রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 46

0
1565

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৪৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিচ্ছি নিয়ে চলে যান।এটা-ই নিতে আসছেন তো।
–একদম বাজে কথা বলবে না।খুব কথা হয়েছে না তোমার।
–বাজে কথা বললাম কোথায় সত্যি কথা-ই বলছি।আমার কথা হবে না।তাহলে কার কথা হবে।চুপ করে তো থেকে-ই ঠকে যাওয়া ছাড়া কিছু-ই পেলাম না।
–শখ।
–আপনি এখান থেকে চলে যান।আপনি আমার মুখ কি দেখতে চান না।আমি নিজে-ই আপনার মুখ দেখতে চাই না।ঘৃণা হয় আমার।
–এমন করে বলছো কেনো।আমি তোমাকে সবকিছু বলবো।আমাকে ঘৃণা করো আর যাই করো।আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বললে মেরে ফেলবো একদম।
–এত সুন্দর অভিনয় কোথায় থেকে শিখেছেন স্যার।আপনি জানতেন আমি কতটা অসহায়।আপনি ছাড়া দুনিয়ায় আমার আপন বলতে কেউ ছিলো না।আমি আপনার পা আকরে ধরে’ও আপনাকে আটকাতে পারি নাই।পাগলের মতো কান্না করছিলাম।আমার করুন অবস্থা দেখে’ও আপনার নিষ্ঠুর মন এতটুকু গলে নাই।বেইমানের মতো একা ফেলে চলে গেলেন।সেদিন আপনার ভালোবাসা কোথায় ছিলো।আর আজ তিন মাস পরে কোনো খোঁজ খবর না নিয়ে।বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি।জানার প্রয়োজন মনে করেন নাই।আপনি-ও প্রমান করে দিলেন স্যার।সবাই এক।সবাই বিশ্বাসঘাতক,বেইমান,প্রতারক।
আয়ান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।শখের কথা গুলোর উত্তর দেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই তার।সে,সত্যি একটা বাজে অন্যায় করেছে।যার ক্ষমা কখনো হয় না।শখ যে,ওর সাথে এখনো কথা বলছে এটা-ই আয়ানের কাছে অনেক।
–যখন আপনাকে আমার খুব করে দরকার ছিলো।আপনাকে যখন খুব করে পাশে চেয়েছিলাম তখন আপনি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন স্যার।আমার এখন লোক দেখানো ভালোবাসা লাগবে না।আপনাকে আমার সয্য হচ্ছে না।আপনি চলে যান।
আয়ান অনুতপ্ত হয়ে বললো।
–আমাকে যা,ইচ্ছে খুশি বলো।আমি জানি আমি অনেক অন্যায় করছি।তোমাকে তোমার খারাপ সময়ে একা ফেলে চলে গিয়েছিলাম।এর মাফ হয় না।তুমি’ও আমাকে মাফ করবে না।ঘৃণা করো কিন্তু ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবে না।আমি সয্য করতে পারি না।
–আপনি সয্য করতে পারেন না।আর আমি প্রতিটা দিন,রাত মাসের পর মাস সয্য করছি।
আয়ান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।কোনো কথা বলছে না।
–মাথা মোটা লোক একটা খালি হাতে আসছে বউয়ের রাগ ভাঙাতে।কিরে তোর কি টাকার অভাব পড়েছে।তোর কাছে টাকা না থাকলে আমাকে বলতি।আমি অনাথ হতে পারি,কিন্তু একটা গোলাপ ফুল কেনার জন্য বিশ,ত্রিশ টাকা সময় থাকে।এত সহজে মাফ করবো মনে করেছেন।যতটা কষ্ট পেয়েছি।আগে সুদে আসলে মিটিয়ে দিব তার পরে মাফ।আমি তো আপনাকে অনেক বিশ্বাস ভরসা করতাম আপনি-ও সবকিছু ভেঙে দিলেন স্যার।ভাবতে’ই চোখের কোনে পানি আসলো।
কোনো কথা না বলে-ই আয়ান শখকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরলো।শখ রেগে আয়ান’কে ছাড়ানো জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
–ছাড়ুন আমাকে,একদম আমাকে স্পর্শ করবেন না।আপনি আমাকে স্পর্শ করলে’ও আমার ঘৃণা লাগে।আমি ঘৃনা করি আপনাকে।
–আমি তো ভালোবাসি।আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে ঠিক তোমার মন জয় করে নিব দেখো।বলে’ই শখের ঘাড়ে চুমু খেতে লাগলো।শখ সামনের দিকে ঘুরে আয়ানকে ধাক্কা দিতে যাবে,তার আগে’ই আয়ান শখকে শক্ত করে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে,শখের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।শখ ছোটাছুটি করে’ও আয়ানের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।এক পর্যায়ে শখ’ও শান্ত হয়ে গেলো।বেশ কিছুক্ষন পরে শখকে ছেড়ে দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,নিজে’ও শখকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল।
–ছাড়ুন আমাকে বাজে লোক একটা।আপনি এখনি যদি চলে না যান।তাহলে আমি চিৎকার করে সবাই’কে ডাকবো।
–ডেকে কি বলবে।
–বলবো,,
–আমি’ও সেটা-ই জানতে চাচ্ছি কি বলবে।
–বলবো আপনি আমাকে বিরক্ত করছেন।
–আচ্ছা বলো আমি কি সবাই-কে ডেকে দিতে সাহায্য করবো।সবাই’কে বলবে কিন্তু,আমার বর আমাকে অনেক আদর করে দিয়েছে।কিন্তু তাতে আমার মন ভরে নাই।আরো আদর করতে বলছি সে আদর করে দিচ্ছে না।তাই..
–চুপ করুন অসভ্য লোক।আর একটা বাজে কথা বলবেন না।আপনার যদি লজ্জা থাকে তাহলে এখনি চলে যান।
–বউয়ের কাছে কিসের লজ্জা।বলে-ই শখের ঠোঁটে হালকা করে চুমু খেলো।
–ছাড়ুন আমাকে আপনি থাকেন আমি চলে যাচ্ছি।
–তোমার যাওয়া লাগবে না।আমি চলে যাব একটু পরে।আমাকে একটু ঘুমোতে দাও।অনেক দিন ঘুমোই নাই শান্তিতে।
–তো আমি কি করবো।আমি কি আপনাকে ধরে রাখছি।চলে যাচ্ছেন না কেনো।বেহায়ার মতো পড়ে আছেন কেনো।
–তোমাকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে শান্তি পাই না।রাগ করো না।একটু পড়ে চলে যাব।আর বলতে হবে না।বলেই শখকে নিজের সাথে মিলিয়ে নিলো।
–পেটে হাত দিবেন না।
–কেনো পেটে হাত দিলে কি হবে।
–এত কৈফিয়ত আমি আপনাকে দিব না।অসয্য লোক একটা।
আয়ান আর কোনো কথা না বলে’ই চোখ বন্ধ করে নিলো।সারা রাজ্যের ঘুম তার চোখে এসে ধরা দিয়েছে।কতগুলো দিন সে ঘুমোই নাই।
–আল্লাহ আমাকে এতগুলো শক্তি দাও।আর হাতিটাকে সরিয়ে দেওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন।বিরবির করতে করতে শখ ঘুমিয়ে গেলো।সে-ও হয়’তো একটু শান্তির ঘুমের অপেক্ষায় ছিলো।
পরেরদিন সকাল বেলা শখের ঘুম ভাঙতেই পাশে তাকিয়ে দেখলো আয়ান নেই।আশপাশে তাকিয়ে দেখলো কোথাও নেই।সত্যি কি উনি চলে গেলো।মনটাই খারাপ হয়ে গেলো শখকে।শখ ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে নিচে চলে আসলো।দু’বার খাবার মুখে দিতে’ই শখের গা টা কেমন গুলিয়ে উঠলো।দৌড়ে গিয়ে ব্রেসিং এ বমি করে দিলো।
–বেঁচে থাকতে তোর বাবা-মা জ্বালিয়েছে।এখন তুই একটা হইছিস কালনাগিনী।আমাদের সারাদিন জ্বালিয়ে মারিস।তুমি যেমন কালনাগিনী তোর বাচ্চা’ও একটা কাল সাপ হবে।জন্ম দেওয়ার আগে’ই মেরে ফেল।যাতে দুনিয়ার এসে কারো জীবন নষ্ট না করে দেয়।
কথা গুলো শখের বুকে গিয়ে আঘাত করলো।ভেতর’টা ছারখার হয়ে যাচ্ছে।সে নিজে’ও একজন মা হ’য়ে।কি করে বলে আমার সন্তান’কে মেরে ফেলতে।কথা’টা বলতে একবারো বুক কাঁপল না।এই মাকে তো আমি চিনি না।মানুষ কি ভাবে এতটা বদলে যায়।আহনাফ সাহেব বাজার নিয়ে বাসায় ফিরে রাহেলা বেগম এর কথা গুলো শুনে ফেলে।তার ইচ্ছে করছে রাহেলা বেগমকে কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিতে।পাশে মেয়ে-জামাই আছে।সেজন্য রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে,রাহেলা বেগমের দিকে।মুনতাহা রেগে তার মাকে বললো।
–ছিঃ মা তুমি আর কতটা নিচে নামবে।তুমি মা হয়ে কি করে শখকে এসব কথা বললে।তোমার একবারো বুক কাঁপল না।তুমি না শখকে কতটা ভালোবাসতে তোমার সেই ভালোবাসা কোথায় গেলো মা।তুমি এতটা বদলে কি করে গেলে।রাহেলা বেগম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।শখকে কষ্ট দিতে গিয়ে কত বড় কথা বলে ফেলছে।কোনো শত্রু’ও এমন কথা বলে না।
শখ এখনো ব্রেসিং এর কাছে পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।
–বাজে মানুষের কথায় কান দিস না মা।তোর জন্য ঔষধ নিয়ে আসছি।খাবি চল।
–না বাবা অনেক কিছু খেয়েছি।আর কিছুর দরকার নেই।অনেক করেছো।আর করতে হবে না।আমি চলে যাচ্ছি।আর আমার জন্য তোমার বাজে খরচ করতে হবে না।
–তোর খুব কথা হয়েছে তাই না।এই অবস্থায় কোথায় যাবি।আয়ান ভাইয়াদের বাসা থেকে-ও তো চলে আসছিস।আয়ান ভাইয়ার যে বাবা হবে।এই খবর’টা তাকে দিয়েছিস।
আসল লেখিকা ফাবিহা বুশরা নিমু।
–না।
–কেনো।
–প্রয়োজন মনে করি নাই।উনি আমাকে যে কষ্টটা দিয়েছে।এটা ওনার শাস্তি।
–খুব বড় হয়ে গেছিস তাই না রে।চল আমার সাথে তোর জন্য কিছু নিয়ে আসছি।দেখবি কেমন হয়েছে।
–আমার কিছু লাগবে না।কেনো শুধু শুধু আমাকে দয়া দেখাতে আসো বলো তো আপু।এমনিতেই অনেক দয়া করেছো।আর লাগবে না।
–কথা কম বলবি।
–আপু আমার কলেজে যেতে হবে।সামনে আমার পরীক্ষা,অনেক দিন কলেজে যাওয়া হয় নাই।আমার নোট সংগ্রহ করতে হবে।
–শখের যে মনের অবস্থা এভাবে যেতে দিও না মুনতাহা।যদি ভুল কিছু করে বসে।বলল শুভ।
–তুমি ঠিক কথা বলেছো।মুনতাহা কিছু বলতে যাবে তার আগে-ই ফিয়াজ আয়েশা নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।সকলের দৃষ্টি ওদের দিকে।
–আয়েশা তুই। ভাইয়া আয়েশা তোমার সাথে কেনো।তোমরা এভাবে সেজেছ কেনো।
–শখ আমি আর আয়েশা বিয়ে করছি।
–মজা করছো ভাইয়া।আয়েশা মার খাবি কিন্তু।ভাইয়া কি বলছে এসব।
–সত্যি কথা বলছে রে শখ।
–এবার বিশ্বাস হলো তোর আয়েশার সাথে আমার তিন বছরে রিলেশন।আয়েশা ছোট ছিলো তাই বিয়ে করতে পারি নাই।বিয়ের বয়স হয়েছে।বিয়ে করে নিয়ে আসছি।
শখের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।শেষে কি-না তার বেস্ট ফ্রেন্ড’ও তাকে ছেড়ে দিলো না।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here