#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-২৭
#Nishi_khatun
দেখতে দেখতে অনেক গুলো দিন পার হয়ে গেছে।
দাইয়ান শহরে যেয়ে কাজের চাপের জন্য আসতে পারে নাই।
তার যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতা দেখে তাকে চাকুরী দিয়েছে। দাইয়ান এখন নতুন চাকুরীতে জয়েন করেছে কিছুদিন যাবৎ।
নতুন চাকুরী থেকে ছুটি নিয়ে আসতে পারছে না।
আবার রিমশা কে ছাড়া থাকতে তার বহুত কষ্ট হচ্ছে।
রোজ কয়েকবার রিমশা’র সাথে তার মুঠোফোনে কথা হয়। তবে সামনে থেকে দুজনে পাশাপাশি বসে হাতে হাত রেখে গল্প গুজব করাতে যে সুখ আছে। তা কি মুঠোফোন দূর করতে পারে?
এখানে কথা হয় সাময়িক সময়ের জন্য।
দাইয়ান তার প্রিয়তমা’র থেকে দূরে থাকাটা মেনে নিতে পারছে না। তা-ই দ্রুত কাজের স্থানের কাছাকাছি একটা ভাড়া বাসা নিয়েছে। তবে সে কথা রিমশা কে জানাবে না। হুট করে একদিন বাড়িতে যেয়ে রিমশা কে সারপ্রাইজ দিবে।
তাছাড়া সে রিমশা কে এই অবস্থায় এখানে নিয়ে আসলে ওর দেখাশোনা করার জন্য একজন বিশ্বত লোকের দরকার হবে। তেমন একজনের ব্যবস্থা আগে করতে হবে তারপর রিমশা কে বাসায় নিয়ে আসতে পারবে।
দাইয়ান তার শ্বশুরের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করে।
শাওন শেখ মেয়ের দেখাশোনা করার জন্য সব থেকে বিশ্বস্ত লোক হিসাবে ইফার মা নিলুফার কথা দাইয়ান কে বলে। নিলুফার বেগমের কথা শুনে দাইয়ান একটু দ্বিমত পোষণ করে।
দাইয়ানের কথা হচ্ছে,
–“আমাদের জন্য তার মেয়ের কুকীর্তি গুলো জনসম্মুখে এসেছিল। কোথাও না কোথাও তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য আমরা দায়ী। উনি যদি মেয়ের প্রতিশোধ নিতে রিমশা বা বাচ্চার সাথে খারাপ কিছু করে তখন কি হবে?”
শাওন শেখ দাইয়ান কে অনেক কথা বুঝিয়ে বলে!
তারপর উনি বলেন,” নিলুফার অনেক ভালো।
সে রিমশা কে নিজের মেয়ের চোখে দেখে।
আমাদের বিশ্বাস সে রিমশা’র কোনদিন কোন ক্ষতি করবে না। দরকার পড়লে রিমশা’র জন্য সে নিজের জীবন ত্যাগ করবে। আর তোমাদের সাথে থাকলে ওর ভালোই হবে।
একমাত্র মেয়েটা মৃত! তোমাদের সাথে থাকলে রিমশা’র কাজে সাহায্য হবে অন্যদিকে বাচ্চা হওয়ার পর কোন চিন্তা থাকবে না। নিলুফার বাচ্চার দেখাশোনাতে ব্যস্ত থাকবে। ওর শেষ জীবনের দিনগুলো ভালোভাবে কেটে যাবে।”
শাওন শেখের কথায় দাইয়ান রাজী হয়ে যাই।
এরপর সে শ্বশুর কে বলে,
“তাহলে খালাম্মা কে রেডি থাকতে বলবেন। আমি যেদিন রিমশা কে আনতে যাব। ঐদিন তাকে আমাদের সাথে শহরে নিয়ে আসব।”
*
*
মেঘাচ্ছন্ন একটা দিন সকাল থেকেই পরিবেশ গুমোট রুপ ধারণ করে আছে। কিছুদিন হলো রাইসা ভাবী বাচ্চাদের নিয়ে তার বাবার বাড়িতে গেছে। অনেকদিন হলো সে ঐ বাড়িতে যায়নি।
এবার তার এবাড়িতে ফিরে আসার কথা!
তখন তার বাবা- মা একটু দ্বিমত পোষণ করেন।
তাদের কথা বেয়াই -বেয়াইন নিজে এসে তার নাতনীদের নিয়ে যাবে। আমার এমন অবস্থায় তারা আমাকে একলা রেখে যেতে সাহস পাচ্ছে না। ঐ দিকে তাদের বেড়াতে যেতে ইচ্ছা করছে।
তখন আমি নিজেই এগিয়ে যেয়ে বললাম- আম্মা আপনারা সবাই একটু ভাবীর বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসেন। আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। খালাম্মা বাড়িতে থাকবে তো। একদিন আমার দেখাশোনা ন হয় খালাম্মা করবে। তাছাড়া কোন সমস্যা হলে অবশ্যই আপনাদের খবর দেওয়া হবে।
ঝর্ণা আর ইলমার কোথায় বেড়াতে যাওয়া হয়না। এই সুযোগে ওদের একটু বেড়িয়ে আসা হবে। নয়তো আমার বাবু হলে তখন তো আবার সবাইকে ব্যস্ত থাকতে হবে।”
আমার কথায় তারা একটু স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে সকালের দিকে রওনা দেয়।
এদিকে বাড়ির সকলে চলে যাবার পর ঝর্ণার মা বাড়ির সকল কাজ একা হাতে সম্পন্ন করতে হিমশিম খাচ্ছিল।
এতো কাজের ভিড়ে আজকে মেরিনার কাছে তার যাওয়া হয়নি। বিকালের দিকে মেরিনার খাবার রেডি করে খাওয়াতে যাবে ঠিক সে সময় রিমশা তাকে কিছু মেডিসিন আনতে দোকানে পাঠিয়েছে।
এই অসময় প্লেটে খাবার দেখে রিমশা’র বুঝতে বাকি রইলো না এগুলো কার জন্য। রিমশা ভাবলো আমার জন্য খালা তার মেয়েটা কে খাবার খাওয়াতে যেতে পারলো না।
তাহলে আমি না হয় খাবার গুলো মেরিনা কে খাওয়াই দিয়ে আসি।
একটা মানুষিক রোগীর সাহায্য করতে গিয়ে যে বিপদে পড়বে তা কে জানতো?
*
*
ঠিক সেই সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান বাড়ির সদর দরজার সামনে এসে দাইয়ান দাঁড়ায়। সেখানে দাঁড়াতে-ই দাইয়ানের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে।
রিমশা’র গলার কাছে ধাঁরালে ছুড়ি ধরে রেখেছে মেরিনা।
সে পাগলের মত জোড়ে জোড়ে প্রলাপ বাক্য আওড়াই বলতে থাকে,
“দান ভাই শুধু আমার। দাদাভাই বলেছে সে শুধু আমার।
তাহলে তুমি কেমন করে দান ভাইয়ের বউ?
দান ভাই এর বাচ্চা শুধু আমার পেটে থাকবে!
তার বাচ্চা তোমার পেটে কেন? আমি এখুনি এই ছুড়ি দিয়ে সুন্দর করে তোমার পেট কেটে আমার বাচ্চাকে বাহির করে নিব। তাহলে দান ভাই এর বাচ্চা আমার হয়ে যাবে।”
তীব্র ভয়ে রিমশা’র শরীরটা পুরো কাঁপাকাঁপা শুরু করেছে। এই মেয়ের কাছে যাওয়া টাই তার কাল হয়ে গেছে। কোন দুঃখে যে এই পাগলের উপকার করতে গেছে।
মেরিনা ধাঁরালো ছুঁড়িটা রিমশা’র গলা থেকে আস্তে আস্তে ওর সাত মাসের ফোলা বড় পেটের উপর আনতেই পেছনে থেকে দাইয়ান ছুটে এসে মেরিনার হাত থেকে ছুড়ি টা কেড়ে নিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
এদিকে বিদ্ধস্ত রিমশা কে দ্রুত নিজের অবয়বের আড়ালে লুকিয়ে রাখে। তখন দাইয়ান বলে,
“মেরিনা এসব কি হচ্ছে।
তুই এখানে কেন? আর রিমশা’র সাথে কি করছিস তোর কোন হুস আছে? আমার বউ আর বাচ্চার কোন ক্ষতি আমি সহ্য করবো না।”
মেরিনা পাগলের মতো মাথার চুল ধরে টানাটানি করে বলে,
” দান ভাই ঐটা তোমার বউ? তুমি জানো না আমি ছোট থেকে তোমাকে কতোটা ভালোবাসি? তোমাকে আর রিদিকে ভালোবাসি বলে নিজের সব কিছু উজাড় করে দিয়েছি। আমি যদি তোমাকে সত্যি কথা বলি তাহলে তুমি ঐ মেয়েকে ছেড়ে আমাকে আদর করবে? বাচ্চাটা আমাকে দিয়ে দিবেন?”
দাইয়ান উত্তেজিত হয়ে বলে,
“কি সত্যি বলবি তুই?”
মেরিনা একগাল হেসে বলল-
” দান ভাই- আমি রিদির সব অপরাধী কে নিজের এই দুই হাতে খুন করেছি। খুব ভালো কাজ করেছি না বলো? জানো ওদের জন্য আমার রিদি মা মরে গেছে। ওরা রিদিকে আর আমাকে খুব কষ্ট দিছে।
তা-ই আমিও ওদের সব ব্যাথা ফেরত দিয়েছি।”
বলে অট্টহাসি দিতে থাকে।
দাইয়ান আর রিমশা এসব কথা শুনে একদম হতভম্ব।
মেরিনা এসব কি বলছে?
রিমশা তখন পেছনে থেকে আস্তে করে বলে ওঠে,
“এই মেয়েটা কে দেখে বোঝা যাচ্ছে এর মাথায় সমস্যা আছে। তাহলে এই সব খুন এর একার পক্ষে করা কখনোই সম্ভব না। তাহলে কি কেউ মেরিনা কে ব্যবহার করে খুন গুলো করেছে?
যে এমন নিকৃষ্ট কাজ করেছে তাকে কখনো ক্ষমা করবো না।”
ঠিক সে সময় তাদের সামনে মাথা নিচু করে দিরহাম এসে উপস্থিত হয়। রিমশা আর দাইয়ানের আতঙ্কিত চেহারা দেখে সে সব কিছু বুঝে গেছে।
দিরহাম তখন বলে,
“মেরিনা যা বলেছে সাবটাই সত্যি কথা। ঐ জানোয়ার গুলোকে মেরিনা নিজের হাতে জবাই করেছে। কেনো করবে না?
ঐ জানোয়ার গুলো মানব সামাজের যোগ্যছিলো না।। ওরা বেঁচে থাকলে আরো কত রিদি আর মেরিনার সৃষ্টি হবে তার ঠিকানা নেই। আমি মেরিনা কে দিয়ে খুন গুলো করিয়েছি। শয়তান গুলোকে নারী দেহের লোভ দেখিয়ে তাদের রুপসী খালপাড়ে ডেকে আনতাম। তারপর ওদের হাত পা সুন্দর করে বেঁধে মেরিনার হাতে ছুড়ি ধরিয়ে দিয়েছি। মেরিনা হাতে ছুড়ি নিয়ে খুব হিংস্রতার সাথে তাদের খুন করেছে। আমি আর মেরিনা দু জনে মিলে এই সামাজের কীট গুলোকে পরিষ্কার করেছি। একদিক থেকে পাপীদের বিনাশ করেছি অন্যদিকে নিজেদের প্রতিশোধ পূরণ হয়েছে। আমার মেয়ের খুনি আর মেরিনা জীবনটা বিষাক্ত করা কীট গুলো ওপারের বাসিন্দা! ”
দাইয়ান দিরহামের সামনে এসে বলে,
“ভাই তুই কি করে ঐ অসুস্থ মেয়েটাকে এই গুনাহের কাজে শামিল করেছিস? এমন নিকৃষ্ট কাজ কেনো করেছিস? তাও মেরিনা কে দিয়ে?”
দিরহাম খেঁকিয়ে বলে ওঠে,
–“কিসের গুণাহ? ওরা আমার মেয়ে আর মেরিনার সাথে যা করেছে সব কিছু ঠিক ছিলো? আর তোর ঐ আইন পেরেছে জানোয়ার গুলোকে শাস্তি দিতে?
দেখ তোদের ঐ আইনের দৌড়! এতোগুলা খুন হলো তারা খুনির খোঁজ বাহির করতে পারলো না।
শেষ পর্যন্ত তাদের কেস অমীমাংসিত রেখে ক্লোজ করতে হচ্ছে। ”
দিরহাম মেরিনার হাত ধরে দাইয়ানের সামনে দাঁড় করিয়ে বলে,
—“বল, এই মেয়েটার কি দোষ ছিলো? শুধু মাত্র ঐ শয়তানদের শাস্তি দিতে চেয়েছিল! বলে আজ মেয়েটা ভারসাম্যহীন পাগলের লিস্টে। মেরিনা কি ভালো সুখি জীবন ডিজার্ভ করে না? না কি আমাদের বাড়ির আশ্রিত বলে ওর সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতাম না? ইলমা যেমন আমার বোন ছিলো ঠিক তেমন ভাবে আমি ঝর্ণা আর মেরিনা কে নিজের বোন ভেবেছি। হ্যা একটু অন্যায়ের আশ্রয় নিয়েছি! পাগল মেয়েটাকে তোর বউ করার স্বপ্ন দেখিয়েছি।
জানতাম ও পাগল হলেও তোর প্রতি দুর্বল। আর সেই দুর্বলতা কে হাতিয়ার করে আমি মেরিনা কে দিয়ে খুন গুলো করিয়েছি।
তবে ভাগ্য খুব খারাপ। আজ তোর বউ যদি যেচে মেরিনার কাছে না যেতো তাহলে এই দিনটা কখনোই আসত না।
তোর বউ পণ্ডিতি করে খালাকে মেডিসিন কিনতে দোকানে পাঠিয়েছে, আর এদিকে মেরিনার জন্য খাবার নিয়ে যায়। উপকার করতে গেছিলো ভালো কথা!
বড়াই করে নিজের পরিচয় দিতে গেছে কেন?
আমি দাইয়ানের বউ আর এই যে ফোলা পেটের মধ্যে দাইয়ানের বাবু আছে।
আজকে মেরিনার হাত পা বাঁধা ছিলোনা।
তাই সে এসব কথা শুনে রিমশা কে মারতে তাড়া করে।
আমি সেখানে ছিলাম রিমশা কে দেখে আড়ালে লুকিয়ে গেছি। মেরিনা তার বিছানার নিচের ছুড়ি নিয়ে রিমশা কে তাড়া করে। আমি কোন খারাপ কিছু আন্দাজ করেছিলাম। কিছুসময় পর বাড়িতে এসে দেখি তুই। এরপর বাকিটা তুই ভালো জানিস।”
দাইয়ান এতসব কাহিনী শুনে স্তব্ধ। সে কি সব সত্যি জেনেও চুপচাপ থাকবে? নাহ ভাইয়ের করা অন্যায় তার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না।
এদিকে দিরহাম মেরিনার হাত ধরে তাকে জলদী করে তার স্থানে রেখে আসে। সে চাইছে না অন্যকারো দৃষ্টিতে মেরিনা আসুক।
রিমশা দাইয়ানের বুকের মাঝে মুখ গুঁজে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আজকে যদি সে সঠিক সময় মতো না আসতে তাহলে হয়তো তার জীবন এখানেই শেষ হয়ে যেত।
কিছু সময়ের মধ্যে বাড়িতে সকলে এসে উপস্থিত হয়।
সবাইকে দেখে দাইয়ান রিমশা কে নিয়ে তার রুমে চলে যায়।
দাইয়ানের এমন ব্যবহারে সকলে স্তব্ধ।
(সবাই কি গল্পের সেড এন্ডিং চাইছেন না কি হ্যাপি এন্ডিং?)
”
”
”
চলবে…..