#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২৭
” সত্যিটা আর কতটা লুকাবেন ফুফু আম্মা? এবার তো মুখ খুলুন। সে রাতে কি হয়েছিল এ টু জেড বলে ফেলুন। উই আর ইগারলি ওয়েটিং। বলুন বলুন। ”
চরমভাবে ধরাশায়ী সাজেদা ফুফু। উনি বুঝতেই পারছেন না এই মুহূর্তে কি করা উচিত। কি বলা উচিত। করবেন টা কি উনি?
.
সকালের নাস্তা শেষে কিচেন সাফ করছিলেন সাজেদা। জাবির এবং তানু ব্রেকফাস্ট করে নিজ নিজ কাজে বেরিয়ে পড়েছে। দেড় মাস হলো উনি এবং তানু ঢাকায় শিফট হয়েছেন। হবেন নাইবা কেন? ছেলে ওনার কর্মসূত্রে ঢাকায় এসে পড়েছে ক’মাস হলো। আদরের পুত্র একাকী থাকছে। হেল্পিং হ্যান্ডের বানানো অখাদ্য খাচ্ছে। মা হয়ে উনি তা সইতে পারছিলেন না। তাই তো বগুড়ায় সবটা গুছগাছ করে ঢাকায় চলে এলেন। হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য। কিংবা পুত্রের জন্য এখানেই থেকে যাবেন। তবে দুঃখের বিষয় এই যে ওনার ঢাকায় স্থানান্তর হওয়ার খবরটি শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের অজানা। সাজেদা ভাইকে খবর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। মনের কোণে যে অভিমান চাপা পড়ে রয়েছে। শুধুই কি অভিমান নাকি অন্য কিছু? হঠাৎ ওনার ভাবনায় ছেদ পড়লো। কলিংবেল বেজে চলেছে। এখন আবার কে এলো? জাবির অফিসে আর তানু কলেজে। তবে কে? কিচেন সিঙ্কে হাত ধুয়ে নিলেন উনি। শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে দরজার কাছে গেলেন। দরজা উন্মুক্ত হতেই অবাক হলেন উনি! তূর্ণ এবং দুয়া! ওরা কোথা থেকে এলো?
” আসসালামু আলাইকুম ফুফু আম্মা। ”
তূর্ণ বড় করে সালাম দিলো। যাতে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন উনি। দুয়া সিক্ত নয়নে ফুফুর পানে তাকিয়ে। সাজেদা তা লক্ষ্য করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন। তূর্ণ দুয়া’র হাত ধরে ফুফুর পাশ কাটিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বললো,
” ফুফু আম্মা সালামের জবাবটা দিলেন না কিন্তু। সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। ”
সাজেদা ক্ষীণ স্বরে সালামের জবাব দিলেন। তূর্ণ মুচকি হেসে অর্ধাঙ্গিনীকে নিয়ে সোফায় বসলো। দু’জনে পাশাপাশি। সাজেদা দরজা আটকে ওদের কাছে এলেন। এখনো দাঁড়িয়ে উনি। তূর্ণ ওনাকে সোফায় বসার ইশারা করে বললো,
” বসেন বসেন। লজ্জা পাবেন না। আপনারই তো ঘর বাড়ি হোম। বসেন। কষ্ট করে নাস্তার আয়োজন করতে হবে না। আমরা ব্রেকফাস্ট করে এসেছি। ”
সাজেদা গরম চোখে তাকিয়ে তূর্ণ’র বিপরীত দিকে সোফায় বসলেন। মৃদু স্বরে প্রশ্ন করলেন,
” তোমরা হঠাৎ? ”
” কেন ফুপি? আমরা কি আসতে পারি না? আসতে বারণ? ”
দুয়া’র প্রশ্নে সাজেদা কি বলবেন খুঁজে পেলেন না। উনি তূর্ণ’র দিকে তাকালেন।
” কি জন্য এসেছো তুমি? নতুন কোনো ড্রামা করতে? ”
তূর্ণ সোফায় আয়েশ করে বসলো। বাম পায়ের ওপর তুলে রাখলো ডান পা।
” কারেকশন ফুফু আম্মা। ড্রামা করতে আসিনি। বরং ড্রামার সমাপ্তি ঘোষণা করতে এসেছি। ”
” মানে কি? যা বলার সোজাসাপ্টা বলো। এরপর চলে যাও। ”
তূর্ণ অভিমানের সুরে বললো,
” প্রথমবারের মতো আদরের ভাতিজি আর তার বর আপনার বাসায় এলো। আপনি তাদের আপ্যায়ন না করে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছেন? লোকে কি বলবে বলুন তো? পঁচা বলবে না? ”
তেঁতে উঠলো সাজেদা।
” একদম বাজে কথা বলবে না। কথা না পেঁচিয়ে কিসের জন্য এসেছো বলে ফেলো। আমার ছেলেমেয়ে বাসায় নেই। ”
