পতিতা বউ – পর্ব ১

0
1536

>>চলে যাচ্ছি আমি

আফিফ কে উদ্দেশ্য করে নুহা বলল।। এরপর আফিফ নুহা কে বলল,,

>>হুম যাও তোমাকে আটকানোর অধিকার আমার নেই।। ভালো থেকো।।

নুহার চোখ ছলছল করে উঠলো।। সে মনে মনে প্রার্থনা করছিলো যাতে আফিফ তাকে বাধা দেয়। কিন্তু তার উলটা টা হচ্ছে আফিফ তাকে চলে যেতে বলছে।। নুহা তার ল্যাগেজ টা হাতে নিয়ে হাটা দিলো।। সে ঘর থেকে বের হয়ে গাড়ি তে বসলো।। নুহা অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে।। সে এখনো আশা করে বসে আছে যে আফিফ দৌড়ে এসে তাকে আটকাবে।। ঠিকই আফিফ দৌড়ে এলো।। নুহা এক মুহূর্তের জন্য খুশি হয়ে গেলো যে আফিফ তাকে আটকাতে এসেছে।নুহা তার চোখের জল মুছে হাসি মুখে আফিফের দিকে তাকালো।।। আফিফ এসে নুহাকে বলল,,

>>তুমি তোমার ফোন টা ফেলে এসেছিলে।। এই নাও।।

নুহার সব খুশি আবারো এক মুহূর্তের জন্য বিলীন হয়ে গেলো।। সে নিরবে আফিফ থেকে তার ফোন টি নিয়ে ড্রাইভার কে বলল গাড়ি স্টার্ট করতে।। নুহা ঘর থেকে তো বেড়িয়ে এলোই কিন্তু সে জানে সে কোথায় যাবে বা কোথায় যাচ্ছে।। পরক্ষণেই সে ড্রাইভারকে বলল,,

>>ভাইয়া মহুয়া গল্লির দিকে চলুন।।

এই কথা টি শুনে ড্রাইভার বিষ্মিত হয়ে নুহার দিকে আড়চোখে তাকালো।। এরপর গাড়ি সেই দিকের উদ্দেশ্যে চালাতে লাগলো।।

আফিফ তার রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।। সে জানে না তার সাথে কি ঘটে গেলো।। সে নুহাকে আটকাতে চেয়েও পারলো না।। সে অনেক ভালোবাসে নুহাকে কিন্তু নুহা তার এই ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে দিয়েছে।। নুহার আসল পরিচয় যা ছিলো সে এখনো তাই রয়ে গেছে।। সে একটুও বদলায়নি।। আফিফের দম বন্ধ হয়ে আসছিলো এইসব ভাবতে ভাবতে।। তার মনে আবারো নুহাকে ফিরে পাবার ইচ্ছা হচ্ছে কিন্তু নুহার অভ্যাসের কারণে সে নুহাকে আর ফেরাতে চায় না। কিন্তু সে এক মুহূর্তের জন্য ভাবছে যে নুহা মিথ্যা বলছে না।। অপরদিকে এটাও মাথায় ঘুরছে যে ছোট মা কখনো মিথ্যা বলতে পারেন না।। তিনি নিশ্চয় কিছু না কিছু দেখেছেন নাহয় রমন বলতেন না।। এসব ভাবতে ভাবতে আফিফ তার রুমের আয়নায় হাত দিয়ে সজোরে আঘাত করে।। ফলে আয়না ভেংগে তার হাতে ঢুকে যায়।।তাও আফিফের কোনো ব্যাথা অনুভূত হচ্ছিলো না।। আয়না ভাঙার আওয়াজ পেয়ে আফিফের ছোটো মা নাহিদা দৌড়ে আসে।। এসে দেখেন যে আফিফের হাতের অবস্থা ভালো না।। তিনি আফিফকে ধরে খাটে বসালেন।। আফিফ চুপচাপ বসে আছে।। নাহিদা বেগম আফিফের হাতে বেন্ডেজ করে দিলেন।। কারো মুখে কোনো কথা নেই ২জনেই নিরব।। নাহিদা উঠে আসার সময় আফিফ বলে উঠলো,,

>>মা সত্যিই কি নুহা এমন??

নাহিদা কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলেন,

>>মনে হচ্ছে আমার প্রতি তোমার যা বিশ্বাস ছিলো তা হারিয়ে গেছে।।

>>এমন কিছু নয় মা। আমি তাকে অনেক ভালোবাসি তাই আমার মন মানতে চাইছেনা।।

>>আফিফ আমি এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চায় না।। অই মেয়ের কথা ও আমি আর শুনতে চায় না।। তুমি রেস্ট নাও।।

এই বলে নাহিদা চলে গেলেন আফিফের রুম থেকে।। আফিফ তার মোবাইল টা নিয়ে তার আর নুহার বিয়ের ছবি গুলো দেখতে লাগলো।। তার গাল বেয়ে নিরবে অস্রু গড়িয়ে পড়ছিলো।। তার মন চাইছে নুহা কে আবার ফিরে পেতে কিন্তু সে জানে তা আর কখনো সম্ভব নয়।।

নুহার গাড়িটা এসে মহুয়া পল্লির সামনে এসে দাঁড়াল।। তার অতি পরিচিত একটি জায়গা এটি।। বলতে গেলে সে এখানেই বড় হয়েছে।। ড্রাইভার কে টাকা দেওয়ার সময় ড্রাইভার তাকে জিজ্ঞেস করলো,,

>>আপুমনি কে কি এখানে পাওয়া যাবে আসলে??

>>কেন?

>>না মানে বুঝেন তো।।

>>শুনুন আমি এখানে শুধুমাত্র কারো খোঁজে এসেছি তাছাড়া আর কিছুই না।। সো অযথা ফালতু মন্তব্য করবেন না।।

>>জি মাফ করবেন। তবে জায়গা টা ভালো না সাবধানে থাকবেন।।

>>আপনি আপনার কাজে মন দিন এই নিন ভাড়া।।

ড্রাইভার চলে গেলো।। বলতে গেলে ড্রাইভার এর কথায় নুহা একটু ও অবাক হয়নি।। সে এমন একটি জায়গায় এসেছে যেখানে তাকে দেখলে যে কেউই এই প্রশ্নটি করতে পারে।।

মহুয়া পল্লিতে ঢুকে সে ১০নং কুঠিতে গেলো।। কুঠির বারান্দায় শবনম বেগম বসে বসে পান চিবুচ্ছিলেন।। নুহা কে দেখে তিনি খুশি হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলেন।। নুহা ও এতোদিন পর শবনম বেগম কে কাছে পেয়ে কেঁদে ফেলল।। একসময় এই শবনম বেগমই নুহার সব কিছু ছিলো।। শবনম বেগম বাকি সবাইকে ডাকতে লাগলেন,,

>>কিরে তো সবাই কোথায়?? দেখ কে এসেছে।। আজ কতদিন পর আমার মা আমাকে দেখতে এসেছে দেখ।।

এক এক করে কুঠির ভেতর থেকে সব মেয়েরা বের হলো।। নুহা তাদেরকে দেখছিলো।। প্রায় মুখ ই তার নতুন দেখা। শুধুমাত্র ৩জন ছাড়া।। তারা হলেন অঞ্জনা দি, রোকেয়া খালা আর ফুলী।। তারা সবাই নুহা কে দেখে বড্ড খুশি হলেন।। নতুনেরা সবাই শবনম বেগম কে জিজ্ঞেস করলেন যে এটি কে?? উত্তরে শবনম বেগম সবাইকে বললেন “এটি আমার কলিজা আমার মা”। নুহা এসবে খুব খুশি হয়ে ছিলো।। এতোদিন পর আপনজনদের পেয়ে সে ভীষণ খুশি।।

#পতিতা_বউ

#Razia_Binte_SuLtan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here