এক_শহর_প্রেম💓 লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৩১(ধামাকা)

0
940

#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩১(ধামাকা)
দেলোয়ার তড়িঘড়ি করে ট্রাকের চালককে ফোন করলে ফোন বন্ধ পায়। তারপর ট্রাকের হেল্পারকে ফোন করে। সেটাও বন্ধ। অস্থির হয়ে দেলোয়ার কী করবে দিশা পাচ্ছে না। মারসাদসহ আহনাফরা ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি এঁকে দেলোয়ার চিন্তায় অস্থির মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করছে। এদিকে সাগর খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে কাউকে ফোন লাগায়। প্রতি বৃহঃপতিবার দুপুর বারোটার আগে চো*রাই কারবার বর্ডার ক্রস করে ভারতে প্রবেশ করে। বুধবার রাতে বর্ডার ক্রস করে। (কাল্পনিক। কখন বর্ডার ক্রস করে তা আমার জানা নেই।)

অপরপাশ থেকে রুহুল আমিন ফোন রিসিভ করলে সাগর তাড়াহুড়ো করে জিজ্ঞেস করে,

–এমপি সাহেব! বর্ডারে কী কাল আপনার কোনো ট্রাক গিয়েছে?

রুহুল আমিন সবে নাস্তা শেষ করে তার বাগানে চা নিয়ে পত্রিকা হাতে বসেছিলেন। ঘড়ির কাটায় বেলা ৯টা। রুহুল আমিন কড়া লিকারের চায়ের কাপে আয়েশ করে চুমুক দিয়ে বলেন,

–হ্যাঁ। এইতো রাত তিনটায় বের হয়েছে। এতক্ষণে বর্ডারে থাকার কথা।

সাগর হকচকিয়ে বলে উঠে,
–খোঁজ নেন এমপি সাহেব! প্রতি বৃহঃপতিবার বর্ডারে গার্ড কম থাকলেও আজকে কড়া নজরদারী চলতেছে।

রুহুল আমি চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেসা করেন,

–মানে? আজকে কড়া নজরদারী থাকবে কেনো?

–কারণ মারসাদ বর্ডারে পুলিশ ফোর্স পাঠিয়েছে। আপনার পরিচিত যে আছে বর্ডারে সেও আজ কিছু করতে পারবে না।

রুহুল আমিন সাগরের প্রতিউত্তরে চিন্তিত স্বরে বলেন,
–খোঁজ নিয়ে দেখি।

এই বলে তিনি ফোন কে*টে তার এসিসট্যান্টকে ফোন করে,
–হ্যালো খোরশেদ, বর্ডারে খোঁজ নে।

খোরশেদ নামক ব্যাক্তি অশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দিয়ে বলে,
–জি স্যার। এখনই নিতাছি।

……

কিছুক্ষণ পর দেলোয়ারের বাবা গ্রাম থেকে ফোন করে দেলোয়ারকে হুংকার ছেড়ে কয়েকটা অশ্রাব্য শব্দ নিঃসৃত করে বলেন,

–তোর ট্রাক যে বর্ডারে ধরা পরছে তুই জানোস? এখন কী হইবো? তোর জন্যে আমার চেয়ারম্যান পদ নড়বড়ে অবস্থা। গ্রামে আহাদ ব্যাপারির বাড়িতে পুলিশ আইছে ওগোরে ঢাকা নিয়া যাইতো। ওই পুলিশরাই এখন আমার বাড়ির উঠানে বইসা রইছে। তোর চো*রাকা*রবারে জন্য এখন হেরা আমার হিসাব খাতাও দেখব। তুই এখনই সাতক্ষীরা আসবি।