দুয়া মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে বললো,
” আমরা তোমার কাছেই এসেছি ফুপি। ”
” কেন এসেছিস? জামাই নিয়ে রঙঢঙ করতে? ”
তূর্ণ তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানালো।
” আসতাগফিরুল্লাহ্! কি যে বলেন না ফুফু আম্মা। জামাই নিয়ে কেউ রঙঢঙ করে নাকি? জামাই নিয়ে ভালোপাশাপাশি করে। বেবি প্রডিউস করে। আরো কত কি করে। ওসব কি আর বলা যায়? ”
লজ্জা লজ্জা মুখ করে তূর্ণ কথাটা শেষ করলো। সাজেদা তো হতবিহ্বল! দুয়া কটমট করে স্বামীর দিকে তাকালো। অতঃপর ফুপির দিকে তাকিয়ে মোলায়েম স্বরে বলতে লাগলো,
” ফুপি! সে রাতে কি হয়েছিল? আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই। কোনো বাহিরের লোকের কথা শুনতে চাই না। প্লিজ ফুপি তুমি একবার বলো ওসব সত্য নয়। সে রাতে তোমার কোনো ষ*ড়যন্ত্র ছিল না! বলো না ফুপি।”
সাজেদা জিজ্ঞাসু নয়নে তূর্ণ’র দিকে তাকালেন।
” কি? বাহিরের লোক কাকে বললো তাই ভাবছেন তো? মিনু খালাকে বলেছে। মিনু খালাকে চিনতে পেরেছেন? আমাদের বাসার হেল্পিং হ্যান্ড। পাঁচ বছর ধরে কাজ করছিল। কিন্তু এক লহমায় বিশ্বাসঘা*তকতা করে বসলো। তবে শেষমেষ মুখ খুলেছে। ”
সাজেদা কি একটু ভড়কে গেলেন? হয়তো হাঁ। তবে নিজেকে সামলিয়ে কাট-কাট কণ্ঠে বললেন,
” মিনু কি বলেছে না বলেছে তা আমি কি জানি? তোমরা কিসের কথা বলছো? ”
টেবিলের ওপর রাখা ফলের ঝুড়ি থেকে একটি আপেল নিয়ে তাতে কা”মড় বসিয়ে দিলো তূর্ণ। আপেল খেতে খেতে বললো,
” আমাদের বিয়ের আগের রাতের কথা বলছি। কি উদ্দেশ্যে ওমন নিচু খেলা খেললেন আপনি? আমি হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি। তবুও আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই। ”
আপেল চিবানো শেষে তূর্ণ সাফ সাফ বললো,
” সত্যিটা আর কতটা লুকাবেন ফুফু আম্মা? এবার তো মুখ খুলুন। সে রাতে কি হয়েছিল এ টু জেড বলে ফেলুন। উই আর ইগারলি ওয়েটিং। বলুন বলুন। ”
সাজেদা ঘামতে লাগলেন। বুঝতে পারলেন উনি চরমভাবে ধরাশায়ী। আর কোনো উপায় বুঝি নেই। এবার কি করবেন? বহু খুঁজেও উপায় খুঁজে পেলেন না। ফুফুর নীরবতায় জবাব খুঁজে পেল দুয়া। মেয়েটির কোমল হৃদয় ক্ষ”তবিক্ষত হলো আপনজনের ধোঁ|কায়। ফুপি কেমন করে পারলো ওসব করতে? ভাই-ভাবি কিংবা ভাতিজা ভাতিজির কথা একটিবারের জন্যও ভাবলো না! এতটা পা*ষাণ কি করে হতে পারলো? তার চেনা ফুপি তো এমন পা-ষাণ নি”র্দয় নয়! তবে? সাজেদাকে নীরব দেখে তূর্ণ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করলো। সোজা হয়ে বসে গমগমে স্বরে বললো,
” এখন চুপ করে আছেন কেন? আমাদের দুজনকে ফাঁ*সানোর সময় তো ঠিক অ্যাক্টিভ ছিলেন। যা নয় তাই বলালেন মিনু খালাকে দিয়ে। তাহলে এখন মুখে কুলুপ এঁটে আছেন কেন? নাকি এসবের মধ্যে আপনার আদরের সুপুত্র জাবিরও জড়িত? তাকে বাঁচানোর জন্য বোবা হয়ে আছেন? মুখ খুলতে কুণ্ঠাবোধ করছেন? ”
ক্ষে পে উঠলেন সাজেদা।
” একদম বাজে কথা বলবে না। আমার জাবিরকে নিয়ে কুটূক্তি করার কোনো অধিকার তোমার নেই। কে তুমি হাঁ? আমার ছেলেকে দোষারোপ করছো? সেদিন তো জাবির ওখানে ছিলই না। তাহলে কিসের ভিত্তিতে ওকে দোষারোপ করছো? ”
” অবশ্যই ভিত্তি আছে। কে বলতে পারে আপনার সুপুত্র ই হয়তো সবটার কাণ্ডারি। আড়ালে আবডালে বসে খেলা চালনা করছে। ”
” তূর্ণ! ”
ক্ষি প্ত সাজেদা ধমকে উঠলেন। দুয়া তো অবাক নয়নে সবটা অবলোকন করে চলেছে। কি থেকে কি হচ্ছে এসব? তূর্ণ?
