#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১০
সাদাফ সামনে থাকা মানুষটাকে ছেড়ে দাঁড়ায়।সামনে থাকা মানুষটি আর কেউ নয় সাদাফের বেস্ট ফ্রেন্ড নিলয়।আর নিলয় একজন সিআইডি অফিসার,সাদাফ নিলয়কে হাসিমুখেই বলে উঠে,,,
“দোস্ত তুই এসে আমার বিরাট বড় উপকার করলি,একটা ফোনে যে তুই চলে আসবি ভাবতেও পারি নি আমি।”
“তোর এত বড় বিপদ আর আমি আসব না সেটা কী হয় নাকি হুম!”
“দোস্ত তকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আসার জন্য।এখন বল না সাবিহার ফোনের লোকেশন ট্রাক করতে পেরেছিস কী না?”
“হুম পেরেছি আর ভাবির লাস্ট লোকেশন যেখানে ছিল সেখানেই তকে নিয়ে যাব এখন,চল আমার সাথে।”
সাদাফ তার বন্ধু নিলয়কে আবারও জড়িয়ে ধরল আর সাথে সাথে কেঁদে ফেলল।সাদাফ কেঁদে কেঁদেই বলে উঠল,,,
“তোর মত বন্ধু থাকা ভাগ্যের ব্যাপার,আমার সাবিহাকে খুঁজে দেয়ার জন্য তোর কাছে সারাজীবন ঋণী থাকব আমি।”
“আরে ভাই এখন মেয়েদের মত কাঁদিস না প্লিজ,আর এখনও ভাবিকে খুঁজে পাই নি।আগে খুঁজে পাই তারপর তোর এই সেন্টিমার্কা মুভি দেখব।এখন তাড়াতাড়ি চল নয়ত দেরি হয়ে যাবে।”
সাদাফ সম্মতি জানালে দুজন রওনা হয় সাবিহার খোঁজে।
_____________________________________
অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম কাব্য ভাইকে ছেড়ে দিব।তাই যেই ভাবা সেই কাজ,বারান্দা থেকে রুমে এসে কাব্য ভাইয়ের হাতে,পায়ের বাঁধন খুলছি আর বলছি উনাকে,,,
“ছেড়ে দিচ্ছি মানে এই নয় যে আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।এটা আপনার লাস্ট চান্স,সামনে থেকে আমার সাথে এমন কিছু করার আগে ২য় বার আজকের ঘটনাটা ভেবে নিবেন।নয়ত ২য় বার কোন ওয়ার্নিং দিব না,সোজা শাস্তি দিব।আর সেটা সম্পূর্ণ আমার নিয়মে,তাই সাবধান।”
কথাটা বলে কাব্য ভাইয়ের হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে বিছানায় চাদরটা রেখে ফিরতে গেলেই কাব্য ভাই আমার গলায় উনার এক হাত পেঁচিয়ে আরেক হাত দিয়ে আমার দুই হাত পিছনে মুচড়ে ধরে।আমি ছোটার চেষ্টা করতেই উনি বলে উঠে,,,
“এতক্ষণ অনেক ভালো মানুষের রূপ দেখিয়েছি কিন্তু আর নয় এবার একটু নিজের রূপটা দেখাই।”
গলায় এমন ভাবে চেপে ধরেছে যে ঠিক করে কথাও বলতে পারছি না।তাই ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললাম,,,
“ককুকুরের লেজজজ কখনওও সসোজা হয় না।”
