তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤 #পর্ব- ৬

0
712

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
গম্ভীর পুরুষকন্ঠে কেউ রিমিকে হাক ছেড়ে ডাকতেই
মেঘ দ্রুত গতিতে রিমির থেকে সরে নীচে চলে যায়।
ছোটবেলা থেকেই অয়নকে খুব ভয় পায় মেঘ।অয়ন এসে রিমির পাশে দাঁড়ায়। পড়নে তার সাদা এপ্রোন। আজ অয়নকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে।
ফর্সামুখে গাম্ভীর্য থাকলেও তাতে কৃত্রিম বাঁকা হাসি ঝুলছে। সাদা শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ফ্লড করে রেখেছে। অয়ন মুখটা রিমির কানের কাছে নিয়ে অত্যান্ত শীতল গলায় বলে, ‘ আজকে থেকে কিন্তু তুমি আমার এসিস্টট্যান্ট। আমি লেট একদম পছন্দ করিনা। সো লেটস গো। ‘

অয়ন কথাটি বলেই রিমির থেকে সরে গিয়ে রুহানা চৌধুরীর থেকে বিদায় নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। রিমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ধীর পায়ে সে ও বেড়িয়ে গেলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। রুহানা চৌধুরী এতোকিছুর মাঝে ঠিকই খেয়াল করেছে অয়ন কিছু একটা রিমির কানে কানে বলছিলো।

রিমি রাস্তার কাছে রিক্সার জন্যে অনেক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে কিন্তু আজ কোন রিক্সাই সে পাচ্ছে না। বিরক্ত হচ্ছে তার সাথে প্রচন্ড রাগ ও তার মাথায় চড়ে বসেছে।আজকে যদি তার দেরী হয় তাহলে নিশ্চিত অয়ন তার খবর নিবে খুব ভালো করে। এমনিতেও কালকের রাতের পর থেকে অয়নকে তার কেমন ভয়ংকর পাগল মনে হচ্ছে। যাকে একপ্রকার
সাইকো বলে।

__________

রিমি অনেক্ষন ধরে অপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিলো সে আর দাঁড়িয়ে থাকবে না। বরং হেটেই আজ কলেজে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ সে হাটতে শুরু করলো। রিমি হাটতে হাটতে খেয়াল করলো তাকে কেউ
সর্বোক্ষন নজরবন্দী করে রেখেছে। রিমি বুঝতে পারছে না হঠাৎ তার এমন মনে হচ্ছে কেন? রিমি একপলক পিছনে তাকিয়েই অবাক! পাঁচ ছয়জন
মহিলা তার পিছনে আসছে। পরনে তাদের কালো পোষাক। মহিলা গার্ড তারা কিন্তু তারা হঠাৎ রিমির পিছনে কেন আসছে? রিমি দ্রুত পায়ে হাটতে লাগলো। রিমির পিছনে মহিলা গার্ডগুলোও আসছে। রিমি একপ্রকার ভয় পেয়েই দ্রুত একটা সিএনজিতে চড়ে বসলো। তারপর ড্রাইভারকে বললো যত দ্রুত সম্ভব তাকে পৌছে দেওয়ার জন্যে।
ড্রাইভারটি তাই করলো তাকে মেডিকাল কলেজের সামনে পৌঁছে দিলো। রিমি কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। পিছনে আরেকবার ঘুড়লো কিন্তু এখন সেই মহিলা গার্ডসগুলো নেই। রিমি নিশ্চিন্তে
হসপিটালে ঢুকলো কিন্তু একটা চিন্তা তার থেকেই যায়। মহিলা গার্ডগুলো হঠাৎ রিমির পিছনে আসছিলো কেন? রিমির ভাবনার মাঝেই রিমি ক্লাস রুমে ঢুকে যায়। অয়ন ক্লাসে লেকচার দিচ্ছিলো রিমিকে দেখে থেমে গিয়ে, হাতের ইশারায় রিমিকে সামনের বেঞ্চে বসতে বলে। রিমিও ভদ্র মেয়ের মতো বসে পড়ে কিন্তু কালকের মতো আজকের বেঞ্চেও কেউ নেই। রিমি একাই বসে আছে।
রিমি আড়চোখে দেখছে অয়ন কটমট দৃষ্টিতে দিকে তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ হয়তো রিমির দেরী করে এসেছে তাই। অয়ন যথাসময়ে তার ক্লাস শেষে বেড়িয়ে যেতে নিলেও থেমে গিয়ে ঘাড় কাত করে একপলক রিমিকে দেখে নেয়। অতঃপর হঠাৎই
রিমির কাছে এসে রিমির হাত ধরে সোজা ক্লাস রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। ক্লাসের মেয়েরা হতবাক হয়ে যায়। জয়িতা নিজেও অবাক! অয়ন রিমিকে নিয়ে নিজের কেবিনে এনে হাতটা ছেড়ে দেয়। রিমি কাঠিন্য ভাব এনে বলে,