” নাম ধরে ডাকাডাকি না করে সত্যি বলুন। বলুন আপনি ওসব করাননি? বলুন। মিথ্যা বলবেন না। বলুন ফুফু। ”
” হাঁ। হাঁ। আমি করিয়েছি ওসব। আমি করিয়েছি। ”
উচ্চ স্বরে স্বীকারোক্তি পেশ করলেন সাজেদা। হতবাক নয়নে তাকিয়ে দুয়া! ছলছল করছে আঁখি যুগল। কর্ণ কুহরে থেমে থেমে ভেসে উঠছে সে কঠিন স্বীকারোক্তি! তূর্ণ’র সরল প্রশ্ন,
” কেন করলেন ওসব? কি পেলেন অমন করে? ”
” পাইনি। যা চেয়েছি তা পাইনি। উল্টো তুমি সবটা শেষ করে দিলে। আমরা ভাবনায় জল ঢেলে দিলে। তোমাকে আমি কখনোই ক্ষমা করবো না। কখনোই না। ”
বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে পড়লেন সাজেদা। তড়িৎ সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। কক্ষজুড়ে পায়চারি করতে করতে বিড়বিড় করতে লাগলেন,
” হয়নি। হয়নি। দুয়া জাবিরের। জাবির বিয়ে করবে। পুতুল বউ আনবে। ”
তূর্ণ এবং দুয়া দুজনেই হতভম্ব চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগলো সুস্থ সবল ফুফুর ভিন্ন রূপ। কেমন পা*গলামো করছে সে!
_____
বহু রাত্রি পূর্বের কথা। তাসলিমার অনুরোধ রক্ষার্থে সাজ্জাদ সাহেব এবং সাজেদা স্বপরিবারে ‘ ছায়াবিথী ‘ রয়ে গেলেন। হাসিখুশিতে অতিবাহিত হলো ডিনার টাইম। তাসলিমা ডুপ্লেক্স বাসার রুমগুলো সকলের মাঝে বিভক্ত করে দিলেন। তানজিনা’র স্বামী রিশাদ অবশ্য রাতে থাকেনি। বাসায় ফিরে গিয়েছিল। বরাবরের মতো দুয়া একাকী এক রুমে ছিলো।
সকলেই যার যার জন্য নির্ধারিত কক্ষে অবস্থান করছে। রাত তখন এগারোটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। জাবির তার জন্য নির্ধারিত কক্ষে বিছানায় বসে মোবাইল স্ক্রল করছিল। হঠাৎ জাবিরের মোবাইলে কল এলো। এত রাতে মায়ের নম্বর দেখে সে কিছুটা অবাক হলো বটে। কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে অভ্যাসবশত কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলো। করিডোর ধরে বেশ কিছুটা এগিয়েছে হঠাৎ শুনতে পেল ফোনের ওপাশ হতে মায়ের আকুতি মাখা কণ্ঠ,
” জাবির! জাবির রে! দুয়া কেমন যেন করছে! আমার মাথা কাজ করছে না। তুই জলদি আয় বাবা। দুয়া…”
দুয়া ভালো নেই! বিষয়টি মস্তিষ্কে হানা দিতেই জাবির স্তব্ধ হয়ে গেল। ইতিউতি না ভেবে তৎক্ষণাৎ ছুটলো দুয়া’র রুমের দিকে। পথিমধ্যে দেখা হলো তূর্ণ’র সাথে। তূর্ণ নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ জাবিরকে ছুটতে দেখে অবাক হলো!
