#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৪২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
পরের দিন সকাল বেলা আয়ানের আগে ঘুম ভাংলো।শখ আয়ানের বুকে মাথা রেখে আয়ানকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।আয়ানের চোখ গেলো ঘুমন্ত শখের দিকে।কি মায়াবী লাগছে শখকে।আয়ানের কাছে শখকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রমনী বলে মনে হচ্ছে।হাজার বছর শখকে দেখলে’ও তার দেখার তৃষ্ণা কোনোদিন মিটবে না।আলতো করে শখের কপালে চুমু খেলো।
একটু পরে শখ নড়েচড়ে উঠলো,আয়ানের দিকে তাকাতে বেশ লজ্জা লাগছে তার।লজ্জায় আয়ানের বুকে মুখ গুজে রইলো।
–আমি জানি বউ তুমি জাগা পেয়েছো।ডং না করে ছাড়ো আমাকে কলেজে যেতে হবে।ফ্রেশ হতে হবে আমার।
শখ কোনো উওর না দিয়ে শুয়ে রইলো।
–তুৃমি কাল বললে চলে যাবে।এখন যেতে পারো।দরজা খুলে দিব।আয়ান উঠতে গেলে।শখ আয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
–শালা বজ্জাত ব্যাডা আমাকে যাওয়ার মতো অবস্থায় রেখেছিস।সারারাত জ্বালিয়ে মেরেছিস।এখন সাত সকাল বেলা আমার সাথে ফাজলামি শুরু করে দিয়েছিস।ইস কি লজ্জা।আল্লাহ তুমি মাটি দুই ভাগ করে দাও।আমি মাটির নিজে চলে যাই।
–বাবা বাহ বউ আমার কতো ভালো হয়ে গেছে।আমি জানতাম আমার বউ আমাকে কতটা ভালোবাসে।আমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না।এখন ছাড়ো বউ আমার কলেজে যেতে হবে।লজ্জা পাওয়া ভান ধরে বললো।শখ অবাক হয়ে ভাবছে।
–কি বাটপার স্যাররে বাবা।এমন ভাব করছে।যেনো ওনাকে,,,
–আমারে বকা দেওয়া শেষ হলে ছাড়ো।
–আমি কি আপনাকে ধরে আছি নাকি অসভ্য ছেলে একটা।
–বউ আমাকে বকা দিলা।
–ওলে সোনা লে,ছোট বাবু কিছু বুজে না।সলি বাবু লাগ করে না।আর বকা দিব না।
শখের কথা শুনে আয়ান হেঁসে ওয়াশরুমে চলে গেলো।শখ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।অসভ্য লোক একটা।রাতের কথা মনে পড়তে’ই লজ্জা দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো শখ।একটু পড়ে আয়ান ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।
শখ কোনো রকম উঠে নিজের জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।শরীলের কিছু অংশে পানি পড়তে’ই জ্বলে উঠলো শখের।সব’ই আয়ানের দেওয়া উপহার।একটু পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।আয়ান শখের জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে।
–এতক্ষণ লাগে তোমার,আমি কখন থেকে বসে আছি।
–আমি আপনাকে বসে থাকতে বলছি নাকি ডং।
–বারে আমার বউয়ের জন্য আমি বসে থাকবো না।তাহলে কে থাকবে শুনি।কথা কম বলো চুপচাপ খেয়ে না-ও।তারপরে আয়ান শখকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে পাইন কিলার খাইয়ে দিলো।
–এখন ঘুমাবে।কলেজে যাওয়ার দরকার নেই।
–হ্যাঁ আমি যাব না।তাহলে আপনি মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবেন।কোনো সমস্যা থাকবে না।আমি গেলে-ই আপনার সমস্যা।তাই না,মেয়েদের সাথে ডলাডলি করতে পারবেন না।
–শখ তোমাকে তো আমি বলে-ই গলায় কামড় বসিয়ে দিলো।
–আম্মু,,,
–তোমার আম্মু নেই।ডেকে লাভ নেই আসবে না।
–রাক্ষস একটা।এভাবে কেউ কামড়ে দেয়।দেখেন তো রক্ত ঝরছে।আপনার মায়া লাগে না।
–তাহলে তুৃমি বাজে কথা বললে কেনো।ঘরে সুন্দরী বউ রেখে কেউ কোনোদিন অন্য মেয়েদের দিকে তাকায়।তুমি জানো না আমি কেমন।
–আপনি একটা অসভ্য ছেলে।এটা আমি জানি।
–কি বললে।
–ঠিকি বলছি।
–তবে রে..
–না আর কামড়ে দিবেন না।আপনি কি রাক্ষস নাকি হুম।এক জায়গায় খালি বারবার আঘাত করেন।
–বারবার আঘাত করি কেনো জানো।যেনো ক্ষত’টা না শুকিয়ে যায়।আমি দেওয়ার এই ভালোবাসার চিহ্ন-ই তোমাকে বারবার আমার কথা মনে করিয়ে দিবে।যখনি দেখবে তখনি আমার কথা মনে হবে।সারাজীবন যেনো আমাকে ভুলতে না পারো।তার জন্য এই আঘাত করতে বারবার আমি রাজি।
–আপনি না খুব রাগী ছিলেন।এত রোমান্টিক হলেন কবে।অবাক হবার ভান ধরে।
শখের কপালে চুমু দিয়ে বললো।
–যেদিন থেকে বউ পেয়েছি সেদিন থেকে।দেখে শুনে থাকবে,কিছু দরকার হলে কউকে বলবে।দিয়ে যাবে।আমি আসি তাহলে বলেই আয়ান চলে গেলো।
একটু পরে শখের রুমে রুহি,শুভ মুনতাসীর,রাফি আসলো লুডু খেলবে সবাই মিলে।একটু পরে মিহু’ও আসলো ওদের পিছু পিছু।
–কি গো বউমা তোমার গলায় কি হয়েছে।
রাফির কথা শুনে শখ চোখ বড় বড় করে তাকালো।শখ তাড়াতাড়ি করে চুল দিয়ে নিজের গলা ঠিক নিলো।
শুভ,রুহি,মুনতাহা মুখ টিপে হাসছে।মিহু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেড়িয়ে গেলো।
–মা তুমি না বলেছিলে এসব কথা বললে ওরা হয়ে যাবে।এখন দেখছি উল্টো হয়ে গেলো।শখ আর আয়ানের মিলে হয়ে গেলো।এখন ওদের কেউ আলাদা করতে পারবে না।
–কি বলছিস।
–আমি সত্যি কথা বলছি মা।এখন শখের পেটে আয়ান ভাইয়ার বাচ্চা হবে।তখন মামু’ও আমাদের সাহায্য করবে না।আমি শখকে শেষ করে ফেলবো।শখ থাকলে আমি আয়ান ভাইয়াকে নিজের করে কখনো পাব না।
–একদম রাগের বসে কিছু করবি না।একবার তোর রাগের জন্য-ই তুমি আয়ানের থেকে দূরে সরে গিয়েছিলি।
–আমার যা করার তো আমি তাই করবো।কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না।বলে-ই হাসতে হাসতে চলে গেলো মিহু।
বিকেল বেলা সবাই বসে গল্প করছে।আয়ন ক্লান্ত শরীল নিয়ে বাসায় আসলো।
–শখ এক গ্লাস পানি নিয়ে উপরে আসো তো।
–আজ একটা বর নাই বলে,এভাবে ডাকে না।বলল মুনতাহা।শুভ রাগী চোখ নিয়ে তাকালো মুনতার দিকে।
–যা-ও তোমার বরের ডাক পড়েছে।হুকুম পালন করে আসো।দেখে শুনে সাবধানে যাইয়ো কেমন।
শখ ওদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।কিছু না বলে পানি নিয়ে ওপরে গেলো।শখ রুমে আসতে-ই আয়ান টান দিয়ে নিজের কোলের মধ্যে বসিয়ে নিলো।
–তোমাকে বলেছিলাম না।ছোটাছুটি করবে না।রুমে থাকবে,নিচে গিয়েছিলে কেনো।
–সবাই কতো আড্ডা দিচ্ছে।মজা করছে।আমার একা একা রুমে ভালো লাগে না।তাই গিয়েছিলাম।
–আমি তো রুহি আপুদের তোমার কাছে আসতে বলছিলাম।ওরা আসছিলো না।
–হ্যাঁ আসছিলো তো।
–তাহলে।
–তাহলে আপনার মাথা।এত ডং ভালো লাগে না।বুজছেন।সরেন আমাকে যেতে দিন।
–আমি আসছি।এখন কোথা’ও
যেতে পারবে না।আমার কাছে থাকতে হবে তোমার।সারাদিন পরে বরকে কাছে পেয়েছে কোথায় আদর করবে।তা-না করে উনি যাই যাই করে।
–স্যার..
–আমি তোমার স্যার হয়।
–হ্যাঁ।
–আরেকবার বলো।
অসহায় দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।আরে বাবা উনি কি প্রথম থেকে আমার জামাই ছিলো নাকি যে সারাদিন জামাই জামাই করবো।
আয়ান শখের ঘাড়ে থেকে চুল গুলো সরিয়ে ইচ্ছে মতো চুমু খেয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো।যাওয়ার আগে বলে গেলো।
–মিহুর থেকে দূরে দূরে থাকবে।একদম ওর আশেপাশে যাবে না।শখ মাথা নেড়ে সন্মতি জানালো।
আমি যদি আয়ান ভাইয়াকে না পাই।তাহলে শখকে’ওনিজের করে রাখতে দিব না।বলেই ছুরি হাতে শখের দিকে এগিয়ে গেলো।
–তোমাকে যদি আমি যদি রাস্তা থেকে না সারা-ই তাহলে কোনোদিন আমি আয়ান ভাইয়াকে নিজের করে পাব না।
–আমি না থাকলে-ও উনি কোনোদিন তোমাকে আপন করে নিবে না।
–বড্ড কথা হয়েছে না,তোমার আজ তোমার সব কথা শেষ করে দিব শখ।
–মিহু এটা কেমন ফাজলামি।অনেক সয্য করেছি তোর বেয়াদবি।আপা আপনি আপনার এই পাগল মেয়ে’কে নিয়ে চলে যান।যতদিন আমার সংসারে থাকবে।একটা না একটা সমস্যা সৃষ্টি করবে।
–নীলিমা তোমার সাহসের তারিফ করতে হয়।তুমি আমাদের বাসা থেকে চলে যেতে বলছো।
–মা,তুৃমি মামিকে কিছু বলবে না।আমরা আজ-ই এ বাসা ছেড়ে চলে যাব।বলে-ই শখের পেটে ছুরি চালাতে যাবে।তার আগে আয়ান এসে ধরে ফেললো।
কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো মিহুর গালে।তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেলো মিহু।
–বাবা,আমি তোমাকে ভালো ভাবে বলছি।তুমি তোমার বোন আর তার মেয়েকে চলে যেতে বলো।নাহলে আমি আজ কিছু একটা করে দিব।আয়ান প্রচন্ড রেগে গেছে।আয়ানের বাবা বুজে গেছে।এখন কোনো শান্ত-নাই কাজে দেবে না।
–আয়ান ভাইয়া তুমি যে শখের জন্য এতকিছু করছো।একদিন নিজ হাতে শখকে ছেড়ে দিবে।আমাকে আপন করে নিবে।সেই সময়’টা আর বেশি দেরি নেই।যেই শখের জন্য এত ভালোবাসা।তা ঘৃণায় পরিনত হতে দুই সেকেন্ড লাগবে না।হাহা।বলে’ই মিহু চলে গেলো তার মাকে নিয়ে।
–শখকে নিয়ে তোমাদের আর কোনো সমস্যা আছে।থাকলে বলতে পারো।আমি শখকে নিয়ে চলে যাব এই বাসা ছেড়ে।
–এসব কি বলছিস।পাগল হয়ে গেছিস।রাগ করিস না বাবা।বলল মিসেস নিলিমা চৌধুরী।
–যে শখের জন্য এতকিছু করছো।কাল সেই শখকে তুমি নিজে ঘৃনা করবে আয়ান।অপেক্ষা শুধু কালকের মনে মনে কথা শুলো বলেই চলে গেলেন আবরাহাম চৌধুরী।
চলবে…..