দেলোয়ার তার বাবার কথা শুনে মারসাদের দিকে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকায়। মারসাদের বাঁকা হাসি দেলোয়ারের হৃদয়ে কাঁ*টার মতো বিঁধছে। দেলোয়ার সেখানে আর এক মূহুর্তও দাঁড়ায় না। দেলোয়ারের সাথে সাথে সাগররাও চলে যায়। নিলয় যাওয়ার আগে মারসাদের দিকে তাকিয়ে একটা নীরব হাসি বিনিময় করে চলে যায়।

_________
রুহুল আমিনের মৌসুমি ফলের সাথে ড্রা*গ বোঝাই ট্রাক বর্ডারে আটক হয়েছে। সেটা আবার মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পরেছে। রুহুল আমিনের এসিসট্যান্ট এই খবর রুহুল আমিনকে দিলে রুহুল আমিন টিভি খুলে নিউজ চ্যানেলের হেডলাইন দেখছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সাংবাদিকরা যে তার বাড়িতে হাজির হবে সেটা রুহুল আমিনের জানা। নিউজ চ্যানেলের হেড লাইন,

“এ*মপি রুহুল আমিনের ফল বোঝাই ট্রাকে ১২০ প্যাকেট হে*রো*ইন পাওয়া গেছে।”

ইতোমধ্যে বাড়ির দারোয়ান এসে খবর দিলো, গেইটের বাহিরে সাংবাদিকরা এসেছে। রুহুল আমিন এবার নিজেকে বাঁচাতে একটা চাল চালবেন। দারোয়ানকে বলেন সাংবাদিকদের বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসতে। সাংবাদিকরা এসে রুহুল আমিনকে একের পর এত প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে ফেলছে। রুহুল আমিন যথাসম্ভব নিজেকে সামলে রেখেছেন। অতঃপর আফসোসের সুরে চেহারায় দুঃখী ভাব এনে সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,

–জানিনা কে বা কারা আমাকে ফাঁসাতে চাইছে। কে বা কারা আমার ট্রাকে ড্রা*গ রেখেছে! এতোদিন ধরে ট্রাক পারাপার হচ্ছে, কখনও এমন শুনেছেন? এটা আমার বিরুদ্ধো ষড়যন্ত্র! কেউ আমার ক্ষতি চায়। আমি এর জোর তদন্ত করব।

এরপর সাংবাদিকরা আরও অনেক প্রশ্ন করেন। কীভাবে সে শহরের উন্নতি করবেন? তার লক্ষ্য কী? বস্তি এলাকায় কী কোনো তহবিল যাবে কীনা? আরও কিছু। রুহুল আমিন মনে মনে বিরক্ত হলেও তাকে তার এই খবরটা ঢাকতে এসব কিছু করতে হবে।

মারসাদরা ইউটিউবে নিউজটা লাইভ দেখছিল। রাহিন অট্টহাসি দিয়ে বলে,
–এক ঢিলে দুই পাখি কুপোকাত বন্ধু। ভালোই ফাঁসছে রুহুল আমিন।

মৃদুল তাচ্ছিল্য করে বলে,
–কয়েকটা দিন রুহুল আমিন একটু সমাজসে*বক সাঁজবে। তার পা*পের উপর একটু নামের পূণ্যের প্রলেপ দিবে।

মারসাদ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–করতে থাকুক সমাজসে*বা। এতো এতো জনগনের টাকা মে*রে যে খাচ্ছে সেগুলো এবার বের করুক। এরপর যখন ওর ফ্যাক্টরি রে*ট হবে তখন তার এই শুকনো কথায় চিঁড়ে ভিজবে না।

রাহিন রম্যস্বরে বলে,
–এরে তো গিরগিটি বলা যায়। বিপদে পরলে কী অভিনব পন্থায় রঙ বদলায়।

আহনাফ হাই তুলতে তুলতে বলে,
–গিরগিটিও এর থেকে ভালো। তবে রুহুল আমিনের ট্রাক ধরা পরাটা আকস্মিক চমক ছিল।

রবিন মাঝ দিয়ে বলে,
–এখন আরও শতর্ক হয়ে যাবে না সে?

