মধ্যবিত্ত – Part 29

0
304

#মধ্যবিত্ত
#পর্ব_২৯
#নুসরাত_রিতু
বারোটার আগেই পার্লারের মেয়েরা চলে এসেছে রিমিকে সাজাতে। রিমি ওজু করে তাদের সামনে বসলো। তারাও দ্রুত রিমির মেকআপ এর কাজ শুরু করে দিলো। সারে বারোটার দিকে রিমি তাদের থেকে বিরতি নিয়ে যোহর নামাজ আদায় করে নিয়েছে।
এরপর পুনরায় সাজানো শুরু করলো তারা। রিমি খুব বেশি ভারি মেকআপ নিবে না। তাই হালকা করেই সাজিয়ে দিলো তারা। এরপর রিমির জন্য আনা লং ফুল স্লিভ গাউন টা পরে নিয়েছে রিমি। পার্লারের মেয়েরা খুব সুন্দর করে হিজাব ও নিকাব পড়িয়ে দিলো তাকে। এরপর হিজাবরে সাথে মিলিয়ে গাউনের সাথে আনা ওড়না দিয়ে খুব সুন্দর করে পুরো শরীর ঢেকে করে দিলো তার। এরপর সব কিছুর উপরে বিয়ের ওড়নাটা সেট করে ছেরে দিয়েছে। হাত পায়ে পড়ে নিয়েছে নিউড কালারের মেজা। তারউপরই চুড়ি আংটি সব পড়ানে হয়েছে তাকে। সবশেষে পরিয়ে দিলে খুব সুন্দর একটা মুকুট। যদিও চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না তবুও রিমিকে দেখতে এখন কোন রানির থেকে কম লাগছে না।
সাদ তখন অন্য রুমে বসে বিয়ের শেরওয়ানি পড়ে তৈরি হচ্ছিলো। রিমি আর সাদ একসাথে যাবে তাই সে এখন রিমির জন্য অপেক্ষা করছে।
একটার দিকে তারা সবাই কমিউনিটি সেন্টার এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছে। কোন মেহমান আসার আগেই রিমিকে তিনতলায় রিমির জন্য বরাদ্দ জায়গায় রেখে আসতে চায় সে। বাসা থেকে গাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার সময়ও সে লক্ষ রেখেছে আশেপাশে কেউ আছে কিনা। ড্রাইভাবের সিট থেকে যেনো পেছনে রিমিকে দেখা না যায় সেজন্য মাঝে সে একটা বড় তোয়ালে দিয়ে আড়াল করে রেখেছে। কমিউনিটই সেন্টারে এসে দেখে সেখানে আশেপাশের অনেক মানুষ। তাদেরকে সড়িয়ে প্রায় দশ মিনিট পর রিমিকে তিনতলায় নিতে পেরেছে সে।
রিমিকে বসিয়েও সাদ নিজেও রিমির পাশে বসে বললো, “উফ ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। নিজেকে তোমার বডিগার্ড মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে তুমি একজন সেলিব্রেটি আর আমি তেমার বডিগার্ড। ” বলেই হাহা করে হাসলো সাদ।
রিমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সাদের হাসি মাখা মুখের দিকে। সাদ হাসি থামিয়ে রিমির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো “তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে বউ।”
____________________________
সবাই বেড়িয়ে দরজা তালা দেয়ার সময় রাহির মনে পরলো সে তার ফোন আনেনি। রেনু বেগম আর সেলিনা বেগম যেতে চাচ্ছিলেন না। তাদেরকে রাজি করাতে করাতে এমনিই দেরি হয়ে গিয়েছে। তারপর আবার ফোনের কথা বলবে কি বলবে না ভাবতে ভাবতেই রাফির দরজা তালা দেয়া শেষ। সেই মুহুর্তে হুট করে রাহি বলে উঠলো, “আমি আমার ফোনটা আনতে ভুলে গেছি। নিয়ে আসি?”
সেলিনা চৌধুরী : সবার মাঝে তুই ফোন দিয়ে কি করবি। এমনিও দেরি হয়ে গেছে।
রাহি মিনমিন করে বললো, “রিমির ছবি তুলতাম”
রাফি তালা খুলতে খুলতে বললো, “আপনারা সবাই গাড়িতে উঠুন আমি রাহিকে নিয়ে আসছি। আমিও একটু পানি খাবো।”
সবাই নিচে চলে গেলো আর রাহি গেলো তার রুমে। গোসলে যাওয়ার সময় ফোনটা চার্জে রেখে গেছিলো এখনো সেখানেই আছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে খাটের উপর একটা ব্যাগ রাখা। ব্যাগটা তুলতেই চিরকুটটা দেখে সে। কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে ব্যাগটা খুলে দেখলো খুব সুন্দর একটা বোরখা আর সাথে হিজাব নিকাব। একমুঠ কালো চুড়িও আছে।
চিরকুটে লেখা তোমার জন্য। তার মানে কি এটা রাহির জন্য এনেছিলো রাফি? যদি এনেই থাকে তবে দিলো না কেনো? তবুও ওদের রুমে যেহেতু রাখা তারমানে হয়তো তার জন্যই এনেছে। মনে মনে খুব খুশি হলো সে। দ্রুত বোরখা বদলানো শুরু করে দিলো।
ওদিকে রাহির দেরি দেখে রাফি বাসায় ঢুকে এক গ্লাস পানি খেতে নিলো। পানি খেতে বসতে না বসতেই ফোন বেজে উঠলো তার। ফোন হাতে নিয়ে দেখে জামান সাহেবের ফোন।
রাফি: হ্যা বাবা
জামান সাহেব : কতক্ষণ লাগবে তোদের? দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।
রাফি: একটু দেরী হচ্ছে বাবা। তোমরা বরং চলে যাও। আমি রাহিকে নিয়ে চলে আসবো।
জামান সাহেব: এটা কেমন কথা? তোরা আলাদা যাবি কেনো?
রাফি: আসলে বাবা রাহি হয়তো ফ্রেশ হতে গেছে
এখনো বের হয়নি। তাই বলছিলাম দেরি না করে চলে গেলেই ভালো হতো হয়তো।
জামান সাহেব: আচ্ছা। তোরা তাহলে তাড়াতাড়ি আসিস। আমরা রওয়ানা করছি।
রাফি: আচ্ছা বাবা। সাবধানে যেও।
জামান সাহেব: হুম, রাখছি।
ফোন রাখার পরও যখন রাহি বেরোচ্ছে না তখন রাফি রুমের দিকে আগালো। রুমের কাছে গিয়ে রাহি বলো ডাক দিলো।
রাহি: একমিনিট আসছি
রাফি পুনরায় সোফায় বসলো। পাঁচমিনিট পরও যখন রাহি আসলো না তখন রাফি হাক দিয়ে বললো, “একমিনিট হয়েছে ম্যাম?”
রাহি ভেতর থেকে দৌড়ে এসে বললো, “হয়েছে হয়েছে।”
নিজের পছন্দ করা কাপড়ে রাহিকে দেখে রাফির মন ভালো হয়ে গেলো। কিছু না বলে রাহির সামনে গিয়ে বললো, “একটু জড়িয়ে ধরি?”
প্রশ্ন করলো ঠিকই তবে অনুমতির অপেক্ষা সে করলো না।
এদিকে রাহির হাত পা ঠান্ডা হয়ে এসেছে। মনে কতো প্রশ্ন ছিলো। তার জন্য আনা উপহার তাকে না দিয়ে রেখে দেয়া হলো কেনো? এই চুড়ি কি সেই চুড়ি যা রিমি দেখেছিলো?
কিন্তু কোন প্রশ্নই করা হলো না। যদিও এখন কোন প্রশ্ন করতে তার ইচ্ছেও করছে না। একটু পর ছেড়ে দিয়ে রাফি বললো, “দেরি হয়ে যাচ্ছে। ”
এরপর দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে দরজার বাইরে দাড়ালো। রাহি পিছু পিছু বেড়োতেই দরজায় তালা দিয়ে রাহির হাত ধরে সিড়ি থেকে নামা শুরু করলো।
রাহি নিচে এসে দেখে কেউ নেই আর গাড়িও নেই। তার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে সবাই কোথায়। কিন্তু একটু আগের ঘটনায় সে লজ্জায় প্রশ্ন করতে পারছেনা। সে এখনো কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে ভাবছে আর মিটি মিটি হাসছে।
এরমধ্যে রাফি একটা রিকশা ঠিক করে রাহিকে উঠতে বললো। রাহি একবার রিকশার দিকে তাকালো একবার রাফির দিকে তাকালো তারপর আবার নিচের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসা শুরু করলো। রাফি রাহির হাত ধরে বললো, “লজ্জা পরে পাবে এখন ওঠো।”
রাফির হঠাৎ এই অধিকারবোধ ভালো লাগছে রাহির। আজ সকালেই তার মনে হয়েছিলো জীবন এতো বিশ্রী কেনো। আর এখন তার মনে হচ্ছে জীবন এতে সুন্দর কেনো। এরমধ্যে রাফি রাহির পাশে উঠে বসলো। এর আগেও তারা এক রিকশায় উঠেছে। কিন্তু প্রতিবার রাফি মাঝে অনেকটা জায়গা ফাঁকা রাখতো। কিন্তু এবার কোন অতিরিক্ত জায়গা ফাঁকাও রাখেনি আবার শরীরের সাথে লেপ্টেও বসেনি।
রাফি ফাঁকা না রাখায় রাহি অন্য পাশে সড়তে গেলেই রাফি ফিসফিস করে বললো, “যেমন আছো তেমনই থাকো। আমি কিছুই করবো না। ভয় পেতে হবে না।”
রাহি ফট করে বলে উঠলো, “আমি ভয় পাচ্ছি না।”
কথাটা একটু জোড়ে হওয়ায় রিকশাওয়ালা ঘার ঘুরিয়ে তাকালো। তারপর পুনরায় সামনের দিকে তাকিয়ে রিকশা চালানো শুরু করলো।
রাফি রাহির দিকে আরেকটু এগিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, “আস্তে কথা বলো। ভয় পাচ্ছো না তাহলে কি লজ্জা পাচ্ছো?”
চোখে মুখে তার দুষ্টু হাসি।
রাহি লজ্জায় আরও গুটিয়ে গেলো। রাফি মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকিয়ে নিজ জায়গায় ফিরে আসলো।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here