‘ আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন? তাও আবার রানিং ক্লাসের মাঝে। সবাই কি ভাবছিলো।’

অয়ন শক্তমুখে জবাব দেয়,

‘ তুমি আমার এসিসট্যান্ট তা কী ভুলে গেলে?আজকে লেট করলে কেন? তার জবাবদিহি তো তোমাকে করতে হবে। ‘

‘ তাই বলে সবার সামনে এইভাবে হাত ধরে নিয়ে আসবেন? ‘

অয়ন অধরের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললো,

‘আমার হসপিটাল আমার বউ আমি যা ইচ্ছে করবো। কে কি ভাবলো আমার দেখার দরকার নেই।’

অয়ন কথাটি বলেই একটা বেশ ভাব নিয়ে একটা নিজের ইজি চেয়ারে বসে পড়লো। অয়নের এমন খাপছাড়া কথাতে মেজাজ বিঘড়ে যায় রিমির। অয়নের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ কয়েকদিন পর আপনার বিয়ে সেইটা কি আপনি ভুলে গেলেন? আর আমি আপনার কিসের বউ?
কয়েকদিন পর আমাদের ডিভোর্স। ‘

অয়ন ফাইল দেখতে দেখতেই বললো,

‘ ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত তুমি আমার ওয়াইফ। আমার পুরো রাইট আছে তোমার উপর। এখন দেখো কেবিনে এখন কেউ নেই। শুধু তুমি আর আমি।’

রিমি চোখ বড় বড় করে অয়নের দিকে তাকাতেই,
অয়ন চোখ টিপ মেরে বলে,

‘ ইউ নো রিমিপরী? সামনে সুন্দরী বউ থাকলে কন্ট্রোল করা বড্ড কঠিন। সামথিং নটি নটি ফিলিংস। ‘

রিমি অয়নের কথা শুনে কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। লোকটার মাথা কি আদোও ঠিক আছে নাকি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঘড়ির দিকে রিমি তড়িঘড়ি করে বলে,

‘ আমার লেট হচ্ছে আমাকে যেতে হবে। আমি যাই কেমন? ‘

রিমি কথাটি বলে বাঁধ সাধে অয়ন। রিমির হাতজোড়া আলতো করে ধরে বলে,

‘ কিছুক্ষন থেকে যাও রিমিপরী। কাছে আসলেই এতো ছটফট করো কেন? ‘

‘ দুরেই তো চলে যাবেন তাহলে কাছে আসছেন কেন? ‘

রিমির নরম সুরে প্রশ্নটি ছুড়ে দেয় অয়নের পানে। রিমি জানেনা সে কেন কথাটি বললো কিন্তু তার বলতে বড্ড ইচ্ছে হলো। অয়ন হাঁসলো। কি সুপ্ত কি সুন্দর সেই হাঁসি।

