গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর
সপ্তম পর্ব
বাইশ.
বিজনেসম্যান রিবন ইওহার্ডের ভাই রন ইওহার্ড আজ দুদিন যাবত পানির তলদেশে। সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় কেবল একটাই খবর, তা হলো আপডেট কী, আপডেট কী!এছাড়াও শহর এবং গ্রাম-গঞ্জের অলিগলিতে থাকা চায়ের দোকানগুলোতে লেগে রয়েছে গুঞ্জন। নিজেকে অপরজনের থেকে অধিক জ্ঞানী প্রকাশ করতে একটার পর একটা যুক্তিহীন বাক্য উপস্থাপন করছে। কেউ কেউ তাতে সম্মতি দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করে নিজেকে তার চেয়েও জ্ঞানী প্রকাশ করতে নতুন করে আরেকটি যুক্তি উপস্থাপন করায় লেগে গেছে। এ যেন রোজকার কর্ম। টিভি চ্যানেলগুলো আপডেট খবরের পেছনেই লেগে আছে। কেননা এতে তাদের চ্যানেলের টিআরপি বৃদ্ধি করাতে সক্ষম। কোনো কোনো টিভি চ্যানেল নিজ চ্যানেলের টিআরপি অধিক বৃদ্ধির লোভে ঘটিত ঘটনার সাথে নতুন করে কিছু যোগ করে বলছেন। আবার কেউ পূর্বে টেলিকাস্ট করা বার্তাগুলোই পুনরাবৃত্তি করছেন। এক হুলস্থূলি কাণ্ড বেঁধে গেছে। দেশে যেন বিরাট একটি সংকটময় সময় অতিবাহিত করছে। এছাড়া জনগণের মনে কয়েকটি প্রশ্ন বেশ জটিলতা সৃষ্টি করেছে। প্রশ্নগুলো আসলেও বেশ যুক্তিসঙ্গত। ” এটা কি আসলেই তার ভাই? আর যদি হয়েই থাকে, তবে এতদিন রিবন ইওহার্ড তার ভাইকে জনসম্মুখে কেন আনেননি? ”
এরকম প্রশ্ন জনগণের মনে বাসা বাঁধলেও কোনো ফায়দা হতে যাচ্ছে না। এই প্রশ্নের জবাব আদৌ মিলবে কি না তাও সন্দেহজনক!
দেশের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে নিয়েছে রন ইওহার্ড মারা গেছে। আর এটি বিশ্বাসেরও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একটা মানুষের পক্ষে টানা দুইদিন পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। রিবন ইওহার্ড নিজেও বিশ্বাস করে নিয়েছে তার ভাই মারা গেছে! কিন্তু ভাইয়ের খুনিদের শাস্তি না দিয়ে তিনি পিছু হটবেন না সে। এরজন্য যা করতে হয়, তাই করতে রাজী। কেসটি নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে খুনিদের খুঁজে চলেছেন। কিন্তু এখনো কোনো শক্তপোক্ত ক্লু হাতে পেতে সক্ষম হননি!
ইতোমধ্যেই সমুদ্র তীরে সাবমেরিন দিয়ে খোঁজ চালাচ্ছেন। এবং রন ইওহার্ড যে হোটেলে এসে উঠেছিল সেই হোটেলেই পাশের রুমে অবস্থান নিয়েছেন রিবন ইওহার্ড। দুই হাত মাথায় ঠেকিয়ে বিছানায় বসে আছেন। চিন্তায় তার মাথা ভনভন করছে। একদিকে তার কোম্পানি, অপরদিকে তার ভাই। সব মিলিয়ে তিনি প্রায় পাগলপাড়া। এমতাবস্তায় তার ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে একটি কল আসে। ফোন হাতে নিয়ে কল রিসিভ করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে,
‘ হ্যালো স্যার। পুলিশ সুপার রবিন বলছিলাম। ‘ খানিকটা মনমরা হয়ে কথাটি বললেন তিনি।
‘ জি বলুন! রনের কোনো খোঁজ পেয়েছেন?’ ঈষৎ উৎসুক মনে জানতে চাইলেন রিবন ইওহার্ড। যেন তার হৃৎপিণ্ডে হার্টবিটের পরিমাণ পূর্বের থেকে খানিকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘ রনকে এখনো পাওয়া যায়নি স্যার। সাবমেরিন দিয়ে খোঁজ চালিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রনের গাড়িটি আধভাঙাচোরা অবস্থায় খুঁজে পাই। গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশে থাকা দরজা ভেতর দিক থেকে আটকানো এবং অপর পাশের দরজাটি খোলা অবস্থায় পাওয়া যায়। আছাড়া গাড়ির কাচ একটুও আস্ত ছিল না! গাড়িতে চিরুনি তল্লাশি দিয়েও ভেতরে রনের চিহ্নটুকু পাইনু।’ দুঃখি মনোভাব নিয়ে কথাগুলো বললেন পুলিশ সুপার রবিন। তিনি কথাগুলো বলার সময় গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছিল না। বাকযন্ত্র খানিক সময়ের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছিল।
পুলিশ সুপার রবিনের কথা শুনে প্রত্যুত্তরে বললেন রিবন ইওহার্ড,
‘ আমি এক্ষুণি আসছি ‘ এই বলে কল কেটে দেন তিনি। তার দেহের ভেতর থেকে ছটফট অনুভব হচ্ছে। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেন না। তন্মধ্যে এরকম একটি খবর তার দেহের শিরা-উপশিরায় রক্ত প্রবাহের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করে দিয়েছে।
তৎক্ষণাৎ তিনি বিছানা ত্যাগ উঠে যান। দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। রুম থেকে তাকে বের হয়ে দেখেই তার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত সকল গার্ডসগুলো তাদের কাজে লেগে যায়। গার্ডদের নিয়ে দ্রুত হেঁটে হোটেল থেকে বের হয়ে পার্কিং প্লেসে উপস্থিত হন। সেখানে রাখা গাড়িগুলোর মাঝে একজন গার্ড একটি গাড়ির দরজা খুলে দেয়। চারদিক না দেখে দ্রুত গাড়িতে চড়ে বসেন তিনি। গার্ডসগুলো তাদের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়িতে উঠে যায়। পার্কিং প্লেসের ভেতর থেকে পরপর তিনটি গাড়ি নিয়ে ছুটলেন সমুদ্র তীরে ঘটনাস্থলে। বেশি দূরে না হওয়াতে কয়েক মিনিটের মাঝেই সেখানে উপস্থিত হন তারা। গার্ডসগুলো গাড়ি থেকে আগে নেমে তাকে নামার জন্য দরজা খুলে দেয়। গাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন রিবন ইওহার্ড। নট এন্টার এড়িয়ার ভেতরে এখনো কিছু পুলিশের দেখা মিলছে। সেদিকে দ্রুত হেঁটে চলেন তিনি। বিনা বাক্য অথবা কোনো প্রশ্ন ছাড়াই চুপচাপ তার পিছুপিছু গার্ডসগুলোও চলতে থাকে। নট এন্টার এড়িয়ার ভেতরে পুলিশ সুপার রবিনকে দেখা যাচ্ছে। তার কাছেই যাচ্ছেন তিনি।
রিবন ইওহার্ডকে সেখানে উপস্থিত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তাগুলো দেখামাত্রই তাকে স্যালুট জানায়। পুলিশ সুপার রবিন তাকে ঘটনাগুলো খানিকটা খোলাসা করে উপস্থাপন করেন। যা শুনে একদম ভেঙে পড়েন তিনি। কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। ইতোমধ্যেই সমুদ্র থেকে গাড়ি উদ্ধারের কাজ চলছে। ছোটোছোটো জাহাজ এবং স্পিডবোট রাখা আছে সেখানে।
সংবাদ মাধ্যমগুলোতে নতুন করে খবর করা হচ্ছে। দেশের জনপ্রিয় পেপার কোম্পানিগুলো নতুন খবর ছাপাতে ব্যস্ত। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদি সকল গণমাধ্যমগুলোতে নতুন করে খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশের জনপ্রিয় সংবাদ চ্যানেলে খবর পাঠ হচ্ছে এখন!
তেইশ.
ব্রেকিং নিউজ।
কিছু সময় পূর্বে কক্সবাজার সমুদ্র তলদেশে সাবমেরিন অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় দুদিন আগে হারিয়ে যাওয়া বিজনেসম্যান রিবন ইওহার্ডের ভাইয়ের আরোহনকৃত গাড়িটি। গাড়িটি ভাঙাচোরার পাশাপাশি বেশ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এবং গাড়ির একটি দরজা খোলা,অপরটি ভেতর থেকে আটকানো অবস্থায় পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মী পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু গাড়ির দরজা খোলা পাওয়া গেলেও গাড়ির ভেতরে পাওয়া যায়নি রিবন ইওহার্ডের র ভাই রন ইওহার্ডের দেহ। এতদিন তাকে মৃত বলে ধারণা করলেও এখন রহস্য তার ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গাড়ির দরজা খুলে রন বাহিরে বেরিয়ে এসে তীরে পৌঁছেছে। নতুবা সমুদ্রে থাকা কোনো হিংস্র প্রাণীর শিকারে পরিণত হয়েছেন। নয়তো সমুদ্রের পানির স্রোতের সাথে কোথাও চলে গেছে তার দেহ।
এই তিনটির মাঝে যে কোনো একটি ঘটেছে। তবে অধিক লোকের ধারণা, প্রথমটি হবার কোনো চান্স নেই। এবং তৃতীয়টি ঘটবার চান্স ৪৫%।
টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখে বদ্ধ রুমে উপস্থিত লোক দুটোর মুখে হাসি ফুটে উঠল। একজন অপরজনের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল,
‘ বসকে খবরটা জানিয়ে দে। এমন সুখবর বসকে তো চমকে দেবে। সাথে আমাদের পারিশ্রমিকটাও বাড়িয়ে দেবে।’ উৎফুল্ল মনে কথাটি মন থেকে প্রকাশ করল সে।
‘ তা ঠিক বলেছিসরে। গরম গরম খবর পৌঁছানোয় মজাই আলাদা।’ অপর লোকটির উদ্দেশ্য করে বলল অজ্ঞাত লোকটি। যেন ব্রেকিং নিউজ আর পারিশ্রমিক পাবার খুশিতে পুলকিত। দ্রুত নিজের পকেট থেকে ফোনটি হাতে নিয়ে করে ডায়াল প্যাডে একটি নাম্বার তুলে নেয়। কল বাটনে চাপ প্রয়োগ করে ফোনটি কানে তুলে অপরপক্ষের কল রিসিভের অপেক্ষায় থাকে।
দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে শোনা যায়,
‘ হ্যালো। ‘ যেন কণ্ঠে মিশে আছে একরাশ রাগ।
‘ বস। আপনার জন্য সুখবর আছে। ‘ লোকটি হাসি দিয়ে কথাটি বলল।
‘ কী সুখবর? ‘ অবাক ভঙ্গিমায় প্রশ্ন করলেন ওপাশের অজ্ঞাত লোক। একটু আগের গম্ভীর ভঙ্গিমা এখন আর নেই।
‘ আপনার দেওয়া কাজ খতম। এবার আমাদের পেমেন্ট কিন্তু ডাবল করতে হবে। সাথে কিছু সারপ্রাইজও চাই।’ পুনোরায় একটি হাসি দিয়ে বলল লোকটি। কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিকের পাশাপাশি সারপ্রাইজ পেলেও খারাপ না!
‘ হ্যাঁ তা তো দেবোই। তোমাদের জন্য এবারের সারপ্রাইজটা একটু চমকপ্রদ হতে যাচ্ছে। ‘ অজ্ঞাত লোকটি ফোনের ওপাশ থেকেই হাসি দিয়ে কথাটি বললেন। এ হাসিতে খানিকটা ধূর্ততার প্রভাব রয়েছে।
অজ্ঞাত লোকটির কথা শেষ না হতেই জানালার কাচ ভেঙে একটি গুলি এসে ফোন এপাশে ফোন ধরে রাখা লোকটির মাথার পেছনে আঘাত হানে। মাথার পেছন দিক গুলিবিদ্ধ হবার পরেও বন্দুকের গুলিটির গতিবেগ না কমায় মাথার পেছন দিক ভেদ করে কপাল দিয়ে বের হয়ে যায়। লোকটি হাতে ফোন আঁকড়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থা থেকে মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ দেখে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির মস্তিষ্কের সিনান্সগুলো তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। কী হলো কিছু বুঝে উঠতে পারেনি সে। তার আগেই লোকটির কপাল বরাবর একটি বন্দুকের গুলি এসে বিদ্ধ করে। সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। চারদিকে জঙ্গলে ঘেরা তার মাঝে একটি বাড়ি। সেখানেই বসবাস করত তারা দুজন। কিন্তু তাদেরকে তাদের বসতি বাড়িতেই এরকম নির্মমভাবে কে হত্যা করল! তা জানার আগেই পরলোকে গমণ করে দুজন। আচমকাই ঘরটির এক কোণ থেকে আগুন জ্বলতে আরম্ভ করে। ধীরে ধীরে আগুনের তেজ বাড়ার সাথে সাথে ঘরের এক-তৃতীয়াংশ পুড়ে যায়। তবু আগুনের তেজ বাড়তেই থাকে।
চব্বিশ.
