রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 43

0
1064

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৪৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–বাবা তুমি বলেছিলে শখের আঠারো বছর পূর্ণ হয়ে গেলে শখের সবকিছু আমাদের নামে করে দিবে।তা-না করে নিজের ছেলের বউ বানিয়ে বাসায় তুললে।
–জান্নাত মা আমার বিশ্বাস কর।আমি চেষ্টা করছি।সবকিছু হয়েছে আহনাফ সাহেব এর জন্য।শখকে সবকিছু বলে দিয়েছে।নাহলে কৌশলে ওকে দিয়ে কাজ’টা করিয়ে নিতাম
–আহনাফ সাহেব।আপনি কি বলে দিয়েছেন।শখের নামে তার বাবা-মা কি কি রেখে গিয়েছে।বলল জান্নাত।
আহনাফ সাহেব মাথা নিচু করে উওর দিলো না।
–তাহলে কাজ করে দিচ্ছেন না কেনো।মরার পাকনা গজিয়েছে।
–তোমরা যা ইচ্ছে খুশি করিয়ে নিতে পারো।আমি আর শখের সাথে বেইমানি করতে পারবো না।
–বাদ দাও জান্নাত।সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে।আঙুল বেঁকিয়ে কি ভাবে ঘি তুলতে হয়,তা আমার ভালো করে’ই জানা আছে।
–মাহিম তুমি।বলল আহনাফ সাহেব।
–এইবার আমাকে চিনতে পেরেছেন।নকল বাবা।
–তোমারা চাইলে’ও আমাকে দিয়ে আর অন্যার করাতে পারবে না।
তারপরে মাহিম নিজের ফোনে থেকে একটি ভিডিও অন করে দেখালো,সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আহনাফ সাহেব বলছে।
–আমি নিজের ভাই-ভাবীকে’ও ছাড় দেই নাই।আর দেখতে দিলো না মাহিম।
–এটা মিথ্যা তোমরা আমার মাথায় গান ঠেকিয়ে।ভয় দেখিয়ে জরো করে বলিয়েছো।আমি নিজে ইচ্ছে করে বলি নাই।শখের বাবা-মাকে তোমরা মরেছো।ফিয়াজের একবার সবকিছু মনে পড়তে দাও।তারপরে তোমাদের সব খেলা শেষ।
–তার আগে-ই ঐ দুই ভাইবোন’কে পৃথিবীর থেকে সরিয়ে দিব।
–পারবে না।তার আগে-ই আমি শখকে সবকিছু বলে দিব।
–ভুলে যেও না আহনাফ।শখ কিন্তু আমাদের বাসায় থাকে।হতেও পারে আজ শখের শেষ দিন।
–না এমনটা করবেন না।
–তাহলে আমরা যা বলবো তাই করবে।
–ঠিক আছে।আপনারা যা বলবেন আমি তাই করবো।
–এখন তুমি আসতে পারো।
আহনাফ সাহেব দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।
–বাবা তোমার সাথে এমন কথা ছিলো না।আমি জানতাম তুমি তোমার ছেলে মেয়েদের পেলে আমাকে ঠিক ভুলে যাবে।সেজন্য আমি তোমাকে একদম-ই বিশ্বাস করি না।এখন আয়ান আর রুহি-ই তোমার কাছে বেশি ইম্পর্টেন্ট।তাহলে আমার জায়গা কোথায় তোমার কাছে বাবা।
–হ্যাঁ বাবা,জান্নাত ঠিকি বলেছে।কি করছেন জান্নাত এর জন্য আপনি।
–পুরো জীবন’টা শেষ করে দিলাম।আর এখন বলছো।জন্নাত এর জন্য কি করছি।মাহিম তুমি ওর স্বামী।তোমার হাতে ভরসা করে জান্নাতকে তুলে দিয়ে ছিলাম।তোমাকে নিজের ছেলে,মনে করে তোমাদের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়িয়েছি।আর এখন বলছো কি করেছি।
–আমি এতকিছু শুনতে চাই না বাবা।শখের নামে যেসব বাড়ি গাড়ি,ওর বাবা অফিস সহ সবকিছু আমার চাই।তাহলে বুঝতে পারবো,তুমি আমাদের পাশে আছো।
–আচ্ছা জান্নাত।তোর আমাদের বাসায় যেতে সমস্যা কি।ওখানে তোর মা আছে।তোর ভাই-বোন আছে।
–আমার মা না,বলো সৎ মা।উনি আমার কোনো নিজের মা না।আমি ওনাকে ঘৃণা করি।একদম ওনার সাথে আমার মায়ের তুলনা করবে না।
–জান্নাত বাজে কথা বলিস না।নিলিমা তোকে খুব ভালোবাসে।তোর জন্য প্রতিদিন কান্না করে।সবকিছু ভুলে চল না মা।আমরা সুখে শান্তিতে সংসার করি।
–আমি জানতাম বাবা তুমি বদলে যাবে।নিজের নতুন বউ এর ছেলে মেয়ের মুখ দেখেছো।এখন আমি থাকলে-ই কি আর না থাকলে-ই কি তাই না বলো।
–আমাকে ভুল বুঝিস না মা।আমি শুধু তোকে বলছি।আমরা সবাই মিলে সুখে শান্তিতে সংসার করবো।একবারো তো বলি নাই।শখকে’ও আমাদের সাথে রাখবো।ওকে রাস্তা থেকে সরিয়ে।মিহুর সাথে আয়ানের বিয়ে দিব।বাসায় ফিরে চল মা।
–আমি পারবো না।তুমি থাকো তোমার বউ আর ছেলেমেয়ে নিয়ে।যেদিন সবকিছু আমার নামে করে নিয়ে আসবে।সেদিন আমার সামনে আসবে।না হলে আমি তোমার মুখ’ও দেখতে চাই না।
–জান্নাত মা আমার শোন।আমি তোর জন্য নিজের জীবন’ও দিয়ে দিতে পারি।বাবাকে একটু ভালোবাসলে কি হয়।আমি তো তোর ভালোর জন্য-ই বিয়েটা করেছিলাম।তোর মা আমাকে শপথ করিয়ে নিয়েছিল।যাতে আমি তার ছোট বোনকে বিয়ে করি।তোর যাতে কোনো কষ্ট না হয়।তুই তো আমাদের ভুল বুঝে বসলি।নিলিমা আমি তোকে কোন দিকে কমতি রাখছিলাম বল।
আবরাহাম চৌধুরীর কোনো কথা’ই জান্নাতের কান পর্যন্ত পৌঁছাল না।রাগে আবরাহাম চৌধুরীর চোখ লাল হয়ে গেলো।নিহাল শিকদার তুই মরে’ও শান্তিতে বাঁচতে দিলি না।নিজের আপদ মেয়েটা’কে জ্বালানোর জন্য রেখে গেছিস।আজ এই মেয়ের কিছু একটা করতে-ই হবে বলে’ই বেড়িয়ে গেলেন।
রাত আট’টা বেজে গেছে।আয়ান এখনো আসছে না।আসতে দেরি হবে।ফোনে জানিয়ে দিয়েছে।শখ ভাবলো আয়ানকে সারপ্রাইজ দিলে কেমন হয়।আজকে তার মনের কথা আয়ানকে জানাবে।সেই ভেবে খুশি হয়ে শখ একটা লাল শাড়ি বের করে,আয়ানের আম্মুর কাছে থেকে পড়ে আসলো।হালকা করে সেজে নিলো।এখন দরকার গোলাপ ফুলের।কোথায় পাবে।এত রাতে তাকে কে গোলাপ।তখনি মনে পড়লো রুহি আপু ছাঁদে বিভিন্ন রকমের ফুলের গাছে লাগিয়েছে।গোলাপের গাছ’ও আছে।শখ আস্তে করে ছাঁদে গিয়ে দেখলো তিন’টা গোলাপ ফুল ফুটে আছে।শখ একটা নিচে নেমে আসলো।রুম’টা সুন্দর করে গুছিয়ে নিলো।
রাত দশ-টা বেজে গেলো এখনো আয়ান আসছে না।সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।শখ আয়ানের জন্য না খেয়ে বসে আছে।সারে দশ-টার দিকে আয়ান আসলো।ড্রয়িং রুমে পা রাখতে’ই আবরাহাম চৌধুরী বলল।
–দারাও আয়ান তোমার সাথে আমি কিছু কথা আছে।
–পড়ে বললে হয় না বাবা।এখন প্রচুর ক্লান্ত লাগছে।
–দশ মিনিট সময় দাও আমাকে বেশি সময় নিবো না।
–আচ্ছা বলো কি বলতে চাও।
–এখানে বলা যাবে না।চলো ছাঁদে যাই।
আয়ান অবাক হয়ে ভাবলো তার বাবা পাগল হয়ে গেলো নাকি এত রাতে ছাঁদে যাবে।ইচ্ছে না থাকা সত্বে’ও বাবার পেছনে পেছনে যেতে হলো।
শখ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে কি করে আয়ানকে নিজের কথা বলবে।
–স্যার আমি আপনাকে ভালোবাসি।এভাবে বলবো।শখ তোর মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে।নিজের বরকে কেউ স্যার বলে।তাহলে কি করে বলবো।আমি তোমাকে ভালোবাসি।হ্যাঁ এভাবেই বলবো।তাহলে উনি খুব খুশি হবে।শখ খুব খুশি হয়ে বসে অপেক্ষা করছে আয়ানের জন্য।
–দেখো আয়ান আমি তোমাকে এখন যা কিছু বলবো,তুমি বিশ্বাস করতে চাইবে না।তার জন্য আজ প্রমাণ নিয়ে আসছি।তুমি জানতে চাইতে না তোমার ভাইয়ের খুনি কে।
–হ্যাঁ বাবা আমি জানতে চাই।বলো কে আমার ভাইকে খুন করেছে।যে যদি পৃথিবীতে বেঁচে থাকে তাহলে আমি তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিব।যেভাবে তারা আমার ভাইকে গুলি করে,যে ভাবে আঘাত দিয়ে মৃত্যু যন্তনা দিয়েছে।আমি’ও তাঁদের ঠিক একি যন্তনা দিয়ে পৃথিবীর থেকে সরিয়ে দিব।
–পারবে তো শখকে পৃথিবীর থেকে সরিয়ে দিতে।পারবে তো শখকে মৃত্যুর যন্তনা দিতে।এখন তোমাকে দুর্বল হলে চলবে না আয়ান।তোমাকে শক্ত থাকতে হবে।
আয়ান দু’পা পিছিয়ে গেলো কি বলছো বাবা এসব।তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।শখকে নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে বলতে পারতে।আমি শখকে নিয়ে চলে যেতাম দূরে কোথা’ও।
–বাবা নিজের ভাইয়ের খুনির মেয়ের জন্য এত ভালোবাসা।শখের তুমি আমাদের ছেড়ে দিতে’ও দু’বার ভাবছো না।তাহলে ওকে শাস্তি দিবে কি করে আয়ান।
–মানে…
–মানে’টা খুব সহজ।বলে-ই একটা ভিডিও বের করে আয়ানকে দেখালো।সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।তার মতো-ই দেখতে দশ বছরেরে বাচ্চাকে পর পর পাঁচ গুলি করা হলো।ভিডিও টি দেখে আয়ান চোখ বন্ধ করে মাথায় হাত দিয়ে চিৎকার করে বসে পড়লো।
–বাবা প্লিজ বন্ধ করো।আমি সয্য করতে পারছি না।আমার দম আটকে আসছে।
–দেখছো আয়ান।তোমার জমন ভাই আফরান’কে কিভাবে হত্যা করেছে।
–আফরানের জায়গায় আমার থাকার কথা ছিলো বাবা।কিন্তু আফরান কেনো এমন করেছিলো,কে এই লোক কেনো মারলো আমার ভাইকে।বলো বাবা চুপ থেকো না।আমি আজ সবকিছু শেষ করে দিব।
কত বছর পরে আয়ান আবার আগের মতো পাগলামি শুরু করে দিয়েছে।পুরোনো ক্ষত জাগিয়ে দিয়েছে আবরাহাম চৌধুরী।আয়ানের পাগলামি দেখে আবরাহাম চৌধুরী তৃপ্তির হাসি দিলো।
–শখের বাবা তোমার ভাইকে মেরেছে।ভিডিও’তে যে লোক-কে দেখতে পেলে ওটা শখের বাবা ছিলো।পাশে শখের মা দাঁড়িয়ে ছিলো।দেখো একটা বার বাঁধা দিলো না।আর তুৃমি তোমার ভাইয়ের খুনির মেয়ের জন্য আমাদের ছেড়ে যাবে।আয়ান আর কিছু ভাবতে পারলো না।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।আবার আগে মতো পাগলামি শুরু করে দিয়েছে।রেগে নিচে চলে আসলো।রুমে আসতে’ই শখ খুশি হয়ে আয়ান’কে জড়িয়ে ধরলো।আয়ান ধরলো না।শখ এবার মাথা নিচু করে গোলাপ ফুলটি আয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো।
–আমি তোমাকে ভালোবাসি।বলেই চোখ বন্ধ করে নিলো।কিছু বুঝে ওঠার আগে’ই আয়ান শখের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।হঠাৎ এমন হওয়া শখ পড়ে থেকে লাগলে আয়ান শখকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো।
–শেষে কি না আমি একটা খুনির মেয়েকে ভালোবাসলাম।কি অপরাধ করেছিলো আমার দশ বছরের ছোট ভাই’টা।কেনো এভাবে আমার ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করল তোমার বাবা।উত্তর দাও শখ।
শখ ভয়ে ভয়ে আয়ানের দিকে তাকালো।শখের চোখে পানি চলে আসলো।আয়ানের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।যে,কেউ দেখে ভয় পাবে।ভালোবাসার কথা বললে আয়ান এতটা রেগে যাবে।জানলে হয়তো কোনোদিন প্রকাশ করতো না।শখ কোনো রকম কান্না ভেজা গলায় উত্তর দিলো।
–মানে এসব কি বলছো।
–স্যার ঠিক আছে।আর বলছো না বলছেন।একদম নাটক করবে না।
–আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে কি সব যা-তা বলছেন।
তখনি আয়ান ভিডিও-টি শখের সামনে ধরলো।শখ ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
–এসব কি সরান আমার সামনে থেকে।আমার খুব ভয় লাগছে।
–কেমন মেয়ে নিজের বাবাকে ভয় পাচ্ছো।
–বাবা(অবাক হয়ে।)
–হ্যাঁ,ঐ লোকটি তোমার বাবা।আর যাকে খুন করলো আমার জমজ ভাই আফরান।কেনো খুন করলো তোমার বাবা।উত্তর দাও শখ।
–বিশ্বাস করেন আমি জানি স্যার।এটা যে আমার বাবা আমি আজ প্রথম দেখলাম।আগে কোনোদিন দেখি নাই।আয়ান রাগ সামলাতে না পেরে শখকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
একটু পড়ে শখকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বাহিরে চলে গেলো।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here