‘ রিমিপরী কিছু প্রশ্নের জবাব অনুভবে কিছুটা উপলব্ধি করে বুঝে নিতে হয়। ‘

________________
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

রিমি অয়নের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে দ্রুত বেড়িয়ে যায়। অয়ন কেমন আলাদা আবেগমিশ্রিত কন্ঠে তাকে প্রতিটা কথা বলে। যেকোন রমনী তাতে মন দিয়ে বসবে,কিন্তু রিমির তাতে কষ্ট হয়। প্রচন্ড কষ্ট যাকে বলে। আমান ও তাকে কতটা মায়া নিয়ে কতটা আবেগ নিয়ে কতটা ভালোবাসা দিয়ে প্রতিটা কথাটি বলতো কিন্তু কই সে তো মাঝপথে রিমিকে অসহায় করে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। রিমি খেয়াল করলো আমানের কথা মনে পড়তেই, তার আখিজোড়া ছলছল করছে। কেমন কান্না পাচ্ছে। বুকের সব কষ্ট যেন নিমিষেই বের হতে চাইলো কিন্তু রিমি চাইলেও এই মুহুর্তে তা পারবে না। রিমি ভেজা গলায় বললো,

‘ এতো প্রতিশ্রুতি এতো আশার আলো দেখিয়ে মাঝপথে কেন চলে গেলেন আপনি আমান? ‘

_______________

অস্ট্রেলিয়ার এক বিশাল কক্ষে চেয়ারে আনমনে বসে কিছু ভাবছিলো যুবকের। বলিষ্ট গড়নের যুবকটির ফর্সা মুখটি শুকিয়ে কাঠ হয়ে রয়েছে। হাতড়ে যুবকটি ঢগঢগ করে পানি পান করলো। হাতের সামনে তার প্রেয়সীর হাঁসিমাখা এক ছবি।
যুবকটি ছবিটা হাতে নিলো। আনমনে বললো,

‘ তোমার শূন্যতা আমাকে বড্ড পোড়াচ্ছে রিমিপাখি।’

_______________

রিমি যথারিতিতে সব ক্লাসই করছে। রিমি আড়চোখে খেয়াল করছে ক্লাসের সবাই তার দিকে কেমন একটা অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাকানোটাই স্বাভাবিক অয়ন যা শুরু করেছে। জয়িতা রিমির পাশে বসে বলে,

‘ দোস্ত? এই কলেজের প্রফেসররা কী জানেনা তুই বিয়েত্তা? সবগুলা তোর লগে লাইন মারার জন্যে রেডি হচ্ছে। সকালে এয়ারসি তোকে সকলের সামনে হাত ধরে নিয়ে গেলো৷
আর এখন আসিফ স্যারও তোকে কেমন করে তাকাচ্ছে ক্লাসের ফাঁকে। আসিফ স্যার লাইন মারতেই পারে বাট এয়ারসি স্যার ও? ‘

জয়িতার কথায় এইবার ভালো করে লক্ষ্য করলো
তাদের প্রফেসর ডক্টর আসিফ অনেক্ষন যাবত
তার দিকে তাকিয়ে আছে।

ক্লাস শেষে সবাই যখন যাওয়ার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছিলো তখনি ডক্টর আসিফ রিমির কাছে এসে
রিমির দিকে হাত বাড়িয়ে কলমটি এগিয়ে দিয়ে বলে,

‘ মিস রিমি আপনি কালকে আমাকে সাইন করার জন্যে কলমটি দিয়েছিলেন। তা ফেরত দেওয়া হয়নি। নিন এখন। ‘

রিমি হাত বাড়িয়ে কলমটি নিতে নিলে, আসিফ সকলের আড়ালে রিমির হাত ধরে কলমটির সাথে একটা চিঠিও গুজে দেয়।রিমি অবাক হয়ে আসিফের দিকে তাকায়।

অয়ন ওটির দিকে যাচ্ছিলো তখনি কাচের জানালা দিয়ে দৃশ্যটি তার চোখে পড়ে। মাথায় রক্ত চড়ে বসে অয়নের। হাত মুঠো হয়ে যায় অয়নের।

চলবে কী?

(আজকে গল্প লেখার মুড একদম ছিলো না। তাই আজকের পর্বটি অগোছালো হয়ে গেছে। সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন 🖤)

লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here