এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ২৭

0
377

#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_২৭

–তাসু কারো গভীর চাহনির আভাস পেয়ে চট করে চোখ খুলে ফেলে আর দেখতে পায় দুইটা নেশাতুর চোখ তার দিকে গভীরভাবে চেয়ে আছে। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোতে চোখ দুটো চিনতে তাসুর একটুও সময় লাগলো না। কিন্তু যখনই তাসু উপলব্ধি করে এতো রাতে রনিত কি করে আসতে পারে তার ঘরে। হুস ফিরতেই তাসু তাড়াতাড়ি করে উঠতে যায় তখনই রনিত তাসুর দুই হাত বলেন বিসানার সাথে চেপে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দেয় তারপর গলায় জোরে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।

–তাসু ব্যথা সহ্য করতে না পেরে চোখের পানি ছেড়ে দেয়। দাতে দাত চেপে ব্যথা সহ্য করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। রনিত মুখ তুলে দেখে তাসুর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে কিন্তু তাতে যেনো রনিতের আজ তেমন কষ্ট অনুভব হচ্ছে না।

— রনিত মুখ তুলেই বলে ছেলেটা কে ছিল তাসু.? যার সাথে আজ কলেজে হাত ধরে হাসতে হাসতে কথা বলছিলে। বলো কে ছিল ছেলেটা জোরের সাথেই বলে কথাটা রনিত।

— তাসু মনে মনে ভাবতে থাকে এ কোথায় থেকে দেখলো। তাহলে কি রনিত সেখানে ছিল৷ এই ভেবেই রনিতকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রনিত বলে নো মোর টক জাস্ট স্পিক আপ হু ইজ হি?
– তাসু এবার সোজা ভাবে বলে দেয় সে আমার বন্ধু রাহুল। যার কথা মাঝে মাঝে আপনাকে বলতাম আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

— রনিত এবার স্বস্তি পায় কথাটা শুনে। একটা শান্তির নিশ্বাস ছাড়ে সে বুক থেকে যেনো একটা বড় পাথর নেমে গেলো তার। এবার নরম স্বরে বলে রনিত সরি আসলে আমি ভেবেছিলাম অন্য কেউ হবে। হাত ধরে হাসাহাসি করতে দেখে রাগ হয়ে গিয়েছিল। সরি তাসু সোনা। খুব ব্যথা পেয়েছো তাই না। তাই বলে রনিত কামড়ানোর স্থানে আলতো করে ঠোঁট ছুয়ে দেয় তাসু এবার কেঁপে ওঠে।

–তাসু এবার রনিতকে ধাক্কা দিতে থাকে কিন্তু তাতে একটুও লাভ হয়না৷ রনিত ওইভাবেই থেকে যায় তাসুর উপর। তাসু হতাশ হয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরে তাকায়। তা দেখে রনিত একটু হেসে উঠে। তাসু বলে এবার আপনি এখানে কেনো এসেছেন। আর এতো রাতে আমার ঘরে কেনো। জানেন না একটা অবিবাহিত মেয়ের ঘরে তার অনুমতি ছাড়া আসতে নেই তার উপর আবার রাতের বেলা।

— আমি তো আমার প্রেমিকা প্লাস হবু বউয়ের ঘরে এসেছি অন্য কারো ঘরে নয় তো। আমার সম্পুর্ন অধিকার আছে আসার একটু ভাব নিয়ে বলে কথাটা রনিত।

– তাসু বলে কে প্রেমিকা আর কে হবু বউ। আমি কারো কিছু না। আমার কারো সাথে কোনো সম্পর্ক নেই আর। আপনি ভুল করছেন মিস্টার রনিত। দয়া করে বের হয়ে যান কেউ দেখলে খারাপ হয়ে যাবে ব্যাপারটা।

— রনিত এমন একটা ভাব ধরে যেনো সে তাসুর কোনো কথায় শুনেনি। তাসু এবার বিরক্ত নিয়ে রনিতের দিকে তাকায় আর বলে কি হলো শুনতে পাননা নাকি কি বললাম। যান বলছি সরুন আমার উপর থেকে রাগ নিয়ে বলে কথাটা তাসু।

— তুমি আমায় বিয়ে করবে না তাই তো৷ তুমি আমার কেউ না তাই তো? তাসু এবার সরু চোখে রনিতের দিকে তাকায় তারপর চোখ সরিয়ে বলে না আমি কারো কেউ নয়। আর না কেউ আমার কোনো কিছু অভিমান নিয়ে বলে কথাটা তাসু। তখনই রনিত এমন একটা কাজ করে বসে যা তাসুর ভাবনার বাহিরে ছিল

— তাসু পুরো জমে গেছে রনিতের কাজে চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে আর বোঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে তার সাথে। রনিত তাসুর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। তাসু এবার রনিতকে ছাড়ার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। বেশ কিছুক্ষণ পর রনিত ঠোঁট ছেড়ে দেয়। তাসুর এবার বেশ লজ্জা লাগছে তাই সে রনিতের দিকে তাকাতে পারছে না লজ্জাতে। অন্যদিক মুখ ঘুড়িয়ে রেখেছে। রনিত বলে আমার দিকে তাকাও তাসু সোনা। এবার বলো বিয়ে করবে না আমায়।

— তাসু কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথা ঝাকিয়ে বলে না। রনিত আবার একই কাজ করে আর তাসু তো অবাকের পর অবাক হচ্ছে৷ তার চোখ যেনো কোঠর থেকে বেরিয়ে আসা উপক্রম। রনিত আবার একই কাজ করবে সে কল্পনাও করেনি। রনিত এবার উঠে বলে। এখনো কি একই উত্তর থাকবে তাসু সোনা।

– আমার অবশ্য কোনো সমস্যা নেই তাতে। তুমি না বলতেই পারো। তাহলে আমি আবার একটা সুযোগ পাব তোমাকে আদর করার। তুমি যত বার না বলবে ততবারই তোমার এই রোমান্টিক থেরাপি চলবে তাসু সোনা। এখন চয়েস তোমার দেখো কি করবে।

– তাসু এবার দুইহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে তারপর মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলে। রনিত একটু দুস্টামি করে বলে ওহ তুমি এখনো বিয়ে করতে রাজি না ওকে তাই বলে যা এগোতে যাবে তখনই তাসু জোরের সাথে বলে না না আমি বিয়ে করব। আর তোমাকেই করবো প্লিজ আর না তাই বলে লজ্জায় মুখ ঢেকে নেয়।

– রনিত বলে ইসস অনেক বড় লস হিয়ে গেলো৷ এতো সহজে রাজি হয়ে গেলে কেনো বলতো।আমি আর তোমাকে বাকিটা তাসু আর বলতে দেয় না রনিতকে তার আগে মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়। তারপর তাসু বলে আর কিছু বলো না প্লিজ আমি শুনতে পারছি না।

– কেনো লজ্জা পাচ্ছো বুঝি। দেখি দেখি আমার ডন কে।
বাবা তুমি ও লজ্জা পাও আজ না আসলে আমি তো জানতামই না আমার লেডি ডনও লজ্জা পায়। যাক সব দিক দিয়ে বেশ লাভ হলো আমার। তাই বলে এবার উঠে পরে তাসুর উপর থেকে।তাসু ও এবার উঠে বসে।

— রনিতে এবার তাসুর হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে সরি এতদিন কষ্ট দেওয়ার জন্য। আমার সত্যি এমনটা করা উচিত হয়নি। কি করবো বলো তানু চলে যাওয়াতে বেশ রাগ হয়েছিল তোমাদের উপর। আমি তানুকে নিজের বোনের মতো ভালবাসি তাই আমি ওর চলে যাওয়া টা মানতে পারছিলাম না। সরি তাসু সোনা আই রিয়েলি সরি। এর জন্য যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেব কিন্তু আমাকে ছেড়ে দূরে যেতে চেও না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। এতো দিন আমি কত কষ্ট পেয়েছি তোমাকে বুঝাতে পারব না তাসু।

— তাসু এবার রনিতকে জড়িয়ে ধরে বলে এবার মাফ করে দিলাম ভবিষ্যতে আর করব না হু। জানো কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম আমি। মরে যেতে ইচ্ছে হতো আমার।সাথে সাথে রনিত মুখ চেপে ফহরে তাসুর। আর বলে এই সব বলতে নেই পাগলী। আমি তো তোমারই তুমি তো আমার সব পাগলী। অবশেষে শেষ হয় এদের মান অভিমান পালা, 🥰।

__________________________________

–সকালে চৌধুরী বাড়ির সবাই একসাথে বসে নাস্তা করছিল তখনই দুজন ব্যক্তি প্রবেশ করে চৌধুরী বাড়িতে। সবার দৃষ্টি সেদিক যেতেই খাওয়া থামিয়ে দেয় আর তনয় উঠেই বলে মেহেদী তুই। কতদিন পর দেখা । তা হঠাৎ কি মনে করে আমার বাড়ি এতো সকাল সকাল হুম।

– তখনই মিসেস রেহেনা পারভীন বলে কি হচ্ছে তনয় আগে ওদের বসতে দে। ভাবি আসুন বসুন আগে এই ছেলের কান্ড জ্ঞ্যান হবে না আর। মেহেদী আর মেহেদীর মা সহেলা খান এসেছে। তনয় মাথা চুলকাতে থাকে এবার আর মেহেদী তা দেখে মৃদু হাসে।

— জাকিয়া তো খাওয়া বন্ধ করে হা করে তাকিয়ে আছে সেদিকে।মেহেদী আসছে তার বিশ্বাসই হচ্ছে না।তানু বুঝতে পেরে জাকিয়ার কাছে গিয়ে বলে এতো দেখো না ননদী কিছু দেখা বাসরের জন্য জমিয়ে রাখো।তানুর কথায় জাকিয়া বেশ লজ্জা পায় তাই চোখ সরিয়ে নিচে তাকায়। কিন্তু এদের আসার কারণ কি বুঝতে পারছে না।

— তনয়ের বাবা আরমান চৌধুরী বলে তা ভাবি সাহেবা হঠাৎ কি মনে করে আপনাদের আসা যদি বলতেন। মেহেদী আর মেহেদীর মা সহেলা খান একটা হাসি উপহার দিয়। তারপর সহেলা খান বলে ভাইয়া একটা আবদার নিয়ে আসছি আপনাদের কাছে। খালি হাতে ফিরাবেন আমাদের দয়া করে।
— আরমান চৌধুরী সহ সবাই এবার ভ্রু কুচকে তাকায় তারপর উদখুস হয়ে বলে কি আবদার বলুন।

– আমি আপনার ভাইয়ের মেয়ে জাকিয়াকে আমার ছেলে মেহেদীর বউ হিসেবে চাই ভাই সাহেব। কথাটা শুনে সবাই যা না চমকেছে তার থেকে বেশি চমকে তাকায় জাকিয়া আর তানু। তাদের যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না। জাকিয়ার সাথে মেহেদীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছে। জাকিয়া ইয়া বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে সেটা দেখে মেহেদী মাথা নিচু করে হাসে।

– তখনই আরমান চৌধুরী বলে দেখুন আমরা তো এখন জাকিয়ার বিয়ে নিয়ে ভাবছি না তাছাড়া ওর পড়াশোনা এখনো শেষ করার ব্যাপার আছে। তাছাড়া আমার মেয়ের আগে জাকিয়ার বিয়ে দিতে চায় না।

– মেহেদীর মা আর মেহেদী একটু হতাশ হয়। মেহেদী করুণ চাহনি নিয়ে জাকিয়ার দিকে চায় আর জাকিয়ার ও একই অবস্থা। তানু এবার বলে বলছিলাম কি বাবা। তাসু আপুর তো বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। এবার দিন ঠিক করলে হয়ে যাবে তো জাকিয়ারও যদি এক সাথে বিয়ে হয় তাহলে সমস্যা কোথায় বাবা। মেহেদী ভাইয়া তো ছেলে হিসেবে ভালোই। আর আপনারা তো সব জানেন তার বিষয়ে। একটু ভেবে দেখলে ভালো হতো না।

– তনয় বলে হ্যাঁ বাবা তানু ঠিক বলেছে। জাকিয়ার জন্য এর থেকে ভালো সম্বন্ধ আর হয় না। যদি ছোটমা চাচ্চুর আপত্তি না থাকে তাহলে আমরা ভেবে দেখতে পারি।

– তখনই আব্রাম চৌধুরী( তনয়ের চাচা) বলে ভাইয়া যা করবে তাতে আমার মত আছে৷ আমার আলাদা কিছু বলার নেই। পায়েল চৌধুরীও একই কথা বলে। তানু আর জাকিয়ার মুখে এবার একটু হাসি ফুটে।

– আরমান চৌধুরী বলে কিন্তু তাসু তো রনিতকে বিয়ে করতে চাইছে না তানু মা। তাসু এবার চমকে উঠে তার বাবার কথায়।শেষে আবার তার আর রনিতের বিয়েটা না কেচে যায়। সেতো রাগ করে বলেছিল কথাটা আর সবাই সত্যি ধরে নিল ধুর ভাল্লাগেনা মনে মনে ভাবে তাসু। তখনই রনিত সাথে তার বাবা মা আসে আর বলে কে বলেছে তাসু আমাকে বিয়ে করতে চায় না আংকেল…………..

চলবে..

ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here