— নাতাশা আজকে আশহাব ভাইয়ার সাথে লামিয়া আপুর এঙ্গেজমেন্ট। তুই না আশহাব ভাইয়াকে পছন্দ করিস? তুই এতোটা স্বাভাবিক আছিস কীভাবে?
তুবার কথা শুনে নাতাশা তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— স্বাভাবিক থাকব না কেন? আমার কি অস্বাভাবিক থাকার কথা?
— তুই যাকে পছন্দ করিস আজকে তার এঙ্গেজমেন্ট। তুই তাহলে স্বাভাবিক থাকবি কীভাবে? তোর কষ্ট হচ্ছে না?
— তুই যেভাবে ভাবছিস বিষয়টা তেমন না। আমি আশহাব ভাইয়াকে পছন্দ করি একজন ভাইয়ের মতো। এর বেশি কিছুই না। তাহলে তার এঙ্গেজমেন্ট হওয়ায় আমি কষ্ট পাব কেন? আমার কাজিনের সাথে তার বিয়ে হচ্ছে এতে তো আমার আরও খুশি হওয়ার কথা?
কথাটা শুনে তুবা অবাক হয়ে বলে উঠল,
— ভাইয়ের মতো পছন্দ করিস মানে? ওহ বুঝেছি। তুই কষ্ট লুকানোর জন্য এসব বলছিস তাই না? আমার সামনে অভিনয় করছিস?
— তুই হঠাৎ এসব কথা কেন বলছিস? আমি কেন অভিনয় করতে যাব? আর আমি কেন আশহাব ভাইয়াকে পছন্দ করতে যাব? উল্টাপাল্টা চিন্তাভাবনা নিয়ে ঘুরছিস সারাদিন।
কথাটা শুনে তুবা হয়ে বলে উঠল,
— কিন্তু তুইই তো আমাকে একবার ম্যাসেজে বলেছিলি যে তুই আশহাব ভাইয়াকে ভালোবাসিস।
— কি? আমি কবে বললাম? আমি কখনোই এমন কথা তোকে বলিনি।
— আচ্ছা। অস্বীকার করছিস তো? আচ্ছা আমি তোকে এখনই প্রমাণ দিচ্ছি।
বলেই সে নিজের ফোন বের করল। তারপর কিছু একটা বের করে তার সামনে ফোনটা ধরল। নাতাশা সামনে থাকা ফোনের দিকে তাকাতেই তার সামনে কিছু ম্যাসেজ ভেসে উঠল। সে ফোনটা হাতে নিয়ে ম্যাসেজগুলো পড়তে শুরু করলো। ম্যাসেজ পড়া শেষে সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। সেখানে তুবার বলার কথাগুলোই লেখা ছিল যা তার নম্বর থেকে করা হয়েছে। কিন্তু সে জানে যে সে এমন কোনো ম্যাসেজ করেইনি। তাই এসব দেখে সে খুবই অবাক হয়ে গেল। তারপর সে তুবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— এখানে দেখাচ্ছে যে আমার নম্বর থেকে এসব ম্যাসেজ করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি এসব ম্যাসেজ করিনি। আমি সত্যি বলছি। আমি তোর কাছে কেন মিথ্যা বলব। আমি তো কখনো তোর থেকে কিছু আড়াল করিনি।
কথাটা শুনে তুবা নাতাশার মুখে দিকে তাকালো। তার এবার কেন যেন নাতাশার কথাগুলো বিশ্বাস হতে লাগল। সে কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না। সে অসহায়ের দৃষ্টিতে নাতাশার দিকে তাকিয়ে রইল। নাতাশা এবার নিজের ফোন বের করে এই ম্যাসেজ খুঁজতে শুরু করল। তেমন কোনো ম্যাসেজ না পেয়ে সে তুবাকে দেখিয়ে বলে উঠল,
— এই দেখ। আমার ফোন থেকে এমন কোনো ম্যাসেজ যায়নি।
তুবার ফোনটা হাতে নিয়ে ভালো করে দেখল। সত্যিই এখানে তেমন কোনো ম্যাসেজ নেই। সে সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগল,
— তাহলে কি নাতাশা সত্যি বলছে? সত্যিই তো। ও কেন আমাকে মিথ্যা বলবে? তাহলে আমাকে এই ম্যাসেজ দিল কে? হয়তো কেউ নাতাশার ফোন থেকে আমাকে এই ম্যাসেজ দিয়েছে তারপর এটা ওর ফোন থেকে ডিলিট করে দিয়েছে।
কথাটাগুলো ভেবে সে নাতাশার দিকে তাকালো। তাকে বোঝাতে না পেরে নাতাশা অস্থির হয়ে উঠেছে। আর তার এই অস্থিরতার ছাপ তার পুরো মুখে ছেয়ে গেছে। তুবা এবার নাতাশার কাছে গিয়ে বলে উঠল,
— আমি এবার বুঝতে পেরেছি এটা তুই বলিসনি। এখন নিজেকে স্বাভাবিক কর। এই সাধারণ বিষয় নিয়ে এতো চিন্তা করা লাগবে। এটা আমি ছাড়া আর কেউ জানে না। আমি এখন থেকে মনে করব এমন কিছু হয়নি।
কথাটা শুনে নাতাশা মন খারাপ করে বলল,
— আচ্ছা।
— যেহেতু এটা সত্যি না। তাহলে এটা নিয়ে এতো চিন্তার কোনো দরকার নেই। একটু আগে যা হয়েছে সেটা ভুলে যা। আমাদের বোনের আজকে এঙ্গেজমেন্ট, আর আমরা এখানে ভুল বুঝে মন খারাপ করে আছি। তাই এখন আর আমরা এসব নিয়ে ভাবব না।
নাতাশা এবার কিছুটা খুশি হয়ে বলে উঠল,
— আচ্ছা।
— এখন দ্রুত পুরোপুরি তৈরি হয়ে নে। নাহলে আমাদের দেরি হয়ে যাবে।
— হুম।
নাতাশা পুরোপুরি তৈরি হওয়া শেষে ওরা বেরিয়ে গেল। নাতাশা আর তুবা প্রায় সমবয়সী। ওরা একই সাথে একই কলেজে পড়ে। তুবা নাতাশার বড়ো চাচার মেয়ে। আর লামিয়া তুবার বড়ো বোন। আজকে তারই এঙ্গেজমেন্ট। ওরা একই বাড়িতে থাকে। নাতাশার পরিবার চার তলায় আর তুবার পরিবার পাঁচ তলায় থাকে। নাতাশা আর তুবা তুবার বাসায় গেল যেখানে অনুষ্ঠান হচ্ছে। নাতাশা ওখানে গিয়ে দেখল তার মা, বাবাও এখানেই আছে। নাতাশা আর তুবা লামিয়ার সাথে কথা বলার জন্য তার রুমে গেল। কিন্তু সেখানে গিয়ে ওরা দেখল লামিয়া রুমে নেই। নাতাশা তখন ওর চাচির কাছে গিয়ে বলল,
— বড় আম্মু লামিয়া আপু কোথায়? আপুর রুমে গিয়ে দেখলাম আপু রুমে নেই।
— লামিয়া তো পার্লারে গেছে। সেখান থেকে এখনো ফেরেনি।
— সময় তো প্রায়ই হয়ে এসেছে। তাহলে এখনো আসেনি কেন?
— জানিনা। তুই বরং তুবাকে বল ওকে কল দিয়ে দেখতে।
— আচ্ছা।
বলেই নাতাশা তুবার কাছে এসে তাকে লামিয়াকে কল দেওয়ার জন্য বলল। তুবাও ওর কথামতো লামিয়াকে কল দিয়ে তার আসার কথা জিজ্ঞাসা করল। একটু পরে আশহাবের পরিবারের সবাই চলে এলো। লামিয়া তখনও আসেনি। তুবা আর নাতাশা দরজার আড়াল থেকে লুকিয়ে দেখতে লাগল। আশহাবকে দেখে তুবা বলে উঠল,
— এই ব্যক্তিকে নিয়েই কিছুক্ষণ আগে আমাদের মধ্যে ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল। আমি তো ভুলই ভেবে বসেছিলাম। আমি তো একে তোর ক্রাশ ভেবেই দুঃখ পাচ্ছিলাম।
— তুই চুপ করবি। আমি আশহাব ভাইয়াকে একজন সিনিয়র ভাই ছাড়া কিছুই মনে করিনা। আমি তো ওনার সাথে তেমন কথাও বলিনি কখনো। বাবার বন্ধুর ছেলে না হলে সেইটুকু কথাও কখনো বলতাম না।
— আচ্ছা বুঝেছি। এখন চল তোর রুমের ভেতরে যাই। এখানে পরে আসব।
— আচ্ছা।
বলেই ওরা রুমে চলে গেল। নাতাশা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
— আশহাব ভাইয়ারাও চলে এসেছে কিন্তু এখনো লামিয়া আপু এসে পৌছায়নি। তুই যখন কল দিয়েছিলি আপু তখন কি বলেছিল?
— আপু বলেছিল বের হয়ে গেছে। প্রায় বাসার কাছে কাছে চলে এসেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে এসে পড়বে।
— তাহলে এখনো আসেনি কেন?
কথাটা শুনে তুবা কিছু বলতে যাবে তখনই তার আম্মু মিসেস তাহিয়া ওখানে এলেন।
— তোরা লামিয়াকে কল দিয়েছিলি। আশহাবরা চলে এসেছে কিন্তু সে এখনো আসেনি।
— আম্মু আমি কল দিয়েছিলাম তো আপুকে। সে বলল প্রায় চলে এসেছে।
বলতে বলতে লামিয়া চলে এলো। অনুষ্ঠানে খুব বেশি কাউকে বলা হয়নি। কিছু আত্মীয় আর লামিয়ার দুই বান্ধবী। লামিয়া আসার পর তুবা আর নাতাশা ওর কাছে গেল। ওরা দুজন ওর সাথে অনেক কথা বলছিল কিন্তু লামিয়া খুবই কম উত্তর দিচ্ছিল। বেশির ভাগই সে হ্যাঁ বা না দিয়ে উত্তর শেষ করছিল। তাকে এতো চুপচাপ দেখে নাতাশার কিছুটা অন্য রকম লাগল। সে তাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই তাকে নিয়ে যাওয়া হলো। লামিয়াকে নিয়ে আশহাবের পাশে বসানো হলো। নাতাশা লামিয়ার দিকে লক্ষ্য রাখছিল। সে দেখল লামিয়া বারবার তার পাশে থাকা বান্ধবীর দিকে তাকাচ্ছে আর কিছু ইশারা করছে। আশহাব এবার লামিয়ার হাত ধরতে গেলে সে হাত ছাড়িয়ে সবার সামনে উঠে দাঁড়াল। তার এমন কাজে সবাই কিছুটা অবাক হয়ে গেল।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। তাই কেউ গল্পের সাথে বাস্তবের তুলনা করবেন না। )
#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_১
#লেখিকা_N_K_Orni