#গোধূলি_লগ্ন
#Writer_Tabassum_Tajnim
#Part_22+23
তিশা রূপন্তর দিকে তাকাতেই রূপন্ত সামনের দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগলো। তিশা হাসলো,,
সত্যিই রূপন্তর মতো কেউ হয় না,সেই প্রথম দিনেই তিশার রূপন্তকে ভালো লেগেছিলো। কিন্তু রূপন্ত কি তাকে ভালোবাসে?? সেটাই জানতে হবে! এই কদিনে তিশা রূপন্তর মন বুঝতে পারে নি।
তিয়ান পূন্যর পায়ে ঔষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে। পূন্য বসে আছে, তিয়ান একবার পূন্যকে দেখলো তারপর বললো,,
— কালকে হোটেল থেকে বেরুবা না একদম। আগে পা ঠিক হবে তারপর বেরুবে।
— কালকে তো সেন্ট মার্টিনে যাবে,,
— যেখান মন চায় সেখানে যাক, তুমি যাবে না। পায়ে কতো গুলো ফুসকা পড়ছে দেখছো একবার।
পূন্য আর কিছু বললো না,, কয়েক মিনিট শুধু তিয়ানকে তাকিয়ে থেকে দেখলো, এতো ভালোবাসে কেনো লোকটা আমায়!! পূন্য তিয়ানের কাছে গিয়ে তিয়ানের বুকে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— Sorry,,
তিয়ান বুঝতে পারলো না পূন্য কিসের জন্য Sorry বললো। কিন্তু এখন বুঝার বা জানার আগ্রহও নেই, তিয়ান পূন্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, কোনোভাবেই হারাতে চায় না পূন্য।
পূন্য তিয়ানের বুকে মাথা রেখে তিয়ানের শার্টের একটা বোতাম খুলছে আর লাগছে, খুব মনোযোগ দিয়ে,, হঠাৎ করেই তিয়ানকে বললো,,
— সমুদ্রে নিয়ে যাবে??
— এখন রেস্ট নাও। কাল সকালে তো সূর্যোদয় দেখবে।
— প্লিইইজ,,
— না,, শুয়ে পড়ো।
পূন্য রাগে গিয়ে শুয়ে পড়লো। তার পায়ে কয়েকটা ফুসকা ছাড়া আর একটু ব্যাথা ছাড়া আর কিছুই হয় নি। তাহলে এখন কেনো সমুদ্রে নিয়ে যেতে পারবে না।
তিয়ান পূন্য কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখলো। তারপর লাইটটা অফ করে শুয়ে পড়লো।
পূন্য ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তিয়ানকে দেখলো, পূন্য ভেবেছিলো রাগ করলে তিয়ান অবশ্য নিয়ে যাবে। কিন্তু এ তো শুয়ে পড়লো। পূন্য আস্তে আস্তে তিয়ান বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
মিতুর গলার ভাজে মুখ ডুবালো নিবিড়,, মিতুর চুলের গন্ধে মাতোয়ারা করে দিচ্ছে, কোনোভাবেই সামলাতে পারছে না নিজেকে। মিতুর ঘন ঘন ফেলা ভারী নিশ্বাস গুলো নিবিড়কে আরো মিতুর কাছে টেনে নিচ্ছে।
তিশা রুমে ডুকতেই মনে পড়লো, ইসস,, রূপন্তর ফোন নাম্বার টা নেওয়া হয় নি। আচ্ছা পড়ে আরেকবার নেওয়া যাবে। তার আগে জানতে হবে ও কাউকে ভালোবাসে নাকি!!
