তুই আমার অঙ্গারাম্লজান – পর্ব ১১

0
281

#তুই_আমার_অঙ্গারাম্লজান
পর্ব_১১
লেখনী: মাহরুশ মুতাদায়্যিনাত মুক্তা

১৩.
মোবাইল হাতে বসে আছি। আমার দুইপাশে আমার ভদ্র-নম্র, পূত-পবিত্র বান্ধবীগণ আসন নিয়ে আছে। কয়দিন ধরে মেসেঞ্জার থেকে এক দন্ডও নড়িনি। মনে হচ্ছিল এই বুঝি উনি নক দেবেন। কিন্তু শালা! এতো এতো অপেক্ষা। বর্তমানে হাতে চাঁদনীর ফোন। তার ফোনে আমার ফেসবুক আইডি লগইন করেছি।

“তুই এমন আবালের আবাল! বাদাইম্মাও তোর থেকে বুদ্ধিসম্পন্ন ছিল।”
আকস্মিক ধমকে আমি থতমত খেয়ে চাঁদনীর দিকে তাকালাম।
“মানে?”
চাঁদনী আমার মাথায় চাটি মেরে বললো,
“আরে মহিষের বাল। নিজের জামাইয়ের নাম এখনও জানস না। অথচ সিঁড়ির তলায় আইসা তোমারে চুমাচামি মাইরা জায়গা। বাচ্চারে বাপের নাম বলার জন্যও তো জাইনা রাখা দরকার।”
আমি তার বাহুতে সজোরে আঘাত করে বললাম,
“থাবড়া মেরে জিহ্বা গরুর জিহ্বার মতো চার ইঞ্চি লম্বা করে ফেলবো বেয়াদব। আমি তোদের এই কাহিনী শুনিয়েছি? উনি আমাকে চুমা দিয়েছে চুমা?”
তুশিরার চুল টেনে ধরে বললাম,
“তুই-ও ওর সাথে হাসিস কেন? আমি তোর মতো বয়ফ্রেন্ড পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ি?”
তুশিরা হাসিমুখ কালো করার চেষ্টা করে বললো,
“আমি চাঁদনীর উদ্ভ্রান্ত কথা শুনে হাসছি। আর তুই যে চুমু খাসনি তা আমি বিশ্বাস করেছি। হান্ড্রেড পার্সেন্ট বিশ্বাস করেছি।”
আমি দুজনকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে গুমোর মুখে বসে রইলাম।
চাঁদনী আমার দিকে খানিক সরে এসে বললো,
“দোস্ত একটা কথা কই। ছ্যাঁদ করে উঠিস না। তুই তোর জামাইয়ের কত নম্বর বউ?”
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম।
বললাম,
“ওই লোকের কথা শুনে তো মনে হলো এক নম্বর বউ।”
তুশিরা বললো,
“ভবিষ্যৎ বউয়ের কথা উল্লেখ করেছে, তুই-ই বললি। এমনও হতে পারে ভবিষ্যৎ বউ আগে থেকেই ঠিক করা আছে‌‌। তাই কষ্ট করে তোকে বের করে ডিভোর্স দিতে চাইছে। এমন হ্যান্ডসাম একটা ছেলে, সিঙ্গেল তো অবশ্যই থাকবে না।”
আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমি কি সুন্দর না? রূপবতী নই? আমার মতো কাউকে ব্যতীত এই সুদর্শন পুরুষকে আর কেউ আগলে রাখতে পারবে না। আমার সঙ্গে বিচ্ছেদ হলে কোন পাতিশিয়ালের পাল্লায় পড়বে কে জানে। না, না, না! বুকে বড় ব্যথা হচ্ছে।
আমি আমার বুক চেপে ধরে মৃদু আর্তনাদ করে বললাম,
“বুকে বড় জ্বালা।”
চাঁদনী চিন্তিত মুখে বললো,
“পাছায় ব্যথা করলে কইতাম পাইলস হইছে। এহন কি কইতাম?”
সঙ্গে সঙ্গে আমার বুক ব্যথা কমে গেলো।
সোজা হয়ে বসে বললাম,
“আল্লাহ কি বাস্তে, আপতত দোয়া-দরূদ পড়ে নিজের উপর রহমত আনয়ন কর।”
তখন মোবাইলে টুং করে শব্দ হলো। ফেসবুক নোটিফিকেশন এসেছে কোনো এক মহামান্য ব্যক্তি আমাকে তার সঙ্গে মিত্রতার সম্পর্ক তৈরি করতে আহ্বান করছেন। তবে আমার ক্লাস আছে। আহ্বানে সাড়া দেওয়ার পূর্বে ডিজে টেকনোর মিউজিক লাগিয়ে বাজিয়ে নিই।

আইডির নাম দেওয়া আবরেশাম প্রিয়ল। আমি ঠোঁট উল্টালাম। ফেইক আইডি।
সবাই-ই আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায়, আর আমার বিয়ে করা বর? প যোগ প ইজ ইকুয়েলস টু প্রতিবন্ধী পুরুষ।

চাঁদনী মোবাইলে উঁকি মেরে বললো,
“প্রোফাইল কালা কেরে? মরারগুলা ফেইক আইডিও খুলতে পারে না। এমনে খুলে ছাগলডি! খুললে খুলবো আমার মতো। নীলয় চৌধুরী। কাজ: সাইকোলজি স্টাডিং ইন ঢাকা মেডিকেল কলেজ।”
আমার চোয়াল ঝুলে গেলো।

কিছুদিন আগে একটা ছেলে আমাকে মেসেঞ্জারে খুব জালাচ্ছিল। ফাহাদ থাকাকালীন সময়ে। আহা, কি মিষ্টি মিষ্টি কবিতা! কি পেটের পৌষ্টিকতন্ত্র মোচড় দেওয়া ছন্দ! ফাহাদ না আসলে, তার উপর সন্দেহ জাগার মতো কোনো কর্ম সংঘটিত না হলে আমি তো সেই ছেলের সঙ্গেই কেল্লা ফতে করে দিতাম। সেই ছেলের আইডির নাম ছিল নীলয় চৌধুরী!
আমি কিছু বলার আগে তুশিরা মুখ খুললো,
“জুলেখা খাতুন বিপাশা!”
চাঁদনী তখন লজ্জা পেয়ে তুশিরার দিকে তাকালো। এরপর বড় করে ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢাকলো।
তুশিরা সটান উঠে দাঁড়িয়ে চাঁদনীকে উরাধুরা কিল-ঘুষি দিতে লাগলো। আমি কিছু বললাম না। তাদের বাধা প্রদানের চেষ্টা করলাম না। জীবনে অনেক দুঃখ। এখন একটু বিনোদন নেওয়া যাক।

তুশিরার মার খেয়েও চাঁদনী খেক খেক করে হাসছে।
তুশিরা কোমরে হাত রেখে চেঁচামেচি শুরু করলো,
“এই অসভ্য মেয়ে জানিস কি করেছে! আমাকে নক দিয়ে বলে নাহিয়ান তার বয়ফ্রেন্ড। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ কিছু হয়েছে।”
আমি ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলে চেঁচিয়ে উঠলাম।
“তুশিরা আমাকে থামিয়ে বললো,
শুধু তাই না। সে বললো নাহিয়ানের অনেক সমস্যা আছে। বিবাহিত জীবন সুখকর চাইলে শ্রীঘ্রই তাকে যেনো গাইনি ডাক্তার দেখাই।”
আমি হেসে ওঠলাম।
“তুই হাসছিস!”
তুশিরা রাগ করে মুখ শক্ত করে আমার পাশে বসে পড়লো। চাঁদনী উঠে তুশিরার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে। আমি তাদের দেখে হেসে চলছি। তাদের কর্মকান্ড দেখতে দেখতে মেসেঞ্জারে মেসেজ রিকোয়েস্টে গেলাম। আবরেশাম প্রিয়ল নামক আইডি থেকে মেসেজ এসেছে।
আমি বললাম,
“তুশিরা শোন, এই ফেইক আইডিকে ইচ্ছেমত ধুয়ে দে। আমাকেও নিশ্চয়ই কোনো বদ মতলবে নক দিয়েছে। ইচ্ছেমত গালাগালি কর। দেখবি রাগ পানিকা পানি, দুধকা দুধ হয়ে গেছে।”
তুশিরার বোধহয় আমার প্রস্তাব পছন্দ হলো। সে নীরব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
ফেইক আইডি থেকে কি মেসেজ এসেছে আমি তা চেইক করতে লাগলাম।
দুই মিনিট বাদে আমার হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো। চাঁদনী আর্তচিৎকার দিয়ে ওঠলো,
“নেহিইই! মেরি ফোন! মেরি পেয়ারা সা, নান্না সা ফোন!”
চাঁদনী ফোন হাতে নিয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে চিৎকারের স্বর মৃদু করলো।
মৃদু চিৎকার করতে করতে বলতে লাগলো,
“আসসালামুআলাইকুম, হ্যালো অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ আমার ফোন, হাই অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ, ফাবলীহা অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ, অনলাইন হলে জবাব দেবেন অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ, নাহলে অ্যাঁ অ্যাঁ বিয়ে করে জামাই অ্যাঁ অ্যাঁ..”
তুশিরা উঠে চাঁদনীর গালে ঠাশ করে থাপ্পড় মারলো।
“তুতলা কোথাকার! ভালোমতো পড় নাহলে দাঁত ফেলে দেব।”
তুশিরা চাঁদনীর হাত থেকে ফোন নিয়ে নিজেই পড়লো,
“নাহলে বিয়ে করে জামাই ফেলে রেখে আসার অপরাধে পুলিশ সহ আমি আমার শ্বশুরবাড়ি হানা দেব।”
তুশিরা কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। মূল কাহিনী মাথায় খেলে যেতে উত্তেজিত হয়ে বললো,
“দোস্ত এটা তোর স্বামী!”
এরপর ফোনটা আমার হাতে দিলো।
আমি কতক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। নিশ্চিত হতে পারছিলাম না এটা সে কি-না। হয়তো কোনো বন্ধু হবে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব অপসারণের উদ্দেশ্যে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করি। প্রোফাইলে দেওয়া বিবাহিত। যেদিন আমার সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেদিনেরই তারিখ দেওয়া আছে।
আইডি ঘাটাঘাটি করে বুঝলাম এটা আমার সদ্য প্রাপ্ত সোয়ামীই।

“দোস্ত দেহা দেহা, পোলা কিয়ে পড়ে, কোনায় কাম করে।”
চাঁদনী আর তুশিরা তার তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত। আর আমি অসুস্থ। আমার বুকটা ধক ধক করছে। শ্বাসও যেনো নিতে পারছি না।

চাঁদনী আমার হাতে ফোন দিয়ে বললো,
“এই ল কথা ক।”
নতুন মেসেজ এসেছে,
“কি ব্যাপার? সীন করে উত্তর দিচ্ছো না কেন?”
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে লিখলাম,
“শিউর হতে পারছিলাম না এটা যে আপনিই। ভেবেছিলাম আপনার কোনো বন্ধু বা অন্য কেউ হলে..”
“না, এটা আমিই। তোমার একমাত্র স্বামী।”
আমি বারবার লেখাটিতে চোখ বুলাচ্ছিলাম, “তোমার একমাত্র স্বামী!”
চাঁদনী হা করে বললো,
“মা গো মা, লজ্জায় দেহি কাইত।”
আমি তাকে আমার কাঁধ দ্বারা মৃদু ধাক্কা মেরে বললাম,
“কিসের লজ্জা!”
চাঁদনী চোখ পাকিয়ে বললো,
“বেটা তোরে তুমি কয় করে? এরপরও কস সিঁড়ির নিচে দাঁড়াইয়া কিছু করস নাই?”

ওই পাশ থেকে মেসেজ এলো,
“তো আর কি খবর?”
আমি উত্তরে বললাম,
“খবর হলো আপনি আমাকে তুমি করে ডাকবেন না। আপনি ডাকবেন, আপনি! কয়দিন পর তো ছাড়াছাড়ি হয়েই যাচ্ছে। তাহলে এতো লুতুপুতু দেখানোর মানে কি?”
তৎক্ষণাৎ কোনো উত্তর এলো না।

দুই মিনিট পর উনি জবাবে লিখলেন,
“কিছু মানুষ আছে তাদের মুরদ ওই চ্যাটিং অবধিই। সামনাসামনি এলে জুতা খুলে দৌঁড় দেয়। সিঁড়ি থেকে ঝাঁপ দিয়ে স্মৃতিশক্তি নষ্ট করার পরিকল্পনা আঁটে। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর বদলে কাঁপাকাপি পা দিয়ে পিয়ানো বাজায়।”
আমি হতভম্ব হয়ে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
অপমানস!
তার থেকে শেষ বার্তাটি এলো,
“ঠিক আছে মিসেস আবরেশাম প্রিয়ল। যেই রেস্টুরেন্টে আপনার বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে, কাল কলেজ শেষে সেখানে থাকবেন। অন্যথায়, আপনার বাসায় আমার পদচারণা পড়বে।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here