এই মুহূর্তে, আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আবরার আগুন চৌধুরী। যিনি আমাকে জোর করে তুলে এনেছেন। এককথায় কিডন্যাপ করে এনেছেন। আর আসার পর থেকে আমি মুখ বন্ধ করে বসে আছি, কিছু খাচ্ছিনা। সেজন্য তিনি জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। তিনি ঠান্ডা গলায় বললেন, ‘খাবে নাকি খাবে না?’
!
আমি এবার রেগে চিৎকার করে বললাম, ‘ না, আমি মরে পচে ভূত হয়ে গেলেও আপনার দেওয়া খাবার খাবো না।’
!
-ঠাস শব্দে আমি কেঁপে উঠলাম।নিজের গালে অজান্তেই হাত চলে গেলো। খুব জ্বলছে গালটা!আর আমার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনা জলের ধারা।
!
-তুমি খাবে না তো কি হয়েছে,আমিই খাইয়ে দিচ্ছি।(শয়তানি হাসি দিয়ে)
!
-না, খাবো না।
!
-এখান থেকে যেতেও পারবে না আমায় রাগালে।
!
-আমি কেঁদে উঠে বললাম, ‘প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।’
!
-এখন এভাবে মাফ চাইছো কেন?যখন আমার গালে থাপ্পড় মেরেছিলে, তাও আবার পুরো ভার্সিটির স্টুডেন্টদের সামনে তখন মনে ছিলো না?আমি আবরার। কোনোদিন মেয়েদের অসম্মান করিনি, আর তুমি শুধু শুধু আমার গালে চড় মারলে?এর শোধ তো আমি নেবোই,ইডিয়ট!
!
-আমি আসলে বুঝতে পারিনি। সেদিন ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকার সাথে সাথে কে যেন আমার ওড়না টেনে ফেলে দেয় আমি পেছনে তাকিয়ে আপনাকে দেখে ভাবলাম আপনিই হয়তো…. তাই রেগে…..(ভয়ে ভয়ে)
!
-ওহহ,,লাইক সিরিয়াসলি? তাই রেগে তুমি এই আগুনের গায়ে হাত তুলেছো,ড্যাম ইট!(চিৎকার করে)
!
-তারপর উনি এসে আমার কোমর চেপে ধরলেন। আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললাম,
!
-প্লিজ ছেড়ে দিন……
!
-পায়ে কেন বুকে পড়লেও এই জীবনে আবরার আগুন তোমাকে ক্ষমা করবে না।শুনেছো তুমি?(রেগে চিৎকার করে)
!
-.আমাকে ছাড়ুন..ছেড়ে দিন।
!
-শয়তানি হাসি দিয়ে,,,তাই?তোমাকে ছেড়ে দিবো?তাহলে ডাফার মেয়ে শুনে রাখো তুমি আমার বিয়ে করা বউ!আর নিজের বউকে কেউ ছেড়ে দেয়?
-অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে চিৎকার করে বললাম,কীভাবে? আর আমি এসব মানি না,বিলিভ করি না।
!
-ড্যাম ইট,ডাফার!আবরার আগুনের সাথে এত উঁচু গলায় কেউ কথা বলতে পারে না।আর তুমি এই বিয়ে মানো আর না মানো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।বুঝেছো?(রেগে)
!
-পরশু ভার্সিটিতে এই ঘটনা ঘটলো আর আজ আপনি এসে বলছেন, আপনি আমার স্বামী? তো বিয়েটা হলো কখন?
!
-দেখ,আমার সাথে এভাবে কথা বলবে তো তোর পুরো ফ্যামিলিকে রাস্তায় নামাবো তারপর মেরে দিবো!(রেগে)
!
-মানে?(অবাক হয়ে)
!
-মানে তোমার পুরো ফ্যামিলির মানুষদের আমি মেরে ফেলবো,যদি আমার সাথে এভাবে কথা বলো!
!
-বললেই হলো….সাহস আছে নাকি আপনার?থাকলে আমাকেই একটু নমুনা দেখান।আর আপনার ফাউল কথায় আমি বিলিভ করিনা….
!
-এটুকু বলতে না বলতেই আমার পেটের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে নখ দিয়ে আঁচড় কেটে দিলো।চামড়া ছিড়ে রক্ত বেরিয়ে এলো।আমি ব্যাথায় ককিয়ে উঠলাম।তারপর আমার চুলের মুঠি ধরে এক ধাক্কা দিয়ে সোফায় নিয়ে ফেললো। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে পেট চেপে ধরলাম।
!
-তারপর উনি একটা ভিডিও ক্লিপ আমার মুখের সামনে ধরলেন।সেখানে দেখা যাচ্ছে,একদল কালো কাপড় পড়া ভিলেন টাইপের লোক আমাদের বাসার সামিনে দাঁড়িয়ে আছে,,,উনি অর্ডার করলেই ওরা আমার ফ্যামিলিতে হামলা চালাবে!
!
-উনি শয়তানি হাসি হেসে বললো,ড্যাম ইট,দেবো নাকি ওদের অর্ডার?তোমার পুরো ফ্যামিলিকে খতম করে দিবো?
!
-আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,না না প্লিজ।আমি আপনার কথা মতোই চলবো।প্লিজ আমার ফ্যামিলির কোনো ক্ষতি করবেন না।
!
-ওকে,ডান। বাই দ্যা ওয়ে, নাম কী?
!
-অবাক হলাম,আমার নাম না জানাতে!মিনমিন করে বললাম,শুভ্রতা জান্নাত খুশবু!
!
-খুশবু?কিন্তু তোমার নাম খুশবু রাখলো কেন?তুমি কি এমন সুগন্ধ ছড়াও যে নাম রাখলো খুশবু?
!
-দেখুন……আ,, আমি,,,
!
-এই,তুমি আমার মুখে মুখে চোপা করছো?
!
-আমি উনার চিৎকারে চুপ হয়ে গেলাম।পেটের কাটা অংশটা জ্বলছে খুব….হাত দিয়ে চেপে ধরে আছি।
!
-এই তোমার ঠোঁট গুলো এতো লাল কেন?হ্যা?তুমি কি আমার সাথে পাঙ্গা নিতে চাও?তোমার এতো বড় সাহস?
!
-অবাক হয়ে বললাম,মানে?
!
-ওহহ…তুমি এখন ন্যাকা সাজছো?ড্যাম ইট!দেখছো না, আমি কত ফর্সা, ঠোঁট গুলো কত্ত লাল,আর হাইট দেখেছিস? ছয় ফুট !আর তুমি?তোমার হাইট কত?
!
-মিনমিন করে বললাম,পাঁচ ফুট দুই।
!
-ওহ..আমার মতো একজনের বউ নাকি ৫”২।আরে তোমাকে বউ বলছি কেন? ইডিয়ট কোথাকার । তারপর লাথি মেরে ফুলের ভাসটা ভেঙ্গে ফেললো।তারপর ফুলের চাদর বিছানো বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো।আর আমাকে বললো,আমি যেন ফ্লোরে শুয়ে পড়ি।নো কাথা, নো বিছানা,নো বালিশ,নো মাদুর।অনলি ফ্লোর…. (রেগে)
!
-আমি ভয়ে সিঁটিয়ে রইলাম!ফ্লোরের এক কোণে বসে রইলাম।ভাবলাম,এত হ্যান্ডসাম, হিরো টাইপ সাইকো লোকটা সামান্য চড় খাওয়ার অপরাধে আমায় এত বড় শাস্তি দিচ্ছে!ভাবতে লাগলাম…..সেদিনের কথা…
!
-সেদিন ভার্সিটির ওরিয়েন্টেশন ছিলো। আমি আর আনিকা একসাথে ভার্সিটিতে গেলাম।গেট দিয়ে ঢুকতেই পেছন থেকে কে যেন আমার ওড়না টেনে ধরলো।আমার ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিল আবরার আগুন চৌধুরী, সম্ভবত উনি কারো সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ করছিলো।কিন্তু তখন উনাকে দেখে রাগের চোটে সবার সামনে গালে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে অপমান করি।আর উনি রেগে থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলেন,কিছু বললেন না।সেদিনের পর আর ভার্সিটি যাইনি।আজ বাসা থেকে বের হয়ে ভার্সিটি যাবার পথে উনি আমায় তুলে নিয়ে আসলেন, একটা কাগজে সাইন করতে বললেন।আমি প্রথমে না করতে চাইলেও পরে টিপসই নিয়ে নেন জোর করে।সারাদিন আটকে রেখে এখন এই রাতে এসে আমার উপর অত্যাচার চালাচ্ছে….
