#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 20
🍁🍁🍁
সিমথি : রোদু ভাবী তোর মুড অফ।
রোদেলা : খবর দার ভাবী বলে ডাকবি না।
মেঘা : কেনো ভাবী।
রোদেলা একটা কলম নিয়ে মেঘার দিকে ছুঁড়ে মারে। কলম টা গিয়ে মেঘার কপালে লেগে নিচে পড়ে যায়। মেঘা কপালে হাত দিয়ে রোদেলার দিকে তাকায়।
মেঘা : হা/রা/মি একটা।
তুহিন : কি ব্যাপার রোদু সোনামণি। বরের সাথে ঝগড়া লাগছে আবার।
রোদেলা : কে বর কিসের বর কোথাকার বর। আমি ওই ইফাজ টিফাজ কে বিয়ে করবো না। হি/ট/লা/র একটা।
সিমথি : ইফাজ ইজ নরমাল বাট টিফাজ ওমা গো কি ভালোবাসা। ইফাজ ভাই কে আজ কাল এসব নামে ও ডাকিস নাকি।
রোদেলা : বইন চুপ যা। কিসের ভালোবাসা৷ তোর ভাই তিনদিন ধরে আমাকে কোনো ফোন দেয় না। এমনকি আমার কথা ওর মনে ও পড়ে না। আগে যদি জানতাম তোর ভাই এমন পাল্টি খাবে জীবনে ও এনগেজমেন্ট করতাম না।
মেঘা : তো কি ডিরেক্ট বিয়ে করে। বাসর ঘরে চলে যেতি।
তুহিন : এতোদিনে তাহলে তিন বাচ্চার মা ও হয়ে যেতি। হাউ নাইস।
তুহিন আর মেঘার কথায় সিমথি শব্দ করে হেসে উঠে। রোদেলা কটমট দৃষ্টিতে তিনজনের দিকে তাকিয়ে বকতে বকতে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। হঠাৎ দরজার সামনে কারো সাথে ধাক্কা লাগতেই রোদেলা চেঁচিয়ে উঠে।
রোদেলা : আশ্চর্য খাম্বা আসলো কোথ থেকে। সিমথি আজকাল তোর কেবিনে খাম্বা ও রাখিস।
ইফাজ : এটা খাম্বা না তোমার হবু বর।
ইফাজের কন্ঠস্বর শুনে রোদেলা লাফিয়ে সরে দাঁড়ায়। আঙ্গুলের নখ কামড়ে আড় চোখে ইফাজের দিকে তাকায়। ইফাজের রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নেয়।
রোদেলা : সি সিমথি আ আমি আসছি।
রোদেলা বেরিয়ে যেতে নিলে ইফাজ হাত চেপে ধরে। রোদেলা আড়চোখে সিমথি দের দিকে তাকায়। সিমথিদের মুচকি হাসতে দেখে চোখ পাকিয়ে তাকায়।
রোদেলা : সিয়ু তোর ভাই কে হাত ছাড়তে বল। আমার কাজ আছে।
সিমথি : এই পক্ষের কথা ওই পক্ষ আবার ওই পক্ষের কথা এই পক্ষে পাচার করার সময় নেই।
ইফাজ : সিমথি ওর কাজ গুলো পেন্ডিং করে রাখতে বল। দুই ঘন্টা পর এসে করলে এমন কিছুই হবে না। আপাতত তোর বান্ধবী কে নিয়ে যাচ্ছি।
সিমথি : তোমার বউ তোমার ইচ্ছে।
সিমথির কথায় ইফাজ আলতো হেসে সিমথির দিকে তাকায়। মেঘা আর তুহিন দুষ্টুমির স্বরে রোদেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,,
_ বেস্ট অব লাক দোস্ত। তোর দুই ঘন্টার জার্নি শুভ হোক।
রোদেলা : এই হাত ছাড়ুন গুন্ডাদের মতো হাত ধরবেন না ওকে।
ইফাজ : ভালোই ভালোই চলো বলছি। বাধ্য করো না লোকসমাগমের মাঝে তোমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে। বোন আসছি।
ইফাজের কথায় রোদেলা দমে যায়। বাধ্য মেয়ের মতো গুটিগুটি পায়ে ইফাজের সাথে যায়। ইফাজ আর রোদেলা বের হতেই সিমথির কেবিনে হাসিতে ফেটে পড়ে তুহিন আর মেঘা। সিমথি মুচকি হেসে ল্যাপটবে দৃষ্টি দেয়।
সিমথি : এবার তোরা যা। সারাক্ষণ শুধু আড্ডা আর আড্ডা।
সিমথির কথায় তুহিন আর মেঘা হেসে নিজেদের কেবিনে চলে যায়।
নৌরিন : ম্যাম আসবো।
সিমথি : ইয়েস কাম।
নৌরিন : ম্যাম আপনার নামে পার্সেল আছে।
নৌরিনের কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকে নৌরিনের হাতে থাকা পার্সেলের দিকে তাকায়।
সিমথি : পার্সেল আমার নামে। কে দিলো।
নৌরিন : জানি না ম্যাম। কিছু তো লেখা নেই।
সিমথি : ওকে রেখে যাও। আমি দেখছি।
নৌরিন পার্সেল টা রেখে চলে যায়। সিমথি কিছুক্ষণ পার্সেল টার দিকে তাকিয়ে থেকে পুনরায় নিজের কাজে মন দেয়।
বেশকিছু ক্ষণ পর সিমথির ফোনে নোটিফিকেশনের শব্দ হয়। সিমথি ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে একটা ম্যাসেজ।
