#সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ২৫
…..
অবয়বের কথায় বিদ্যা আর অভি দু’জনেই একসাথে অবয়বের দিকে স্থির চোখে চাইলো। অবয়বটি বিদ্যার দিকে চেয়ে বলল,
–” আহা মানুষ! তোর দেখি টাটকা শিকার করার অভ্যাস রয়েছে। তুইতো মরবি তার আগে আমি আমার ভোজ শেষ করি।”
কথাগুলো বলেই অবয়বটা একদম বিদ্যার কাছে এসেই ওর হাত বুলালো। বিদ্যাতো ভয়ে একটা চিৎকার দিয়েই চোখ বন্ধ করেই মৃগী রোগীর মত কাঁপতে লাগলো।
অভি ওর হাতটা বাড়িয়ে বলল,
–” ওকে ছাড় বলছি? ছাড় ওকে….!”
অবয়কটি অভির দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করেই বলল,
–” দেখব এবার কি করে আমাকে হারাতে পারিস, দম থাকেতো আটকিয়ে নে।”
সময়টা অভির জন্য সব থেকে কষ্টময় মূহুত্ব। প্রিয় মানুষটি চোখের সামনে ভিষন ভয়কাতরে কেঁপেই চলছে। অভি উঠতে পারছেনা। নড়াচড়া করতেই বেড থেকে নিচে পড়ে গেল। হাতের কনুইয়ের উপর ভর দিয়ে অভি ছিচড়ে গিয়ে অবয়বের পা ধরেই বলল,
–” আমার সাথে তোদের শত্রুতা, তাহলে ওকে কেন আঘাত করছিস! ছাড় ওকে…..।”
অবয়বটি ভয়ঙ্কর একটি হাসি দিয়ে বিদ্যার ঘাড়ে আচড় কাটতেই বিদ্যা গায়ের শক্তি দিয়ে গলা ফাটিয়ে অভি বলেই চিৎকার দিল। আচড়ের আঘাতে বিদ্যার ঘাড়ের অনেক খানি জায়গায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি হল। সেখান থেকে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়া শুরু করলো। রক্তের গন্ধে বাসার বাঁকি ৫ জন সহ সেই অবয়বটির ভিতরের হিংস্রতা জেগে উঠলো।
অবয়বটি কেবল বিদ্যার ঘাড়ে ওর জ্বীভটা ছোয়াবে এমন সময় টুইংকেল এসে অবয়বের ঐ জ্বীভটা ধরেই একটা আছাড় মাড়ে।
এতে ওর কিছু হয়না বরং সাথে সাথে অবয়বটি গা ঝাড়া দিয়ে উঠেই বলল,
–” বৃদ্ধা মহিলা, তোর এত দেমাগ? আগে তোকেই সাইজ করবো, তোকে মারবো তারপর আহার করবো। আজ তোদের এই বাসস্থান ধ্বংস করেই ছাড়ব।”
–“আত্ববিশ্বাসী হওয়া ভাল কিন্তু অতিরিক্ত আত্ববিশ্বাসী হওয়া ঠিক না। আমাদের সবার মাঝে তুই এসেছিস, তোকে কি এমনি এমনি ছেড়ে দিব আমরা? সেটা মোটেও ভাববিনা।”
অবয়বটি খিকখিক করে হেঁসে উঠলো, তাহলে দেখ আমার কেরামতি বলেই টুইংকেলকে ওর মায়া বলে আবদ্ধ করে ফেলল, আমি প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি হে বৃদ্ধ নারী।
বিদ্যা চোখ মেলেই দেখে অভি ওর পাশে পড়ে ছটপটাচ্ছে। বিদ্যা চট করে অভির পাশে বসে ওর হাতের সাথে ঐ খাজকাটা রক্তে রাঙ্গা পাথরটি চেঁপে ধরে বলল,
–” স্যরি অভি, তোমাকে এত কষ্ট দেওয়ার জন্য। আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি ভাবতেও পারিনি এত কিছু হয়ে যাবে।”
পাথরটির প্রভাব অভির উপর পড়ল। পাথরটি সাথে সাথে ওর রং পরিবর্তন করলো। লাল পাথরটি গাঢ় নীল রঙ্গে পরিনিত হতেই অভির পুরো শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠল।
অবয়বটি এবার বিদ্যার দিকে চেয়েই বলল,
–” আমার ভোজন…।”
অবয়বটি এক নিমিষেই এসে কেবল বিদ্যাকে ধরতে যাবে এমন সময় অভি চোখের পলকে উঠেই অবয়বটির টুটি চেঁপে ধরে বলল,
–” বিদ্যা তুমি এখুনি এখান থেকে চলে যাও। এক মুহুত্বও দেরি করোনা।”
–” না আমি তোমাকে ছাড়া কোথায়ও যাবোনা। যা হয় হবে।”
অভির চোখ সাথে সাথে রক্তবর্ন হয়ে গেল। অভি বিদ্যাকে একটা হুংকার দিয়ে বলল,
-” আমি বলছি, এখান থেকে এক্ষুনি যাও।”
অভির হুংকারে রুমের সমস্ত জিনিসপত্র নড়ে উঠলো। বিদ্যা অনেক কষ্টে সেখান থেকে উঠে আধা দৌড় দিল। বিদ্যার প্রতিটা ধাপে ধাপে ওর শরীর থেকে রক্তের ফোটা ঝড়ে পড়ছিল। বিদ্যা রুমের আড়াল হতেই দরজা বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যা আবার ফিরে এসে দরজায় কড়াঘাত করেই বলল,
–” অভি তুমি ঠিক আছ! দরজা খোল অভি?”
এমন সময় বিদ্যা বিকট একটা গঙ্গানির আওয়াজে পিছন ফিরে দেখলো, প্রতিটা রুম থেকে ভয়ংকর সব কুকুর আস্তে আস্তে বের হচ্ছিল আর বিদঘুট শব্দ করছিল। বিদ্যা প্রানপনে দরজা ধাক্কাতে লাগল কিন্তু কোন লাভ হলোনা। দরজা খোলা না দেখে বিদ্যা এক দৌড়ে সিড়ি দিয়ে নামতেই ঐ কুকুরগুলো ছুটে এল। এখন তাদের সামনে বিদ্যা নামক মজাদার খাবার রয়েছে। তাদের জ্বীভ দিয়ে রস টপটপ করে পড়ছে।
♥
অভি এবার অবয়বের দিকে কঠোর ভাবে চেয়ে বলল,
–” তোর যোগ্যতা আছে আমার শরীরে টার্চ করার! তোর কি মৃত্যু ভয় নেই! অভির শরীর ছোয়ার আগে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় সেটা তুই জানিসনা!। তোর সাহস কি করে হয় এখানে প্রবেশ করার। আমার সম্পর্কে যখন না জেনেই প্রবেশ করেছিস তখন আমি কি জিনিস তাহলে দেখ এবার।”
অভি হাতের ইশারা করেতেই ওখানে আগুন জ্বলে উঠলো আর অবয়বটি এক অদৃশ্য শক্তিতে সেই আগুনের উপর গিয়ে দাড়ালো। অবয়বটি হামলাতে হামলাতে আগুনের দহনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল আর সাথে সাথে টুইংকেল মুক্তি পেল।
এবার অভির টনক নড়ল বিদ্যার রক্ত দেখে। অহ্ নো, বিদ্যা বলে অভি দৌড় দিতেই দেখল, মায়াবলে দরজা বাহির থেকে কেউ বন্ধ করে দিয়েছে। অভি সাথে সাথে পিছন ফিরে টুইংকেলের দিকে চেয়ে বলল,
–” আজ যদি ওরা বিদ্যার কোন ক্ষতি করে তাহলে ঐ অবয়বের মতো ওদেরও একই পরিণতি হবে।”
–“অভি তুমি অযথায় রেগে যাচ্ছো। ওরা বিদ্যার ক্ষতি কেন করবে?”
সেটা সেখানে গেলেই বোঝা যাবে বলেই অভি দরজায় একটা লাথি মারতেই দরজা ভেঙ্গে গেল। অভির পা যেখানে পড়ছে সেখান থেকেই বিদ্যার শরীর থেকে পড়া রক্তগুলো ভ্যানিস হয়ে যাচ্ছে।
যা অনুমান করেছে তাই হয়েছে। ইনা, রিক, পারিজা আর জশ ওদের আসল রুপে এসে বিদ্যার চারপাশে দাড়িয়ে আছে। ওদের মধ্য একজন ফ্লোরে পড়া রক্তে জ্বিভ ছোয়াতেই রক্ত গুলো ভ্যানিস হয়ে গেল। ওরা ৪ জনতো হতবুদ্ধি হয়ে গেল। ব্লাড কই! আশে-পাশে চেয়ে দেখলো ব্লাডের কোন চিহ্নও নেই।
অভি চোখের পলকে এসে বিদ্যাকে জড়িয়ে ধরল। তারপর বিদ্যাকে অন্য পাশ করেই অভি কঠোর চোখে চাইল ঐ চারজনের দিকে। অভির চোখ গুলো পুরো লাল টকটকে আকার ধারন করেছে। ওরা অভির চোখ দেখেই নিজেদের রুপে এসে চোখ বড় বড় করে অভির দিকে চাইল।
অভিও সাথে সাথে ওর হাতের একটা আঙ্গুল উচু করে নাড়িয়ে জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলল,
–” আ..উ…ট।”
টুইংকেল দেবী মাথা নিচু করে ওখান থেকে চলে গেল সাথে ঐ চারজনও চলে গেল। অভি এবার আস্তে আস্তে ঠান্ডা হয়ে গেল। বিদ্যা ওর বুকের ভিতর থরথর করে কাঁপছে। অভি ওকে সরাতে গিয়েও আর না সরিয়ে বলল,
–” বিদ্যা, কি হয়েছে! তুমি এভাবে ভয় পাচ্ছো কেন?”
বিদ্যা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,
–“অভি এমন অদ্ভুদ কুকুর আমি কোনদিনও দেখিনি। ওরা আমার পিছে পড়েছে। আমাকে ওরা কেমন লোলুপ চোখে দেখছিল।”
অভি একটু হেঁসে বলল,
–” কই, আমিতো কাউকে দেখছিনা? তুমি দেখতো, কাউকে দেখতে পাও কিনা?”
বিদ্যা অভিকে জড়িয়ে ধরেই মুখটা বের করে দেখলো, কিছু নেই সেখানে। আজবতো, তারাতো এখানেই ছিল।
অভি বিদ্যাকে চট করে কোলে তুলে বলল,
–” ওখানে কিছুই ছিলোনা। তুমি ভয় পেয়ে নিচে চলে আসার পর ওগুলো মনে মনে কল্পনা করেছ আমার মিষ্টি এঙ্গরি বার্ড।”
–” অভি কি করছো! আমাকে ছাড়ো বলছি। ছাড়ো আমায়?””
অভি কোন কথা না বলে বিদ্যাকে নিয়ে ওর রুমে চলে গেল। তারপর বেডে বসিয়ে দিয়ে মেডিসিনের বক্স নিয়ে এসে ওর পাশে বসল। অভি বিদ্যার উপর প্রচন্ড রেগে গেলেও স্বভাবজাত ভঙ্গিতে শান্ত হিমশীতল কন্ঠ স্বরে বলে উঠলো,
–” তুমি আমার সাথে কি করেছ বিদ্যা!”
অভির এমন কঠোর শাসনের চাহোনিতে বিদ্যা ভয় পেয়ে গেল। কারন, অভির চোখে মুখে তখন শুধু রাগেরই আভাস ফুটে উঠে আছে।
–” স্যরি অভি, আমার উচিত হয়নি তোমার সাথে এমন কাজ করা।”
কেটে কেটে কথাগুলো বলে উঠলো বিদ্যা।
–“একটা ভুলের কতবড় মাসুল গুনতে হত আমাদের, সেটা বুঝতে পেরেছ তো?”
বিদ্যা মনে করেছে, গতরাতে যে যজ্ঞ করেছিল সেটা বিপরীত হওয়ার জন্যই কোন প্রেত শক্তি অভিকে আক্রমন করেছে।
কথার মাঝেই অভি উঠে গিয়ে সেই সিঁদুরদানীটা এনে বিদ্যার সামনে ধরে গম্ভীর গলায় বলল,
–” এটা কার সিঁদুর দানী!”