রূপন্ত বিছানায় শুয়ে চার পাঁচ টা হাঁচি দিলো। ঠান্ডা লেগে গেছে। ইসস্ এই জিনিসটা রূপন্তর একদম পছন্দ না, বিরক্তিকর একটা ঔষুধ। রূপন্ত কাঁথা দিয়ে মুখটা ঢেকে শুয়ে পড়লো,, কালকে সেন্টমার্টিন যাওয়া হবে না, এই সর্দি কাশি নিয়ে ঘুরে মজা পাবে না। রূপন্ত চোখ বন্ধ করলো,, সকালে উঠতে হবে,সূর্যোদয় দেখতে হবে।
তিয়ান সকালেই উঠে গেছে,, এখনো ভালো করে অন্ধকার কাটে নি। পূন্য কে ডেকে তুললো।
সমুদ্রের তীরে এসে দাড়ালো,, পুব আকাশ টা হালকা কমলা রং ধারন করেছে,, একটু পর আস্তে আস্তে সূর্য উঠতে লাগলো,,
তিশা রূপন্তর সাথে দাড়িয়ে আছে,, হোটেল থেকে বেরুতেই রূপন্তর সাথে দেখা হয়ে গেছে। পছন্দের মানুষের সাথে সূর্যোদয় দেখা!! কতোটা যে আনন্দের তা এখন তিশা বুঝতে পারছে। রূপন্তর দিকে তাকালো,, রূপন্তর প্যান্টা টা সব সময় নিচটা অল্প ফোল্ড করে রাখে, বারবার চোখের চশমা ঠিক করা, কথা বলতে বলতে শার্টের হাত ফোল্ড করা, এই অভ্যাস গুলো খুব ভালোই লাগে তিশার। অন্য রকম মন মানুসিকতার একটা মানুষ।
হঠাৎ করে তিশা বললো,,
— আচ্ছা আপনার ফোন নাম্বারটা কি দেওয়া যাবে??
রূপন্ত এক নজর তিশাকে দেখলো, অপরিচিতা তার ফোন নাম্বার চাইছে!! মনে মনে হাসলো। কিন্তু ভাবনায় পরলো,, নাম্বার দিবে কি! না দিবে না। রূপন্ত হেসে নাম্বার টা দিয়েই দিলো।
নিবিড় চোখ থেকে কখন ঘুম টা চলে গেছে। মিতুও পাশে চুপচাপ বসে আছে। চুল থেকে পানি পড়ে বিছানাটা ভিজে যাচ্ছে। মিতুর চোখে মুখে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে,, তার মা কি বাঁচবে না!! না না এমন কথা ভাবতে নেই।
সবার ব্যাগ গোছানো হয়ে গেছে। এবার বেরুনোর পালা। মিতুর মা অসুস্থ শুনে সবাই চলে যাওয়ার কথায় ভাবলো। কারন একসাথে সবাই এসেছে,, তাই আর আলাদা আলাদা যাওয়ার কোনো মানে হয় না।
লুৎফা আক্তার মেয়ের মুখে পূন্যদের যাওয়ার কথা শুনতেই মনের ভেতর জানি কেমন করতে লাগলো। তিনি একপ্রকার ছুটেই হোটেল থেকে বেরিয়ে এলেন।
তিয়ান আর রূপন্ত ব্যাগগুলো গাড়িতে তুললো।লুৎফা আক্তার পূন্যকে দেখে একটু হাসলেন। পূন্য তিশাকে দেখে এগিয়ে এলো। তারপর লুৎফা আক্তারের দিকে তাকিয়ে বললো,,
— আন্টি আসি। ঢাকায় যাওয়ার পর আমাদের বাসায় যাবেন কিন্তু।
পিছন থেকে তিয়ান ডাকলো গাড়িতে উঠার জন্য। পূন্য আবার বিদায় নিয়ে পিছন ঘুরতেই লুৎফা আক্তার বললেন,
— তোমার নাম্বারটা দিয়ে যাবে একটু!!