রাজ কক্ষে প্রবেশ করলেমন মৎস্য রাজা অরগাড। তার পিছুপিছু কক্ষে প্রবেশ করেন রানি নিয়ানো এবং রাজকুমারী ডায়ানা। রাজা অরগাডের কাছে প্রথম প্রশ্ন রাখে রাজকুমারী ডায়ানা।
‘ মহারাজ, এই মানব ছেলেটি কে? আসলেই কি আমাদের ভবিষ্যৎ সামুদ্রিক রাজা? ‘ কণ্ঠে খানিকটা কৌতূহল জেগে আছে।
‘ এই ছেলেটিকে নিয়ে বিশাল রহস্য লুকিয়ে আছে। এছাড়া সমুদ্রের ভবিষ্যৎ রাজা সে। এবং তোমার বিয়েও তার সাথেই ঠিক করে রাখা হয়েছে। ‘ একটি মুচকি হাসি দিয়ে কথাগুলো বললেন রাজা অরগাড। তার হাসিতে লুকিয়ে আছে তৃপ্ততা।
‘ কী বলছেন মহারাজ? একজন মানব সন্তানের সাথে একজন মৎস্য কুমারীর বিয়ে! এটা কি আদৌ সম্ভব? ‘ কিঞ্চিৎ অবাক স্বরে কথাগুলো বলল রাজকুমারী ডায়ানা। তিনি রাজা অরগাডের কথাতে মোটেও বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছেন না।
‘ আমি যা বলছি, তা সব বুঝে এবং জেনেই বলছি। মানব সন্তান আর মৎস্য মানবের মাঝে ভেদাভেদ করতে যেও না। আমাদের আদিপুরুষদের মাঝেও কয়েকজন মানব-মানবীকেই বিয়ে করেছেন। এবং যথেষ্ট সুন্দরভাবে নিজেদের জীবন পার করেছেন। রন ইওহার্ডের রাজা হবার মতো সক্ষমতা আছে। তা আমার থেকেও অনেক বেশি হবে!
রন ইওহার্ডের রাজা হবার মতো সকল প্রশিক্ষণ শেষ হওয়া মাত্রই তার রাজ্যাভিষেক কার্য সম্পন্ন করা হবে। এবং তার রাজ্যাভিষেকের দিনেই তোমার সাথে তার বিয়ে হবে। ‘ প্রথম কথাগুলো কিছুটা রাগ মিশ্রিত স্বরে বললেন রাজা অরগাড। কিন্তু পরবর্তী কথাগুলো ক্ষীণ কণ্ঠে শেষ করলেন।
রাজকুমারী ডায়ানা প্রথম প্রথম রন ইওহার্ডকে মানব দেখে কিছুটা ভিন্ন নজরে দেখলেও, রাজা অরগাডের শেষ কথা শোনামাত্রই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। রন ইওহার্ডকে দেখতে একজন রাজার থেকে কোনো অংশেই কম মনে হয় না। তার দেহের গঠন বেশ সুন্দর। এখন কেবল তার অস্ত্রচালনা প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এবং পানি নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণ। একজন মৎস্য রাজার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে পানি।
রাজকুমারী ডায়ানার গাল-মুখ লাল হতে দেখে মৎস্য রাজা অরগাডের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন রানি নিয়ানো,
‘ দেখুন, আপনার মেয়ে বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় কেমন লাল হয়ে যাচ্ছে। ‘ রানি নিয়ানো তার দুই ঠোঁটের কোণে একটি মুচকি হাসি ফুটিয়ে কথাটি বললেন।
রানি নিয়ানো কথা শেষ করতেই রাজকুমারী ডায়ানার দিকে দৃষ্টিপাত করেন রাজা অরগাড। এতে করে রাজকুমারী ডায়ানা অধিক লজ্জা পায়। বসা থেকে তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে যান। দ্রুত পায়ে ছুটে দ্বারের কাছে এসে টোকা দিতেই ওপাশ থেকে রক্ষীরা দ্বার খুলে দেয়। দ্বার খুলতেই এক দৌড়ে কক্ষ ত্যাগ করে। এ দেখে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠেন রানি নিয়ানো। তার সাথে হাসিতে তাল মেলান রাজা অরগাড।
কোনোদিকে না তাকিয়েছে নিজ কক্ষে অবস্থান করে রাজকুমারী ডায়ানা। কক্ষে প্রবেশ করে বিছানায় বসে যায়। বেশ জোরেশোরেই হাঁপাচ্ছে। দ্রুত গতিতে একের পর এক নিশ্বাস ফেলায় ব্যস্ত। বুকে হাত রাখতেই অনুভব হয়, তার বুক আগের চাইতেও অধিক পরিমাণে ওঠানামা করছে। যা রিতীমতো তাকে চমকে দিয়েছে তাকে। হার্টবিট এত দ্রুত চলাচলের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে। এরকম অনুভূতি আগে কখনোই অনুভব হয়নি তার।
পঁচিশ.
মাটিতে পড়ে থাকা রনের দেহটি একজন দেহ রক্ষী এগিয়ে এসে নিজ কাঁধে তুলে নেন। সেনাপতি রিবিয়ান একটু আগেই রাজপ্রাসাদের তৃতীয় তলার ডান কর্ণারে থাকা কক্ষটি দেখিয়ে উক্ত স্থান থেকে প্রস্থান করেন। এবং বলে গেছেন, ” রন ইওহার্ডকে তৃতীয় তলার ডান কর্ণারে থাকা কক্ষে নিয়ে যাও। এবং তার সেবাযত্নের যেন অবহেলা না হয় তার জন্য দাসী পাঠাও। ‘
রক্ষীগুলো প্রত্যুত্তরে শুধু ” যথা আজ্ঞা সেনাপতি মশাই” বলে জবাব দিয়েছেন।
সেনাপতি রিবিয়ান সেখান থেকে চলে যেতেই দেহ রক্ষীদের মধ্যে একজন সেনাপতির কথামতো রন ইওহার্ডকে প্রাসাদের তৃতীয় তলার ডান কর্ণারে থাকা কক্ষে নিয়ে বিছানায় সুন্দর করে শুইয়ে দেন। দেখতে একদম নিস্পাপ শিশু মনে হচ্ছে। রন ইওহার্ডের সেবার কাজে কয়েকজন দাসী মোতায়েন করেন।
দীর্ঘ তেরো ঘন্টা অতিবাহিত হবার পর নিজের মাঝে চৈতন্য খুঁজে পায় রন ইওহার্ড। কিন্তু নিজের মাঝে চৈতন্য ফিরে পেলেও চোখ মেলে তাকানোর সামর্থ্য পাচ্ছে না সে। তখনই কক্ষে একজন দাসী প্রবেশ করেন। হাতে একটি পাত্রে সবুজ বর্ণের এক জাতীয় তরল পদার্থ নিয়ে তার সামনে উপস্থিত হয়। রন ইওহার্ড তাকে দেখে উঠে বস্তে চাইলেও সম্ভব হলো না। দাসীটি নিজ শক্তি ব্যয় করে রন ইওহার্ডকে শোয়া অবস্থা থেকে আধশোয়া অবস্থায় বসায়।পালংয়ের পেছনের পাল্লার সাথে বালিশ দাঁড় করিয়ে রেখে হেলান দিয়ে শোয়ায় দেন। বিছানায় রাখা পাত্রটি পুনরায় হাতে তুলে নেন তিনি। চামচ জাতীয় কিছুতে তুলে রন ইওহার্ডের দিকে এগিয়ে দেন। বিলম্ব না করে ক্লান্ত শরীরে খেয়ে নেয় রন ইওহার্ড।
খাওয়ার পর্ব শেষ হলে তাকে পুনরায় শুয়ে থাকতে সাহায্য করেন দাসীটি। রন ইওহার্ড শুতেই চুপ করে যায়। ঔষধগুলো তার কাছে সবচেয়ে বাজে ঔষধ ছিল! যেমন তেতো তেমনই ভ্যাটকা গন্ধ। দুটো বিষয় একত্রে মিলিয়ে আরও বাজে একটা স্বাদের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে ঔষধ খাইয়েই কক্ষ থেকে প্রস্থান করেন দাসীটি।
এভাবেই কিছু কিছু সময় পার হতেই অনুভব করে রন ইওহার্ড। তার দেহের কোন অংশেই ব্যথা অবশিষ্ট নেই। যেন কয়েক মুহূর্তেই ব্যথাগুলো সব উবে গেছে। দ্রুত চোখ মেলে তাকায় সে। কক্ষের চারদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে এটি একটি অচেনা কক্ষ। তবে কক্ষের ভেতরটা কোনো সাধারণ শিল্পকর্ম খোদাই করা নয়। কক্ষের চারিদিকেই রাজকীয়তার ছোঁয়া লেগে আছে। যেন এটি একটি রাজপ্রাসাদের কক্ষ। এবং তার শয়নরত বিছানাতেও রাজকীয়তার ছাপ লেগে আছে। হতভম্বর হওয়ার মতো করে মুখ খানিকটা হাঁ হয়ে আছে। দ্রুত শয়নরত অবস্থা থেকে দ্রুত উঠে বসে যায়। চারিদিকের অবস্থা দেখে তার মাথা রীতিমতো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু সেদিকে ধ্যান রেখে কোথায় আছে তা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ে! এমতাবস্থায় কক্ষে প্রবেশ করেন সেনাপতি রিবিয়ান। তাকে দেখামত্রই ভ্রু জোড়া কোঁচকে খানিকটা গম্ভীর হয়ে তাকায় রন ইওহার্ড। কিন্তু তার এরকম ভ্রু কুঁচকানোকে পাত্তা না দিয়ে তারই উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন সেনাপতি রিবিয়ান।
‘ আপনাকে মহারাজ অরগাড রাজসভায় ডেকে পাঠিয়েছেন।’
সেনাপতি রিবিয়ানের এরকম কথা শুনে তৎক্ষণাৎ বড়সড় একটি বিষম খায় রন ইওহার্ড। কিন্তু পরক্ষণেই মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করলে পূর্বের স্মৃতি পড়ে যায়। বোকাদের মতো কোনো রকম প্রশ্ন না করে সেনাপতি রিবিয়ানের পিছুপিছু হাঁটতে লাগে। কক্ষের দ্বারে এসে টোকা দিতেই ওপাশ থেকে প্রহরীরা দ্বার খুলে দেয়। কক্ষ ত্যাগ করে বারান্দা দিয়ে হেঁটে কিছু সময় বাদেই একটি বড় দ্বারের সামনে এসে দাঁড়ায় তারা। তাদের দুজনের সাথে যুক্ত হয়েছে আরও চারজন দেহরক্ষী। প্রবেশদ্বারে থাকা প্রহরীগুলো দ্বার খুলে দেয়। ভেতরে প্রবেশ করেন সেনাপতি রিবিয়ান এবং রন ইওহার্ড। রাজসভায় উপস্থিত থাকা সভাসদেরা সেনাপতি রিবিয়ানের পাশাপাশি রন ইওহার্ডকে দেখে কিছুটা তীক্ষ্ণ নজরে তাকায়। সেনাপতি রিবিয়ান সভায় তার নিজ আসন গ্রহণ করেন। রন ইওহার্ডের দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থানের ঠিক সোজাসুজি কিছু দূরেই রয়েছে একটি রাজসিংহাসন। তার পাশে রাখা আছে আরও দুটি সিংহাসন। তবে মধ্যখানের রাজাসিংহাসহনের তুলনায় দুই পাশে থাকা সিংহাসনগুলো কিছুটা নিম্ন। মাঝে থাকা রাজসিংহাসনে মাথায় একটি বড় রাজমুকুট পরিহিত অবস্থায় একজন মানব বসে আছে। তার দুই পাশে থাকা সিংহাসনে বসে আছেন সুদর্শন দুজন নারী। একজনের বয়সের মোটামুটি। অপরজনেরটা একেবারে উঠতি বয়স বললে ভুল হবে না। উপস্থিত সকল সভাসদদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে রাজা অরগাডের সামনে উপস্থিত হয় রন ইওহার্ড। কিছুটা কৌতূহল মিশ্রিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
‘ অভিবাদন মহারাজ! আমি এখন কোথায় আছি?আমাকে এখানে নিয়ে আসার কারন? আর আপনারাই-বা কারা?
[– চলবে –]
• কার জন্য সুখবর ছিল?
• অজ্ঞাত লোকটি কে?
• এবং ওই দুজনকেই বা কেন মারা হলো?