শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক – Part 04

0
408

#শহর_জুড়ে_সন্ধ্যা_নামুক
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

ধড়ফড় করা ঘুম থেকে ওঠে শ্রেয়সী। ঘামে ভিজে গেছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। বেড সাইড টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে সম্পূর্ণ পানিটা খেয়ে ফেলে। শ্রেয়সী বুঝতে পারছে না এমন অদ্ভুত স্বপ্ন সে কেনো দেখলো? ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে তিনটা সাতাশ বাজে। বাকি রাতটা আর শ্রেয়সী ঘুমায় না। বারান্দায় পায়চারি করে কাটিয়ে দেয়।

খুব সকাল সকাল শ্রেয়সীদের বাসার কলিংবেল বেজে ওঠে।নাহিন দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে নাহিন। দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে শ্রেয়সীর বন্ধুমহল। নাহিনকে দেখেই সবাই ভদ্র হয়ে যায়। মিনমিন করে সালাম দেয়।
নাহিন গম্ভীর কন্ঠে সালামের উত্তর দেয়।

এতো সকালে তোমরা এখানে?

তন্ময় আমতা আমতা করে বলে, শ্রেয়সীকে দেখতে এলাম।

শ্রেয়সীকে দেখার কী আছে? শ্রেয়সীকে আগে কখনো দেখনি?

মাহিন দাঁত কেলিয়ে বলে, আজকে তো ভার্সিটির প্রথম দিন। আমরা সবাই একসাথে যাব। তাই শ্রেয়সীকে নিতে এলাম।

এতো সকালে তোমরা ভার্সিটিতে যাবে?

নিতু কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে, আপনি আমাদের সাথে এমন আজব ব্যবহার কেনো করছেন? যেভাবে জেরা করছেন মনে হচ্ছে আপনি পুলিশ আর আমরা চোর। আপনাদের বাসায় মেহমান আসলে বুঝি এভাবে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখেন?

ভিতরে আসো।

নাহিন বলা মাত্রই এক লাফে সবাই বাসায় ঢুকে পড়ে। নাহিন দরজা লাগিয়ে রুমে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে,
সবগুলো ড্রামাবাজ।

নাহিন নিজের রুমে যেতেই সবগুলো হুড়মুড় করে শ্রেয়সীর রুমে ঢুকে পড়ে। মিহান শ্রেয়সীর বিছানার ওপর বসতে বসতে বলে,

শ্রেয়সীরে কই তুই? শুনলাম তুই নাকি ম্যাজিসেট্রেটের প্রেমে পড়ে দেবদাস হয়ে যাচ্ছিস। গাঞ্জা-টাঞ্জা খাবি নাকি?

শ্রেয়সী বারান্দা থেকে এসে ঠাস করে মিহানের পাঠে চর বসিয়ে দেয়। মিহানের দিকে তাকিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলে,

তুই সবসময় আমার সাথে এমন কেনো করিস? সবসময় ফাজলামো ভালো লাগে না। এটা আমার জীবন মরণের প্রশ্ন একটু সিরিয়াস হ।

মিহান একটু কেঁশে গলা পরিষ্কার করে বলে,
যা আমি এখন ভীষণ সিরিয়াস। বন্ধুর জীবন মরণের প্রশ্নে আরেক বন্ধু ফাজলামো করতে পারে না। বল তোর জন্য কী করতে পারি? ঐ ম্যাজিসেট্রটকে তুলে নিয়ে আসবো? তুই একবার শুধু বল দেখ আমরা কি করি। ঐ ম্যাজিসট্রেট যদি বাসর ঘরেও বসে থাকে, তাহলে বাসর ঘর থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসবো।

সবাই মিহানের সাথে তাল মিলায়। শ্রেয়সী সবার দিকে তাকিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলে,

ঐ বেডা তো তোদের লাইগা বাসর ঘরের দরজা খুলে বসে থাকবে। মধুর স্বরে ডেকে বলবে, আসো তোমরা আমাকে তুলে নিয়ে যাও। তোরা আমার সমস্যা সমাধান করার বদলে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছিস।

ইভা শ্রেয়সীর পাশে বসে। শ্রেয়সীর মুখ উল্টে পাল্টে দেখে বলে,

বলতো তোর সমস্যাটা কী? তোর হাব ভাব আমার ভালো ঠেকছে না।

ঐ বেডা যেখানেই আমাকে দেখে সেখানেই জ্ঞান হারানো মেয়ে বলা ডেকে বসে। এতো পরিমাণে আমাকে ডিস্টার্ব করছে যে আমি স্বপ্নেও উনাকে দেখছি। স্বপ্নে দেখি ঐ লোকের মেয়ে বলতাছে, তুমি আমার আব্বুর দিকে তাকিয়ে থাকো কেনো? একদম আমার আব্বুর দিকে তাকাবে না। উনার মেয়ে আছে দেখে আমি কেঁদে কেটে অস্থির। বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো ভাব শুরু করছি। বুঝতে পারছিস ব্যাপারটা কতো সাংঘাতিক ।
তোরা আইডিয়া দে কীভাবে ঐ বেডার কথা মাথা থেকে বের করে দিতে পারবো?