” পার্সেল টা খোলে দেখো। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। ”
সিমথি ফোনটা সাইডে রেখে পার্সেল টা হাতে নেয়। দুপাশ চেক করে পার্সেল টা খুলতে শুরু করে। পার্সেল টা খুলতেই সিমথি চমকে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে। হন্তদন্ত হয়ে ফোন হাতে নিয়ে আননোন নাম্বারে কল লাগায়। কিন্তু নাম্বার টা বন্ধ পায়। বেশ কয়েক বার কল লাগায় কিন্তু ফলাফল একই। হঠাৎ আরেক টা ম্যাসেজ আসে।
” প্রিয় মানুষ দের বাঁচাতে চাইলে যেই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছো সেটা থেকে বেরিয়ে আসো। নয়তো একে একে সবাই কে হারাবে। আজকের আ্যটাক টা শুধু ট্রেইলার আগামীদিন ডিরেক্ট শুট করবো কপাল বরাবর। ”
সিমথি ম্যাসেজ টা পড়ে শুকনো ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে নেয়। সায়নের নাম্বারে কল লাগায় কিন্তু ওপাশে কোনো রেসপন্স না পেয়ে ঘাবড়ে যায়। পার্সেল টা সরিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়ে। সিমথি বের হতেই তুহিনের সাথে দেখা হয়।
তুহিন : সিয়া কি হলো। কোথায় যাচ্ছিস।
সিমথি : আসছি আমি। এদিকটা একটু সামলে রাখিস।
তুহিন কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সিমথি বেরিয়ে যায়। সিমথির এমন অদ্ভুত ব্যবহারের মানে বুঝতে না পেরে তুহিন সিমথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আদি : যদি ঠিক সময় না আসতাম আমরা কি হতো । সে বিষয়ে কোনো সেন্স আছে তোর।
আদির কথায় সায়ন হাসে।
সায়ন : কি আর হতো রাস্তায় ম/রে পড়ে থাকতাম।
রিক : থা/প্প/ড় লাগাবো। মিম জানলে কি হবে জানিস। মেয়েটা ভেঙে পড়বে।
সায়ন : মিমকে আমি সামলে নেবো। ভয়টা মিম কে নিয়ে নয় পরী কে নিয়ে।
রিক : সিমথি যদি জানে কি যে হবে।
আদি : লোক গুলোকে চিনিস তুই।
সায়ন : তোর কি মনে হয়। আমি গু/ন্ডা/দের সাথে উঠবস করি।
আদি : ভাই-বোন দুইজনই এক মাটির। কথার উল্টো জবাব না দিলে হয় না।
সায়ন : আমার বোন আবার কি করলো।
রিক : আহ থামবি তোরা।
আচমকা দরজা খোলার শব্দে সায়নরা দরজার দিকে তাকায়। দরজায় দাঁড়ানো ব্যক্তি কে দেখেই সায়নরা একে অপরের দিকে তাকায়।
সায়ন : প প পরী।
সায়নের কথায় পাত্তা না দিয়ে সিমথি সোজা সায়নের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সায়নের অবস্থা দেখে সিমথির থমথমে মুখটা লালবর্ণ ধারণ করতে শুরু করে। সিমথি সায়নের কপালে ব্যান্ডেজের উপর হাত রাখে।
সিমথি : আমাকে জানালি না কেনো। ( শান্ত গলায়)
সিমথির শান্ত গলার স্বর শুনে সায়ন ঢোক গিলে। ঝড় আসার পূর্বাভাস দিচ্ছে।
সায়ন : প পরী রেগে যাস না।
সিমথি : আমি রেগে নেই।
সায়ন : তোর চোখ-মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে বোন। আমার কিছু হয়নি।
সিমথি : আনন্দে চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে। তোর কিছু হয়নি সেটা আমি দেখছি।
সিমথির কথায় সায়ন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সিমথির কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না সায়ন। তবে সায়ন বেশ বুঝতে পারছে সিমথি প্রচন্ড রেগে আছে। সিমথির ফোন বেজে ওঠে। সিমথি সায়নের দিকে তাকিয়েই ফোন রিসিভ করে।
সিমথি : আপনাকে পরে ফোন করছি। তখন না হয় হিসেব টা বরাবর করবো। বাট ইন দিজ মোমেন্ট ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। আম বিজি নাউ।
সিমথি ফোন টা কেটে দেয়। দৃষ্টি এখনো সায়নে ব্যান্ডেজ করা জায়গা গুলোতে। আচমকায় সিমথি পাশের চেয়ারে বসে পড়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে নেয়। সায়ন আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়। সিমথির পাশে দাঁড়িয়ে অক্ষত হাত দিয়ে সিমথির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সিমথি জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মন আজ নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছে।