বিদ্যা মাথা নিচু করে বলল,
–” আমার…।”
অভির প্রশ্নের সব উত্তরের জট খুলছে এবার। অভি চোখেমুখে ইঙ্গিতপূর্ন দৃষ্টি ফুটিয়ে জানতে চাইল,
–” তোমার মানে?”
আমার হ্যাসব্যান্ড এটা আমার জন্য এনেছিল, যখন আমি ছোট ছিলাম। ওনার ছোয়া ছিল এখানে। ওনার মৃত্যুর পর আমি এটা সযত্নে রেখে দিয়েছি। আমি তোমাকে ভেবেছিলাম তোমার পূর্নজন্ম হয়েছে আমার অপুদার রুপে। তাই…… বলতেই অভি মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল,
–” তোমার মুখে অপুর কথা শুনলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তাই ফার্দার আমার সামনে অপুর কথা বলবেনা। তোমার একটা ভুলের জন্য কতবড় ক্ষতি হয়ে যেত তা তোমার ধারনা আছে?”
বিদ্যা কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে বসে রইলো। অভি যেন এই সুযোগটাই খুঁজছিল। অভি সিঁদুরে হাত ছোয়াতেই সিঁদুরের ভিতর এক আলোর ঝলকানি দেখা গেল। অভি কোনকিছু না ভেবেই ওর দু আঙ্গুলে এক চুটকি সিঁদুর নিয়েই বিদ্যার সিঁথি ডুবিয়ে দিল।
বিদ্যা চট করে অভির দিকে চাইল আর সাথে সাথে চোখ দিয়ে অঝোড়ে জল পড়ে গেল। বিদ্যার কন্ঠস্বরে বিরক্তির গাঢ় রেশ চুইয়ে পড়ছে স্পষ্টভাবে। ঘর্মাক্ত কপালের ভাজটা বহন করছে অপ্রসন্নতা চিহ্ন। বিদ্যা ওর দিকে রূঢ় স্বরে বলে উঠলো,
–” হোয়াট’স রং উইথ ইউ অভি! তোমার এরকম ব্যবহার কি গুড ম্যানার্সের মধ্য পড়ে? অ্যাচিচুয়েটটা লিমিটে রাখতে শেখো, নইলে সেটা অ্যারোগান্সের পর্যায়ে বাধ্য হয়ে। সো প্লিজ রেসপেক্ট ইউর সিনিয়র।”
অভি এমন ভাব করলো যেন এখানে কিছুই হয়নি। একটা মেয়ের মাথায় সিঁদুর দেওয়া কোন খেলার বিষয়। অভি ঠোটের এক কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল,
–” রেসপেক্ট..! রেসপেক্ট তো তুমি আজকের পর থেকে আমাকে করবে। আমি সব কিছু এত সহজে ভূলিনা। তুমি আমার সাথে যা করেছ অনেক খারাপ কিছু করেছ। আমি এত সহজে তোমায় ছেড়ে দেওয়ার মত পাত্র নয়।”
তুমি পাগল হয়ে গেছ। তোমাকে একটা ভাল সাইক্রেটিক দেখানো উচিত। সব কিছু হাঁসি তামসার ব্যাপার? আমার এখানে আসায় ভুল। আমি তোমার মুখও দেখতে চাইনা। আমার কিছু দরকার নেই সরো এখান থেকে বলেই বিদ্যা পা বাড়ালো বাসা থেকে চলে যাওয়ার জন্য।
বিদ্যার হাত ধরেই রিক, রিক বলেই চিৎকার করে উঠলো অভি। কোথায় যাবে তুমি? তোমার ইচ্ছাতে তুমি এখানে এসেছ কিন্তু আমার অনুমতি ছাড়া তুমি বাহিরে এক ধাপও দিতে পারবেনা। সব হিসাব-নিকাশ না মেটাতেই চলে যাচ্ছো?