” এ কি আপনি? এমন ছোটাছুটি করছেন কেন? ”
” দুয়া। দুয়া। ”
হাঁপিয়ে চলেছে জাবির। দুয়া’র নামটি কর্ণ কুহরে পৌঁছাতেই তূর্ণ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো। ব্যতিব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন করতে লাগলো,
” দুয়া! কি হয়েছে ওর? বলুন। চুপ করে আছেন কেন? বলুন না কি হয়েছে? ”
” দুয়া। দুয়া ভালো নেই। অসুস্থ। ”
” কিহ্! ”
তূর্ণ’র হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বেদজল উপস্থিত ললাটে। কোনোমতে নিজেকে সামলিয়ে তূর্ণ ছুটলো দুয়া’র রুমের কাছাকাছি। জাবিরও পিছু নিয়েছে। কিছুটা পথ এগোতেই জাবিরের মোবাইলে কল এলো। থমকে গেল জাবির। এত রাতে আননোন নম্বর থেকে ফোন! জরুরী হতে পারে বিবেচনা করে থেমে গেল জাবির। বড় বড় শ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করে কল রিসিভ করলো। অপর প্রান্ত হতে শোনা গেল অপ্রত্যাশিত দুঃসংবাদ! সে তৎক্ষণাৎ পিছু ঘুরে উল্টো পথে ছুটলো। তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেল ‘ ছায়াবিথী ‘ হতে।
তূর্ণ দৌড়ে পৌঁছে গেল দরজার ধারে। হালকা করে ভেজিয়ে রাখা দরজায় হাত স্পর্শ করতেই দরজা খুলে গেল। তড়িৎ বেগে ভেতরে প্রবেশ করলো তূর্ণ। কিন্তু হতবিহ্বল হলো দুয়া’র অবস্থা দেখে! কোথায় অসুস্থতা! মেয়েটি তো নীরবে আরাম করে ঘুমিয়ে। মাইরা’র অবস্থা ঠিকঠাক দেখে বড় করে শ্বাস ফেললো তূর্ণ। মনে হলো বক্ষপট হতে কয়েক মণ ওজনের পাথর সরে গেছে। তূর্ণ যখন স্রষ্টার শুকরিয়া আদায় করতে ব্যস্ত ঠিক তখনই বাহির হতে দরজা আটকে দিলো একজন। সে আর কেউ নয় বরং এই বাড়ির বিশ্বস্ত হেল্পিং হ্যান্ড মিনু খালা। দুঃসময়ে মাত্র আট হাজার টাকার লো ভে সততা বিক্রি করে দিলো সে।
ঘুমন্ত মাইরা’কে দেখে বিমোহিত হলো তূর্ণ। সম্মোহিতের ন্যায় ছোট ছোট কদম ফেলে এগিয়ে গেল। গিয়ে বসলো মেয়েটির শিয়রে। পাশে বসতেই পুলকিত হলো হৃদয়। মুগ্ধ চাহনিতে তূর্ণ কতটা সময় তাকিয়ে রইলো হিসেব নেই। একটু একটু করে অতিবাহিত হতে লাগলো সময়। বিমুগ্ধ তূর্ণ একটুখানি ঝুঁকে গেল। ঘুমন্ত মাইরা’কে ছুঁয়ে দেয়ার প্রবল বাসনা জাগলো মন কুঠিরে। সে ইচ্ছে পূরণ করতেই হাতটি বাড়িয়ে দিলো। আলতো করে ছুঁয়ে দিলো দীঘল কালো কেশ। কেশে হাত রাখতেই মানসপটে স্নিগ্ধ হাওয়া ছুঁয়ে গেল। আবেশে মুদিত হয়ে এলো নেত্রপল্লব। ঠিক সে মুহূর্তে দরজা উন্মুক্ত হলো। তড়িঘড়ি করে ভেতরে প্রবেশ করলো পরিবারের সদস্যরা। সকলেই কিংকর্তব্যবিমূঢ়!
.
