ফিরে_আসা ১৪ লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

0
774

#ফিরে_আসা
১৪
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

“স্যার, একটা কথা ছিল।” ভয়ে ভয়ে বলল অরা।

আরশাদ সবে স্ক্রিপ্টটা নিয়ে বসেছিল। এই ইন্ডাস্ট্রিতে সুপারস্টার হওয়ার জন্যে ভালো অভিনেতা হওয়ার প্রয়োজন নেই। কেউ অতি অখাদ্য অভিনয় করেই হয়ে যেতে পারে সুপারস্টার। ভাগ্যক্রমে আরশাদের নাম সেই তালিকায় নেই। অভিনয়ের ব্যাপারে তার বেশ কড়াকড়ি। শুটিংয়ের আগে যেসব দৃশ্য ধারণ করা হবে সেগুলোর সংলাপ নিয়ে নিজের মস্তিকে গবেষণা চালায় কিছুক্ষণ। সেই কাজে কোনপ্রকার ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে বিরক্তির সীমা থাকে না তার। অরা যেমন ব্যাঘাত ঘটলো।

অরা কারণ ছাড়া কাজের সময় ব্যাঘাত ঘটাতে আসবে না জেনেই আরশাদ বিরক্ত গলায় বলল, “বলো।”

অরা ইতস্তত করে বলল, “কথাটা জরুরি।”

আরশাদ গলার স্বরে দ্বিগুণ বিরক্তি নিয়ে বলল, “হ্যাঁ বলো!”

অরা তবুও ইতস্তত করে যাচ্ছে। আরশাদ সকল মনোযোগ তার দিকে দিয়ে কথাটা না শুনলে যেন অনর্থ হয়ে যাবে।

আরশাদ ধাম করে স্ক্রিপ্টের পাতা বন্ধ করে গম্ভীর গলায় বলল, “বসো।”

অরা বসলো। তবে তার অস্থিরতা যেন এখনো থামছে না। দুশ্চিন্তায় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।

“কী ব্যাপার?”

অরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ম্যাম ফোন করেছিল স্যার, একটু আগে।”

আরশাদ ধমকের সুরে বলল, “কোন ম্যাম? তোমাকে না কতবার বলেছি তোমার কোনো ম্যাম নেই।”

আরশাদের হাজার বারণ সত্বেও অরা নওশীনকে ‘ম্যাম’ ডাকবেই। তবে এই মুহূর্ত সেটা সম্বোধন না করাই যৌক্তিক হবে। অরা এমন একটা কথা বলতে যাচ্ছে, যা শোনার পর আরশাদের রাগ হবে তুঙ্গস্পর্শী। অযথা সেই রাগের আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার কোনো মানে হয় না।

অরা শুকনো ঢোক গিলে বলল, “স্যার উনি ফোন করে বললেন, উনি না-কি বিদেশে চলে যাবেন।”

“বিদেশে চলে যাবেন মানে?”

“মানে কানাডায়, উনার মায়ের কাছে। গতকালই ভিসা পেয়ে গেছেন। আগামী ছয় মাস সেখানেই থাকবেন।”

আরশাদ বিরস গলায় বলল, “তাতে আমার কী?”

অরা কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে শুকনো গলায় বলল, “কথাকেও তার সাথে নিয়ে যাবেন স্যার।”

আরও কয়েক মুহূর্ত কেটে গেল নীরবতা। আরশাদের মুখভঙ্গি দেখে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না সে রেগে গেছে না অবাক হয়েছে। তার হাতদুটো মুঠিবদ্ধ হয়ে গেছে। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এসেছে। এ যেন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস।

আরশাদ থমথমে গলায় বলল, “বাহ্! আমার মেয়েকে আমার পারমিশন ছাড়া আমার কাছ থেকেই দূরে নিয়ে যাবে?”

অরা চুপ করে রইল। এমন প্রশ্নের উত্তর তার কাছে না থাকাই তো স্বাভাবিক।

“কথা কোথাও যাচ্ছে না। সে যেখানে ইচ্ছা যেতে পারে কিন্তু কথা আমার কাছেই থাকবে।”

“কথার কানাডার যাওয়ার ব্যাপারে তিনি একেবারে সিউর। মূলত ওর জন্যই কানাডায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

“ওর জন্যেই মানে?”

অরা থেমে থেমে বলল, “কথাকে তিনি ওখানকার স্কুলে পড়াতে চান। ছয় মাস ওখানে থেকে দেখবেন কথা ওই স্কুলের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে কিনা। যদি পারে তাহলে…”

দাঁতে দাঁত চেপে চোখদুটো বন্ধ করলো আরশাদ। তার সমস্ত শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটছে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে সে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে, তবেই ত্রমেই অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।

আরশাদ তার চিরচেনা রাগী গলায় বলল,‌ “কবে থেকে চলছে এসব প্ল্যানিং?”