পূন্য ঘুরে লুৎফা আক্তার কে দেখলো। তারপর হেসে বললো,,
— তিশার কাছে আমার নাম্বার আছে।
কথাটা বলে পূন্য গাড়িতে উঠে পড়লো। মিতুকে দেখলো, মেয়েটা খুব চুপচাপ হয়ে গেছে,,পূন্য মিতুর মাথায় হাত রাখলো। মিতুর পূন্যর কাঁধে মাথা রেখে নিরবে দু ফোটা চোখের জল ফেললো। একটু পর মাথা তুলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।
পূন্য তিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো। নিবিড় সামনে
ড্রাইভারের সাথে বসেছে। পিছনে সিটে রূপন্ত একা বসেছে, গেইম খেলছে মোবাইলে।
নিবিড় লুকিং গ্লাসে একবার পূন্যকে দেখলো। কতো সহজ হয়ে গেছে তিয়ানের সাথে ওর সম্পর্কটা। আচ্ছা কোনোভাবে পূন্য নিবিড়ের ভালোবাসা ভুলে যাচ্ছে না তো। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার মিতুকে দেখলো,কেমন জেনো হয়ে গেছে মেয়েটার মুখ টা। সকালে ওর মা অসুস্থ জানার পর থেকেই কথা বলছে না।
তিয়ান পূন্যকে শক্ত করে ধরলো, গাড়িতে বসেই মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে। মৃদু হাসলো, তারপর মুখের উপর পড়া চুলগুলো সরিয়ে দিলো।
রূপন্ত পিছন থেকে মাথা তুলে বললো,
–আমি পিছনে বসবো না। নিবিড় ভাইয়া পিছনে আয়। তাড়াতাড়ি, আমি সামনে বসবো।
ড্রাইভার গাড়ি থামালে পূন্যর ঘুম ভেঙে যায়। তিয়ানের দিকে তাকালো,, তারপর দেখলো রূপন্ত নামছে। নিবিড় পিছনে বসলো।
রূপন্ত মিতুকে বললো,
— মিতু তুমি ও গিয়ে পিছনেই বসো। এখানে তিনজন বসতে হবে না।
মিতু কথা না বাড়িয়ে পিছনে গিয়ে বসলো। রূপন্ত সামনে বসে ঘাড় ঘুরিয়ে পূন্যকে দেখলো,, এই মেয়েটা সারাজীবন জার্নি করলো,কারো না কারো কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। রূপন্ত খুব জোরে চিৎকার করলো, যাতে পূন্যর ঘুম ভাঙ্গে।
কাজ ও হলো, পূন্য উঠে বসলো। তারপর রূপন্তর দিকে তাকিয়ে বললো,
— চেঁচাচ্ছিস কেনো??
— তুই ঘুমাচ্ছিস কেনো?
— ঘুম পেয়েছে তাই।
রূপন্ত হাসলো। তারপর মোবাইল টা এগিয়ে দিলো পূন্যর দিকে,,তারপর বললো,,
— ছবি গুলো দেখ,, কেমন হয়েছে কক্সবাজারের সব ছবি আছে।
পূন্যর মোবাইল টা নিয়ে ছবি গুলো দেখতে লাগলো।
নিবিড় মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,,
— কি হয়েছে?? মন খারাপ??
মিতু মাথা নেড়ে নিবিড়ের কাঁধে মাথা রাখলো। নিবিড় মিতুর কাঁধে হাত রাখলো। হঠাৎ করে নিবিড় লক্ষ করলো,, সে এখন মিতুর দিকেই বেশি খেয়াল করছে। মিতুর মন কখন খারাপ থাকে কখন ভালো থাকে তা নিয়েই বেশি চিন্তা করছে। নিবিড় হাসলো।
তিয়ানরা ওদের বাসার সামনে নেমে পড়লো,, গাড়িতে ব্যাগগুলো নামিয়ে নিলো। পূন্য মিতুকে একটু বুঝিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালো। বাসার সামনে দাড়িয়ে
দুইবার কলিং বেল বাজানোর পর দরজা খুলে দিলো অনন্যা, এই সময় আবার কে আসলো!! চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। তারপর পূন্যকে জড়িয়ে ধরলো। অনন্যার অনেক ভালো লাগছে পূন্যকে দেখে। তিয়ান সোজা উপরে চলে গেলো। দারোয়ান ব্যাগ গুলো উপরে নিয়ে গেলো।
মোর্শেদা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে আসলো,, ছেলে আর ছেলের বউ এসেছে। সকালে ফোন দিয়ে তিয়ান জানিয়ে দিয়েছিলো যে আজকেই আসবে। হলরুমে এসে দেখে পূন্য অনন্যার সাথে কথা বলছে,, মেয়েটা অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছে, এর আগে পূন্যকে কখনো এতো কথা বলতে শুনে নি তিনি। মোর্শেদা বেগম ওদের কাছে যেতেই পূন্য তাকে দেখে পা ছুঁয়ে সালাম করলো। মোর্শেদা বেগম পূন্য কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে দেখলো, মেয়েটা শুকিয়ে গেছে অনেক। মোর্শেদা বেগম পূন্যকে বললো,,
— পরে গল্প করবে,, এখন হাত মুখে খেয়ে নাও। আর এতো শুকিয়ে গেছো কেনো এই চার- পাঁচ দিনে!! যাও ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।
পূন্য আর কিছু বললো না, চুপচাপ রুমে চলে এলো। এসে দেখে তিয়ান শুয়ে পড়েছে। পূন্য আলমারি থেকে শাড়ি বের করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। চেঞ্জ করে এসে দেখলো তিয়ান এখনো শুয়ে আছে,, তিয়ানের পাশে বসে তিয়ানের হাতে হাত রাখলো,,তিয়ান চোখ খুললো,, পূন্য ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে। পূন্য বললো,,
— কি হয়েছে??
— মাথা ব্যাথা করছে প্রচন্ড।
তিয়ান উঠে পূন্যর পায়ের উপর মাথা রাখলো। মুখটা পূন্যর পেটে হালকা লাগিয়ে বললো,,
— মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না।
–আগে খেয়ে নিবে চলো। তারপর ঔষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
পূন্যর কথা শুনে তিয়ান উঠে বসলো তারপর পূন্যর দিকে তাকালো, তারপর উঠে হলরুমের দিকে পা বাড়ালো, এখন যদি খেতে না যায় সে তাহলে পূন্য আর মা দুজনেই তিয়ানের মাথা খেয়ে নিবে। তাই খাবার টেবিলে বসে অল্প কিছু খেয়ে নেওয়া ভালো।
মিতু আসার পর থেকে এক কথাই বলে চলছে,,
কখন আম্মুর কাছে যাবো, নিবিড় ক্লান্ত হয়ে গেছে ওকে বুঝাতে বুঝাতে। নিচে খেতেও আসলো না। তাই নিবিড় ওর খাবার টা প্লেটে করে নিয়ে আসলো। মিতু জানালার পাশে চেয়ার টায় বসে আছে। খোলা চুলগুলো বাসাতে উড়ছে। বাইরে তো অন্ধকার, অন্ধকারে কি দেখছে মেয়েটা। নিবিড় ওর পাশে গিয়ে বসে বললো,
— খেয়ে নাও।
— খাবো না, খিদে নেই।
মুখ ঘুরিয়ে নিলো,সকাল থেকে মিতু কিছুই খায় নি, এখন না খেলে অসুস্থ হতে পারে। নিবিড় ভাত মাখিয়ে মিতুর সামনে ধরলো, মিতু বেশ অবাক হলো,
নিবিড় বললো,
— খাও,
— আপনি আমাকে মুখে তুলে দিবেন!!
মিতুর কথা শুনে নিবিড় একটু ভাবলো,, সে মিতুকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে! যাই হোক এখন মিতুকে খাওয়ানোটাই বেশি গুরুত্বপূর্ন।
নিবিড় বললো,
— দেখতে পাচ্ছো না,কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নাও।
মিতু হা করলে নিবিড় মুখে ভাত তুলে দিলো। মিতুর মনটা ভালো হয়ে গেলো। কারন নিবিড় ওকে ভালোবাসে, শুধু ভালোবাসে না অনেক কেয়ার ও করে।
তিয়ান ঘুমিয়ে আছে,পূন্য বেলকুনিতে এসে দাড়ালো, ঠান্ডা বাতাস বইছে।
ভালোবাসা কখন কার সাথে হয়ে যায়,কেউ জানে না। পূন্য ও ভালোবাসে, না নিবিড় কে নয়,, তিয়ানকে।
চলবে,,,
#গোধূলি_লগ্ন
#Writer_Tabassum_Tajnim
#Part_23
পূন্য ও ভালোবাসে, না নিবিড় কে নয়, তিয়ানকে। তিয়ানের ভালোবাসাকে অবহেলা করার অধিকার আর ক্ষমতা কোনোটাই পূন্যর নেই।
মাঝরাত,
হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙে গেলো তিয়ানের। বালিশের পাশে রাখা মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখলো রাত ২ টা বাজে। চোখটা একটু ঢলে পূন্যর দিকে তাকালো, কাঁথা টা সরে গেছে গা থেকে, হালকা হালকা ঠান্ডা লাগছে, তাই তিয়ানের শরীরের সাথে মিশে যাচ্ছে পূন্য। হাত পা একসাথে করে ফেলেছে, কুকড়ে শুয়ে আছে। তিয়ান হাসলো। তারপর কাঁথা টা টেনে পূন্যর গায়ে দিলো। চুলগুলো খুলে গেছে, মুখ টা ঢেকে গেছে চুলে,, তিয়ান পূন্যর চুল গুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিলো। কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলো। উঠে দাড়ালো, রুমের দরজাটা আস্তে করে খুলে বেরিয়ে আবার দরজাটা লাগিয়ে দিলো। সিড়ি বেয়ে হলরুমের দিকে নামছে তিয়ান।
ঘুমের ঘোরে পূন্য হাতটা তিয়ানের উপর রাখলো, কিন্তু হাতটা বিছানায় পড়ে গেলো। চোখ বন্ধ করেই বিছানায় হাতড়ে হাতড়ে তিয়ানকে খুজলো। উঠে বসলো চোখ বুলিয়ে নিলো পুরো রুমটাই। তিয়ান রুমে নেই, আবছা সবুজ আলোই দেখতে পেলো পূন্য। ভাবলো হয়তো বেলকুনিতে আছে, তাই উঠে মাথার চুলটা খোঁপা করতে করতে বেলকুনির দিকে এগুলো, বেলকুনিতো পুরো খালি, তিয়ান নেই তাহলে কোথায় গেলো তিয়ান!! এতো রাতে,
দরজার খুলতে গিয়ে দেখলো দরজা খুলা,, হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো দরজাটা। পূন্যর আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে সিড়ির দিকে, আর চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো কোথাও তিয়ান নেই।
সিড়ির কাছে যেতেই দেখলো তিয়ান সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসছে। এতো রাতে ও নিচে কি করছিলো!!
তিয়ান পূন্যর কাছে এসে বললো,
— তুমি উঠে পড়েছো কেনো?
— তুমি এতো রাতে নিচে কি করো??
তিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বললো,
— পানি আনতে গিয়েছিলাম। রুমে পানি এনে রাখে নি।
পূন্য আর কিছু বললো না। চুপচাপ রুমে এসে শুয়ে পড়লো। তিয়ান মুচকি হেসে রুমের দরজাটা লক করে পূন্যর পাশে শুয়ে পড়লো, হাতটা আস্তে করে পূন্যর পেটে রাখলো। ধীরে ধীরে হাতটা নড়ছে,,
পূন্য চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলো,, তিয়ানের হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুললো,, তিয়ানের হাতটা ধরে ফেললো,, চেঁপে ধরে রাখলো নিজের পেটে। তারপর চোখবন্ধ করে ফেললো। তিয়ান একটু এগিয়ে আসলো, পূন্যর শরীরের সাথে শরীরটা লাগিয়ে কানের কাছে ঠোঁট এনে আলতো করে চুমু খেলো,, তারপর বললো,
— কি হলো?? হাতটা ছাড়ো
পূন্য আবার চোখ খুললো,তারপর বললো,
— ছাড়বো, তার আগে বলো চুপ করে ঘুমিয়ে পড়বে।
তিয়ান হাসলো,, পূন্যর ঘাড়ে নাক ঘষলো। তারপর বললো,
— হুম,,
পূন্য হাতটা ছেড়ে দিলো। কিন্তু তিয়ান হাতটা সরালো না। দুজনেই চোখ বন্ধ করলো।
অনন্যার চোখে ঘুম নেই। এই কয়েকদিন ধরে তার শরীরটা একদম ভালো লাগছে না। মাথাটা বড্ড বেশি যন্ত্রণা করছে,, ভাবছে কাল ডাক্তার দেখিয়ে আসবে। মোবাইলে আসা মেসেজ টা আরোও দুইবার পড়লো,, পুলক আসতে পারবে না, একমাসের জায়গায় এখন দুই মাস!! কোনো মানে হয় নাকি!! মোবাইল টা বিছানার একপাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বালিশটা মাথার উপরে দিয়ে চাপা দিলো। মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে গেলো পুলকের মেসেজ টা পড়ে।
নিবিড় গাড়ি চালাচ্ছে আর বারবার মিতুর দিকে তাকাচ্ছে। গাড়ির জানালায় মাথা ঠেস দিয়ে বসে আছে। চুলগুলো উড়ে এসে মুখে পড়ছে, মিতু সরিয়ে দিচ্ছে আবার পড়ছে, মিতুকে এতো ভালো লাগে কেনো? নিবিড় বুঝতেই পারে না৷ তবে একটা জিনিস সে ঠিকই বুঝতে পারছে সে দিন দিন মিতুর আসক্তিতে জড়িয়ে যাচ্ছে। নিবিড়ের এখন খুব ইচ্ছা করছে মিতুর মুখ থেকে সরিয়ে দিতে। নিবিড় মিতুর মুখ হাত দিলো, হাত দিতেই মিতু উঠে বসলো। কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলো।
মিতু কিছুক্ষণ নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার বাইরের জানালা দিয়ে তাকালো। নিবিড় তাকে দিন দিন ভালোবাসার মায়ায় বাঁধছে, এটাই তো চেয়েছিলো সে৷ নিবিড়ের দিকে তাকালো। নিবিড় ইশারায় জিগ্যেস করলো কি হয়েছে? মিতুর মাথা নেড়ে কিছু না বললো, তারপর আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।
রূপন্ত বাসার ছাদে বসে একহাতে বই আরেক হাতে মোবাইল টা নিয়ে বসে আছে।বারবার সেই অপরিচিতার মুখ টা কেনো তার চোখে ভেসে উঠে। কেনো সেই অপরিচিতা তাকে রাতে ঘুমুতে দেয় না। অপরিচিতার নাম্বার টা তো আনা হয় নি। বড্ড ইচ্ছা করছে তার গলার স্বর শুনতে, তার সাথে কথা বলতে। আচ্ছা অপরিচিতা কি তাকে কল দিবে? যদি দেয়, তাহলে কেনো সে কল দিবে? আর সেই বা কেনো সেই মেয়ের জন্য এতো ব্যাকুল হচ্ছে, কেনো?? সে কি তাকে ভালোবাসে!!
রূপন্ত হাসলো,হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠলো, আনমনে ছিলো, ফোন আসাতে চমকে গিয়ে ফোনের দিকে তাকালো। স্ক্রিনে একটা অপরিচিত নাম্বার ভেসে উঠলো, তার কেনো জানি মনে হচ্ছে এই নাম্বারটা সেই অপরিচিতার। রূপন্ত ভাবতে ভাবতেই ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো।
ওপাশ থেকে এক সুরেলা কন্ঠ ভেসে আসলো।
রূপন্ত বেশ আবাক গলায় বললো,
— কে???
— বলুন তো কে?
রূপন্ত কিছুক্ষণ ভাবলো,, এ অপরিচিতাই মনে হচ্ছে। অনেক সংকোচ আর সন্দেহ নিয়ে বললো,
— অপরিচিতা!!
ওপাশের সেই সুরেলা কন্ঠি হাসিতে ফেটে পড়লো। রূপন্ত বেশ কনফিউশনে পরে গেলো। হাঠৎ করে এই মেয়ে টা হাসছে কেনো! তাহলে কি এই সুরেলা কন্ঠী তিশা নয়। কে এই মেয়ে???
এবার অনেকটা ভয়ার্ত গলায় রুপন্ত বললো,,
—কে আপনি?
— আপনি তো বলেই দিয়েছেন, আমি আর কি বলবো??
— তার মানে,,,,
—তার মানে আমি তিশা,, অপরিচিতা।
রূপন্তর ঠোঁটের কোণে হাসি ভিড় করলো। অপরিচাতা ফোন দেয়াতে সে যে কতোটা খুশি হয়েছে তা তার গলার স্বরটাই বলে দিচ্ছে। অন্যরকম হয়ে গেলো গলার স্বর টা।
রূপন্ত তিশাকে বললো,,
— ওহ,, তা কেনো ফোন দিয়েছেন?
তিশা রূপন্তর এমন প্রশ্নে ঘাবড়ে গেলো। সত্যিই তো সে কেনো ফোন দিয়েছে রূপন্তকে। সে ফোন দিয়েছে যাতে সে রূপন্তর গলার স্বর শুনতে পারে। কিন্তু এই ছাগলটা এমন ভাব ধরতেছে কেন? সেটাই তো বুঝতে পারছে না। এখন কি বলবে সে?? আমতা আমতা করে বললো,
— না মানে,, মিতু ভাবির মা কেমন আছে?? সেটা জানতেই কল দিয়েছিলাম আর কি,
রূপন্ত কিছুক্ষণ থ মেরে থেকে বললো,
— তাহলে মিতু কিংবা নিবিড় ভাইয়ার নাম্বারে কল দিলেই পারতেন। আমার কাছে কেনো কল দিলেন? আমি তো যায় নি।
এবার তিশা কি উত্তর দিবে বুঝতে পারলো না।
তিশা আমতা আমতা করে বললো,
— না, মিতু ভাবি আর নিবিড় ভাইয়ার নাম্বার নেই তাই আপনার কাছে কল দিলাম।
— আচ্ছা তাইলে রাখি। আর মিতু ভাবির মার খবর আমি জানি না।
রূপন্ত ফোনটা কেটে দিলো। তারপর বিড়বিড় করে বললো,
“মিতু ভাবির মায়ের খোঁজ করতে আমার কাছে ফোন দিলো।আমার খোঁজ নেওয়ার জন্য কল দেয় নাই।”
রূপন্ত খানিক টা কষ্ট পেলো। সে কি আশা করেছিলো আর কি।
তিশার কিছুটা মন খারাপ হলো। গাধা, ছাগল, গরু টা কিছুই বুঝে না। সবই বুঝে না বুঝার ভান করে আর কি। আমি তো ওর সাথেই কথা বলতে ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু ও কি করলো, কেটে দিলো।
রূপন্ত তিশার নাম্বার টা কি নাম দিয়ে সেইভ করবে ভাবতে লাগলো। প্রথমে তিশা লিখলেও পড়ে মুছে দিলো। তারপর অপরিচিতা লিখে সেইভ করলো।।
কলিংবেল বাজিয়েই চলছে,, পূন্য কাজ করছিলো, পূন্য গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো। দরজা খুলার পর একজন লোককে দেখতে পেলো। জিন্সের প্যান্ট, আর ব্লু শার্ট। লোকটাকে কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছে পূন্যর।
আলভী দরজার সামনেই দাড়িয়ে রইলো, দরজা খুলে দেওয়া মেয়েটাকে একদৃষ্টিতে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো। পা থেকে শুরু করলো। দৃষ্টি টা এসে উন্মুক্ত পেটে আটকে গেলো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেখতে লাগলো।এতো স্বর্গের অপ্সরা।
পূন্য লক্ষ করলো লোকটা তার পেটের দিকে তাকিয়ে আছে। শাড়ির আঁচল টা আবার কখন সরে গেলো? পূন্য গায়ে শাড়ির আঁচল ভালো করে টেনে নিলেন। হঠাৎ করে কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। সেটা যে তিয়ান, সেটা তার গায়ের গন্ধতেই বুঝা যাচ্ছে।
তিয়ান পূন্যর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। তারপর আলভীর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো,,
— কি দেখছিস?? ও পূন্য, আমার wife.।
তারপর পূন্যর দিকে তাকিয়ে বললো,,
— পূন্য ও আমার ফ্রেন্ড।
আলভী আরও একবার পূন্যকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। বিয়ের সময় এক নজর দেখেছিলো, তাই চিনতে পারে নি, আর তখন এতো বেশি সুন্দর লাগে নি। কিন্তু এখন,, এমন মেয়ের জন্য যে কেউ সব কিছু ছেড়ে দিতে পারে। তিয়ান ভূল কিছু করে নি।
পূন্য কিছুটা অসস্তিতে পড়ে গেলো। এভাবে কেনো দেখছে। লোকটার দেখার ধরন টা কেমন জানি!
রুমে ওর রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো, কিন্তু থেমে গেলো, আবার পিছনে ঘুরে তাকালো, এক আল্ট্রা মর্ডান মেয়েকে রুমে ডুকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো। কে এই মেয়ে? ভাবলো, হয়তো লোকটার বউ, কিন্তু ড্রেসটা কেমন জানি, ভালো লাগলো না পূন্যর কাছে।
সীমা পূন্যকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো। তারপর পূন্যর কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো,, তিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
— সত্যিই তিয়ান, তোমার বউ অনেক সুন্দর। যেমন প্রশংসা করেছিলে ঠিক তেমনই। খুব দেখার ইচ্ছা ছিলো,, আজ তা পূরণ হয়ে গেলো।
তিয়ান মাথা ঝাঁকিয়ে হাসলো। সীমা আলভীকে বললো,
— চল,, তাহলে যাওয়া যাক।
— আরে, এই মাত্রই তো আসলাম। ভাবির হাতে একটু চা খেয়ে তারপর যায়। কি বলেন ভাবি, চা খাওয়াবেন না!!!
পূন্যর দিকে তাকিয়ে বললো আলভী। পূন্য জোর করে মুখে হাসি এনে বললো,,
— আপনারা বসুন, আমি চা নিয়ে আসছি।
ওরা সোফায় বসলো, আলভীর দৃষ্টি টা তখনো পূন্যর দিকে, পূন্যকেই দেখছে।
পূন্য চায়ের পানি বসিয়ে দিলো। যতো তাড়াতাড়ি এই লোক আর মেয়েকে এইখান থেকে বিদায় দিতে পারবে ততই ভালো। লোকটার বাজে দৃষ্টি আর মেয়েটার পোশাক, কোনোটাই পূন্যর পছন্দ হয় নি।
চলবে,,,,