অভির এমন ব্যবহারে বিদ্যা ক্ষেপে উঠলো। কিসের হিসাব-নিকাশ! অভি ভাল হচ্ছেনা কিন্তু। আমায় ছেড়ে দাও বলছি।
এমন সময় রিক এসেই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে বলল,
–” অভি কিছু বলবি?”
অভি ওকে দেখেই চোখটা আলতো করে বন্ধ করে আবার খুলল। অভির চোখে মুখে একটা রাগ মিশ্রিত ভাব এসেছে এমন চাহোনিতে। অভি খুব দ্রুত শ্বাস ফেলেই রিকের দিকে চেয়ে বলল,
–” যা রেডী করতে বলেছিলাম সেগুলো কি রেডী?”
–” হুম, সব রেডী।”
–” ওকে যা, আমি একটু পর আসছি।”
রিক চলে যেতেই অভি বিদ্যার হাত ধরে বসিয়ে দিতেই বিদ্যা ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো,
অভি ভ্রু কুচকে বলল,
–” হাতে কি হয়েছে? ব্যান্ডেজ কেন?”
অভি বিদ্যার ঘাড়ে মেডিসিনের প্রলেপ লাগিয়ে দিল।
বিদ্যা অভির হাত ঝিটকে ফেলে বলল,
–” ভুল করেছি। তোমার জিবন বাঁচাতে আমাকে এমন কাজ করতে হয়েছে। শুধু শুধু নিজের সম্মানটা বিলিয়ে দিলাম।”
এসব আমার জন্য করেছ, না ব্লাকম্যাজিকের চক্রে পড়ে এমন কাজ করেছ? সেটা যাই হোক, আমার জন্যই তো করেছ নাকি! ওটা কোন ব্যাপার না। ঐ দুই-এক রকম বরের জন্য কাজ করা এমন কোন বড় বিষয় না। সব নারীরাই তার হাবির জন্য এমন আঘাত সহ্য করে থাকে। অভি সব কাজ কমপ্লিট করেই বিদ্যার হাত ধরে এক প্রকার জোড় করেই নিচে নিয়ে গেল।
নিচে এসে বিদ্যার চোখ তো মনে হয় আকাশ ছুইলো। বিয়ের মন্ডপ সাজানো হয়েছে। এতসুন্দর করে যে, ছাতনাতলা সাজানো যায় এই প্রথম বিদ্যা তা নিজের চোখে দেখল। এখানে কার বিয়ে হবে বলেই বিদ্যা অভির দিকে চাইলো।
অভি ভৌমিক আর বিদ্যা ত্রিবেদীর বিয়ে। কথাটি চট করেই বলে দিল অভি।
–” কিহ্ আমার বিয়ে? পাগল হয়ে গেছ!”
–” নাহ্ আমি পাগল হইনি কিন্তু তোমাকে পাগল বানানো এখনো বাঁকি আছে।”
–“অভি প্লিজ এমন কাজ করোনা। আমার এতবড় সর্বনাশ তুমি করোনা। আমি তোমার পায়ে পড়ছি অভি। আমায় যেতে দাও।”
অভি বিদ্যার কোন কথায় শোনেনা। ইনাকে ডেকে বলল, ওর মমকে এখানে যেন ডেকে আনে। জস কিছুটা ধার্মিক ছেলে তাই ওর উপর বিয়ের সমস্ত কাজের দায়িত্ব পড়ল।
বিদ্যা মহাবিপদে পড়ল। অভির মত একজন ম্যাচুয়েট ছেলে যে এমন পাগলামি করবে সেটা বিদ্যার ভাবনারও বাহিরে। এখন এসব ও কিভাবে আটকাবে! অভি যে এগুলো মিছে মিছে করছে সেটা ভাবনা করাও একটা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। বিদ্যার মাথায় চট করে বুদ্ধি এসে গেল। বিদ্যা গলা ঝাড়ি দিয়ে বলল,
-” এই যে এত বিয়ে বিয়ে করছো, হিন্দু বিয়ে সমন্ধে তোমার কোন জ্ঞান আছে? কিভাবে কি হয় তুমি তা জানো?”
অভি বিদ্যার অভিসন্ধি বুঝে ফেলল। অভি হাঁসতে হাঁসতে বলল,
–” ইউ আর জাষ্ট ওয়ান্ডারফুল, আ রেয়ার কম্বিনেশন উইথ বিউটি এন্ড ব্রেইন।”
কথাগুলো বলে অভি দুই মুহুত্ত্ব চুপ থেকে আবার বলে উঠলো, তোমার বুদ্ধির তারিফ না করে পারছিনা। এগুলো করে কোন লাভ হবেনা। যা হচ্ছে তা শান্তিপূর্ণ ভাবে হতে দাও। আর বিয়ের নিয়ম! তাহলে শোন,
উচ্চবর্ণীয় হিন্দু সমাজের বিবাহে প্রধানত দুইটি আচারগত বিভাগ লক্ষিত হয়। সেটা হল, বৈদিক ও লৌকিক। লৌকিক আচারগুলি “স্ত্রী আচার” নামে পরিচিত। বৈদিক আচারগুলির মধ্যে অবশ্য পালনীয় প্রথাগুলি হল কুশণ্ডিকা, লাজহোম, সপ্তপদী গমন, পাণিগ্রহণ, ধৃতিহোম ও চতুর্থী হোম। বৈদিক আচারগুলির সঙ্গে লৌকিক আচারগুলির কোনো সম্পর্ক নেই।
অভির কথা শুনে বিদ্যা চড়কগাছে যেন উঠে পড়ল। এটা কে বে! এত কিছু জানলো কি করে? অহ্ গড একটা কিছু নলেজে দাও যাতে এই বিপদ থেকে রক্ষা পাই। এগুলো কোন নিয়ম হল? আমি বিয়ের নিয়মের কথা বলছি।
অভি দুই হাতে তালি দিয়ে বলল,
–” আমার বউয়ের বুদ্ধির দেখছি অভাব নেই। একের পর এক মুক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করছে আমার বিরুদ্ধে। কিয়া বাত হে, তোমার বুদ্ধির প্রসংসা না করে পারলাম না।”
অভি কথাগুলো বলেই চয়াল শক্ত করে বলল,
পাটিপত্র, পানখিলি, দধি মঙ্গল, গায়ে হলুদ, শঙ্খ কঙ্কণ, বর বরণ, সপ্তপদী, বিভাহোমা, শুভ দৃষ্টি মালাবদল, সম্প্রদান, অঞ্জলি, সিঁদুর দান। কি কোনটা কম হল নাকি? তবে এসব কিছুই হবেনা। সপ্তপদী,বিভাহোমা আর সিঁদুর দানই শুধু হচ্ছে। আন্টি কাজে নেমে পড়ুন। আমার বউয়ের আবার শুদ্ধ বিবাহ ছাড়া চলবেনা। আমি আর কি করবো বলেন! বউকে তো আর কষ্ট দেওয়া যায়না…..।
বিদ্যার কাকুতিমিনতি কোন কাজেই আসলোনা। অভি একপ্রকার জোড় করেই বিদ্যাকে বাধ্য করালো বিয়েতে বসাতে। অভি বিদ্যাকে একটা পেপারর্স দেখিয়ে বলল,
–” এটা তোমার সিগনেচার না! কি লেখা আছে এতে, আমি যদি কখনো সুইসাইড করি তাহলে তার জন্য দায়ী থাকবে আমার বাবা শ্যামল ত্রিবেদী আর মা সাধনা ত্রিবেদী। আমার মৃত্যর জন্য একমাত্র তারাই দায়ী।”
পেপারর্সের লিখা কথাগুলো অভি পড়ে শোনাতেই বিদ্যা বলল,
–” তুমি এটা কিভাবে করলে! আমি এমন পেপারর্স কখনোই তৈরি করিনি। আমার সাথে কেন এমন করছো?”
বিদ্যার কথার কোন জবাব না দিয়ে অভি ভাবলেশহীন হয়ে বলল,
-” আচ্ছা বিদ্যা, মনে কর এখন তুমি আমার কথা শুনছোনা। তার অপরাধে আমি তোমাকে মার্ডার করলাম। তাহলে দোষটা কার উপর চাপবে?”
এমন কথা শুনে হঠাৎই স্তম্ভিত হয়ে গেল বিদ্যা। এমন পরিস্থিতি ওকে জানান দিচ্ছে ধেয়ে আসা কোন ঘূর্নঝড়ের পূর্বাভাসকে। বিদ্যা চোখের জল মুছে বলল,
–” তুমিনা আমাকে লাভ কর! তুমি এমন কথা কিভাবে বলতে পারো!”
–“ভালবাসি বলেই তো বিনে সুতার মায়ার বন্ধন তৈরি করতে যাচ্ছি। আমি ভালো করে জানি, কিছুদিন পর আবার তোমার মাতলামি জাগবে। আবার তুমি তোমার হাবির সাথে আমাকে মেলানোর ট্রাই করবে। তারপর আবার কোন ব্লাকম্যাজিকের সাহার্য্য নিবে সত্যটা জানার জন্য। দিনের পর দিন চেইন সিস্টেমের মত চলতেই থাকবে এটা। আর থামবেনা। তাই ব্যপারটা বেশি বড় হওয়ার আগেই সমূলে উৎপাটন করে দেওয়া আশু প্রয়োজন।”
মোটামুটি সমস্ত বিধি মেনেই বিয়ের সব কাজ সম্প্রাদন করা হল। বিদ্যার কাছে অভির জন্য ঘৃনা ছাড়া আর অবশিষ্ট কিছুই রইলো না। এতে অবশ্যই অভির যায় আসেনা। ও ওর মতই কাজ করে যাচ্ছে।
♥
সাদা রঙ্গের উপর নজরকাড়া নীল লতা পেঁচানো বেডশীটে ব্লাক রোজে বড় করে লাভ আঁকানো। আর তাতে,
♥অভির বিদ্যাটা♥ লেখাটি শোভা পাচ্ছে। পুরো বেড হরেক রকমের বেলী ফুল আর ব্লাকরোজ দিয়ে মনোমুগ্ধকর ভাবে সাজানো। রুমটি অপূর্ব শুভাসে ম ম করছে। রুম জুরে ক্যান্ডেলের আলোক রশ্মি শোভা যেন বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুনে। পুরো রুম হিম ঠান্ডা।
সুদৃঢ় রোমশ বজ্রমুষ্টিতে আটকে পড়া চুলের গোছাটা মুক্ত করার জন্য আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অপরূপ সুন্দরীশ্রেষ্ঠা রমনীর হাত দুটো। ধস্তাধস্তিতে বুকের ওড়না খুলে ফ্লোরে গড়াগড়ি খেলেও সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তার। সর্বোশক্তি একত্রিত করেও গায়ের উপর চেপে বসা অভি নামক সদ্য বিয়ে করা প্রেমিক পুরুষটিকে সরানোর চেষ্টা করে উঠলেও ফলপ্রদ হচ্ছেনা কিছুতেই। পারস্পারিক বচসার এক পর্যায়ে বিদ্যা হতোদম্য হয়ে পড়লেও অভির তর্জন-গর্জনে খামতি পড়েনি বিন্দুমাত্র।
বিদ্যার চিৎকার শুনে ওর গায়ের উপর চেঁপে বসা অভির উত্তেজনা কমার পরিবর্তে বেড়ে গেল যেন। চুলের গোছা ধরে সজোড়ে নিজের মুখের কাছে টেনে আনলো বিদ্যার মুখ।
বিদ্যার গাল বেয়ে অঝোড়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। অভি কিছুক্ষন চুপ করে সেই জলের স্রোতে বয়ে চলা অপরুপ মুখশ্রী দেখল। বুকের ভিতরে চেপে রাখা কষ্টটা দ্বিগুন হয়ে গেল, বিবেকটা জেগে ওঠার সাথে সাথে। তারপর নোনতা জল এসে হানা দিল অভির দু’চোখে। অভির চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো বিদ্যার গালে।
–” কে বলে পুরুষ মানুষের কান্না আসেনা?”
[] চলবে…….[]
সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/10/sidur-suddhi-25/
………………………………..
লেখিকা, নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-
আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha
চাইলে আমার গ্রুপে জয়েন করতে পারেন: https://www.facebook.com/groups/nafisarkolom