রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 31

0
1930

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৩১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–কি গো বউ’মা কেমন আছো।একটু আসলাম তোমার খোঁজ খবর নিতে।
–আলহামদুলিল্লাহ শশুর আব্বু ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন।
–ভালো নেই গো,বউ মা।
–কেনো কি হয়েছে,আপনার।
–আজকে আমরা আমাদের বাসায় চলে যাব।আবার কবে আসবো,জানি না।
–সত্যি তোরা চলে যাবি মজা করছিস না তো রাফি।বলল আয়ান।
–তুমি কি আমার বন্ধু লাগো,যে তোমার সাথে আমি মজা করতে যাব।
–এই কানের নিতে দিব একটা।বড়দের এটা কেমন করে কথা বলিস তুই।
–তুমি ছেলে নিজের বাপ কে মারবে তোমার লজ্জা করে না।
–বাপ রে…
–বলো।
–এই আমি তোকে ডাকি নাই।
–এখনি তো বলল বাপ রে।
–আমি ওটা অবাক হয়ে বলছি।
–নিচে আসো খেতে, সবাই তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
বলে’ই রাফি চলে গেলো,শখ আর আয়ান’ও গেলো সবাই খেতে বসেছে।সবাই চুপচাপ খাবার খাচ্ছে।নীরবতা ভেঙে আয়ানের বাবা বলল।
–আয়ান তুমি কলেজে যাওয়ার,সময় শখকে সাথে করে নিয়ে যাবে।আবার আসার সময় সাথে করে নিয়ে আসবে।
–সরি বাবা আমি পারব না।আমার আর শখের বিয়েটা পাবলিক করতে চাচ্ছি না।এতে শখের ওপরে বাজে প্রভাব পড়বে।
–কিন্তু,ও তো বাচ্চা মেয়ে।নতুন জায়গায় এসেছে। এভাবে ওকে একা পাঠানো কি উচিৎ হবে।
–একা কেনো যাবে বাবা।গাড়ি নিয়ে যাবে।
আয়ানের বাবা আর কিছু বলল না।চুপচাপ খেতে লাগলো।
–আয়ান আজ একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করিস।আজ আমি চলে যাব।তোর দুলাভাই আসবে বিকেলে,আমাদের নিতে।
–আপু এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে কেনো,আর কয়টা দিন থাকবে।তারপরে যাবে।
–ভাইরে পরের ঘর কি এত’ই সোজা।আমি এখন অন্যের বাড়ির বউ তোদের বাড়ির মেয়ে না মনে রাখিস।আকাশ তা-ও অনেক ভালো।খুব ভাগ্য করে ওর মতো স্বামী পেয়েছি।
–আচ্ছা ঠিক আছে।তুৃমি যাহ ভালো মনে করো,তাই করো আমি কিছু বলবো না।আমি আসছি।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।শখ খেয়ে কলেজে চলে আসবে।গাড়ি ছাড়া একদম আসবে না।বলে’ই চলে গেলো আয়ান।
–আপু আমি আজ কলেজে যাব না।তুমি চলে যাবে।আজ তোমার কাছে থাকবো।
–পাগলি মেয়ে একটা আমি কয়দিন পড়ে আবার আসবো।সামনে তোমার পরীক্ষা। কলেজে যেতে’ই হবে।
মিসেস নিলিমা চৌধুরী শখের জন্য টিফিন রেডি করে দিলো।
–এই নাও মা।এখানে আমি খাবার দিয়ে দিয়েছি।দুপুরে তুমি আর আয়ান খেয়ে নিও কেমন মা।
–আচ্ছা আম্মু।বলে’ই শখ রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ল।আজ শখ শাড়ি পড়ে কলেজে যাচ্ছে।খুব সুন্দর করে সেজেছে।
কলেজে আসতে’ই কুত্তার দল শখকে ঘিরে ধরলো।
–কিরে নতুন বউ কেমন আছিস।আমাদের কথা কি তোর মনে আছে।বলল আয়েশা।
–আগে যদি যানতাম মনুতাহা আপুর বিয়ে না,শখের বিয়ে হবে।তাহলে একটু বেশি করে খেয়ে আসতাম। এখন বিয়ে করেছিস।তোর জামাই’রে বল আমাদের খাওয়াতে।বলল কাব্য।
–যে শখ আয়ান স্যার কে দেখতে পারতো না।সেই শখ আজ আয়ান স্যারের বউ।বলল মেধা।
–সবাই জানলে ছোট খাটো একটা হার্ট অ্যাটাক করবে। আয়ান স্যারের বিয়ে হয়ে গেছে। বলল স্নেহা।
–আরে।তোরা থামবি মেয়েটা’কে কিছু বলার সুযোগ করে দে।বলল সিয়াম।
–ওও কি বলবে,ওর সাথে কোনো কথা নেই। আমি ছিলাম না।আর বিয়ে করে নিয়েছে। ওকে বলেছিলাম।ওর জামাইয়ের জুতা চুরি করে 50000 টাকা আদায় করে নিব তার হলো না,কথা কমু না তোর লগে।বলল আয়ান।
–আপনারা কে,আমি কি কোনোভাবে আপনাদের চিনি।দেখছি বলে মনে হয় না।আবার খুব চেনা চেনা লাগছে।কোথায় যেনো আপনাদের দেখেছি বলে মনে হচ্ছে। বলল শখ।
সবাই মিলে একসাথে বলে উঠলো শখের বাচ্চা।
–ভাগ্যিস আমার বাচ্চাকে ডেকেছেন আপনারা। আমাকে ডাকেন নাই।
সবাই শখের দিকে তেড়ে আসলে শখ দে দৌড়।অবশেষে আয়েশে,শখকে ধরে ফেলল।
–কিরে এখন কোথায় পালাবি।তোরে আজ খাইছি।
–আমাকে কিছু বলিস না।তোরা যা বলবি আমি তাই শুনবো।
–বেশি কিছু না।তোর বাসর রাতের গল্প শুনালে-ই হবে।বলল আয়েশা।
–শুনবি তাহলে শুন।বাসর রাতে স্যার আমাকে থাপ্পড় মেরেছিল। আয়াশের কথা বলার জন্য।
সবাই শখের কথা শুনে হেসে উঠলো।
–আহারে শখ বেচারি আমার বাসর রাতে বরের হাতে মার খাইছে রে।বলল মেধা।
–আমাকে নিয়ে মজা লস।তোর কপালে এমন হবে,শাঁকচুন্নি।
–শকুনের দোয়ায় কখনো গরু মরে না।
–তুই আমাকে শকুন বললি।
–তার থেকে খারাপ কিছু থাকলে ওটা তুই।
–তুই শকুন। তোর জামাই শকুন।তোর বাচ্চা শকুন।তোর চৌদ্দ গুষ্টি শকুন।
–সাবধানে কথা ক।অযথা মিথ্যা গুজব ছড়াবি না শখ।
–সাবধানে কথা।
–শখের বাচ্চা।
–মেধার বাচ্চা।
কি শুরু করলি বলতো কতদিন পড়ে সবাই মিলে দেখা করলাম একটু মজা করবো তা না,ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে।বলল আমান।
–তুই একদম ঠিক বলেছিস আমান।একটু জমিয়ে আড্ডা দিব। তা না করে অসভ্যের দল গুলা ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে। বলল স্নেহা।
–হবে নাকি আড্ডা। বলল সিয়াম।
–আমাদের অসভ্য বললি তুই। আমরা যদি অসভ্য হই।তাহলে তুই বড় অসভ্য। বলল মেধা।
–আরে থাম তোদের ঝগড়া। আয়ান স্যারের ক্লাস,চল ক্লাস করে জমিয়ে আড্ডা হবে।বলল আমান।সবাই মিলে বলল ওকে চল।সবাই ক্লাসে চলে গেলো।
শখ ক্লাসে আসতে’ই নতুন ছেলেটি শখকে বলল।
–শখ শাড়িতে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।দেখো সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে আছে।
–ধন্যবাদ। নিজের জায়গায় গিয়ে বসো স্যার আসবে।
–ঠিক আছে।বলে যে যার মতো বসে পড়ল।আয়ান রুমে আসতে’ই শখকে দেখে রেগে গেলো।কে বলছে ওকে এত সুন্দর করে কলেজে আসতে।সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে।ওর সাহস কি করে হয়,ঐ ছেলের সাথে কথা বলার আগে বাসায় যাই তারপরে তোমার আছে।
আয়ান ক্লাস শুরু করলো,শখের দিকে একবারো তাকালো না।নিজ মনে ক্লাস করিয়ে যাচ্ছে। শখের শাড়ির আঁচল নিয়ে পড়ে থাকায়,নতুন ছেলেটি বলল।
–শখ,তোমার শাড়ির আঁচল মাটিতে পড়ে আছে।
শখ পেছনে তাকিয়ে দেখলো সত্যি।তাই শখ শাড়ির আঁচল ঠিক করতে পেছনে ঘুরতে’ই আয়ান বলে উঠলো।
–শখ আপনি দাঁড়ান।শখ কিছু’টা ভয় পেয়ে সামনে তাকাল।
–কি হলো বাংলা কথা বুজতে পারেন না।ইংরেজিতে বলতে হবে নাকি।
শখ মাথা নিচু উঠে দাঁড়াল।
–এটা পড়ালেখা করার জায়গা গল্প করার নয়।যদি গল্প করতে মন চায়। দরজা খোলা আছে ক্লাস রুম থেকে বেড়িয়ে যান।আর এভাবে সং সেজে কলেজে আসার কোনো মানে আছে।কলেজে কি করতে আসেন,গল্প করতে আড্ডা দিতে ফ্যাশন করতে আসেন।তাহলে কলেজে আসার দরকার নেই। আপনার এমন সং সাজার কারনে,আমার ক্লাসে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।এমন সং সাজার কারনে সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে আছে।ফরে পড়াশোনার দিকে মনোযোগ দিতে পারছে না।গল্প করার জন্য ফ্যাশন করার জন্য অনেক জায়গা আছে,সেখানে যাবেন।এসব করতে কলেজে আসবেন না।
আয়ানের কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠলো। আয়ান রেগে বলল।
–সাইলেন্ট প্লিজ,আমাকে আপনাদের জোকার মনে হয়।আমি আপনাদের জোকস শোনাচ্ছি যে আপনারা হাসছেন।আপনাদের ক্লাস-ই আমি নিব না।স্যারদের সামান্য সন্মান করতে পারে না।আমি কিছুতে-ই ক্লাস করাবো না।
পুরো ক্লাস রুমে নিরবতা।কারো মুখে কোনো কথা নেই। একজন ছেলে বলে উঠলো।
–সরি স্যার আমাদের ভুলে হয়ে গেছে। আমাদের মাফ করে দিন।আমরা আর এমন কাজ করবো না।আপনি যেগুলো কাজ পছন্দ করেন না কোনোদিন করবো না কথা দিলাম। তবুও আমাদের ক্লাস নেওয়া বাদ দিবেন না।আপনি আমার খুব প্রিয় স্যার।আপনার ক্লাস করার জন্য আমি প্রতিদিন কলেজে আসি।
ছেলেটির সাথে সবাই বলে উঠলো। আয়ান কিছু’টা শান্ত হলো।তারপরে শখকে বলল।
–আমার ক্লাস রুম থেকে বেড়িয়ে যান।শখ বিনা বাক্যে কান্না করতে করতে বেড়িয়ে গেলো।আয়ান ক্লাস শেষ করে বেড়িয়ে গেলো।
ক্লাস শেষ হতে’ই কুত্তার দল শখকে খুঁজতে লাগল।অবশেষে ছোট পু্কুটির কাছে শখকে খুঁজে পেলো।
–তুই এখানে আর আমরা তোকে পুরো কলেজে খুজে আসলাম।বলল আমান
–মন খারাপ করিস না সোনা।স্যার তোকে ভালোর জন্য-ই বলেছে।আমি’ও দেখেছি।কিছু ছেলে তোর দিকে খুব বাজে নজরে দেখছিলো।তাই স্যার রেগে গিয়েছিল।বলল আয়েশা।
–আমি কিছু মনে করি নাই। তোরা এখানে বস আমি ওনাকে খাবার দিয়ে আসি।বলে’ই শখ আয়ানের কেবিনের দিকে গেলো।
–আসবো স্যার।শখকে দেখে আয়ান আবার রেগে গেলো।
–না,আমি এখন ব্যস্ত আছি।পরে আসবে।
–আম্মু দুপুরের খাবার পাঠিয়েছেন।আপনাকে দুপুরে দিতে বলেছিল।ওটা’ই দিতে আসছিলাম।
–লাগবে না।তুমি চলে যা-ও। আমার ক্ষুদা নেই।
–শখ তবু্ও ভেতরে গিয়ে আয়ানের টেবিল খাবার রেখে চলে আসছিলো দরজার কাছে আসতে’ই আয়ান বলল।
–তুমি জানো না এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না।তোমার সাহস হয় কি করে আমার কথা অমান্য করার।যা-ও খাবার নিয়ে যা-ও। কিছু’টা ধমকে বলল শখ ভয়ে কেঁপে উঠছে, এতটা রেগে যেতে কোনোদিন আয়ানকে দেখে নাই সে।
–আচ্ছা আমি দোষ করেছি।খাবার তো কোনো দোষ করে নাই। তাহলে খাবারের ওপরে কেনো রাগ করছেন আপনি।
–তুমি এখানে থেকে যাবে।রেগে বলল।
–ও যাবে না ছেচরা মেয়ে কোথাকার।ক্লাসে সমস্যা তৈরি করে সমস্যা হয় নাই। এখন আসছে স্যারকে ইমপ্রেস করতে,যদি ভুলিয়ে ভালিয়ে স্যারকে হাতের মুঠোয় করা যায়।
–এসব মেয়েকে ভালো করে জানা আছে।স্যারদের কি করে ইমপ্রেস করতে হয়।স্যারদের ইমপ্রেস করার জন্য বেডে যেতে’ও দুই বার ভাবে না এরা।নষ্ট চরিত্র হীন মেয়ে কোথাকার।
এসব কথা শোনার পরে শখ আর এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।দৌড়ে চলে আসল।এটা ভেবে বেশি কষ্ট লাগছে।যে আয়ান একটা কথা’ও বলল না।
চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here