মারসাদের শান্ত জবাব,
–একটা ধা*ক্কার দরকার ছিল যা মেঘ না চাইতে জলের মতো হয়ে গেছে। এখন সে কয়েকদিন জনসেবা করুক আর আমরাও এখন একটু জিরোই। যখন তার মন থেকে সন্দেহ কমবে তখন বাকিটা। তবে বর্ডারে তাকে আরেকবার যেদিন ধরা হবে সেদিন তার কুকর্ম সব জনসম্মুখে আসবে। তখন তার জারিজুরি ক্ষান্ত হবে।

হঠাৎ মারসাদের ফোন বেজে উঠে। মারসাদ ফোন নিয়ে দেখে পু’লিশের যে টিম সাতক্ষীরাতে আছে সেখান থেকে কল এসেছে। মারসাদ রিসিভ করে সালাম দিলে অপরপাশ থেকে তার জবাব আসে। অপরপাশ থেকে জানায়,

“আদিরার বাবা তার বাড়িটা বিক্রি করতে চায় না। সেখানে ১কাঠা জায়গা আছে আর দোকানঘরে আধ শতাংশ জায়গা আছে। আধ শতাংশ জায়গা সে বিক্রি করতে রাজি হয়েছে।”

মারসাদ সবটা শুনে বলে,
–তাহলে তাই করুন। গ্রামের মানুষ তার ভিটেমাটি ছাড়তে চাইবেই না। তাদের ঢাকা নিয়ে আসুন।

মারসাদ ফোন রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ভালো সব সুন্দর চলছিল। একদিনের ভেতর সবটা জলদি জলদি মোর ঘুরে গেলো। তবে যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে। যে কাজ আরও বছর দুয়েক পরে করতো সেটা এখনি হয়ে গেছে।

আহনাফ ও মৃদুলরা মারসাদের কাঁধে হাত রাখে। মৃদুল বলে,
–আমরা সবসময় তোর সাথে আছি। যেখানেই যাবো আমরা পাঁচজন একসাথে যাবো।

পাঁচ বন্ধুর একটা গ্রুপ হাগ হয়ে যায়। বন্ধুত্ব শব্দটার মূল্য অনেক। নাম মাত্র বন্ধুও হয় আবার আত্মার বন্ধুও হয়।

_________

আদিরা নাস্তা খাওয়ার পর থেকে একা একা অর্ণির রুমে বসে আছে। অর্ণি স্কুলে গেছে আর আহনাফের বড়োভাবি তার মেয়েকে স্কুলে নিয়ে গেছে। আদিরা উুঁকি দিয়ে বুঝেছে আহনাফের মা তার নিজের ঘরে আছেন। কাজের মহিলা ঘর পরিষ্কারের কাজ করছেন সাথে আহনাফের ভাবির নির্দেশনায় পেঁয়াজ, মরিচ, সবজি এসব কে*টে রাখছেন। একটু আগেই এসে এই রুমটা ঝা*ড়ু দিয়ে গেছেন। ঘড়ির কাঁটা ১১টার ঘরে। বড়োভাবির তার মেয়েকে নিয়ে ফেরার সময় হয়ে আসছে।
আদিরা একা একা একা বোর হচ্ছে বলে অর্ণির বুকশেলফ থেকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “দেবী চৌধুরানী” উপন্যাসের বইটা নিলো। বুকশেলফে আরও অনেক সাঁজানো আছে। একই সারিতে কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, দূর্গেশনন্দিনী, আনন্দমঠ, বিষবৃক্ষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখেরবালি, নৌকাডুবি, শেষের কবিতা, যোগাযোগ সাথে হুমায়ুন আহমদের বই পরের সারিতে আছে।

আদিরা দেবী চৌধুরানী বইটা পড়া শুরু করেছে। প্রায় চল্লিশ মিনিট একটানা পড়ে এবার বিরতির জন্য রুম থেকে বেরোলো তারপর রান্নাঘর থেকে কথা বলার শব্দে সেদিকে গিয়ে দেখে আহনাফের মা ও ভাবি একত্রে রান্না করছেন। আদিরা রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখছে বউ-শাশুড়ির সুন্দর জুটি। একজন পাতিলে মাং*স কষাচ্ছেন আরেকজন পোলাও রান্না করছেন। আদিরা তৃপ্তি নিয়ে দেখছে। আহনাফের ভাবি কাঁচামরিচের বাটিটা নিতে পেছোনে ঘুরে আদিরাকে দেখে সহাস্যে বলেন,

–আরে আদিরা। ভেতরে আসো।

আদিরা ভেতরে গিয়ে দেখতে থাকে। আহনাফের ভাবি আদিরাকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে দেখে হেসে বলেন,

–মায়ের হাতের বিফ রান্নাটা আমারও অনেক প্রিয়। আমি নিজে রান্না করলেও এতো মজা হয়না। তাই আহনাফ যেদিন বাড়িতে আসে সেদিন বিফ রান্না হলে মা করেন। আর রোস্টটার জন্য মুরগির পিস গুলো ভেজে রেখেছি সেটাও মা আজ রান্না করতে চাচ্ছেন। আজ মারসাদরা সবাই দুপুরে এখানে খাবে। মারসাদ এলে মা নিজে রান্না করেন। জানোই তো ছেলেটা সেই ছোটোবেলাতে মা হারিয়েছে তারপর সৎমা আদর করেনি। মা মারসাদকে আহনাফের মতোই মনে করেন। ওদের পাঁচজনকেই মা অনেক স্নেহ করেন। আচ্ছা সেসব বাদ দেও। আমি শুধু পোলাও আর চাইনিজ সবজি রান্না করব। তোমার পছন্দ তো?

আদিরা মুগ্ধ হলো। ঘার নাড়িয়ে সায় দিলো। মারসাদের কথাটা শুনে আদিরার মনের ভিতর এক তীব্র হাহাকার জেগে উঠল। মায়ের পর বড়োবোনের মৃ*ত্যুতে সে এখন তার বাবার সাথেও কথা বলেনা। আদিরা চায় বাবা-ছেলের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাক।

আহনাফের মা কড়াইয়ের ঢাকনা দিয়ে আদিরার দিকে ফিরে বললেন,
–তোমার সাথে ঠিক করে গল্পই করা হলোনা। আজ বিকেলে চায়ের আড্ডায় গল্প হবে। তোমার কী কী খাবার পছন্দ?

আদিরা হেসে জবাব দেয়,
–আমার খাবারে বাছবিচার নেই। আমাকে দিন আমিও কিছু একটা করি। জানি আপনারাই সব সামলে নিতে পারবেন কিন্তু কিছু একটা করতে দিলে ভালো লাগবে।

আহনাফের ভাবি বলেন,
–তোমার কিছু করতে হবে না মেয়ে। তুমি না বই পড়ছিলে? গল্পের ভেতর ডুবেছিলে। আগে সেটা শেষ করো। আমরা সামলে নিবো।

আদিরা মুখ ভাড় করল সামান্য। তা দেখে আহনাফের মা বলেন,
–তুমি নাহয় কিছুক্ষণ পর শশা, টমেটো কে*টে দিও। আর কোনো কাজ নেই তোমার ভাগে। যাও বই পড়ো গিয়ে। অর্ণির কালেকশনে অনেক বই আছে। মাঝে মাঝে আমিও এনে পড়ি।

আদিরা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবারও বই পড়তে চলে গেল।

চলবে ইনশাআল্লাহ্,
টানা তিনটা পরীক্ষা ও কিছু সমস্যার কারণে চারদিন দেরি হলো। পরশুদিন শেষ পরীক্ষা। নিয়মিত দেয়ার চেষ্টা করব। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here