এরপরের সময়টা খুবই বাজেভাবে কাটলো। মিনু খালা একের পর এক নোং রা কথা বলে চলেছে। সাথে সঙ্গ দিচ্ছে হতাশ-ক্ষি*প্ত সাজেদা। সে ভেবেছিল কি আর হচ্ছেটা কি? সে তো এখানে তূর্ণ নয় বরং জাবিরকে আশা করেছিল। পরিকল্পনা ছিল যেমন তেমন ভাবে জাবির এবং দুয়া’কে একত্রে সকলের সামনে ফাঁ স করা। এরপর নোং রা পরিকল্পনা মাফিক বলেকয়ে ওদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল? জাবিরের বদলে তূর্ণ কেন? কোথায় জাবির? সাজেদা আশপাশে তাকিয়ে ছেলেকে পেলেন না। তাই মনের আ”ক্রোশ মেটাতে ওদের দুজনকে নিয়ে একের পর এক নোং রা কথা বলতে লাগলেন।
হতবিহ্বল মানব মানবী অর্থাৎ তূর্ণ এবং দুয়া অসহায় বোধ করতে লাগলো এতগুলো অহেতুক নোং রা বাক্যের বিপরীতে। তবে ভাগ্য সহায় ছিল। তাই তো পরিবারের সদস্যরা ওদের ভুল বুঝলো না। বরং সঙ্গ দিলো। তাতে আরো ক্ষি প্ত হলেন সাজেদা। যা নয় তাই বলতে লাগলেন। তূর্ণ’র পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে অবধি প্রশ্ন তুললেন। ধৈর্যের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করা আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ তখন বজ্র্য কণ্ঠে ধমকে উঠলো।
” স্টপ ইট। আর একটাও নোং রা কথা নয়। ”
ধমকে কাজ হলো। সাজেদা আপাতত থামলেন। তূর্ণ ছোট ছোট কদম ফেলে তাহমিদা’র কাছে গেল। খালামণির হাত দু’টো আঁকড়ে ধরে কোমল স্বরে শুধালো,
” খালামণি তুমিও কি ফুফুর মতো আমাদের ভুল ভাবছো? তোমার সত্যিই মনে হয় আমরা পাপী? এমন অন্যায় করেছি? ”
তাহমিদা ছলছল নয়নে প্রিয় ভাগ্নের দিকে তাকালেন। মাথা নাড়িয়ে আপত্তি জানালেন। তূর্ণ বেদনামিশ্রিত হাসলো। এক পলক তাকালো দুয়া’র পানে। মেয়েটা বিছানায় বসে কেমন কাঁদছে! সে কি করুণ চাহনি! তানজিনা এবং তাসলিমা ওকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
” আমরা নির্দোষ। তবুও এতগুলো বি শ্রী কথা শুনতে হলো। খালামণি, খালু! তোমাদের মেয়ে কোনো ক*ল গার্লের মতো নোং’রা নয়। সে খালাতো ভাইয়ের সাথে রা*শলীলা করছিল না। তোমাদের মেয়ে সদ্য প্রস্ফুটিত পুষ্পের ন্যায় ক*লঙ্কমুক্ত। তবুও এতগুলো কথা ওকে শুনতে হলো। আমাদের চরিত্রে দাগ কাটা হলো। আমি তো পুরুষ মানুষ। আজকের এই বাজে ঘটনা হয়তো আমার ওপর প্রভাব ফেলবে না। তবে দুয়া? ও তো একটা মেয়ে। আমাদের সমাজে মেয়েরা বরাবরই অবহেলিত, নিপীড়িত। দেখবে আজকের জন্য ওকে বড্ড ভোগান্তি পোহাতে হবে। মানসিক চাপে পড়তে হবে। আমি আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ তা কখনোই টলারেট করবো না। ”
তূর্ণ তপ্ত শ্বাস ফেলে সাজ্জাদ সাহেবের দিকে তাকালো। উনি এই মূহুর্তে থমথমে বদনে দাঁড়িয়ে। অবনত তার দৃষ্টি। তূর্ণ নিজেকে ধাতস্থ করে জীবনের অন্যতম বড় সিদ্ধান্ত পেশ করলো,
” আজ এই মুহূর্তে আমি আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ তোমাদের সকলকে জানিয়ে রাখছি যে… ইনশাআল্লাহ্ কাল সকাল সকাল আমি তোমাদের আদরের কন্যা জাহিরাহ্ দুয়া’কে আল্লাহ্’র কালাম সাক্ষী রেখে বিয়ে করবো। ইটস্ মাই ফাইনাল ডিসিশন। ”
পুরুষালি ভারিক্কি স্বরের সে এক দৃঢ় অপরিবর্তনীয় সিদ্ধান্ত। হতবিহ্বল নয়নে তাকিয়ে রইলো পরিবারের সদস্যরা। ক্রন্দনরত দুয়া নিজ কানকে বিশ্বাস করতে ব্যর্থ। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
চলবে.
[ আসসালামু আলাইকুম পাঠকবৃন্দ। বড় একটি পর্ব দিলাম। কেমন লাগলো আজকের পর্বটি? রহস্য সামান্য একটু বাকি। তা আগামী পর্বে খোলাসা হবে। ধন্যবাদ সবাইকে পাশে থাকার জন্য। ]