এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ২০

0
374

#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_২০

–তনয় ঘরে আসতেই দেখে তানু মেঝেতে বসে।তাকে কেমন বিধস্ত দেখাচ্ছে।

–তানুকে দেখেই তনয়ের বুকে ধক করে উঠলো। তানুর চোখ গুলো ফুলে গেছে। মনে হচ্ছে অনেক কান্না করেছে। নাক লাল বর্ণ ধারণ করেছে। তনয় তানুর দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলো।

— তানু তনয়কে দেখে সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়।তারপর চোখ মুছে ওয়াসরুমে চলে যায় তনয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। আর তনয় অবাক হয়ে তানুর কর্ম পর্যালোচনা করে যাচ্ছে।তনয় এটা বুঝতে পারছে না তানু হঠাৎ কান্না কেনো করছিল আর মেঝেতে বসে। তনয় আর কিছু ভাবলো না। তানুকে সে জিজ্ঞেস করবে এই ভেবে।

তানু ফ্রেস হয়ে এসে এক মুহুর্ত ঘরে দাঁড়ায় না। সোজা রুম থেকে বের হয়ে যায়।এবার ও তনয় কিছু বলার সুযোগ পেলো না। তনয় অবাকের পর অবাক হচ্ছে। যে মেয়ে আসা মাত্র তার বকবকানি শুরু করে দেয় আজ এতো চুপচাপ।

তনয় পরোক্ষনে ভাবলো। তানু হয়ত গত রাতের জন্য লজ্জা পাচ্ছে তাই তনয়ের সামনে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছে না লজ্জায় হবে। তাই তনয় মনে মনে হেসে দিলো। কিন্তু কান্না কেনো করছিল তানু এটা নিয়ে তার চিন্তা দূর হলো না। কাল সব তানুকে বলে ঠিক করে নিবে ভেবেই একটা হাসি দিয়ে তনয় ওয়াসরুমে চলে যাও ফ্রেস হত।

— তানু এতোক্ষন ছাদে দাড়িয়ে নিজেকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা করে চলছিল কিন্তু সে সফল হলো না তাই ফুপিয়ে কেদে দিলো। তানু ভেবে নিয়েছে এর পরে কি করবে সে তাই চোখ মুছে নিজেকে শক্ত করে ঘরে চলে আসলো।

তনয় ফ্রেস হয়ে এসে তানুকে দেখতে না পেয়ে নিচে যাওয়ার জন্য বের হতে যাবে এমন সময় তানু ঘরে প্রবেশ করে। তানুকে দেখে তনয় একটা সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে।এখন তানুকে একদম স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।

– পড়া শেষ নাকি এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছো যে।তানুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো তনয়।

–পড়তে ভালো লাগছে না আজ। শরীরটা খারাপ করছে ঘুমাবো আমি। আপনি খেয়ে আসেন।

আর তুমি? খাবে না তুমি তনয় বলে।
তানু মাথা দুলিয়ে না বলে। এতে তনয় ভ্রু কুচকে বলে। না খেয়ে থাকলে আরো বেশি শরীর খারাপ করবে।খাবে চলো।

— দেখুন জোর করবেন না প্লিজ। আমার ভালো লাগছে না খেতে আপনি যান। তাই বলে তানু শুয়ে পরে।

– তনয় তানুর দিকে কিছুক্ষন পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থেকে চলে যায় আর জোর করে না।এই দিকে তানু বুঝতে পারে তনয় চলে গেছে তাই সে আবার ফুপিয়ে কেদে দেয়। এতোক্ষন খুব কষ্টে কান্না আটকে রেখেছিল সে।

_____________________

তনয় কোনো রকম অল্প খেয়ে ঘরে চলে আসে। তানু না খাওয়ার জন্য তনয়ের খুব খারাপ লাগছে। তানুর বিহেভ কেমন অদ্ভুত লাগছে আজ তনয়ের। কিন্তু কেনো। হঠাৎ কি এমন হলো তানুর তনয় ভেবেই পাচ্ছে না।