ঐ বেডার কথা তুই আর মাথা থেকে বের করতে পারবি না। তুমি ঐ পোলার প্রেমে পা পিছলে পড়েছ। ঐ পোলারে চাইলেও বুলতে পারবে না। তোমার মন মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু একজনেরই বসবাস।

ইভা তন্ময়ের পিঠে থাপ্পড় মেরে বলে,
একদম আজেবাজে কথা বলবি না। ওর মাথায় একদম আজেবাজে কথা ঢুকাবি না। বাবু তুই আমার কথা শোন। ওদের কথা একদম কানে নিবি না। তুই কোনো প্রেমে টেমে পড়িসনি। ঐ লোক তোকে ডিস্টার্ব করে। সারাদিন উনার কথায় মাথায় ঘুরে তাই স্বপ্নে দেখেছিস। এর থেকে বেশি কিছু না।
প্রেমে পড়া ভালো না। একটা মেয়ে একটা ছেলের প্রেমে পড়লে ছেলের দাম বেড়ে যায়। আরেকটা কথা শোন জীবনেও রিলেশন করবি। রিলেশনের প্রথম দিকে ছেলেরা খুব বেশি সিরিয়াস থাকে। দিন যত বাড়তে থাকে, ছেলেদের অবহেলাও তত বাড়তে থাকে।

মুহিব ধাক্কা দিয়ে ইভাকে শ্রেয়সীর কাছ থেকে
সরিয়ে দিয়ে নিজে শ্রেয়সীর পাশে বসে পড়ে।

শোন শ্রেয়সী একদম ইভার কথায় কান দিবি না। ও কী বুঝে প্রেম ভালোবাসার? সারাদিন শার্ট পেন্ট পড়ে ছেলেদের মতো ঘুরে বেড়ায়। এসব বড়লোকের আদরের দুলালিদের প্রেম ভালোবাসার ফিলিংস সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকে না। ছেলেদের ভালোবাসা সম্পর্কে ওর কতটুকু ধারণা আছে। ছেলেরা যখন সত্যি ভালোবাসে তখন নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসে।

তুই তো খুব বুঝিস। জীবনে তো একটা প্রেমও করতে পারলি না।

নিতু মৃদু চিৎকার করে বলে,
এই তোরা চুপ করবি প্লিজ? সবসময় ঝগড়া করে। কখন থেকে দেখছি সবাই ঐ বেডা, ঐ লোক আর উনি বলছিস উনার নামটা কী? তোরা কেউ জানিস?

সবাই এক সাথে মাথা নাড়ায়। কেউ জানে না। এতক্ষণে প্রিয়ন্তি মুখ খুলে,

তোর তো এট লাস্ট জানার কথা ছিল শ্রেয়সী। তোর সাথে সবসময় দেখা হয়েছে।

হাতে ট্রে নিয়ে রুমের দরজা ঠেলে প্রবেশ করে মিরাজ সরকার। মিরাজ সরকারকে দেখে সবাই সালাম দেয়। মিরাজ সরকার সবার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বলে,

তোমরা কী নিয়ে কথা বলছিলে?

শ্রেয়সীর ম্যাজিসেট্রটকে কথা বলছিলাম।

নিতুর কথার বিপরীতে মিরাজ সরকার ভ্রু কুঁচকে তাকায়। নিতু সবটা খুলে বলে। মিরাজ সরকার মুখটা চিন্তিত করে বলে,

এটা ভাবনার বিষয়। আমার মেয়েটা যে ভীষণ বড় রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছে। এই রোগ সারানোর জন্য যে ঐ ম্যাজিসেট্রটের কাছে যেতে হবে।

মিরাজ সরকার সবার হাতে কফির মগ দেয়। ইভা কফির মগটা হাতে নিয়ে বলে,
আংকেল আপনি এতো ভালো, মিশুক। আন্টি আর শ্রেয়সীও আপনার মতো তাহলে আপনার ছেলেটা এমন কেনো? রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনেছিলেন নাকি? দরজা খুলে আমাদের দেখে এমন একটা ভাব করলো যেনো মুখের ভিতর কেউ এক গ্লাস নিমের রস ঢেলে দিয়েছে। আমাদের সহ্যই করতে পারে না আপনার ছেলে।

নাহিন আমার বড় ভাই হেলাল সরকারের মতো হয়েছে।

সবার কথার মাঝেই শ্রেয়সীর রুমের দরজা ঠেলে প্রবেশ করে নাহিন। শ্রেয়সীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
গতকাল আমার যে বইটা নিয়েছিলি, সেই বইটা কোথায়?

টেবিলের ওপর রাখা নিয়ে যাও।

নাহিন টেবিলের ওপর থেকে বই নিয়ে যাওয়ার সময় ইভার দিকে এক পলক তাকায়। নাহিন রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই শ্রেয়সী ইভার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

এই কী ব্যাপার বলতো? ভাইয়া যাওয়ার সময় তোর দিকে তাকালো কেনো? তোদের মাঝে কিছু চলছে না তো? ওপর দিয়ে প্রেম ভালো না, প্রেম ভালো না ডায়লগ দিয়ে তলে তলে টেম্পো চালাও না তো?

ছিঃ কী বলিস এসব? তোর ভাইয়ের সাথে প্রেম করবো আমি? মাথা খারাপ? এসব প্রেম টেমের প্রতি আমার ইন্টারেস্ট নেই। আর তোর ভাইয়ের মতো আবালের সাথে আরেকটা আবালই প্রেম করবে। আমি না।

___________

সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। নয়টাই তারা বাসা থেকে বের হবে। তাই মিরাজ সরকারের সাথে মিলে হইচই করছে। এর মাঝে বাসার কলিংবেল বেজে ওঠে। সবাইকে বসতে বলে মিরাজ সরকার দরজা খুলতে যায়। দরজার ওপাশের ব্যাক্তিটাকে দেখে সবাই চমকে ওঠে।

আসসালামু আলাইকুম আংকেল। আংকেল আন্টি কোথায়? আমার ওয়াইফ আন্টিকে একটু যেতে বলছে।

দরজার সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটার দিকে শ্রেয়সী বন্ধুরা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে আছে। শ্রেয়সী মাথা নিচু করে বসে আছে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here