৎই অয়ন গম্ভীর সুরে বললো,
‘ মিস রিমি! ‘
অয়নের মুখে নিজের নাম শুনে সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো রিমি। অয়ন গম্ভীর মুখেই প্রথম বেঞ্চটাকে ইশারা করে বললো,
‘ কাম ফাস্ট! ‘
রিমি গুটিগুটি পায়ে কথা না বাড়িয়ে সামনের দিকে
এসে বসলো। অয়ন আরেকটি অদ্ভুদ কান্ড ঘটিয়ে বসলো। রিমিকে সামনের বেঞ্চে বসিয়ে, বাকিদের কিছুটা দূরে যেতে বললো। সবাই রিমির থেকে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে বসলো। সামনে বেঞ্চে রিমি ব্যতীত কেউ নেই। রিমি অবাক হয়ে বলে,
‘ আমাকে সামনে বসালেন কেন? ‘
অয়ন বাঁকা হেসে বলে,
‘,যেন আপনাকে খানিক্ষন মন ভরে দেখতে পারি। ‘
অয়নের কথাতে পুরো ক্লাস বড় বড় চোখ দিয়ে রিমির দিকে তাকালো। রিমিও খানিক্টা অস্বস্হিতে নিচু হয়ে রইলো। লোকটা বলছে টা কি? লোকটার মাথায় নিশ্চয় সমস্যা রয়েছে। অয়ন গলায় পুনরায় গম্ভীর্য ভাব এনে বললো,
‘ আমার ক্লাসে কথা বলা আমি একদম পছন্দ করিনা
মিস রিমি,কিন্তু আপনি পিছনে বসে নন্সটপ কথা বলে যাচ্ছিলেন। আপনি কী ভাবলেন আমি কিছু দেখি না? তাই আপনাকে এইবার সামনে বসালাম। দেখি আপনি কীভাবে কথা বলেন। ‘
অয়ন কথাটি বলে পুনরায় তার লেকচারে মনোযোগ দিলো। অয়নের কথাতে পুরো ক্লাস রিমির দিকে চোখ সরিয়ে ক্লাসে মনোযোগ দিলো। রিমিও খানিক্টা স্বস্হির নিঃশ্বাস নিয়ে ক্লাস করলো মনোযোগ দিয়ে।
___________________
রিমি মনোযোগ দিয়ে আজকের প্রতিটা ক্লাস করেছে। প্রথম দিন হিসেবে ভালোই কাটছিলো তার আজকের দিনটি কিন্তু বিপত্তি ঘটলো তখন। যখন একজন মহিলা ডক্টর এসে জানালো ডক্টর এযারসি
নাকি প্রতিবছর নতুন স্টুডেন্টদের মাঝে নিজের এ্যাসিস্ট্যান্টকে নিবার্চন করে থাকে। যে এয়ারসিকে অ্যাসিস্ট করে অনেক কিছু শিখতে পারবে। ক্লাসের সবাই অনেক আনন্দিত ছিলো।বিশেষ করে মেয়েরা।
তাদের মধ্যে কেউ সর্বোক্ষন ডক্টর এয়ারসির সহকারী হবে,কিন্তু মহিলা ডক্টরটি যখন রিমির নাম বললো তখন তাদের আনন্দ নিমিষেই মাটি হয়ে গেলো,যদিও জয়িতা খুশি তার বান্ধুবি এতো বড় সুযোগ পেয়েছে। রিমির মাথায় হাত। ক্লাসের মেয়েরা কেমন হিংসার চোখে তার দিকে চেয়ে আছে। রিমি বিড়বিড়িয়ে বলে,
‘ লোকটা চাইছে টা কী? আমাকে নিজের এ্যাসিস্টেন্ট বানিয়ে দিলো। উফফ অসহ্য ঝামালা।’
পরক্ষনে রিমি ভাবলো তার কাছে ভালোই সুযোগ এসেছে। ডক্টর এয়ারসির সহকারী হয়ে তার সুবিধাই হয়েছে। সে অনেক কিছু শিখতে পারবে এয়ারসির থেকে। এতে নিজের লক্ষ্যের দিকে কয়েকধাপ এগিয়ে যাবে কথাটি ভেবে আপনমনে নিজেকে স্বান্তনা দেয় রিমি।
_____________
‘ মেই আই কামিং? ‘
পরিচিত রমনীর কন্ঠে অয়ন তার কাজ দ্রুত থামিয়ে
একপলক সামনে থাকা রমনীকে দেখে নেয়।
কালো রংয়ের সেলোয়ার কামিজ পড়ে তার উপরে সাদা এপ্রোন পরিহিতা এক রমনী দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় সাদা স্কিপ পেচানো। অয়ন খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
‘ মিস রিমি উফ সরি মিসেস অয়ন রওযাক চৌধুরী প্লিয কাম। ‘
রিমি দ্রুত পায়ে কেবিনে ঢুকে তেজি গলায় বলে,
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
‘ আমার আইডি কার্ডে মিস দেওয়া। তাই আমাকে সেই নামেই ডাকবেন। ‘
অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে রিমির চারপাশে ঘুড়তে ঘুরতে কপালের ভাজে আঙ্গুল রেখে ঠান্ডা গলায় বললো,
‘ আমি আগেও বলেছি রিমিপরী একদম আমার মুখের উপর কথা বলবে না। তোমার আইডি কার্ডের কথা তো? ওকে আমি ভালো করে ঠিক করিয়ে দিচ্ছি। ‘
অয়ন কথাটি বলেই, রিমির গলা থেকে আইডি কার্ডটা জোড় করে টেনে নিয়ে নিজের হাতে নিয়ে নিলো। রিমি হতভম্ব দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকায়। অয়ন হাক ছেড়ে কাউকে ডাকে। একজন কোর্ট পড়া লোক সঙ্গে সঙ্গে
উপস্হিত হয়। অয়ন লোকটার দিকে কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ কালকের মধ্যে এই স্টুডেন্ট এর কার্ডটা ঠিকঠাক করে দিবেন।নামে একটু ভুল আছে।’
‘ কি নাম হবে স্যার? ‘
অয়ন ঘাড় কাত করে রিমির দিকে বাঁকা হেসে বলে,
‘ মিসেস রিমি অয়ন রওযাক চৌধুরী। ‘
লোকটাও বেশ বিস্মিত হয়ে অয়নের পানে তাকিয়ে আছে। অয়ন মেয়েটাকে নিজের স্ত্রীর পরিচয় দিচ্ছে
এইটা ভেবে লোকটার কেমন সব অদ্ভুদ লাগছে।
অয়ন যে বিবাহিত তা তো সে জানতো না তাহলে?
লোকটাকে দাঁড়াতে দেখে অয়ন সঙ্গে সঙ্গে ধমকে বলে,
‘ কি হলো? এইভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
গো ফাস্ট এন্ড কাজটা যেন টাইমের মধ্যে হয়ে যায়।’
লোকটা ‘জ্বী আচ্ছা স্যার। ‘ বলে তৎক্ষনাৎ বেড়িয়ে যায়। অয়ন রিমির দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বলে,
‘ রিমিপরী গেট রেডি ফর ইউর নিউ ডে। কালকে থেকে তুমি এয়ারসিকে অ্যাসেস্ট করবে। ঠিক টাইমে চলে আসবে। আমি কিন্তু লেট একদম পছন্দ করিনা। ‘
অয়ন কথাটি বলে এপ্রোন হাতে নিয়ে নিজের কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বেড়িয়ে যায়। দুইটা বড় বড় ওটি আছে আজ তার।
রিমি এখনো বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকদিন পর তো তার সাথে অয়নের ডিভোর্স আর অয়ন এখন কেন তার নামের পাশে নিজের নাম বসাতে চাইছে? অয়নের মাথায় চলছে টা কী? রিমির এখন আফসোস হচ্ছে সে কেন আটকালো না? আচ্ছা কোনভাবে কি সে অয়নকে ভয় পাচ্ছে?
_______________
জানুয়ারির শুরু কেবল। কুয়াশায় যেন রাতের শহরটি আবৃত হয়ে পড়েছে। এইসময় বাইরে বেড়ানো বড্ড মুশকিল। তবুও এই শীতে রিমি একটা
পাতলা চাদর জড়িয়ে ছাদে চলে এলো। অয়নদের ছাদ টাও বেশ বড়। একদম বাগানের ন্যায় বড়।
আরামচে এখানে ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলা যাবে।
ছাদটি বেশ সুন্দর সুন্দর ফুল দিয়ে সাঁজানো। যে কেউ দেখে বলবে ছোট্ট ফুলের গ্রাম। রিমি এক সাইডে গিয়ে একটি ডিভানে বসে থাকে। পা দিয়ে ডিভানের পানি নাড়তে থাকে। আলাদাই আনন্দ পাচ্ছে যেন এতে সে। ঠোটের কোণে মুচকি হাঁসি ফুটে উঠে তার। রিমি হয়তো জানেনা দূর থেকে কালো মনির অধিকারী একজোড়া চোখ তার দিকেই সীমাবদ্ধ। অয়ন বারান্দায় ডিভানে বসে মাথায় হাত রেখে ছিলো হঠাৎ তার চোখ যায় সামনে থাকা
চন্দ্রবিলাশিনীর দিকে। সে আর কেউ নয় তার রিমিপরী। চাঁদের স্নিগ্ধ আলো রিমির মুখে এসে পড়ছে। বড্ড মায়াবী লাগছে রিমিকে। অয়ন হাত ভাজ করে আনমনে বলে উঠে,
‘ রিমিপরী তোমার মায়াবী মুখশ্রী আমাকে বার বার তোমার প্রতি মুগ্ধ হতে বাধ্য করে। এতোটাই মায়াবী তুমি। ‘
কথাটি বলে অয়ন চোখমুখ শক্ত হয় মুহূর্তেই। বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
‘ কিন্তু সেই মুগ্ধ হওয়ার অধিকারটাও শুধুমাত্র আমার। ‘
রিমি আপনমনে কিছু একটা ভাবছিলো তখনি তার কানে গুলির শব্দ ভেসে আসে।
চলবে কী?
নোটঃ আপনারা প্লিজ কেউ বলবেন না পর্ব ছোট হয়েছে বড় করে দাও। দেখুন আমি একজন সাইন্সের স্টুডেন্ট।আজকে থেকে আমার ক্লাস শুরু হয়েছে তার মধ্যে একবছর পর আমার বোর্ড এক্সাম। আমি অনেক চাপের মধ্যে আছি। তার মধ্যে আমি সময় বের করি গল্প দেই। আমি এতোটাই ছোট দেইনা। আমি এক হাজার শব্দের বেশি লিখি। যখন টাইম পাই তখন
দুই হাজার শব্দের পর্বও দেই। তাই বলছি ঘটনমূলক কমেন্ট করুন। ছোট হয়েছে পর্ব আরো বড় পর্ব দিন বলে কেউ আমাকে আশাহত করবেন না। আমার দিকটাও বুঝার চেস্টা করুন। আমিও স্টুডেন্ট।