#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত
#পর্ব- ৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রিমিকে অন্য কেউ স্পর্শ করেছে কথাটি ভাবলেই অয়নের মাথায় রক্তচড়ে বসে। রাগে কপালের ভাজ পড়ে যায়। অয়ন কপালে আঙ্গুল রেখে কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসে। আসিফ রিমির হাতে চিঠি গুজে দিলে, রিমি অবাক হয়ে আসিফের দিকে তাকাতেই,
আসিফ খুব আস্তে করে বলে,
‘ বাসায় গিয়ে পড়িও কেমন? ‘
আসিফ কথাটি বলার সাথে সাথে দূর থেকে একটা অপারেশন সুক্ষ্ম ধারালো চাকু তার হাতে এসে গেথে যায়। আসিফ ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। আসিফের উপর হঠাৎ এমন আক্রমনে রিমিসহ ক্লাসের সবাই অবাকের শীর্ষে পৌঁছে যায়। রিমি ভয় পেয়ে যায় আসিফের অবস্হা দেখে। চাকুটা এমনভাবে নিক্ষেপ করা হয়েছে যার ফলে চাকুটা আসিফের হাতে গেথে রয়েছে। রক্ত অনাবরত গড়াচ্ছে। আসিফ ব্যাথায় রিতিমত কাঁতরাচ্ছে। রিমির চোখ যায় সামনে থাকা যুবকের দিকে। যুবকটির ঠোটের কোণে
বাঁকা হাসি বিদ্যমান। চোখদুটো টকটকে লাল আভা ধারণ করেছে। যে কেউ দেখলে ভয় পেয়ে যাবে।
আসিফের অবস্হা করুন হতে দেখে নার্সরা আগে এগিয়ে আসতে নিলে, যুবকটি তাদের হাতের ইশারায় মানা করে দেয়। ডক্টর এয়ারসির বাঁধা পেয়ে নার্সরাও আর এগিয়ে যেতে পারেনা। ডক্টর এয়ারসি আসিফের দিকে এগিয়ে যায়। অয়নকে দেখে রিমির বুঝতে বাকি থাকেনা কাজটা আর কেউ নয় বরং ইচ্ছেকৃতভাবে অয়ন নিজেই করেছে। অয়ন আসিফের হাত থেকে এক টান দিয়ে চাকুটা বের করে। এতে আসিফের হাত থেকে ফিনকি রক্ত গড়িয়ে পড়ে। চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে আসিফ। অয়ন চাকুটার দিকে তাঁকিয়ে অত্যান্ত ঠান্ডা গলায় বলে,
‘ ডক্টর আসিফ! ইউ নো? হাত সবসময় সামলিয়ে রাখতে হয়। নাহলে যখন তখন এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে। এই দেখুন না যেমন আমি আমার ছোট্ট নিশানার প্রেক্টিসটা করছিলাম ভুলবশত আপনার হাতে গিয়েই লেগে গেলো। কত ব্যাথা পাচ্ছেন আপনি। কতটা সাফার করছেন সামান্য ভুলের জন্যে।’
আসিফ অয়নের দিকে তাকাতেই, অয়ন রিমির দিকে ভয়ংকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কাঠিন্য গলায় বলে উঠে,
‘ তাই বলছিযার তার উপর হাত বাড়ানোর আগে
তার পরিচয় সম্পর্কে সম্পূর্ন ধারণা রাখতে হবে।
নাহলে ছোট খাটো ভুলের মাশল সারাজীবন ধরে দিতে হয়। তখন চাইলেও ভুলটাকে সংশোধন করা যায় না। ‘
কথাটি বলেই, অয়ন বাঁকা হাঁসি দিয়ে কাউকে হাক ছেড়ে ডাকে। রিমির ভয়ে হাত পা কেমন একটা কাঁপছে। সেদিনের গার্ডের কথা মনে পড়ে য়ায়। লোকটার কি অবস্হা করেছিলো অয়ন। আসিফের অবস্হা নিশ্চয় আরো করুন হবে। এমনিতেও বেঁচারার হাতের অবস্হা একেবারেই করুন! অয়নের
আদেশে একজন লোক এসে হাজির হয়। তার থেকে আইডি কার্ডটা নিয়ে অয়ন রিমির দিকে এগিয়ে রিমির গলায় আইডি কার্ডটি ঝুলিয়ে বলে,
‘ নাও ইটস পার্ফেক্ট। তো মিস উপ্স মিসেস রিমি চৌধুরী এখন আপনার আইডি কার্ডটি পারফেক্ট তো? ‘
অয়নের কথাতে সকলের চোখ যায় রিমির আইডি কার্ডের দিকে। তাতে বড় বড় অক্ষরে লেখা,
‘ মিসেস রিমি চৌধুরী। ‘
সকলের বুঝতে আর বাকি রইলো না রিমি আর কেউ নয় বরং তাদের প্রফেসর ডক্টর এয়ারসির বউ। জয়িতা নিজেও যেন ঘোরের মাঝে আছে। রিমির স্বামী তাহলে স্বয়ং এয়ারসি,কিন্তু রিমি এই বিষয়টি এতোদিন গোপন করে রেখেছিলো কেন? রিমিও নিজেও হতবাক! সে কখনো ভাবেনি অয়ন এমন কাজ করে বসবে। হ্যা অয়ন কথাটি বলেছিলো কিন্তু অয়নের কথাকে তখন অতোটা গুরুত্ব দেইনি রিমি।
মেয়েরা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। তাদের ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে যাকে নিয়ে তাদের এতো স্বপ্ন এতো কল্পনা সে বিবাহিত। আসিফ শুধু ঢুগ গিলছে। প্রফেসর এয়ারসির বউকে লাইন মারার ভয়াবহ সাহসীকতা দেখানোর ফল তাকে আজীবন ভোগ করতে হবে। অয়ন ঘাড় কাত করে আসিফের দিকে তীক্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
‘ বলেছিলাম আমি কারো পরিচয় সম্পর্কে অজ্ঞাত হয়ে তার দিকে হাত বাড়ানোর শাস্তি আজীবন ভোগ করতে হবে। ‘
কথাটি বলেই ক্লাসের সকলের সামনে অয়ন রিমির হাত ধরে একপ্রকার টেনেই নিয়ে যায়।
রিমিকে কেবিনে নিয়ে এসে নিজের চেয়ারে রাগে ফুশফুশ করতে থাকে। হাতের সামনে ফুলদানীটা ছুড়ে ফেলে দেয়। সামনে যা পাচ্ছে তাই বার বার ছুড়ে মারছে। অয়নের এমন ভয়ংকর রাগ দেখে যথেষ্ট রিমি খুব ভয় পেলেও, রিমি কিছুটা সাহস যুগিয়ে অয়নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
‘ এইসব কি শুরু করেছেন আপনি? সবকিছু ছুড়ে ছুড়ে ভেঙ্গে ফেলছেন কেন? আপনি তো একজন নামকড়া ডক্টর। তো ডক্টর এয়ারসি একজন ডক্টর হয়ে এইরকম পাগলের মতো জিনিস ছুড়াছুড়ি করা কী আপনার মানায়? আর আপনি সকলের সামনে প্রফেসর আসিফের হাতে ইচ্ছে করে চাকু বসিয়ে দিয়েছিলেন আমি জানি। কি অবস্হা করেছেন উনার হাতের দেখেছিলেন? ‘
অয়ন কাচের ফুলদানিটা হাতে নিয়ে রিমির দিকে এগোতে এগোতে বলে,
‘ কেন তোমার কী বেশি দরদ উতলে উঠেছিলো ওই রাস্কেল আসিফের জন্যে? ‘
অয়নকে এইভাবে কাচের ফুলদানি নিয়ে রিমি বেশ ঘাবড়ে গিয়ে পিছাতো থাকে। লোকটাকে তার কাছে বদ্ধ উম্মাদ মনে হচ্ছে। এখন কী তার মুখের উপর কথায় বলায় কাচের ফুলদানী দিয়ে রিমিকে কি মারবে নাকি? কথাটি মাথায় আসতেই রিমি দ্রুত পিছাতে শুরু করে। লোকটাকে দিয়ে ভরসা নেই তার।
_________
রুহানা চৌধুরী তার অফিসে বসে কিছু কাজ করেছিলো তখনি তার কেবিনে কেউ নক করে। রুহানা চৌধুরী তাকিয়ে দেখেন পায়েল দাঁড়িয়ে আছে। পায়েলকে দেখেই তিনি ভিতরে আসতে বলেন। পায়েল হাঁসিমুখে রুহানা চৌধুরীর বিপরীত চেয়ারে বসে পড়ে। রুহানা চৌধুরী পায়েলের দিকে প্রশ্ন নিক্ষেপ করে বলে,
‘ তা পায়েল কাল তো তোমাকে ক্যানাডা যেতে হবে।
তা প্রস্তুতি কেমন? ‘
‘ তা ভালো,কিন্তু। ‘
‘ কিন্তু কী? ‘
পায়েল মুখটা কালো করে জবাবা দিয়ে বলে,
‘ আমি এক সপ্তাহের জন্যে ক্যানাডা যাচ্ছি তাই ভাবছিলাম আজকের দিনটা অয়নের সাথে স্পেন্ড করবো, কিন্তু অয়ন তো আমাকে সহ্যই করতে পারেনা। ‘
রুহানা চৌধুরী পায়েলের কথার প্রেক্ষিতে মুচকি হেসে জবাব দেয়
‘ তাহলে এই ব্যাপার? দাঁড়াও আমি এখুনি অয়নকে ফোন করে বলে দিচ্ছি। আমার কথা ফেলতে পারবে না। ‘
পায়েলের চোখ-মুখে খুশির ঝিলিক চিকচিজ করতে থাকে।
অপরদিকে অয়নকে এগিয়ে আসতে দেখে রিমি পিছিয়ে যেতে নিলে, অয়ন রিমির হাত ধরে একেবারে রিমিকে নিজের কাছে টেনে নেয়। রিমি চোখবন্ধ করে নেয় ভয়ে এই বুঝি লোকটা তাকে ফুলের টপ নিয়ে মারবে। রিমির ধারণাকে সম্পূর্ন ভুল প্রমান করে দিয়ে, অয়ন রিমির কপালের সাথে নিজের কপাল মিশিয়ে নেয়। রিমি চোখ খুলে দেখে অয়ন এখনো রাগেও ফুশফুশ করছে। রিমি সরে যেতে নিলে অয়ন নিজের আখিজোড়া বন্ধ করে রিমির কপালের সাথে নিজের কপালে ঠেকিয়ে বলে,
‘ছটফট করো না রিমিপরী। কিছুক্ষন স্হীর হয়ে আমাতে মিশে থাকো।’
রিমি তাই করলো চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকলো। অয়ন কিছুক্ষন নিরব থেকেই শীতল গলায় বললো,
‘ এই মুহুর্তে আমার রাগটা নিয়ন্ত্রন করা প্রয়োজন।
রাগের মাথায় আমি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি হয়তো তোমাকেও আঘাত করে ফেলতে পারি৷ তাই রাগটা সংযত করতে চাচ্ছি। আমি যে তোমায় আঘাত করতে পারবো না রিমিপরী। ‘
রিমি অবাক হয়ে অয়নের দিকে তাকায়। কিছুক্ষন তাদের মাঝে নিরবতা চলে। তাদের নিরবতার ব্যাঘাত ঘটায় অয়নের ফোনের রিংটন।অয়নের ফোন বেজে উঠলে রিমি দেখতে পায় অয়নের ফোনের স্ক্রিনে বড় বড় অক্ষরে লেখা,
‘ গ্রেন্ডমা। ‘
রিমি অয়নের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করে বলে,
‘ আমাকে ছাড়ুন। আপনার গ্রেন্ডমা ফোন করেছে। ‘
অয়ন রিমিকে ছাড়েনা বরং বিরক্ত হয়। রাগ হয় নিজের ফোনের প্রতি। এমন একটা মুহুর্তে বাজতে হলো।অয়ন রিমিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ফোনটি হাত নিয়ে দেয়ালে ছুড়ে মারে।
চলবে…..কী?
[তাড়াহুড়ো করে পর্বটি লিখেছি তাই ভুল আছে এই পর্বে অনেক। সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]