#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 57
🍁🍁🍁
আদিকে খুঁজতে এসে সায়নদের এক জায়গায় জোট পাকিয়ে থাকতে দেখে সিমথি ভ্রু কুঁচকায়। আয়াশ ভাইয়াকে ওদিকে ফেলে এরা সব এখানে কি করছে। সিমথি ওদের মধ্যে এগিয়ে যায়। কিছুদূর আসতেই কোনো উটকো ঘ্রাণ নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করতেই সিমথি ভ্রু কুঁচকায়। আরেকটু এগুতেই ধোঁয়া জাতীয় কিছু দেখতে পেয়ে সিমথি থেমে যায়। কিছুক্ষণ ভাবতেই আচমকায় সিমথির রাগ উঠে যায়। হাত মুঠো করে জোরে একটা শ্বাস টানে। দ্রুত কদমে এগিয়ে যায়। আদিদের পাহাড়া দেওয়া অবস্থায় রিক আর সূর্য সিমথিকে আসতে দেখে ঘাবড়ে যায়। আদিদের বলতে নিলে সিমথির রাগী দৃষ্টিতে থেমে যায়। সিমথি সোজা গিয়ে আদির সামনে দাঁড়ায়। আচমকা সিমথিকে দেখে সায়নরা ঘাবড়ে যায়। দ্রুত হাতের সিগারেট ছুঁড়ে মারে। আদি হাত পেছনে নিয়ে যায়। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই মুখের সব ধোঁয়া এসে সিমথির মুখে পড়ে। সিমথি চোখ বুঁজে মাথা কিছু টা পিছে হেলিয়ে দেয়। আদি অসহায় দৃষ্টিতে সায়নদের দিকে তাকায়। সাশনরা গলায় ফোচ দেওয়ার ভঙ্গিমা করে ইশারায় বলে উঠে,,,,
_ আজ তুই শেষ।
সিমথি : টেস্ট কেমন
সিমথির গম্ভীর কণ্ঠে সায়নরা শুকনো ঢোক গিলে। আদি আমতা আমতা করে বলে,,,
আদি : আ আসলে সি,,
সিমথি : আরেকটা খাবেন।
আদি : সিয়াজান
সিমথি : ডোন্ট কল মি সিয়াজান।
সায়ন : দেখ পরী
সিমথি : স্বামী স্ত্রী কথা বলার সময় প্রাইভেসি দিতে হয় এক বাচ্চার বাপ হয়ে ও যদি সেটা না জানিস তাহলে আরেকটা বিয়ে কর।
আদির দিকে দৃষ্টি রেখে সিমথি সায়নকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে উঠে। সায়ন শুকনো ঢোক গিলে দ্রুত কেটে পড়ে। সায়নের পেছন পেছন বাকিরা ও চলে যায়। আদি যেতে নিলে সিমথি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,
সিমথি : তোকে আমি যেতে বলেছি।
আচমকা সিমথির মুখে তুই শুনে আদি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সিরিয়াসলি সিমথি ওকে তুই বলে সম্বোধন করছে।
সিমথি : কবে থেকে খাস এসব।
আদি : ত তুমি আ আমাকে ত তুই ক করে বলছো।
সিমথি : প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করবি না উত্তর দে।
আদি : ত তুমি ক কোমায় যাওয়ার পর থেকে।
সিমথি : আমি কি ম/রে গিয়েছিলাম।
আদি : সিয়াজান ( আহত স্বরে)
সিমথি : আমি কোমায় যাওয়াতেই হাতে সিগারেট উঠেছে ম/রে গেলে তো ম/দ, গা/ঞ্জা এসব উঠতো।
আদি : নাহ উঠতো না।
সিমথি : আদি তোমাকে আমি নিষেধ করেছিলাম না সিগারেট কখনো হাতে না নিতে। তোমার কিসের কমতি বলো আমাকে টাকা আছে, সুন্দর একটা ফ্যামিলি আছে, ভালোবাসো যাকে সেও তোমার কাছে আছে। তারপর ও এসব কেনো।