তনয় ঘরে এসে দেখে তানু এক পাশ ফিরে শুয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে ঘুমিয়েছে। তাই ফোন নিয়ে তনয় বারান্দায় চলে যায়।তারপর একজনকে ফোন করে।

তানু তনয়ের আসার আভাস পেয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছিল।তারপর যখন তনয়ের কোনো সাড়া না পাই তখন বিসানা থেকে উঠে দাড়াই তানু। সারা ঘর বিচরণ করে যখন না পায় তনয়কে তখন বারান্দার দিকে পা বাড়ায় তানু আর তখনই কানে আসে তনয় ফোন কাউকে বলছে রিং এর কথা। কাল যথা সময়ে যেনো পাঠিয়ে দেয় সেই নিয়ে কথা বলছে তনয়। তানু আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে আবার ঘরে এসে শুয়ে পড়ে।

চোখের কার্নিশ বেয়ে পড়ছে অশ্রুকণা। তানুর খুব কষ্ট হচ্ছে।এটা ভেবে যে কাল হয়ত তনয় নতুন করে আবার রাত্রিকে প্রপোজ করবে তাই রিং অর্ডার করেছে। হয়ত রাত্রি বলেছে তনয়কে যে রাত্রি আমাকে সব বলে দিয়েছে। তাই তনয় এতো খুশি। এই সকল কথা ভেবে তানুর কান্নারা যেনো আজ বাধ মানছে না।

তনয় কথা শেষ করে ঘরে এসে শুয়ে পড়ে।কিছুক্ষণ পর তনয় বুঝতে পারে তানু জেগে আছে৷ তাই তানুকে বলে কাল সন্ধ্যায় রেডি থেকো তানু। আমরা এক জায়গা যাব। আমি অফিস থেকে এসে তোমাকে নিয়ে যাব সন্ধ্যায়। তানু কোনো কথা না বলে শুধু মাথা নাড়ায়।

________________________

সকালে উঠে তানু নামাজ শেষ করে নিচে নামে। তাসু বসে ছিল সোফায়। এই মেয়ে আজ কিছুদিন সকাল সকাল উঠছে। যার ৯ টা ছাড়া ঘুম ভাঙ্গে না সে এতো ভোরে উঠে ভেবে অবাকই লাগছে তানুর।

তুমি এতো সকালে। কি করছো আপু তানু বলে।
ভাবি তুমি। আসো বসো না।
তানু পাশে বসে গিয়ে। তারপর তাসু বলে উঠেছি কি আর সখে গো।তোমার ভাইয়া একদম স্ট্রেইট বলে দিয়েছে ভোরে নামাজ আদায় না করলে নাকি আমার সাথে কথা বলবে না ইনফেক্ট ৫ ওয়াক্ত নামাজ আমাকে আদায় করা লাগবে। নাহলে সে মশাই রাগ করবে।তাই কি আর করার আমি তো গুড গার্ল গার্ল জানো তো 😇।

আমি সন্ধিহান দৃষ্টিতে তাসু আপুর দিকে তাকিয়ে বলি হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি তো একদম সেই রকম ভালো মেয়ে।কত কথা শুনো তুমি বড়দের। কিন্তু আমার কি মনে হয় আপু জানো। তাসু শুধু রনিতের কাছেই গুড গার্ল। আর রনিতের কথায় শুনে।

তা-নাহলে আমার শাশুমা এতো দিন বলে যে কাজ হয়নি ভাইয়া একদিনে বলে সে কাজ হয়ে গেছে বুঝতে হবে 🙂।তাসু আপু লজ্জা পেয়ে বলে ভাবি তুমি ও না শুধু লজ্জা দাও। এর মধ্যে জাকিয়া হাজির হয়। আর বলে কি গল্প করছ তোমরা আমাকে রেখে শুনি।

