#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_১০
#লেখিকা_N_K_Orni
বিকালে নাতাশা আশহাবের বলা জায়গায় সময়মতো চলে গেল। সে সেখানে গিয়ে দেখল আশহাব আগে থেকেই ওখানে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। সে গিয়ে আশহাবের সামনে বসল। আশহাব ওকে দেখতেই বলে উঠল,
— তোমার আসতে এতো দেরি হলো কেন?
— আমার কাজ ছিল তাই। আর আমরা ওতোটাও কাছের নই যে দেরি করে আসার জন্য আমাকে জবাবদিহি করতে হবে।
— আচ্ছা। এবার বলো বিয়ে আটকানোর জন্য কোনো কিছু ঠিক করলে?
— না এখনো ঠিক করিনি। তবে আমি তো বলেছি যে আমি ঠিক একটা না একটা উপায় বের করব।
— কিন্তু সামনের সপ্তাহে ওনারা বিয়ের তারিখ ঠিক করবেন।
— তাহলে একটা কাজ করেন। আপনি কোনো মেয়ের সাথে পালিয়ে যান। তাহলে আর আমাদের কাউকেই বিয়ে করতে হবে না।
— তাহলে তখন আমাকে ওই মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।
— ওহহ। তাহলে আপনি এমন কারো সাথে পালিয়ে যান যাকে আপনি পছন্দ করেন।
— সেটা সম্ভব না। তুমি ভালো করেই জানো আমি লামিয়াকে ভালোবাসি।
— তাতে কি? আপনার কি মনে হয় আপনি লামিয়া আপুকে পাবেন? কখনোই না। লামিয়া আপু অন্য কাউকে ভালোবাসে। তার বিয়ে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথেই হবে। তাই আপনার উচিত লামিয়া আপুর আশা ছেড়ে দিয়ে নতুন কাউকে খোঁজা। নাহলে আপনার কখনোই বিয়ে হবে না। সেটা করতে চাইলে আপনি বরং আপনার বাবাকে বলে দিন যে আপনি কখনো বিয়ে করবেন না। তাহলে আমি আর আপনি দুজনেই বেঁচে যাব।
— এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা বাদ দেও। নিজে কোনো ভালো প্লান বের করো।
— আচ্ছা আমি চেষ্টা করছি। আর বাবা বলেছেন তো যে বিয়ের তারিখ আরও পরে ঠিক করবেন। তাই বিয়ে হতে এখনো অনেক সময় আছে। এই নিয়ে আপনাকে এতো চিন্তা করতে হবে না।
— হ্যাঁ ওই আশাই থাকো। তোমার বাবা তোমাকে মিথ্যাও বলতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে কিছুই বলা যায় না। দেখা গেল ওনারা সামনের মাসেই বিয়ে ঠিক করে ফেললেন। তখন কি করবে? এক্ষেত্রে আগে আগেই কোনো একটা প্লান তৈরি করে রাখতে হবে। তাই যা করার তাড়াতাড়ি করো। আমার দিক থেকে কোনো সাহায্য লাগলে বলতে পারো।
কথাটা শুনে নাতাশার মন খারাপ হয়ে গেল। সে চিন্তিত মুখে বলে উঠল,
— আচ্ছা।
তারপর ওরা আরও কিছুক্ষণ কথা বলল। সন্ধ্যার একটু আগে নাতাশা বাসায় ফিরে এলো। সে একাই এসেছে বাসায়। আশহাব তাকে বাসা পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার বলেছিল। কিন্তু সে তাকে নিষেধ করে দিয়েছে। সে চায় তার বাবা মা তাকে আশহাবের সাথে দেখে উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে নিক। সে এমনিতেই বিয়েটা আটকানোর চেষ্টায় আছে। এই অবস্থায় যদি তারা তাদের দুজনকে একসাথে দেখে ফেলে তাহলে বিয়েটা আটকানো কঠিন হয়ে যাবে।
নাতাশা বাসায় আশার পরেও মন খারাপ করে আছে। সে কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। তার মাথায় বারবার আশহাবের বলা কথাগুলোই ঘুরছে। যার কারণে তার মনে ভয় ঢুকে গেছে। যদি তার বাবা তার বিয়ের তারিখ দ্রুত ঠিক করে ফেলে তাহলে তার কিছুই করার থাকবে না। পরদিন কলেজেও গিয়েও সে চুপ করে রইল। কারো সাথে ঠিকমতো কথাও বলল না। তুবা বারবার তাকে জিজ্ঞাসা করল যে তার কিছু হয়েছে কিনা। কিন্তু সে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে কথাটা এড়িয়ে গেছে। কারণ সে কাউকেই তার এসব বিষয়ে বলতে চায় না। তার মাও তার এই মন খারাপ লক্ষ করেছেন। কিন্তু ওকে তিনি কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেননি। কলেজ থেকে ফিরে সে খেয়ে বিছানায় শুয়ে ছিল। তখনই তার ফোনে কেউ কল দিল। সে ফোনের দিকে না দেখেই ফোনটা উল্টা করে রাখল। কিন্তু একটু পরে আবার বেজে উঠল। প্রথম দুইবার সে কলটা ইগনোর করলেও পরের বার সে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরে কানে দিল। সে এতোটাই বিরক্ত ছিল যে কে কল দিয়েছে সেটাও দেখলল না। সে ফোনটা কানে দিতেই অপর পাশ থেকে কেউ বলে উঠল,
— নাতাশা তুমি ঠিক আছো তো?
কথাটা শুনতেই নাতাশা সাথে সাথে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালো। সেদিকে তাকাতেই নিহরাফ নামটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠল। সে ফোনটা কানে দিয়ে বলল,
— কেন?
— তুমি কল ধরতে দেরি করছিলে তো তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
— হ্যাঁ আমি ঠিকই আছি।
— কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না তুমি ঠিক আছো।
কথাটা শুনে নাতাশা মুচকি হাসল। কিন্তু মুখে কিছু না বলে সে চুপ করে রইল।
— আজকে কলেজে আমি লক্ষ করেছি তুমি খুবই মন খারাপ করে ছিলে। তারপর তুমি বাসায় যাওয়ার সময়ও একই ভাবে ছিলে। তুমি তো এমন করে থাকো না। সত্যি করে বলো কি হয়েছে?
— তেমন কিছুই না।
— তারপরও বলো আমাকে। একজন ফ্রেন্ড মনে করে বলতে পারো। দেখা গেল আমি তোমার সমস্যার সমাধান করে দিলাম।
— আরে তেমন কিছুই না। তোমাকে এই নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
— আচ্ছা বুঝেছি। অনেক সিরিয়াস কিছু যা আমাকে বলা যাবে না।
নাতাশা এবার আর নিজেকে চুপ করে রাখতে পারল না। সে নিহরাফকে সব কথা খুলে বলল। এমনকি তার আর আশহাবের মাঝে হওয়া কথোপকথন গুলোও খুলে বলল যা সে কাউকেই বলেনি। সব শুনে নিহরাফ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠল,
— আচ্ছা বুঝেছি। এখন ওসব চিন্তা বাদ দেও। এখন যদি এতো চিন্তা করতে থাকো তাহলে কোনো উপায়ই খুঁজে পাবে না। তাই ওসব চিন্তা বাদ দিয়ে এই বিয়েটা আটকানোর উপায় খোঁজো। তবে তার আগে তোমার মন ভালো করা দরকার।
— সেটা কীভাবে?
— বিকালে বের হবে আমার সাথে? আজকে তোমার মন ভালো করার দায়িত্ব আমার। যাবে আমার সাথে?
নাতাশা কিছুক্ষণ ভেবে রাজি হয়ে গেল।
— আচ্ছা তাহলে তুমি তৈরি হয়ে নেও। আমি তোমাকে সাড়ে চারটার দিকে তোমার বাসার সামনে থেকে নিয়ে যাব।
— না। বাসার সামনে আসা যাবে না। তাহলে বাবা মা সন্দেহ করবে। তার থেকে আমি বাসার আগের গলিতে থাকব। তুমি বরং আমাকে ওখান থেকে নিয়ে যেও।
— আচ্ছা।
বলেই সে ফোনটা কেটে দিল। কথা শেষ করে নাতাশা দ্রুত তৈরি হওয়ার জন্য চলে গেল। পুরোপুরি তৈরি হয়ে সে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। তারপর নিহরাফ তাকে তার বলা জায়গা থেকে নিয়ে গেল। ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধ্যার একটু পরে সে বাসায় ফিরে এলো। সে ফিরতেই মিসেস রাহা তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
— কিরে এতো দেরি হলো যে?
কথাটা শুনে নাতাশা হাসি মুখে বলে উঠল,
— আসলে আম্মু একটু ঘুরতে গেছিলাম। তাই দেরি হয়ে গেছে।
সারাদিন পর মেয়েকে হাসতে দেখে মিসেস রাহা আর বিপরীতে তাকে কিছু বলতে পারলেন না। নাতাশা ওখান থেকে রুমে চলে এলো। নিহরাফের সাথে সময় কাটিয়ে তার মন ভালো হয়ে গেছে। এখন তার বারবার তার সাথে কাটানো মূহুর্তগুলো মনে পড়ছে। সেসব মনে করে সে ভাবতে লাগল,
— আমি হয়তো আমার মনের মানুষকে পেয়ে গেছি। এখন আর আমাকে আমার মনের মানুষের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আমি নিজের অজান্তেই নিহরাফকে আমার মনে জায়গা দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু ও কি আমাকে ভালোবাসে? আচ্ছা ওর যদি গার্লফ্রেন্ড থাকে? তাহলে তখন আমার কি হবে?
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )