ছেঁড়া মলিন কাপড় পড়ে চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে সারাদিন ভিক্ষা করছি আমি। আর আমার বদজাত, হারামি, ফাজিল, একেকটা শয়তানের দাদা/দাদি রা দূরে থেকে আমাকে দেখছে আর মজা নিচ্ছে। ইচ্ছে করছে প্রত্যেকটা বন্ধু নামের শত্রুকে ফুচকার মতো এক বারে মুখে দিয়ে খেয়ে ফেলি। এমন টানা রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা দুটো টনটন করছে। একটু যে বসবো সে উপায় ও নাই ওদের জন্য। উউউফফফ কেন যে দুনিয়ায় এই বস্তাপচা ফালতু খেলা খেলতে গেলাম। নিজের জুতা দিয়ে নিজের কপালে মারতে ইচ্ছে করছে। আপাতত এই ইচ্ছে টা নিজের মধ্যেই রাখি কারণ পায়ে জুতা তো দুরের কথা একটা পন্স সেন্ডেল ও নাই।
আসুন সবাই,, কেন আমি ভিক্ষুক সেই গল্পটা শুনুন সবাই। আজ স্কুলে দুটো স্যার আসেন নি। টানা দুটো ক্লাস করতে হবে না তাই আমরা সব বন্ধুরা মিলে,দুনিয়ার সেই বিখ্যাত বস্তাপচা ফালতু খেলা Truth and Dare খেলছিলাম। খেলার আগেই শর্ত ছিলো, যে অপশন গুলো পুরোণ করতে পারবে না তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। এটা শোনার পরে অনেকে চলে গেছে কিন্তু আমরা শয়তানের নানী শাশুড়ী দাদা শশুর কোয়ালিটির পাঁচ জন আছি। খেলার সময় একেক জন একেক কাজ করে বা কথা বলে দিচ্ছে। অবশেষে আমার পালা আসলে আমি নিজেকে অনেক সাহসী প্রমাণ করতে এক্সট্রা ভাবের দাপটে গদগদ হয়ে Dare নিয়ে ফেলি। আর তার ফলস্বরূপ পুরো দিন আমাকে ভিক্ষা করে যে টাকা হবে তা দিয়ে ওই রাক্ষসের বংশের নব্য-প্রজন্মকে বিরিয়ানি খাওয়াতে হবে।
একেই বলে নাঁচতে নাঁচতে মাইনকা চিপায় পড়া।চোখে মুখে কালি দিয়ে, ভাইজান পাঁচটা ট্যাকা দ্যান, ওও কাহা পাঁচটা ট্যাকা দ্যান বলে বলে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। আর ১০ মিনিট পরে ৪ টা বাজবে। ইচ্ছে করছে দুনিয়ার সব ঘড়ির সময় ঠেলে ১০ মিনিট আগায় দিই।ঠিক এমন সময়, ওরররেএএ হ্যান্ডসাম ছেলেকে দেখতে পেলাম। কি সুন্দর ছোট ছোট চোখের উপর ঘন মোটা ভ্রু, চুল গুলো বাতাসে হালকা উড়ছে, সিলভার কালার শার্টের উপরের একটা বোতাম খোলা। ওওমায়া আবারও খোচাখোচা দাঁড়ি,, উউফফ আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাবো এবার। ইইশস কি স্মার্টলী ঘড়িতে টাইম দেখে দেখে সামনের দিকে আসছে। আহ্ এবার মনে হয় হার্ট অ্যাটাক হলো আমার। উনি তো সোজা আমার সামনেই আসছে। ওওমায়া তাহলে কি উনিও আমাকে দেখেই ক্র্যাশ খায়ছে নাকি?
