#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ৬+৭
– বাবা!
– বাবা? কে তোর বাবা? কাকে তুই বাবা বলছিস?
– বাবা আমার কথাটা শুনো।
– কথা শুনব? কি কথা শুনব তোর? কি বলার আছে তোর? আমার কথা কেউ শুনেছিল? এলাকার কত লোক আমাকে কত কথা শুনাল। আমি তাদের বারবার বুঝাতে চেয়েছি, যে আমার মেয়ে বাড়ি চলে আসবে। সে খারাপ নয়। তার সম্পর্কে কেউ খারাপ কথা বলো না তোমরা। কেউ শুনেছিল আমার কথা? কেউ শুনে নি। কেউ না। তাহলে আমি কেন শুনব?
আজ তোর জন্যে এই বয়সে আমার এতটা অপমান সহ্য করতে হয়েছে। এই শিক্ষা দিয়েছিলাম তোকে?
স্কুলে শিক্ষকতা করে যা পেয়েছি তোর জন্যে ব্যয় করেছি। তোর লেখাপড়ার জন্যে ব্যয় করেছি। তোকে এই শিক্ষা দিয়ে বড় করে ছিলাম আমি? আজ তোর জন্যে যারা আমার সাথে ভয়ে ভয়ে কথা বলত তারাও আমাকে কথা শুনিয়ে গেছে।
তোর জন্যে আমাকে সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করে নিতে হয়েছে।
কেউ আমার একটা কথা শুনে নি। তাহলে আমি কেন শুনব তোর কথা?
কাল রাত কোথায় ছিলি তুই? উত্তর নেই তোর কাছে। রানি তোকে এই শিক্ষা দিয়ে বড় করেছিলাম আমি?
তোর মতো মেয়ের জন্যে আমাকে কাল এত কিছু সহ্য করতে হয়েছে। তোকে জন্ম দিয়েই হয়তো ভুল করেছিলাম আমি। তুই আমার সামনে থেকে চলে যা। আর কোন দিন আসবি না আমার সামনে। যা তুই চলে না। আর কোন দিন তুই তোর মুখ আমার সামনে আনিস না।
(রানির বাবা চশমাটা খুলে চোখের পানি মুছতে মুছতে দরজা টা লাগিয়ে দিল।
একটা বাবা কি আর পারতে তার মেয়ে কে এই কথা বলে? যেখানে রানি ছাড়া তার বাবার কেউ নেই। রানির মা তো সেই কবেই মারা গেছে।
কোন বাবা তার মেয়ে কে অল্পেতে এই সব বলে না। আর চোখের পানিও ফেলে না। বাবাদের খুব কম সময় কাঁদতে দেখা যায়।)
রানি কি করবে এখন? তার বাবা তো আর ভুল কিছু বলেনি। কারণ সে জানে, এলাকার লোকরা কেমন ধরনের হয়। তারা একটু কে অনেক টা করে। কথা বলার একটু সুযোগ পেলে কি আর ছাড়বে? কথা শুনাতে তো আর টাকা লাগে না। তাই শুনায়। কিন্তু যদি এমন হতো যে কথা শুনালে টাকা দিতে হতো, তা হলে হয়তো আর কেউ একটি কথাও বলত না। রানির এই সময়ে রাজের কথাটা মনে হচ্ছে। সে বলেছিল তার বাবাও তাকে এই অবস্থায় মেনে নিতে চাইবে না। আর ঠিক তাই হলো। রাজের কথাটাই মিলে গেল তার সাথে।
কিন্তু সে এখন করবেই বা কি? বাবাকে সে অনেক টা কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।
সন্ধে হয়ে আসছিল। রানির পা যেন সামনে এগুতেই পারছে না। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে, লোবা পানিতে।
এক পা একপা করে হাটছে সে। এলাকার অনেক লোক তাকে দেখে এনিয়ে বিনিয়ে কথা বলছে।
রানি উত্তর না দিয়ে চোখের পানি ফেলছে আর সামনে একটু একটু করে হাটছে।
হঠাৎ সে টের পেল তার হাতটা কেউ খুব শক্ত করে দরে টান দিল।
– আরে কে আপ………
রানি তাকিয়ে দেখে রাজ অনেকটা চোখ গরম করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছু না বলেই রানি কে টানতে টানতে করে নিয়ে যাচ্ছে। রানি হা করে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে। আর রাজের টান অনুযায়ী হাটছে।
রাজের ও খুব রাগ উঠেছে রানির উপর। রানি তাকে না জানিয়ে বাবার সাথে দেখা করার কি দরকার ছিল?
তার রাগ টা আসলে দুইটা কারণে হয়েছে।
১. রানি তাকে ন। জানিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছে।
২. একালার লোকরা রানি কে নিয়ে অনেক খারাপ কথা বলেছে। যা রাজের রাগটা দিগুণ করে দিল।
রানি বললে তো রাজই তাকে বাবার কাছে নিয়ে যেত। সবটা বুঝিয়ে বললে উনি হয়তো মেয়েকে এই ভাবে ফিরিয়ে দিতে পারতেন না। রাজ রাগে রানির হাতটা শক্তকরে ধরে টানতে টানতে গাড়ির সামনে নিয়ে গেল।
রানি রাজের এই রূপ দেখে অনেকটা ভয়কে গেছে। সে চুপ করে গাড়িতে উঠে বসল।
রাজ রাগে গাড়ির দরজাটা খুব জুরে লাগিয়ে দিল।
রানি একটু নড়ে উঠল।
রাজ দূরে গিয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে দিল। সিগারেটের ধোঁয়াটা আপন মনে টেনে আবার উড়িয়ে দিচ্ছে।
রানি গাড়ি থেকে রাজ কে দেখছে।
রাজ কিছুটা ছটফট করছে, আর সিগারেট টানছে।
একটু পর গিয়ে সে গাড়ি তে উঠে বসল।
গাড়িতে উঠে কোন কথা না বলে গাড়ি চালাতে শুরু করল।
রানি একটু পর পর রাজের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু রাজ একবারও রানির দিকে তাকাল না। রানি রাজের এই রকম রূপ দেখে যেন রীতিমত ধাক্কা খাচ্ছে।
চোখ মুখে তার রাগের ছাপ। তাকে দেখলেই বুঝা যাচ্ছে, সে প্রচণ্ড রেগে আছে।
একটা মানুষ রাগলে এতটা ভয়ঙ্কর লাগে কি করে? রানি ভাবছে। কিন্তু উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না।
রাজ তো চুপ করে গাড়ি চালাচ্ছে। কিন্তু তার চোখে মুখে তো রাগ কমার কোনো নামই নেই। রানি যত দেখছে মনে হয় রাজের রাগ ততো বাড়ছে।
কে জানে কি বিপদ আসছে রানির উপর? এই চুপ থাকা আবার কোন বিপদের ইঙ্গিত নয় তো?
চলবে…..
#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ৭
রাজ খুব তারাতারি করেই বাড়ি পৌছে গেল।
রানি বসে না থেকে গাড়ি থামার পর বেড়িয়ে এলো।
রাজ গাড়ি থেকে নেমে রানির হাতটা ধরল। দরেই হাটা শুরু করল। উপরে যাওয়ার জন্য। রানি কে টেনে নিয়ে গিয়ে একটা টানে বিছানায় উপর ফেলল।
– কি মনে করো নিজেকে?
-…..
– আমাকে না জানিয়ে যেতে চেয়ে ছিলে কেন? কেন আমাকে বললে আমি কি নিয়ে যেতাম না? নাকি না জানিয়ে পালাতে চেয়ে ছিলে আমার থেকে?
(রাজ রানির কাছে গেল। রানির একটা হাত শক্ত করে দরে দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলতে লাগল।)
– তুমি ভালো করেই জানো, যে আমি না চাইলে তুমি আমার কাছ থেকে কোথাও পালাতে পারবে না। আরে তুমি দুনিয়াতে যেখানেই থাকো আমার কাছ থেকে পালাতে পারবে না। আমি না চাইলে তুমি আমার কাছ থেকে ১ মিনিটের জন্যে দূরে থাকতে পারবে না।
কারণ আমি তা চাইই না।
( রাজ দেয়ালে খুব জুরে একটা ঘুষি দিল)
– আরে আমার সাথে করে যদি তুমি তোমার বাবার কাছে যেতে কি এমন হতো? আমি বুঝিয়ে বলতাম। আরে তাহলে তো আর যাই হোক এই এলাকার অকর্ম মানুষদের বাজে বাজে কথা শুনতে হতো না তোমাকে।
আমার তো ইচ্ছে হচ্ছিল এই কুত্তার বাচ্চা গুলির মুখ এক বারে বন্ধ করে দিতে। শালার বাচ্চারা আমার বউ কে বাজে কথা বলার সাহস পায় কোথা থেকে?
রাজ রাগে হনহন করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। আর রানি তার যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কি বলল রাজ?
রানি ভাবছে, তাকে কিছু লোক বকা দিয়েছে বলে রাজ এতটা রেগে গেল? কিন্তু কেন?
তাহলে কি রাজ সত্যিই তাকে……
– না না। কি ভাবছি এই সব আমি? কেন ভাবছি এই সব আমি? আমার এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, উনার জন্যেই আমার বাবা আমাকে ভুল বুঝে তারিয়ে দিয়েছে। রাজ কে আমি ঘৃণা করি। আর তাই করব সবসময়।
আমার সাথে অন্যায় করার শাস্তি ও পাবে। পেতেই হবে। ওকে আমি শান্তি দিব না।
রাতে,
– রানি। রানি।
– গরু হয়ে গেছেন?
– মানে?
– মানে এই ভাবে কথা বলছেন কেন? চিল্লাছেন কেন?
– আমি তোমাকে ডাকছি।
– এটা কে ডাকা বলে?
– তো?
– আমি কানে কম শুনি না? যে এই ভাবে গরুর মতো বলতে হবে।
– উফফ। ওকে ঠিক আছে চলো।
– কোথায়?
– ভিন দেশে তো আর নিয়ে যাবো না।
– তাহলে কেন যেতে বলছেন।
– চলো খাবে।
– খিদে নেই আমার। আপনি খেয়ে নিন।
– রানি চলো।
– বললাম তো না।
– রানি প্লিজ চলো।
– না। মানে না।
রাজ রানির হাতটা ধরল। রানি কে টানতে টানতে নিয়ে গেল খাবার টেবিলের সামনে।
খাবার টেবিলের সামনে যেতেই রানি অনেক জুরে নিজের হাতটা ছাড়ানোর জন্যে টান দিল। রাজের হাতটা, আচমকা টান দেওয়ার কারণে চেয়ারে গিয়ে লাগল।
সেই হাতটাই লাগল। যে হাতটা সে নিজে থেঁতলে দিয়েছিল।
ডান হাতটা দিয়ে ব্যান্ডেজের উপর দিয়েই রক্ত জড়তে লাগল।
রাজ শুধু আহহ, বলে একটু শব্দ করে ছিল।
রাজের চোখ দুটি বন্ধ। রানির হঠাৎ খেয়াল আসল, রাজের হাতের উপর। রাজের হাত দিয়ে তো অনেক রক্ত জড়ছে।
ফ্লোরে রক্তের দানাদার ফোটা বিছিয়ে পড়ে আছে।
রানি দৌড়ে গিয়ে ঔষধের বক্সটা নিয়ে এলো।
– বসুন এখানে।
-…..
– কই হাতটা দেখি?
রাজ রানির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিল।
রানি রাজের হাতে ব্যান্ডেজ করছে। আর সে তাকিয়ে তার রাগপরী কে দেখছে। ব্যান্ডেজ প্রায় শেষ।
– তুমি আমার কাছ থেকে দূরে থাকতে পারবে না কখনো রানি। তুমি আমাকে কষ্ট দিতে চাইলেও পারো না। কারণ তুমিও আমাকে…..
কথাটা শেষ করার আগেই রানি বলে উঠল,,
– নিজের মন গড়া কথা ভেবে নিবেন না। আমি আপনাকে ঘৃণা করি। তাই করব।
– না রানি।
– কি না?
– তুমি আমাকে ঘৃণা করো না।
– আমি আপনাকে ঘৃণা করি না তা আপনি জানেন কি করে? জ্যোতিষ বিদ্যা পড়েছেন নাকি?
– তেমন কিছু না। তোমার চোখই বলে দেয় তুমি আমাকে ঘৃণা করো না। আর কারো চোখের ভাষার চেয়ে বড় কোনো ভাষা নেই। আমি তোমার চোখে ভাষা বুঝতে পারি রানি।
রানি আর কথা বাড়াল না। কি বা বলবে সে? রানির নিজেকে এখন পাগল পাগল লাগছে। কি করবে সে? কি করা উচিৎ তার এখন?? সে নিজেই বুঝতে পারছে না….
– নিন। খেয়ে নিন।
– তুমি খেয়ে গিয়ে শোয়ে পড়ো।
– আর আপনি?
– আমি পরে খেয়ে নিব।
– কেন?
– এমনি। এতো কথা না বলে খেয়ে শোয়ে পড়ো।
রানির মনে হলো, উনার ডান হাতে ব্যথা পেয়েছে। এখন উনি নিজে নিজে খাবেই বা কি?
রানি প্লেট নিয়ে রাজের মুখের সামনে ধরল।
– হা করুন।
– কি?
– বললাম হা করুন।
রাজ রানির দিকে চেয়ে আছে। রানি তাকে নিজে খায়িয়ে দিবে? এটা তার অবিশ্বাস প্রায়।
– কি হলো? হা করুন।
রাজ আনমনে হা করে বসল। আর রানি চুপচাপ রাজ কে খায়িয়ে দিতে লাগল।
বাতাসে রানির চুল গুলি সামনে আসছে। রানি চাইলেও পিছনে নিতে পারছে না।
হঠাৎ রাজ রানির চুল গুলি নিজের হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে লাগল। রানি চোখ গুলি বন্ধ করে নিল।
রাজ আস্তে করে রানির কপালে একটা চুমু দিয়ে দিল।
রানি চোখ খুলে ফেলল। রাজকে কি বলবে এখন? এটা একটা দুর্ঘটনা। হঠাৎ করেই হয়ে গেছে।
রানি প্রায় একটু লজ্জা পেল। সে কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্যে উঠে দাঁড়াল। হাটা শুরু করার আগেই রানির হাতটা রাজ ধরে ফেলল।
– লজ্জা পেয়ে কি না খায়িয়ে চলে যাবে?
– ললজলজ্জা? লজ্জা পাবো কেন?
– সেটা তো তুমিই বলতে পারো।
– আমি লজ্জা পাইনি।
– হুম। তাই তো গাল গুলি লাল টুকটুকে হয়ে আছে। আর আমার চোখেও চোখ রেখে কথা বলতে পারছো না। তাই না?
– নাআআ।
রানি সেখান থেকে চলে এলো। আর রাজ দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।
চলবে…..