“এই সাবিহা মুখ সামলে কথা বলবি নয়ত এখানেই শেষ করে দিব তকে।তখন থেকে আমাকে যা তা বলে অপমান করে শাসিয়েছিস।এবার একটা বাজে কথা বলবি আর গাড় থেকে গলাটা আলাদা করে ফেলব একদম।”
“ততুই একটা কাপুরুষ তততাই পিছন থথেকে হামলা করছিস,সসসাহস থাকে ত সসসামনা সামননি আয়।তোর চচোখ ততুলে হহাতে ধরিয়ে দিব।”
কাব্য সাবিহার কথা শুনে পকেট থেকে একটা ব্লেড নিয়ে সাবিহার গলায় চেপে ধরে,ধারালো ব্লেড হওয়ায় হালকা চেপে ধরাতেই কেটে রক্ত ঝড়ছে।সাবিহা চোখ বন্ধ করে নেয়,আর কাব্য বলে উঠে,,,
“আর একটা বাজে কথা বলবি সত্যি সত্যি লাশ ফেলে দিব তোর।”
সাবিহার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে,সাবিহা কাব্যর আচরনে একটুও অবাক হয় নি।সাবিহা এখন শুধু ভাবছে কীভাবে এর হাত থেকে ছুটবে।আগের সাবিহা হলে এতক্ষণে কেঁদে ভাসিয়ে দিত কিন্তু এখনকার সাবিহার সাথে আগের সাবিহার অনেক পার্থক্য।তাই সাবিহা নিজেকে শান্ত রেখে ভাবছে কীভাবে ছাড়া পাবে কাব্যর হাত থেকে।কাব্য আবারও বলে উঠল,,,
“তোর সত্যি পাখনা গজিয়েছে রে,অতিরিক্ত সাহস দেখানোর পাখনা।আর মেয়েদের পাখনা গজানোটা আমার একদম পছন্দ নয়।তাই তোর পাখনা কাটার জন্য এখানে তুলে নিয়ে আসা।
আমি তোর সাথে কোন বন্ধুত্ব ফন্ধুত্ব করতে তুলে নিয়ে আসি নি,আমি তর থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তোকে তুলে এনেছি।তুই মিথ্যা নাটক সাজিয়ে আমার থেকে ইশাকে কেঁড়ে নিয়েছিস আমি সেটা বুঝিনি ভেবেছিস!কয়েকটা ছবি আর পেপারস দেখালেই আমার ভালবাসার উপর আমি অবিশ্বাস করব ভাবলি কী করে?কিছুক্ষণের জন্য আমার মনে হয়েছিল সেসবই সত্যি কিন্তু আমি গত তেরোদিনে সব হিসায় মিলিয়েছি আর এটাও বুঝতে পেরেছি সব তোর ষড়যন্ত্র।
তাই তকে এখানে তুলে এনেছি তোর বদনাম করার জন্য,তুই যাতে সমাজে কারো সামনে মুখ না দেখাতে পারিস তার জন্য তুলে এনেছি।এটাই হবে তোর শাস্তি আমার থেকে আমার ভালবাসাকে কেড়ে নেয়ার জন্য।
কিন্তু তুই উল্টো চাল চেলে দিলি তাই এতক্ষণ এত নাটক করতে হল।সত্যি তোরা মেয়েরা খুব বোকা,কিন্তু তোরা বোকা হলেও তোদের ভাবটা বেশি বুঝলি।আমি তোর কাছে মাফ চাই আর তুই ভাব দেখাস আমার সাথে!আমাকে তুই একটা মেয়ে হয়ে এভাবে শাসালি আর আমি সেটা মুখ বুঝে শয্য করব?কিন্তু আমি ত এত ভালো ছেলে নই যে সব শয্য করব মুখ বুঝে।এতক্ষণ হাত পা বাঁধা ছিল তাই কিছু করতে পারি নি।কিন্তু এখন সবকিছু গুনে গুনে শোধ তুলব।আর তুই কী করে ভাবলিরে তকে আমি এত ঘৃনা করতাম আর এই তেরোদিনে আমি এতটাই ভালো হয়ে যাব যে তোর কাছে ক্ষমা চাইব!”
“তততোর মমুখে থুথু দদদিতে খুবববই ইইচ্ছে কররছে রে,আআআর আআমি আমার ইচ্ছে অপূর্ণ রাখখখব ননা এএএকদমই।”
কথাটা বলেই সাবিহা কাব্যর হাঁটুতে একটা লাথি দেয় পা দিয়ে আর কাব্য টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে বসে পড়ে।আর সাবিহার গলা কিছুটা কেটে যায় কারন কাব্য নিচে পড়ে যাওয়ায় হাতটা সাবিহার গলা থেকে সরে যায় আর হঠাৎ সরে যাওয়ায় কেটে যায়।ভাগ্য ভালো কাব্য তেমন ভাবে ব্লেডটা ধরে নি নয়ত সাবিহার গলা মাথা থেকে সত্যি সত্যি আলাদা হয়ে যেত।সাবিহা তার এক হাত গলায় দিয়ে কাব্যর মুখে থুথু দেয় আর রেগে চিৎকার করে কাব্যর গলাচেপে ধরে বলে উঠে,,,
“তোর মত ছেলেকে একসময় ভালোবেসেছিল ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে নিজের প্রতি।তুই এতক্ষণ কী কী যেন বললি!যে মেয়েদের পাখনা গজানো তোর পছন্দ নয়,মেয়েরা বোকা তাই না!তুই ত মানুষ জাতির কলঙ্ক রে,তুই ত একটা মেয়ের গর্ভেই ছিলি দশমাস দশদিন।একটা মেয়ের জন্যই ত তুই এই পৃথিবীতে এসেছিস,আবার তুই একটা মেয়েকেই ভালবেসেছিস তবে তুই কীভাবে মেয়েদের এতটা ছোট করে কথা বলতে পারলি হে।”
কাব্য সাবিহার থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে কিন্তু সাবিহা এমনভাবে ধরেছে যে ছাড়াতে পারছে না।সাবিহা এবার সাবিহার গলা থেকে হাতটা সরিয়ে কাব্যর গালে ঠাস ঠাস করে কয়টা থাপ্পড় বসিয়ে আবারও বলে উঠে,,,
“তুই আরো কী যেন বলছিলি যে ষড়যন্ত্র করে তোর ভালবাসাকে কেড়ে নিয়েছি তার জন্য আমার বদনাম করবি।আসলে তদের মত মানুষের উপকার করতে নেই,তোর ভালোর জন্য ঐ অসভ্য মেয়েটার বিরুদ্ধে জলজ্যান্ত প্রমান দিলাম কিন্তু তুই ভালবাসায় অন্ধ।বিশ্বাস নিয়ে বসে আছিস যে নিজের মনগড়া কথা নিয়ে আমার ক্ষতি করতে এসেছিস।ভালবাসায় এতটাও অন্ধ হওয়া ভালো নয় যেটাতে নিজের কিংবা অন্য কারো ক্ষতি হয়।এখন তোর আর গাধার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই,একটু বুদ্ধি থাকলে তুই আজকের মত জঘন্য কাজটা করতে পারতি না।সবটা আবেগ দিয়ে না ভেবে মাথা খাটাতি তবে আজ এসব হত না।কিন্তু তুই ত গাধার থেকেও অধম।
আর তুই যে তেরোদিনে ভালো হওয়ার ছেলে নয় সেটা আমি ভালো করেই জানি তাই তকে ক্ষমা করি নি আর না ক্ষমা করব।”
সাবিহা কথাটা বলেই কাব্যর গলা থেকে হাত সরিয়ে উঠাতে নিলেই কাব্য সাবিহাকে ঝাড়ি দিয়ে ফেলে দেয় তখন সাবিহা গিয়ে খাটে পড়ে যায়।আর কাব্য সাবিহার দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু কাব্য কিছু করার আগেই সাবিহা কাব্যর পেটে লাথি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।আর ফ্লোর থেকে রডটা উঠিয়ে কাব্যর মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে।কাব্য সাথেসাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,সেটা দেখে সাবিহা কাব্যর ফোনটা পকেট থেকে বের করে ফোন লাগায় কাউকে।
#চলবে…