এসব আকাশ -পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতে পারলাম না।
-ভোরবেলা, পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে চোখ মেলে তাকালাম।কিন্তু একি?এটা কীভাবে পসিবল? আমি ছাদে আসলাম কীভাবে? আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে ছাদের ফ্লোরে বসে আছি।এমন সময় পাশ থেকে কিছু একটা আওয়াজে চমকে উঠলাম।তাকিয়ে দেখি….
!
-তাকিয়ে দেখি,ছাদের অন্যপাশে আবরার আগুন চৌধুরী। উনি এক্সারসাইজ করছেন।পরণে হাফ-প্যান্ট আর গায়ে টাওয়াল জড়ানো,হাতে ডাম্বল।বয়স চব্বিশ -পঁচিশ হবে!
ইচ্ছেমত এক্সারসাইজ করছেন, কিন্তু উল্টোদিকে থাকায় পেছনে থাকা আমাকে উনি লক্ষ্য করেননি। আমিও ফ্যালফ্যাল করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।দেখতে তো ভালোই, হাইটও মাশাল্লাহ, গায়ের রঙটাও ফর্সা।
হায়!এই ইংরেজের পাশে দাঁড়ালে লোকে বলবে আমি গন্ডগ্রামের গাইয়া এক মেয়ে….অথচ এই লোক নাকি আমার হাজব্যান্ড?ভাবতে কষ্ট হয়….।
ভাবনাতে হাবুডুবু খাচ্ছি,ঘোর কাটলো গায়ে পানি পড়ার পর।ইয়া আল্লাহ…কে আমায় ভিজিয়ে দিলো?(রেগে)
!
-আমি!আমি ভিজিয়ে দিয়েছি।
!
-কিন্তু কেন?(রেগে)
!
-আমার ইচ্ছে হয়েছে।তোকে বলবো নাকি? ড্যাম ইট!আর তুই এখানে বসে আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলি কেন?
!
-থতমত খেয়ে বললাম,মোটেও না।আপনি কি এমন হিরো যে চোখ দিয়ে গিলে খাবো?হোয়াই?
!
-ডাফার!তুই আমায় প্রশ্ন করছিস?বলেই রেগে আমাকে ফ্লোর থেকে তুলে ঠাস করে চড় মারলো….
!
-আমি গালে হাত দিয়ে বললাম,ওকে স্যরি।আচ্ছা,আমি এখানে এলাম কি করে?মানে ছাদে!ভাববেন না যে আমি আপনাকে প্রশ্ন করছি,আমি জাস্ট জানতে চাচ্ছি!
!
-আমি এনেছি। শুনে রাখ,তুই কালকে সেন্সলেস হয়ে গেছিলি, তাই ফেলে দিয়েছি তোকে ছাদে…
!
-কিহ….আমি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছি আর আপনি আমার ট্রিটমেন্ট না করে ছাদে ফেলে দিলেন?অসুস্থ ছিলাম কাল রাতে আর…..ভাববেন না যে প্রশ্ন করেছি,জাস্ট জানার কৌতূহল!(বারবার বলছি যাতে চড় খেতে না হয়)
!
-তবে শুনে রাখ! অসুস্থ রোগীদের এই আবরার চৌধুরী তার ঘরে রাখে না।বলেই উনি গা থেকে টাওয়াল খুলে ফেললেন!
!
-আর আমি এক চিৎকার করে ছাদ থেকে নেমে আসলাম।ছি ছি কেমন মানুষ উনি!আমার সামনেই গা থেকে টাওয়াল খুলে ফেললেন।ইয়া মাবুদ…..
!
-ছাদ থেকে নেমে সোজা রুমে চলে এলাম।কাল সারাদিন তো উনি আমায় একটা ঘরে আটকে রেখেছিলেন। আর রাতে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম।কিন্ত একবারও রুম থেকে বের হওয়ার চান্স পাইনি।এখন সব ভালো করে দেখতে লাগলাম।কিন্ত কালকের রুমটা আর আজকের রুমটা এক না তো…..এটা তো রাজকীয় ভাবে সাজানো আর খুব বড়ও।আর একপাশের দেয়ালের পুরো অংশটাতে ইংরেজটার বিশাল হিরো মার্কা ছবি লাগানো। দেখে ক্রাশ খেলাম….জীবনেও এমন ক্রাশ খাইনি……
!
-কী?উনার কথায় পেছনে তাকালাম। গায়ে শার্ট জড়ানো।
!
-কিছুনা!
!
-শোনো….তুমি
!
-উনার কথায় অবাক হয়ে তাকালাম,এই প্রথম তুমি বলাতে…আই মিন অবাকের সপ্তম আকাশে!মতলব নেই তো কোনো!!
!
-ভয়ে ভয়ে বললাম,জ্বি বলুন…
!
-এটা আমার বাসা।এখানে আমার আব্বু-আম্মু,দাদী,ভাইয়া আছে, বুঝলে?আমরা সবাই তিনদিন হলো সিডনি থেকে ফিরেছি।তো কালই আমি আম্মুকে জানালাম যে,আমি বিয়ে করেছি। তো সবাই মহাখুশি।রাতে তোমায় এখানে নিয়ে এসেছি যে সেটা কেউ জানে না।সো আমি আম্মুকে একটু আগে সবটা বলেছি।আর সবাই একটু পর এখানে আসবে। সো ডাফার… আই মিন তুমি, তুমি এসব কিছুই বলবে না।ভালো সেজে থাকবে,নইলে তুমি তো জানই কি হবে?আর তুমি যে ডেয়ারিং মেয়ে!সো গট ইট….
!
-উনার এত্তবড় ডায়লগ শুনে আমার মাথা হ্যাং হয়ে গেছে।উনার বাকি কথা শুনতে পাচ্ছি না।কানে তালা লেগে গেছে।আচ্ছা, আমি তো মাত্রই ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে ভার্সিটি ভর্তি হলাম,বয়স কত হবে,,ঊনিশ-কুড়ি।আমি কী এত্ত ছোট্ট বয়সে এত চাপ নিতে পারি?
!
-আর উনি আমার সামনে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
!
-আমি ধাতস্থ হয়ে বললাম,ওকে ঠিক আছে।
!
-তো যাও এসব নোংরা ড্রেসআপ চেঞ্জ করো গিয়ে। তোমার জামা-কাপড় সব রাখা আছে…..
!
-উনার এসব ভালোমানুষি কথা শুনে আমি গলে গেলাম।ফট করে চুমু দিয়ে দিলাম ইংরেজটার গালে….
!
-উনি অবাক হয়ে বললেন,লিসেন ডোন্ট টাচ মি!আমার ভার্জিনিটি একদম নষ্ট করার চেষ্টা করবা না।
!
-আর আমি বেআক্কেলের মতো তাকিয়ে রইলাম।ব্যাটা ইংরেজ বলে কী?কাল রাতে কী করেছিলো আমায়?আমিও বললাম,তাহলে আপনি আমার ভার্জিনিটি নষ্ট করলেন কেন?
!
-ড্যাম ইট!আমি কারো ভার্জিনিটি নষ্ট করিনি।কাল রাতে তোমায় আমি পানিশমেন্ট দিয়েছিলাম। শুধু তোমায় কামড় দিয়েছিলাম,তাও ঠোঁটে। এর বেশি আর কিছুই করিনি,আর এসব করার কোনো ইচ্ছেও আমার নেই।আমার থেকে অলওয়েজ ডিসটেন্স মেইনটেইন করে চলবে….আবরার চৌধুরী কারো কাছে হার মানে না।গট ইট…….বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।।
!
-আমি আবারো হ্যাং মেরে বসে রইলাম…..উনি যা বলেছেন সব তো সত্যিই।উনি সেরকম কিছুই করেননি।আর আমি কী ভাবছিলাম………
চলবে…..
#তুই_আমারই_থাকবি💜
#Esrat_জাহান💜
#Part_1