সায়ন : পরী।
সিমথি : তোর কি মনে হয় আমি রেগে আছি।
সায়ন : ন নাহ নাহ।
সিমথি চোখ খুলে সায়নের দিকে তাকায়। কিছু সময়ের ব্যবধানে চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। সায়নরা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়৷
সায়ন : বোন
সিমথি : আমি রেগে আছি ভাইয়া। অনেক রেগে আছি। আরো বেশি রাগ হচ্ছে কারণ আমি রাগ প্রকাশ করতে পারছি না। না আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি। ভাইয়া আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। কিছু বল ভাইয়া প্লিজ।
সিমথির কথায় সায়ন শুকনো ঢোক গিলে। সায়নের বুঝতে বাকি নেয় সিমথির রাগ মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে।
সায়ন : বোন প্লিজ শান্ত হ। আমার ভয় লাগছে এবার।
সিমথি : বাড়ি চলে যা ভাইয়া। প্লিজ প্রশ্ন করিস না। বাড়ি যা। আমার নিজেকে কন্ট্রোল করতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি চাই না আমার দ্বারা তোরা কেউ আঘাত পাস। রিক ভাইয়া প্লিজ এখান থেকে চলে যাও এখন তোমরা।
সায়ন : কিন্তু,,
সিমথি : ইফাজ ভাইয়া কিছু ক্ষণ পর চলে আসবে যা তোরা।
রিক : সায়ন চল।
সায়ন ও আর দ্বিমত না করে বেরিয়ে যায় রিকের সাথে। আদি এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। সিমথি চেয়ারে পুনরায় হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে নেয়।
সিমথি : ছাড়বো না আপনাকে। যেই হোন না কেনো আপনি। প্রতিটা আঘাতের মাসুল গুণে গুণে তুলবো। আমার নীরবতা দেখেছেন এতোদিন। এবার কঠোরতা দেখবেন। আমার ভাইয়া আমার জীবন। সেই জায়গায় আঘাত করে অনেক বড় ভুল করেছেন। পস্তাতে হবে আপনাকে চরম পস্তাতে হবে। ( বিড়বিড়িয়ে)
আদি : সিয়াজান।
সায়ন : এক মিনিট আদি কোথায়।
সায়নের কথা রিক থতমত খেয়ে যায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে আদিকে খোঁজার ভান করে।
সায়ন : কি রে বল।
রিক : আ আসলে ওর একটা ইমার্জেন্সি কল এসেছে। তাই আমাদের যেতে বলেছে। ও কল এটেন্ড করে আসবে। তুই চল আদি তো আর ছোট বাচ্চা না। পৌঁছে যাবে। চল
রিকের কথাকে সত্যি মনে করে সায়ন ও কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসে।
সিমথি : ভাইয়া কে কোথায় পেয়েছিলেন।
আদি : রাস্তায়।
সিমথি : ওহ।
বেশকিছু ক্ষণ দুজনের মাঝে নীরবতা নেমে আসে পুনরায়।
সিমথি : ধন্যবাদ ৷
আদি চমকে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি সচরাচর কাউকে ধন্যবাদ বা সরি বলে না। আদি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে সিমথির দিকে এগিয়ে যায়।
আদি : ধন্যবাদ কোনো দিলে।
সিমথি : ভাইয়াকে সেফ করার জন্য।
আদি : ওহহহ। বাট আমার ধন্যবাদ চাই না।
সিমথি : এজ ইউর উইশ। আমি সবাই কে যেতে বলেছি। আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো।
আদি : একটু আগেই তো বললি আমার ইচ্ছে।
সিমথি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। অদ্ভুত ভাবে রাগ টা কমতে শুরু করে।
আদি : বাড়ি যাবি না।
সিমথি : নাহ। হসপিটালে যাবো। আপনি বের হোন।
আদি : চলো তোমায় পৌঁছে দিই।
সিমথি : নো নিড। আমি যেতে পারবো।
আদি : এটা আমিও জানি। আমার বউ একাই একশো।
সিমথি : আমি আপনার বউ না।
আদি : তুই আমার বউ শুধু আমার।
সিমথি : তাহলে শ্রেয়া কে?
চলবে,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)