উনি আমার সামনে এসেই উনার প্যান্টের পিছনের দিকে হাত নিয়ে গেলেন। উউহুউউ ইইয়ায়ায়াহুউ আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!! উউহুউউহ না নানা না!! এতো সহজে প্রোপজাল এক্সেপ্ট করলে আমাকে হ্যাংলা মেয়ে ভাবতে পারে। আমাকে একটু এক্সট্রা এটিটিউট দেখাতে হবে।। আয়াহায়ারেএ আমার এই ছোট্ট মাথায় কত্ত বুদ্ধি কিলবিল করে। ভাগ্যিস বুদ্ধি গুলো নাক কান দিয়ে বাইরে বেরোয় না।
এই যে টাকা টা নাও, সারাদিন তো মনে হয় কিছু খাওনি,, নাও এটা নাও, খেয়ে নিও।
হঠাৎ কারো পুরুষালি কণ্ঠে এই কথা গুলো বলতে শুনে সামনে তাকিয়ে দেখি, আমার 1স্ট ক্র্যাশের হাতে ৫০ টাকার একটা নোট আর অর্ধেক খাওয়া একটা বার্গার আমার দিকে ধরে আছে। ওওহ আল্লাহ তার মানে আমি এতোক্ষণ মনে মনে বেলুনে গ্যাস ভরছিলাম। ছিঃ কি লজ্জা কি লজ্জা!! আমি যে এখন একটা ফকিন্নি তা ভুলেই গেছি। এত্তো সুন্দর করে সাজুগুজু করে এখানে সেখানে টইটই করে ঘুরে বেড়ায় তখন এমন একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে দেখতে পায় না। আর আজ একটু সময়ের জন্য যেই না ফকিন্নি ভিক্ষুন্নি হলাম অমনি আসতে হলো উনার। ভাবেই ঠোঁট কেলিয়ে কান্না বেড়িয়ে এলো।
আমার কান্না দেখে উনি আরো দরদ উথলায় তুলে বললো,, কয় দিন থেকে না খেয়ে আছো,,ইশ খিদাতে চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে আচ্ছা তুমি এটা খেতে থাকো আমি তোমার জন্য পানি আনছি। বাবা মা নেই বুঝি তোমার।
উউফফ আল্লাহ, হয় তুমি আমাকে ধৈর্য্য দাও নয়তো এই ক্র্যাশ নামক মহব্বত কে হটাও,, তাছাড়া কখন যে আমি এই ভিক্ষার থালা দিয়ে ব্যাটার মাথা ফাঁটাবো ব্যাটা মহব্বত টেরও পাবে না। উনার এঁটো বার্গার আমাকে দিয়ে দরদ দেখাচ্ছে। উউহ মনে করছে আমি সত্যিই ফকিন্নি। ভাগ্যিস তুই আমার প্রথম ক্র্যাশ নয়তো তোর মহব্বতের খনি উপড়াই দিতাম।
মনে মনে বন্ধুদের চৌদ্দপুরুষকে ধুঁয়ে নামাচ্ছি। Dare এর সময় টা খালি শেষ হতে দে। তারপর দেখ একেকজনের কি হাল করি। ঠিক এমন সময় আমার মহব্বত আলির পানির বোতল নিয়ে আবারও আগমন ঘটে। এসেই আবারও আমাকে বলে,, কি হলো? খাচ্ছো না কেন? ওও তোমার বাড়ির আরো সবাই বুঝি না খেয়ে আছে? আচ্ছা যাওয়ার সময় তাদের জন্য পাউরুটি কিনে দেবো, এখন তুমি খেয়ে নাও।
আমি আমার পাতলা মনের লজ্জা ভেদ করে কেবল উত্তর দিতে যাবো অমনি মহব্বত আলির ফোনে কল আসে। উনি ফোন টা পিক করেই বলতে থাকে,,
আরে না না, এইতো আমি এখানেই আছি, দুই মিনিটের মধ্যে আসছি, প্লিজ অপেক্ষা করো, রাস্তায় একটা পথশিশুর সাথে দেখা, দেখেই ভিষণ মায়া লাগলো তাই তাকে খাবার পানি দিয়ে সাহায্য করলাম।
এইসব বলতে বলতে উনি আমাকে আরো একশত টাকা দিয়ে বলেন, এটা দিয়ে বাড়ির জন্য কিছু কিনে নিও।
উউউউউউউ ইইইয়ায়ায়ায়া মাবুদ!! আমি শিশু,, এতো বড় একটা মেয়েকে উনার শিশু মনে হলো,, ব্যাটা মহব্বত আলি আস্তো একটা বলদ। কোনটা শিশু আর কোন টা প্রেমিকা হিসেবে পারফেক্ট মেয়ে বুঝে না। ওওহ খোদা এ কেমন ছেলে কে আমার ক্র্যাশ হিসেবে সৃষ্টি করলা।
আমার ফকিন্নি জীবনের সময় শেষ। খবিশ চারজন দৌড়ে এসে আমার হাত থেকে থালা নিয়ে টাকা গুনতে শুরু করে। সারাদিন ভিক্ষা করলাম আমি আর টাকা গুনার অধিকারও আমার নাই। বাব্বাহ খুব ভালো, অসাধারণ, চমৎকার, মারহাবা।
হারামি গুলোর পিঠে দিলাম কয়েকটা করে বসিয়ে। আজ তোদের জন্য আমার প্রথম ক্র্যাশের চোখে আমি ফকিন্নি, পথশিশু, ভাবা যায় এগলা!!!
তুতুল: দোস্ত ছেলে টা কিন্তু দায়ারুউনন ছিলো। আহ্ কি হ্যাব্বি দেখতে। ইচ্ছে করছিলো সোজা প্রোপজ করে ফেলি।
রুহুল: হ্যাএএ, যে না তোর খেজুরের বাগান মার্কা দাঁতের সাইজ, তুই যাবি প্রোপজ করতে আর অমনি ছেলে টা রাক্ষসী রানী কটকটি ভেবে হার্ট ব্লক করে মারা যাবে।
সাথে সাথে সবার মাঝে হাসির বন্যা বয়ে গেলো। বন্ধুদের সাথে নিয়ে হাত মুখ পরিষ্কার করার জন্য পাশের পাবলিক ওয়াশরুমের দিকে যেতেই আবারও সেই মহব্বত আলির সাথে দেখা।
উনি সাথে সাথে বললেন,, আরে আরে আরে, তুমি তো একটু আগের দেখা সেই ফকিন্নি যাকে আমি বার্গার দিলাম। কি ব্যাপার তুমি এদের সাথে মানে এমন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে কোথায় যাচ্ছো? ওয়েট ওয়েট ওয়েট!! তার মানে তোমাদের ভিক্ষার গ্যাং আছে?তোমাদের এক্ষুনি পুলিশে দেওয়া উচিত।
এই বলেই উনি উনার ফোন বের করে কারো কাছে কল দেন, আর বলেন, দোস্ত একটা গ্যাং এর সন্ধান পেয়েছি। উর্তি বয়সের বেশ কিছু ছেলে মেয়ে, হয়তো ভবিষ্যতে বড় কোন প্ল্যান করার ফন্দি আঁটছে।
আর কিছু শোনার অপেক্ষায় না থেকে, চাচা আপন প্রাণ বাঁচা বলে দেএ দৌড়। পিছনে থেকে হালকা শুনলাম মনে হয়, উনি বারবার বলছেন, এএই থামো বলছি, ভালো হবে না, দাঁড়াও ইত্যাদি।
কি বাঁচাটাই না বেঁচে গেলাম। থানা পুলিশ হলে আব্বু আম্মু দেওয়া মাইরের পাশাপাশি পুলিশের মাইর বোনাস পেতাম।
এমন সময় স্ব-গর্বে শিমুল বলে, তাও তো আমাকে কেউ ধন্যবাদ দিবি না জানি। এমন সিরিয়াস মুহুর্তে তোদের মতো গাধার মাথায় তো এমন বুদ্ধি আসেইনি। তোদের তো, আমাকে নিয়ে গর্ব করা উচিত যে, আমার মতো এত্তো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট তোদের বন্ধু। আচ্ছা যা!!লাগবে না তোদের ধন্যবাদ। এই বুদ্ধি টা দান হিসেবে তোদের দিয়ে দিলাম।
হঠাৎ করে দেখি সামনে,,,,,
চলবে,,,,
#অবুঝ_প্রেম
প্রথম পর্ব
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno