#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_৩
#লেখিকা_N_K_Orni
— আমার মনে হচ্ছে আবার নতুন কিছু ঘটতে চলেছে।
কথাটা শুনে নাতাশার তুবার মুখের দিকে তাকালো। তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগল,
— তুবা কথাটা ভুল বলেনি। আমারও মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটতে চলেছে। কিন্তু কি?
তখনই নাতাশার বাবা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
— যেহেতু লামিয়ার সাথে আশহাবের বিয়েটা হচ্ছে না। তাই আমি ঠিক করেছি আশহাবের সাথে নাতাশার এঙ্গেজমেন্ট হবে। তবে সেটা আজকে নয় অন্য একদিন হবে।
কথাটা শুনে নাতাশার মনে হলো পুরো পৃথিবী উল্টো হয়ে গেছে আর শুধুমাত্র সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর তুবা অবাক চোখে নাতাশার দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা দুজন ওখানেই মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল। নাতাশা এতোটাই অবাক ছিল যে সে কারো সাথেই আর কোনো কথা বলল না। বাসায় ফেরার পরও সে কারও সাথে কোনো কথা না বলে রুমে চলে গেল। তাকে যেতে দেখে তার মা মিসেস রাহা তার বাবাকে বললেন,
— আজকে তুমি যেটা করেছো সেটা একদমই ঠিক হয়নি। তোমার এমন কাজে নাতাশা অনেক কষ্ট পেয়েছে। তোমার আজকে এমনটা করা উচিত হয়নি।
— আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু এটা ছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না।
— তাই বলে মেয়ের অনুমতি না নিয়ে, তাকে না জানিয়ে তার এঙ্গেজমেন্টের কথা ঘোষণা করবে সবার সামনে। তাহলে তোমার আর ভাইয়ার মধ্যে পার্থক্য কোথায় থাকল?
— আমি কিন্তু তারিখ বলিনি এখনো। আর নাতাশা না চাইলে এই বিয়ে কখনোই হবে। আমি আমার মেয়ের ইচ্ছা বিরুদ্ধে কখনোই তাকে বিয়ে দিব না। আমি ওই রকম বাবা নই।
— হুম। কেমন বাবা সেটা তো দেখাই যাচ্ছে, হুহ!
বলেই তিনি রাগ করে ওখান থেকে চলে গেলেন। নিহাদ ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এদিকে নাতাশা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বসে রইল।
— বাবা এমনটা কেন করল? লামিয়া আপুর সাথে এঙ্গেমেন্টটা হয়নি তো কি হয়েছে? আমাদের দেশের সব মেয়ে কি হারিয়ে গেছে? আমাকেই কেন? এভাবে হুটহাট করে সবার সামনে এমন একটা কথা বাবা কীভাবে বলতে পারল?
বলেই সে মন খারাপ করে শুয়ে রইল। রাতে নাতাশার সাথে দেখা করার জন্য তার বাবা তার রুমে এলেন। তিনি রুমে এসে নাতাশার পাশে এসে বসলেন। তারপর তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— আমি জানি আমার কাজের জন্য তোমার মন খারাপ হয়েছে। আমি আজকে এভাবে সবার সামনে এমন একটা কথা ঘোষণা করায় তুমি নিশ্চয়ই আমার উপর রেগে আছো? হুম রেগে থাকাটাই স্বাভাবিক।
ওনার কথাটা শুনে নাতাশা কিছু না বলে চুপ করে বসে রইল। ওকে চুপ করে থাকতে দেখে তিনি আবারও বলে উঠলেন,
— সামনের মাসে তোমাদের এঙ্গেজমেন্টটা হবে। কিন্তু বিয়ের অনেক দেরী আছে। বিয়েটা আরও ছয় বা সাত মাস বা তার বেশি সময় পরে হবে। তাই তোমার কাছে অনেক সময় থাকবে। আমি তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দিতে চাইনা। দেখা যেতে পারে বিয়ের আগের সময়ের মধ্যেই তোমার আশহাবকে পছন্দ হয়ে গেল।
বলেই তিনি চুপ হয়ে গেলেন। নাতাশা এবার বলে উঠল,
— আর যদি সেটা না হয়। বরং এর বিপরীত কিছু হয়। আমি যদি ওই সময়ের মধ্যে অন্য কাউকে পছন্দ করে ফেলি, ভালোবেসে ফেলি। লামিয়া আপুর মতো আমার যদি অন্য কেউ বয়ফ্রেন্ড হয়ে যায় তখন…। তখন কি হবে? এর উত্তর কি তোমার কাছে আছে?
কথাটা শুনে নাতাশার বাবা চুপ করে রইলেন। তিনি কি উত্তর দিবেন বুঝতে পারলেন না। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর তিনি বলে উঠলেন,
— এখন কি তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?
— না। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে যে বয়ফ্রেন্ড হবে না বা আমার কাউকে ভালো লাগবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
— আচ্ছা এখন যেহেতু নেই তাহলে তো এই নিয়ে সমস্যা নেই। আর তখনের বিষয় তখন দেখা যাবে। তখন যদি তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড হয় বা কাউকে পছন্দ হয়ে যায় তখন তুমি আমাকে এসে বলবে। তখন কি করা যায় সেটা আমি তখন ভেবে দেখব। তাই এখন যেটা হচ্ছে সেটা হতে দাও।
বলেই তিনি উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেন। নাতাশা কিছু না বলে মাথা নিচু করে বসে রইল। তার বাবার সাথে কথা বলার সময় সে পুরোটা সময় এভাবেই বসে ছিল। একবারের জন্যও সে মাথা উপরে তোলেনি। তার বাবা দরজার সামনে গিয়ে আবার পেছনে ফিরলেন। নাতাশাকে একইভাবে বসে থাকতে দেখে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তিনি বুঝলেন ওনার মেয়ে ওনার উপর অনেকটাই রাগ করেছেন। কিন্তু তিনি কিছু করার মতো উপায় না পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। তিনি রুম থেকে বের হওয়ার পর নাতাশা মুখ উপরে তুলল। তার চোখ দুটো ছলছল করছে, সেই সাথে লালও হয়ে আছে। সে চোখের পলক ফেলতেই চোখের কোণা বেয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করল। আর সে তার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে সেগুলো মোছার অনবরত চেষ্টা করতে লাগল।
তুবা তার রুমে শুয়ে শুয়ে আজকের ঘটা ঘটনাগুলো মনে করছে। আজকের সবকিছু তার কাছে অদ্ভুত লাগছে। আজকে বিকাল থেকে সে শুধু আশ্চর্যই হয়ে যাচ্ছে। তার মনের ভেতরে অনেক রকমের কথা ঘুরে যাচ্ছে।
— আজকে যে কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না? আমার এখন কেন যেন আবার মনে হচ্ছে নাতাশা আশহাব ভাইয়াকে ভালোবাসে। আর ও আজকে মিথ্যা বলছিল। যদিও ও আমাকে অনেক প্রমাণ দিয়েছে তবুও আমার মন থেকে সন্দেহ যাচ্ছে না। কিন্তু ওই ম্যাসেজের বিষয়টাও অদ্ভুত। আমার উচিত ছিল ওই ম্যাসেজ পাওয়ার পরের দিনই ওকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা। কিন্তু ও ওই ম্যাসেজ দেওয়ার পর আমাকে বলেছিল যে এই বিষয়ে যেন কখনো ওর সাথে সরাসরি কথা না বলি এমনকি একান্তেও না। তাই আমি আর জিজ্ঞাসা করিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তখন জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল। তখন কি আর জানতাম আজকে এমন কিছু হবে? যদি জানতাম তাহলে তখনই প্রশ্ন করতাম। উফফ! আমি অন্যদের বিষয়ে ভাবতে ভাবতে একদিন পাগল হয়ে যাবে। আমার মাথায় কেন যে সবসময় অন্যদের চিন্তা ঘুরপাক খায়? এমন করে একদিনও ঠিক সময়ে ঘুমাতে পারিনি আর দেরি হয়ে যায়। ধুর! ভালো লাগে না।
পরদিন সকালে তুবা আর নাতাশা কলেজে গেল। কিন্তু তারা যাওয়ার সময় তেমন একটা কথা বলল না। আর কালকের বিষয় নিয়ে তো একদমই না। আসলে নাতাশা কালকের বিষয় নিয়ে মন খারাপ করে ছিল যেটা তার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল। তাই তুবা আর তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। কলেজে গিয়ে সে একদম মন খারাপ করে বসে রইল। তখন ওদের এক ফ্রেন্ড দিয়া ওদের কাছে এলো। নাতাশাকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে সে বলে উঠল,
— কিরে নাতাশা তোর কি হয়েছে? এভাবে চুপ করে বসে আছিস? তোর কি কোনো কারণে মন খারাপ?
বলেই সে তুবার দিকে ইশারা দিয়ে জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছে। তুবা এবার মুখ খুলল। সে একবার নাতাশার দিকে তাকিয়ে তারপর সামনে তাকিয়ে বলে উঠল,
— ওর কালকে বিয়ে ঠিক হয়েছে। মনে হয় সামনের মাসে ওর এঙ্গেজমেন্ট।
— কার সাথে? কি করে সে?
— আশহাব ভাইয়ার সাথে।
— আশহাব ভাইয়া? উমম! একাউন্টিং এর আশহাব ভাইয়া? আমাদের কলেজেই পড়ে। ওই যে আমাদের সিনিয়র। তোরা তো চিনিস তাকে। তার সাথে ঠিক হয়েছে?
তুবা কোনো কথা না বলে মাথা উপর নিচ করল। দিয়া এবার খুশি হয়ে বলল,
— এতে মন খারাপ করার কি আছে? সে তো অনেক সুন্দর দেখতে।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )