শবনম(পর্ব ১৩) সায়লা সুলতানা লাকী

0
276

#শবনম(পর্ব ১৩)
সায়লা সুলতানা লাকী

“কিরে জমিরের মা, ঘরে এমন দামড়া পোলা শুয়াইয়া রাইখ্যা তুই মাডি কাটতাছোস ক্যা? পোলারে কামে লাগা। এক চাঙ্গাড়ি মাডি তুললে তোর পোলার জাত যাইব না, বুঝছোস?”
বানুর শাশুড়ি বেশ রেগেই কথাটা বললেন জমিরের মা’কে।

“আম্মা যে কি কন! জব্বইরারে দেখলাম ঘরে বইয়াই হাগামুতা সারল। চাচিআম্মাইতো সব সাফা করল নাকে কাপড় বাইন্দা। আর ওয় করব মাডি কাডার কাম!”
কথাটা শেষ করে বানু কেমন খিল খিল করে হেসে উঠল।

ভোর সকালে বানু যখন ঘাটে গোসল করছিল তখনই ও দেখেছে জব্বার পা তুলে বসে আছে। আর ওর মা গালাগালি করতে করতে ওর প্রসাব পায়খানার চিলন্চি বাহিরে নিয়ে পরিস্কার করছিল। তখন বিষয়টা ভালোমতো বুঝতে পারে নাই। শবনমের কথা শুনে এখন সবটা স্পষ্ট হয়েছে ওর কাছে।

“হায় হায় কস কি বানু! ওই জমিরার মা এইডা কি হুনি আমি? তোর এহনই এমন দুর্দিন আইয়া পড়ল? পোলারা এহনই তোরে দিয়া এমন কাম করায়? নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ। আমগো পোলারা এহনও অমন অমামুষ অইতে পারে নাইরে।”

“আরে বাউজি, না বুইঝ্যাই সব কতা একলা কইয়া হালাইতাছেন। জব্বইরা কি হগ্গল সময় এমন করেনি? গেল রাইতে গরম কয়লা নিছিলাম ঘরে, কোমরে ছেকা দিতে। হারামজাদায় না দেইখ্যা ওই কয়লার মধ্যে পারা দিছে। এহনতো দুই পায়ের তলাই পুইড়া গেছে। হাডবো কেমনে? হের লেইগ্যা ঘরের মধ্যেই সব করছে। আর আপনের পোলার বৌয়ের অইল শকুনের চোখ৷ এক্কেবারে সব কিছু দেইখ্যালায় চক্ষের পলকে। ফযর কালের কতা অহন গিয়া ওর কইতে মন চাইছে।”

“ও চাচিআম্মা, জব্বইরার পা কয়লায় পুড়ছেনি? আহহা!চু চু চু। বড়ই কষ্ট লাগল শুইন্যা। আম্মা লন একটু দেইখ্যা আহি গিয়া আমার অসুস্থ দেওরারে।”
এবারও বানু না চাইতেও খিলখিল করে হেসে ফেলল।

“আর ঢং করিস না, ভাতার পাইয়া সব হুশ হারাইস না । বিপদ আপদ কাউরে কইয়া আহে না। আমার পোলার কষ্ট লইয়া দেহি তোর বড় মশকরা করার শখ জাগছে? এত বাড়িস না, জানোসতো বেশি বাড়লে কিন্তু কমতে অয়।”
প্রচন্ড রাগ ভেতরে চেপে এবার জমিরের মা মাটি নিয়ে নিজের রান্না ঘরে ঢুকে গেল।

সারাদিনে সব কাজ গুছিয়ে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরল শাহ আলম। আজ সারাদিনই গঞ্জে ছিল। বরিশাল থেকে এবার এসে কেমন জানি এক অদ্ভুত আচরণ করছে। বানু যেমন রুপে ওকে চেনে এবার তার থেকে একেবারেই ভিন্ন। হাতে করে বাদাম আর মুরলী ভাজা নিয়ে এসেছে শুধু তাই না বানুর জন্য চুড়ি, ফিতা, পাউডারও এনেছে। বানুর মুখে কোন কথা নেই কেবল অবাক চোখে ওর দিকে তাকাল।

“বানু এমনে চাইয়া কি দেহস? যা অর্ধেক বাদাম আর মুরলী ভাজা ছন্দারেও দিয়া আয়। মাইয়াডা বড় খুশি অইব।”
এমন কথাও যে শাহ আলম বলতে পারে তা মনে হয় বানু জানতই না। খাবারগুলো দেখেই ওর মনটা ছন্দার জন্য আকুপাকু করছিল তাই অনুমতি পেয়ে কালবিলম্ব ন করে দৌড়ে চলে গেল শবনমের ঘরে। ছন্দার হাতে খাবারগুলো দিয়ে খুশিতে নিজের হাতের চুড়িগুলো শবনমকে দেখাতে দেখাতেই থেমে গেল। ভেতর থেকে কিছু একটা ওকে থামিয়ে দিল। নিজের হাত শাড়ির আঁচলের নিচে টেনে নিল। শাহ আলমের বদলে যাওয়া রুপ নিয়ে গল্প করতে গিয়ে আবার কথা ঘুরিয়ে নিল। নিজেকে সংযত করে বলল
“আইজ রাইতে যদি আবার কেউ দরজা খটখটায় তাইলে জোরে এক চিক্কুর দিয়া আমারে ডাকবি। আমি লগে লগেই উইঠ্যা আমু। ডরাইস না বইন আমি আছি তোর লগে।”

“আইজ আর আইব ক্যামনে? এই পা লইয়া পারা দেওন অত সহজ না। আপনে নিশ্চিন্তে ঘুমাইতে পারেন ভাবি। আমারে লইয়া ভাইব্যেন না। ভাই আইছে, যান ভাইয়ের কাছে যান। ভাই মনে অয় অপেক্ষায় আছে আপনের।”

শবনমের কথায় বানু আর দেরি করে না নিজের ঘরে ছুটে আসে।
আর ভাবে একটা সময় দুলাল আর শবনমকে এক সাথে রংঢং, হাসি তামাশা করতে দেখে মনে কত কত অভিমান জন্মেছিল নিজের ভাগ্যের উপর। অথচ আজ যখন ওর সুসময় তখন আর ও শবনমের সামনে তা প্রকাশ করতে পারল না। ওর ভেতরের মনুষ্যত্ব ওর গলা চিপে ধরল।

শাহ আলমের এমন পরিবর্তন দেখে বানু একফাঁকে জিজ্ঞেস করে ফেলল তার কারন কী? শাহআলমও কোন সংকোচ না করেই বিস্তারিত বলল, এবার দুলাল বরিশাল গিয়ে ওর সাথে দেখা করে খুব করে অনুরোধ করেছিল বানুর প্রতি সুবিচার করার জন্য। ওর ন্যয্য অধিকারটুকু ওকে দেওয়ার জন্য। দুলাল আরও বলেছিল যে বানুর কষ্ট না কি ও বোঝে নাই তবে শবনম এক মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের কষ্ট বুঝেছে, আর তাই দুলালকেও বুঝিয়েছে বানুর কষ্টগুলোকে। দুলালের সব কথা শোনার পর ও অনেক ভেবেছে। ওর প্রথম বৌকে অনেক অনুনয়-বিনয় করেছে বানুকে নিয়ে একসাথে বরিশাল সংসার করার জন্য। কিন্তু সে মানেনি। তাই ও নিজেই ঠিক করেছে গঞ্জে একটা দোকান দিয়ে এখানে ব্যবসা নিয়ে চলে আসবে। আর বরিশাল থাকবে না। প্রথম বৌ যদি চায় তবে ওর সাথে এখানে চলে আসতে পারবে। আর নয়ত সে থাকুক তার ইচ্ছে মতো।
স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে সেই রাত বানু খুশিতে কেঁদেই কাটাল। কত রাত ও দুঃখে কেঁদে কাটিয়েছে তার আর হিসাব নেই। তবে আজ রাতের কান্নাটা হল সুখের কান্না, বড় সুখের।

এদিকে শবনমের শরীর দিন দিনে ভারী হয়ে উঠল। এবার পায়ে পানি এল, সারারাত পা কামড়ানোতে ঘুমাতে পারে না। আর তখন খুব বেশি দুলালের কথা মনে পড়ে। এমন কোন রাত ছিল না যে রাত দুলাল ওকে জেগে থাকতে দিয়েছে। মাথা নেড়ে হোক, গল্প বলে হোক ওকে ঘুম পারিয়েছে। ওর পাশে থেকে ওর আমিত্বে মিশে গিয়েছিল। আজ দুলাল ছাড়া সময়গুলোতে বড় একা লাগে শবনমের। চোখের পানিতে বালিশ ভিজে তবুও পোড়া মনটা একটুও ভিজে না।সে শুধু উত্তপ্ত খা খা আগুনের উত্তাপ ছড়িয়ে পুড়ো হৃদয়কে কয়লা বানিয়ে দিতে ব্যস্ত।

জব্বারের পায়ের ঘা শুকানোর আগ পর্যন্ত আর ঘর থেকে বের হয়নি। এই সময়তে ওর মায়েরও গলার জোরটা কম ছিল। দুলালের বাবা সবই টের পায়, কিন্তু কিছুই করতে পারে না। জব্বারের কৃত কর্ম টের পেয়ে সে নিজে চুপই ছিল। তার মনে চলছিল অন্য এক বুদ্ধি, যদি জব্বার অঘটন কিছু করেই ফেলে তবে শবনমকে এ বাড়িতেই রেখে দিবে জব্বারের বৌ করে। তারমন চায় না শবনমকে হারাতে। দিনরাত কানের কাছে শলাপরামর্শ শুনছে কীভাবে শবনমকে এখান থেকে উচ্ছেদ করবে। নিরব শ্রোতার মতো শুধু শুনেই যায়, তখন তার মুখ চলে না, চলে শুধু নিরব চোখের পানি যা গড়িয়ে পড়ে বালিশ ভেজাতে ন্যস্ত।
পা পোড়া নিয়ে ঘরে ঢোকার পর, ছেলের পায়ে বড় বড় ফোস্কা দেখে কেনজানি তার খুব আনন্দ হয়েছিল মনে। এক মনে চিন্তা করেছিল সেই আনন্দ নিয়ে, একবার আপনমনে বলেই ফেলেছিল তার সেই আনন্দের সময়ে নিশ্চয় সে পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম বাবা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল।

শাহ আলম এবার চলে যায় বরিশাল, কিন্তু বানুর জন্য রেখে যায় এক অনাগত সুখময় জীবনের অপেক্ষা। দু-চোখ এখন শুধু সুখের স্বপ্ন দিয়ে সাজানো ওর। আর তাতে মনের জোরটাও বেড়ে যায় অনেকগুন বেশি।

প্রসবের দিন যত ঘনিয়ে আসতে লাগল শবনমের শরীরও ততটাই দুর্বল হয়ে পড়ল। ছন্দাকে সামলাতে হয় না বলে তবুও রক্ষা, নাহলে ওকে এখানে রেখে ওর মায়ের মন টিকতো না নিজের গৃহস্থালিতে। কিন্তু এবার তাকে মেয়ের কাছে আসতেই হবে, বাড়ির দায়িত্ব শিউলির উপর দিয়ে তিনি চলে এলেন শবনমের কাছে। এছাড়া আর কোন উপায়ওতো নেই, কারন মেয়ে বায়না ধরে বসে আছে সে স্বামীর ভিটা ছাড়বে না। ওখানে থেকেই স্বামীর অপেক্ষা করবে। মৃত মানুষ কী আর ফেরে? কিন্তু মেয়েতো লাশ না দেখা পর্যন্ত মৃত মানতে নারাজ। পোয়াতির এইসময়তে মেয়েকে আর বেশি কষ্ট দেওয়ার সাহস তার নেই। তাই মেয়ে যখন মনে করে ওর স্বামী বেঁচে আছে আর একদিন ঠিকই ফিরবে তখন মনে মনে নিজের মেয়ের আশা শুনে আমিন বলে উঠে অবুজ মন।
আশেপাশের সবাই মেয়ের কথা শুনে মুখ টিপে হাসে কিন্তু তার হাসি পায় না। বরং মনে হয় যদি মেয়ের ভাবনাটা সত্যি হয় তবে তিনিই বরং সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন।

শবনম ওর মা’কে কাছে পেয়ে কিছুটা শান্তি পেল। কিন্তু শবনমের মুখে জব্বারের রাত বিরাতের যন্ত্রণার কথা শুনে ওর মায়ের আর ভালো লাগে না। এরই মধ্যে একদিন ভোরে চুলা ধরাতে এসে দেখে চুলা দুটোই ভাঙা। ভাঙার ধরন দেখেই বুঝতে পারেন তিনি এটা ইচ্ছেকৃত কারো কাজ। কিন্তু এই বিষয়ে তেমন কিছুই বললেন না, নিজেই লোক লাগিয়ে দুপুরের আগেই আবার নতুন দুই চুলা রেডি করে ফেললেন। চুলার জন্য অপেক্ষা না করে বানুর চুলা থেকেই সেদিনের রান্না সেরে নিলেন। বারবার বানু চেয়েছিল চুলা ভাঙা নিয়ে কথা তুলতে কিন্তু শবনমের মা কেনজানি কোন বিবাদে জড়াতে চাইলেন না।

কনকনে শীতের এক রাতে শবনমের কোল জুড়ে আসে আরেক কন্যা সন্তান।
শবনম মেয়ের মুখ দেখেই কেঁদে ফেলে আর বলে
“ও আল্লাহ ওতো পুরাই ওর বাপের মুখটাই পাইছে। ওরে দেখলেতো ছন্দার বাপে খুশিতে আমারে সোনা দিয়া হাতের বাউটি বানায় দিব। আহুক ফিরা বাড়ি, কয়দিন আর নিরুদ্দেশ থাকব? আমিও দেহামু মজা।”
“হ তুই আছোত তোর বাউটি লইয়া। দেখ মাইয়া কেমনে ড্যাবড্যাবাইয়া ওর মায়েরে দেহে। ” বলে মেয়েকে সরিয়ে নিল দাই খালা ওর সামনে থেকে।

“ও খালা, তুমি আমার মাইয়া লইয়া কই যাও?”

“আ লো মাগি ডরাইস না, তোর মাইয়া কেউ নিব না। অইত যদি পোলা, তাইলে দেখতি ওর কত কদর অইত। তুইতো দেহি পুরাই পোড়াকপালি অইছোস। পরপর দুইডাই মাইয়া, তাও আবার তোর স্বামীডাও গেল মইরা…”

“খবরদার খালা তুমি এমন কতা আর কোনদিন কইবা না। ছন্দার বাপ মরে নাই। হেই এহনও বাঁইচ্যা আছে। তোমরা হেরে কতায় কতায় মাইরা হালাও ক্যা?”

“দূর মাগি, তুইতো দেহি পুড়াই পাগল অইয়া গেছোত। এদ্দিনে যহন আহে নাই, দুলাল আর কোনদিনও আইব না। তোর মাতায় গিলু নাই, এই সহজ বিষয়ডা বুঝোস না?”
দাই খালার কথা শেষ হওয়ার আগেই গরম পানি নিয়ে শবনমের মা ঘরে ঢুকলেন। ততক্ষণে শবনম বিলাপ করে কাঁদা শুরু করল
“ও ছন্দার বাপ আপনে জলদি ফিরা আহেন আমার বাউটি লাগব না। আমি আপনের কাছে কিচ্ছু চাই না। শুধু আপনেরে চাই। আপনে আহেন। আমি আপনের লগে বইয়া দুইডা ডাইল ভাত খামু। রাইতে আপনের বেবাক গল্প শুনুম। আপনের আর একলা একলা গল্প করন লাগব না। আপনে শুধু একবার আমার কাছে ফিরা আহেন।”

“আহহা! শবনম এমন কাঁচা শরীরে এমন চিক্কুর দিছ না, নাড় ছিড়া যাইব পেডের। ধৈর্য ধর মা। আল্লাহ আল্লাহ কর। আল্লার ফয়সালার উপর ভরসা রাখ মা আমার।”
শবনমের মা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন মেয়েকে শান্ত করতে। আর ওদিকে বানু শুরু করল দাই খালার সাথে তর্ক
“ও খালা, তুমি জানো দুলালের বৌ কতডা নরম, তারে এমন দুঃখ দিয়া কতাডা না কইলে কী পারতা না? ”
“ওই বানু আমি কী দুঃখ দিছি, যা সত্য তাই কইছি। অইছেতো দুই মাইয়া। কিয়ের জোরে সোজা অইব ও? কয়দিন আর বাপ ভাইয়ে দেখব?”

“হেই চিন্তা তোমার করন লাগব না। তুমি অহন তফাৎ যাও, ভালা কিছুতো করতে পারো না। হুদাই খালি ভেজাল লাগাও।”

“হ সবই বুঝি! তুইতো আমার লগে তেজ দেহাবিই। তুইতো আর পোয়াতি অইতে পারবি না। তোরতো আর আমারে দরকার পরব না। হেই লেইগ্যাইতো এত গলাবাজি করতাছোস।”

“হ ভালাই বুঝছো, অহন যাও। যাগো তোমারে লাগব, তাগো কাছেই যাও। হুদাই এইহানে বইয়া সময় নষ্ট কইরো না।”

দাই খালা আর সময় নষ্ট করল না। সোজা গিয়ে ঢুকল জমিরদের ঘরে। ওই ঘরেই কথাবার্তা বলে পরে চলে গেল নিজের বাড়ি।

সন্ধ্যার আগেই শবনমের বাবা এলেন নাতনি দেখতে। নাতনির কানে আজান দিয়ে কোলে নিলেন তখনই শুনতে পেলেন
“হ মাইয়া অইল পরের আমানত, বাপের বাড়ি যে কয়দিন থাকার থাহে এরপর যায় স্বামীর বাড়ি। বাপের বাড়ি তহন অয় পর। আর তাগো বাপের বাড়িতে কোন অধিকার থাকে না। অইত যদি পোলা, তাইলে বুঝতাম পোলায় ধরত বাপের সিঁড়ি। কিন্তু অইল নাতো। বাপের সিঁড়ি এইহানেই শেষ।দুলালের নাম নিশানা এইহানেই শেষ।”
শেষ কথাটা বলেই জমিরের মা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল।

শবনমের বাবা যা বোঝার তা বুঝে গেলেন। বানু দাঁতে দাঁত চেপে কটমটিয়ে বলল

“ছন্দার বইন অওনে দেহি শয়তানের গোষ্ঠীর ঈদ লাগছে! তারাতো মনে হয় বিরাট আনন্দে আছে।”
শবনমের মা ইশারায় বানুকে থামতে বললেন। শবনমের কান্না আর থামেনি। থেকে থেকে কাঁদছে, আর তাতে খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়ল।

দুদিন পর শবনমের বাবা একটা খাশি এনে নাতনির আকিকা দিলেন। হুজুর এসে কী নাম রাখবে জানতে চাইতেই শবনম বলে উঠে চিৎকার দিয়ে
“ও ছন্দার বাপ, আপনের ছোড মাইয়ার নাম রাইখ্যা যান। কইয়া যান কী নাম রাখব ওর। আপনের মনে কোন নামে লেইগ্যা হাউস লাগে? কোন নাম মনে ধরে কইয়া দেন। আমিতো এইসব বুঝি না।”
ওর কান্না যে থামবে না তা ওর বাবা বুঝতে পারেন। তাই তিনি নিজেই নাম রাখেন স্বপ্না। হুজুর নিজ থেকেই নাম রাখলেন মোসাম্মাৎ আয়েশা খানম স্বপ্না।

শবনমের বাবা নিজেই নাতনি নিয়ে গেলেন দুলালের বাবাকে দেখাতে। তিনি নির্বাক দর্শকের মতো তাকিয়ে থেকে শুধু নাতনিকে এক নজর দেখলেন, এবার আর দুলালের বাবার মুখে কোন কথা নেই। মনে হল কেউ সুইসুতা দিয়ে তার ঠোঁট দুটো সেলাই করে দিয়েছে।
তার অবস্থা বিবেচনা করেই শবনমের বাবা আর অপেক্ষা করলেন না নাতনি কোলে নিয়ে দ্রুতই ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। তিনি স্পষ্টই বুঝলেন এ বাড়িতে তার মেয়ের টেকা বড় কষ্ট সাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু মেয়েও যে তার নাছোড়বান্দা, সেও যে লাশ না দেখে দুলালের মৃত্যু মানবে না। মেয়েকে নিয়ে আর জোরাজোরি করতে পারলেন না। একটা সময় মেয়েকে বিপদে ফেলে রেখেই বিরক্ত হয়ে তিনি ফিরে গেলেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here