“মাস খানেক তো হলো স্যার।”

“আর আমি এখন জানতে পারছি?”

অরার গা বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। ব্যাপারটা আগেই আরশাদকে জানানোর প্রয়োজন ছিল। অরা ভেবেছিল শেষমেশ হয়তো নওশীন মেয়েকে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর চিন্তাভাবনা বাতিল করবে। শুধু শুধু স্যারকে রাগিয়ে দিয়ে লাভ কী?

আরশাদ ক্রুদ্ধ গলায় বলল, “তুমি আগামীকাল নিজ থেকে রেজিগনেশন লেটার এনে আমাকে দেবে। কোনো ভুল যেন না হয়।”

অরা মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল।

আরশাদ উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, “আমার লয়ারকে ফোন করে আসতে বলো। কথার কাস্টাডির আপিল করবো, ব্যবস্থা নিতে বলো।”

আরশাদ নিজের ঘরে গিয়ে প্রচন্ড ভয়ানক শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলো। আর এদিকে দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে অরা। যদিও তার অস্থির হবার কোনো কারণ নেই। ঘূর্ণিঝড় এসে আঘাত হানবে আরশাদের জীবনে। তবুও অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। অরা চুপ করে বসে রইলো আরশাদের বসার ঘরে। লয়ারকে ফোন করলো না। কাস্টাডির আপিল করার সিদ্ধান্ত সে রাগের মাথায় নিয়েছে না-কি সুস্থ মস্তিষ্কে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।

অতীতে…

শূন্য দৃষ্টিতে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে নওশীন। বসার ঘরের পূর্ব দিকের এই জানালাটা থেকে স্পষ্ট দেখা যায় তাদের বাগানটা। বাগানের ওপারেই মূল দরজা। সেই দরজা পেরিয়েই তো আসার কথা তার। তার অপেক্ষায় সেই কখন থেকে জানালার ধারে বসে আছে নওশীন। অপেক্ষার এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে গেলেও অপেক্ষাটা করেই যাচ্ছে।

নওশীনের চোখেমুখে একরাশ হতাশা। মনে মনে কিঞ্চিৎ ভয়। তবে ভয়ের চাইতে হতাশার পরিমাণই বেশি। আজ কথার দ্বিতীয় জন্মদিন। বিশেষ এই দিনটা উপলক্ষে কাল সন্ধ্যায় বাড়িতে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির বড় বড় তারকারা আসবে সেই আয়োজনে। তবে প্রথম আয়োজনটা বেশ সাদামাটাভাবেই করতে চেয়েছিল নওশীন।

কথার অনেকদিনের শখ তার ঘরটা বেলুন দিয়ে সাজানো থাকবে। যেদিকে চোখ যাবে সেদিকেই শুধু বেলুনের ছড়াছড়ি! তেমন আহামরি কোনো শখ নয়। নওশীন চাইলেই পারে সারা বাড়িটা বেলুনে মুড়ে দিতে। কিন্তু সে তা করে। শখটাকে জমিয়ে রেখেছিল। বিশেষ দিনে বাচ্চাদের কোনো শখ পূরণ করা হলে সেই স্মৃতি আজীবনের জন্যে তাদের মনে গেঁথে যায়। নওশীন চেয়েছিল সে এবং আরশাদ একসঙ্গে বেলুন দিয়ে ঘরটা সাজাবে। কারো সাহায্য নেবে না। আর ঠিক রাত বারোটার সময় সারপ্রাইজ দেবে তাদের রাজকন্যাকে।

এখন বাজছে রাত একটা সাতচল্লিশ। সারপ্রাইজের অপেক্ষা করে করে রাজকন্যা সেই কখন ঘুমিয়ে গেছে। সে বেচারি না হয় জন্মদিন, সারপ্রাইজ এসবের কিছু বোঝে না। কিন্তু যে বোঝে, ক্রমেই তার অভিমানের পাল্লা হচ্ছে ভারী। আরশাদ কী করে পারলো আজকের মতো এই বিশেষ দিনটায় দেরি করতে? নওশীনের রাগ হচ্ছে না। আরশাদের ওপর রাগ করার ক্ষমতা তার নেই। যা অনুভব হচ্ছে তা হলো নিখাদ কষ্ট।

নওশীনের চোখের সামনে মূল দরজাটা খুলে গেল। গাড়ির হেডলাইট সরাসরি এসে পড়লো তার মুখের ওপরে। অবশেষে তার আসার সময় হয়েছে। অভিমানে একাকার হয়ে বসে রইল নওশীন। দরজা খুলতে উঠলো না। দরজার লকের পিন কোড আরশাদের জানা আছে। বাইরে থেকে দরজা খুলতে তার কোনো অসুবিধা হবে না।

দুয়েকবার কলিংবেল বাজলো। অতঃপর বাইরে থেকে দরজাটা খুলে গেল। পারফিউমের ঝাঁঝালো ঘ্রাণ আর সিগারেটের গন্ধ একসঙ্গে ভেসে এলো ঘরে। নওশীনের চোখ তুলে তাকাচ্ছে না তবে আরশাদের উপস্থিতি অনুভব করতে তার বিন্দুমাত্র অসুবিধা হচ্ছে না।

আরশাদ কিছু বলছে না। চুপ করে এসে বসলো নওশীনের পাশে। তার ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বুকের কাছে ঠেকালো। কোনো একটা ভুল করে ফেললে আরশাদ এমনই করে। নিজের পক্ষে সাফাই না গেয়ে চুপচাপ নওশীনের পাশে বসে থাকে।

এক পর্যায়ে নীরবতা ভঙ্গ করলো নওশীন অভিমানী কণ্ঠে বলল, “আজকেও দেরি?”

আরশাদ সঙ্গে সঙ্গে কোমল গলায় বলল, “নওশীন আই অ্যাম সো সরি!”

“তোমার সরি দিয়ে আমি কী করবো?”

আরশাদ অনুতপ্ত গলায় বলল, “আমি জানি, অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। আমি বুঝতে পারিনি শেষের শটে এতটা সময় লাগবে।”

নওশীনের আরশাদের কাছ থেকে তার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, “আর আমার মেয়ের বার্থডে? তার কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে?”

“অবশ্যই আছে নওশীন। আমি অন টাইমে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু শটটা শেষ হতে হতে এত দেরি হয়ে গেল!”

নওশীন আক্ষেপের সুরে বলল, “কত শখ করে প্ল্যান করলাম রাত বারোটায় আমরা দুজন মিলে কথাকে সারপ্রাইজ দেবো। কিন্তু তুমি তো আমাকেই সারপ্রাইজড করে দিলে। কী হতো একটা দিন একটু তাড়াতাড়ি বাসায় এলে। অন্য কোনো দিন তো তোমার কাজে বাঁধা দিই না শাদ। সারা দিন তুমি শুটিং করো, রাত করে বাড়ি ফেরো। তোমার সমস্ত সময় কাজের জন্য, আমাদের জন্য তো কোনো সময়ই নেই।”

আরশাদ আহত গলায় বলল, “আই অ্যাম সরি নওশীন। তুমি চাইলেই তো সবকিছু ঠিক করে নিতে পারি আমরা। এখন কথাকে সারপ্রাইজ দিই। কথা কোথায়?”

“কিচ্ছু ঠিক হবে না শাদ। কথা ঘুমিয়ে পড়েছে।”

বেশ অনেকটা সময় চুপ করে থেকে আরশাদ ফিসফিস করে বলল, “আই অ্যাম সরি।”

ছেলেটা এতবার সরি বলায় নওশীনের ভেতরকার অভিমানের বরফ ক্রমেই গলতে শুরু করেছে। তবে মুখভঙ্গি তা প্রকাশ করছে না। ভাবটা এমন করছে যেন আরশাদের ওপর সে প্রচন্ড রেগে আছে।

নওশীন রাগী ভঙ্গিমায় বলল, “সরো তুমি আমার কাছ থেকে।”

আরশাদ নওশীনের গা ঘেসে বসে বলল, “সরবো না।”

নওশীন ব্যর্থ হয় আক্ষেপ নিয়ে বলল, “সরতে তোমাকে হবেই। আমারই ভুল হয়েছে, তোমাকে আশা করা। আর কোনো বিশেষ দিনে তোমার আশায় বসে থাকবো না। আমার বাচ্চাদের নিয়ে আমিই সেলিব্রেট করবো।”

“বাচ্চাদের?”

“তাড়াতাড়ি এলে কথার সাথে সাথে তুমিও একটা সারপ্রাইজ পেতে। যেহেতু আসনি, কোনো সারপ্রাইজও তুমি পাচ্ছ না।”

আরশাদ ধাঁধায় পড়ে গেল। নওশীন কী বলতে চাইছে সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। আবার ঠিক পরমুহূর্তেই মনে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।

আরশাদ নওশীনের চোখের দিকে তাকিয়ে কোমল স্বরে বলল, “নওশীন?”

তার চোখেমুখে খেলে বেড়াচ্ছে একরাশ প্রশ্ন। প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তরও সে আঁচ করতে পারছে। তবে মনে হচ্ছে যেন, সেই উত্তর নওশীনের মুখ থেকে না শুনলে সে মরেই যাবে। অভিমানে আবেগে নওশীনের চোখ বেয়ে জল পড়ছে।

সেই জল মোছার কোনপ্রকার চেষ্টা না করে নওশীন বলল, “তুমি আবার বাবা হচ্ছ, আমি আবার মা হচ্ছি। সকাল থেকে অপেক্ষা করে আছি কখন তোমাকে খবরটা জানাবো। আর তুমি…”

নওশীনকে কথাটা আর শেষ করতে দিলো না আরশাদ। তার আগেই তাকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল, “I love you! I love you more than my life.”

নওশীনের ঠোঁটে ফুটে উঠলো সুখের প্রচ্ছন্ন হাসি। হাসিটা বজায় রেখে বলল, “Love you too.”

বাবা হওয়ার সংবাদ যে একটা ছেলের জন্যে কতটা আনন্দদায়ক হতে পারে, আরশাদকে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। প্রথমবার যখন সংবাদটা পেয়েছিল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে ফোন করে আনন্দে আত্নহারা হয়ে জানিয়েছিল, “আমি বাবা হবো!” এবারও তাই করলো। আরশাদের চিরচেনা এই পাগলামি তাকে করে তোলে অনন্য। পাগলামির মাঝেই লুকিয়ে আছে তার সরলতা। সরলতা জিনিসটাই ভয়ঙ্কর। এতটাই ভয়ঙ্কর যে তা একটা মানুষকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

বর্তমানে…

আরশাদ আগামীকাল রেজিগনেশন লেটার চাকরিটা ছেড়ে দিতে বলেছে অরাকে। নেহায়েত রাগের মাথায় বলা। এর আগেও বহুবার রাগের মাথায় চাকরি চলে যাওয়ার হুমকি পেয়েছে অরা। এবার সত্যি সত্যি চাকরি চলে গেলে বেঁচে যায়। অপরিচিত কাউকে নিজের চাকরির সমন্ধে বলতে বেশ গর্ববোধ করে অরা। সুপারস্টার আরশাদ হকের ম্যানেজার সে। আর কজনের আছে এত বড় চাকরি?

পরিচিতি, সমাজে মর্যাদা, ভালো বেতন – এই চাকরির যেমন হাজারটা সুবিধা আছে, তেমনি আছে হাজারটা অসুবিধা। কারণ এই চাকরি করতে গেলে ভেতরে ভেতরে প্রচুর যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে। আগামীকাল আরশাদের শুটিং আছে। আবার আগামীকালই কথাকে গাজীপুর থেকে আনতে যাওয়ার দিন। সেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে একসঙ্গে ঘুড়ে আসার পর বাবার সঙ্গে দেখা হয়নি তার। প্রতিবারের মতো অরাই যাবে তাকে আনতে।

কথার সঙ্গে সময় কাটাতে কখনোই খারাপ লাগে না অরার। তবে সমস্যাটা বাঁধিয়েছে নওশীন। কিছুক্ষণ আগে তার ফোন এলো। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল, “অরা, তুমি তো কাল কথাকে নিয়ে ঢাকায় যাবে। আমিও তোমাদের সঙ্গে যাবো। শাদের সঙ্গে আমার জরুরি কিছু কথা আছে। কথাগুলো সামনাসামনি বলা দরকার। আমি যে যাচ্ছি, এই কথাটা আবার ওকে বোলো না কিন্তু।”

যত জ্বালা! আরশাদকে যদি জানাতে না চায়, তাহলে অরাকে জানালো কেন? অরা বেচারি এখন আগামীকাল পর্যন্ত ভেতরে ভেতরে অপরাধবোধে ভুগবে। ডিভোর্সের পর মাত্র দুবার দেখা হয়েছে দুজনের। আরশাদ এক মুহূর্তের জন্যেও মুখোমুখি হতে চায় না তার প্রাক্তনের। অথচ আগামীকাল ঠিকই মুখোমুখি হতে হবে। ব্যাপারটা জেনেও অরা তাকে জানাচ্ছে না।

ওদিকে আবার আরশাদের লয়ার শেষমেশ এসে পড়েছে। বসার ঘরে চলছে দীর্ঘ কথোপকথন। কথার কাস্টডি আপিলের সিদ্ধান্তে আরশাদ পুরোপুরি অনড়। কোনোক্রমেই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের উপায় নেই। এই বিষয়টা নওশীনকে জানানোর দরকার। অরা জানাচ্ছে না। অপরাধবোধ দুদিক থেকেই তাকে শেষ করে দিচ্ছে।

সব দায়িত্ব তার ওপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কেন কে জানে? এই দুজন নিজেরা নিজেদের মধ্যে কথা বললে আজ এই দুর্দশায় পড়তে হতো না। হতাশায় গা জ্বলে যাচ্ছে অরার। মনে মনে কালকের দিনটার জন্যে প্রস্তুতি নিতে হবে। কাল যে তার ওপর দিয়ে কী ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাবে, তা শুধুমাত্র অরাই জানে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here