তানু বলে বাবা আজ সূর্য কোন পাণে উঠেছে। যাই বাইরে গিয়ে দেখে আসি। জাকিয়া বলে তুমি আর মজা করো না তো ভাবি।ঘুম আসছিল না তাই উঠে আসলাম।

তানু বলে মজা কোথায় করলাম। সত্যি বলাও দোষ বাবা আজকাল।তুমি তো ভোরে নামাজ পড়ে আবার শুয়ে পড়ো তাই বললাম। তা ঘুম না আসার কারণ কি ননদী শুনি।কারো প্রেমে পড়লে নাকি।

তানুর কথা শুনে জাকিয়া লজ্জাই লাল নীল বেগুনি হয়ে উঠে। তারপর বলে যাও তোমাদের সাথে কথা নেই। তারপর সবাই হেসে উঠে।

জাকিয়া বলে ভাবি জানো ভাইয়া প্রেম করছে তাও আবার আমাদের নাবুর সাথে।জাকিয়ার কথা শুনে তানু তাসু ২ জনই অবাক হয়ে যায়।

— তানু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে তুমি সঠিক জেনে বলছো জাকিয়া।

— একদম ১০০% সঠিক হয়ে বলছি ভাবি।আমি কাল রাতে যখন ভাইয়ার রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন ভাইয়াকে কথা বলতে শুনি ফোন। তারপর আমি কোতুহল বসত দাড়িয়ে শুনার চেষ্টা করি আর তখনই নাবুর নাম বলে ভাইয়া। আমি তখনই সিয়র হয়ে যায় ভাইয়া আর নাবুর প্রেম চলছে ।

— জাকিয়ার কথা শুনে তানু খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে।কারণ তানু নিজেই এই বাড়ি থাকবে না। তানু চলে গেলে ২ বাড়ির মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক কেমন হবে তানুর জানা নেই। তখন যদি এদের সম্পর্কটা কেউ মেনে না নেয়।তানুর খুব কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে তার জন্য হয়ত তার বোন ভালবাসার মানুষটা কে হারাবে।কিন্তু তানুর ও যে কিছু করার নেই।

– তখন তাসু বলে ওই ভাবি কই হারিয়ে গেলে।অনিক ভাইয়ার থেকে তাহলে ট্রিট নিতে হচ্ছে কি বলো ভাবি।। আমাদের আড়ালে প্রেম করা দেখাচ্ছি ব্যাটাকে। আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম হ্যাঁ তা তো বটেই।কিন্তু মনে চলছে অন্য রকম ঝড়।

__________________________

তানু সবার সাথে কথা বলে কোচিং-এ বের হয়ে যায়।আজ আসার সময় তানু যা কান্ড করতে ছিল সবাই বেশ অবাক হয়েছে তানুর কাজে।শাশুড়িমা কে জড়িয়ে ধরে বলে ভালো থেকো মা।আর নিজের যত্ন নিও।বাবার খেয়াল রেখো। এতে রেহেনা পারভিন অবাক হয়ে বলে কি বলছিস এই সব তুই। এমন ভাব করছিস যেনো আমাদের ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাচ্ছিস পাগলী একটা। সাবধানে যাস আর ফিরে আসিস তাই বলে রেহেনা পারভিন ( তানুর শাশুড়ী) রান্না ঘরে চলে যায়।

তানু তাসু জাকিয়া পায়েল এমনকি বাড়ির সবার সাথে এক কাজ করেছে আর এতে সবাই বেশ অবাক হয়েছে। শুধু তনয়ের সাথে কোনো কথা হয়নি তানুর। তনয় সকাল সকাল চলে গিয়েছে জরুরি কাজ থাকায়। তার উপর আজ তাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে তাই অনেক কাজ বলে আগেই চলে গেছে।তানু ভেবেছিল আজ অন্তত তনয়ের সাথে যাবে কিন্তু সেটাও তার ভাগ্যে হলো না।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তানু রওয়ানা হয় অজানা পথের উদ্দেশ্যে…………..

চলবে….

( রিচেক হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here