সিমথির গলার স্বর কিছু টা নরম হয়ে আসে। আদি কিছুটা সাহস জুগিয়ে সিমথি নিকটে গিয়ে দাঁড়ায়। একহাত সিমথির মাথায় রেখে আহত স্বরে বলে,,,,,
আদি : আমি তোকে কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারতাম না। নিজেকে পা/গ/ল পা/গ/ল লাগতো তারজন্য অনেক বছর পর সিগারেট হাতে নিয়েছিলাম। আমার কাছে সাত মাস আগে তুই ছিলি না সোনা। সুন্দর একটা ফ্যামিলি, টাকা-পয়সা সব থাকলে আমার নেশা, আমার আসক্তি, আমার ভালোবাসা আমার কাছে ছিলো না। না পেরে সিগারেটের নেশায় জড়িয়েছিলাম। আমি সত্যি সরি। আর কখনো সিগারেট হাতে নেবো না। তবে তুই সারাজীবন আমার কাছে থাকলে। কিন্তু কখনো যদি আমাকে ফাঁকি দিস সেটা অন্য কথা৷
সিমথির রাগ পড়ে যায়। আহা রে বেচারা জামাই আমার।
সিমথি : কথাটা মাথায় রাখবে।
আদি হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। অধর জোড়া এগিয়ে সিমথির কপালে ছুঁয়াতে নিলে সিমথি পিছিয়ে যায়।
সিমথি : মুখে এখনো সিগারেটের স্মেল আছে। এখন এসব চলবে না।
আদি : প্লিজ একটা।
সিমথি : নো মিনস নো।
আদি : সারাদিনে একটা ও দেয়নি।
সিমথি : সকালে দিয়েছেন।
আদি : সেটা তো সকাল আর এখন দেখে রাত আটটা বাজতে চললো।
সিমথি : তো। সরো। কাজি এসে পড়বে।
আদি : আদর করতে গেলেই এমন করো। হুহ
সিমথি ভ্রু কুঁচকে আদির ফোলা গালের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। আদি বুকের বাম পাশে হাত রেখে বলে উঠে ,,,,
আদি : এভাবে হাসিস না সোনা। কোনো অনর্থ হলে আমি দায়ী নয়।
আয়াশ আর মেঘা পাশাপাশি বসে আছে। একটু আগেই ওরা বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। এখন ছোটরা সবাই আড্ডা দেবে। এই ভেবে বড়রা ও যে যার নির্দিষ্ট রুমে চলে যায়। সবার মাঝ থেকে রোজ উঠে ফ্রেশ হতে যায়।
রোদেলা : মেঘা বোন আমার
মেঘা : কি
রোদেলা : নাউ এক্সপ্লেইন ইউর ম্যারিড লাইফ ফিলিংস।
মেঘা : কিসের ফিলিংস। মাত্র তো বিয়ে হলো। এখনো তো,,,
তন্ময় : আরে রোদ সোনা এখনো আমাদের মেঘা বাবুর বাসর করা বাকি এটাই বলতে চাইছিলো।
তন্ময়ের কথায় সবাই হেঁসে দেয়। মেঘা চোখ ছোট ছোট করে তন্ময়ের দিকে তাকায়।
মেঘা : বাসর সম্পর্কে তোর অনেক ভালো এক্সপেরিয়েন্স তাই না।
তন্ময় : শুধু আমার না সিমথির ও আছে। তাইনা সিমথি।
তন্ময়ের কথায় সিমথি বিরক্তি নিয়ে তন্ময়ের দিকে তাকায়৷
সিমথি : কি বলতে চাইছিস তুই আমি দশ বারোবার বাসর করেছি। জামাই একটা হলে মানুষ কিভাবে দশ বারো বার বাসর করে। আশ্চর্য
সিমথির কথায় সবাই হতভম্ব।
তুহিন : মানুষ একবার বাসর করেই নাজেহাল হয়ে যায় আর তুই
সিমথি : মানুষ একবার বাসর করে নাজেহাল হয় কিন্তু আমার একবারোও হয়নি তাই এই বিষয়ে আমার কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই। আর তাছাড়া বিগ পয়েন্ট দ্যাট কেইস তুই কিভাবে জানিস।
তুহিন : ধ্যাত শা/লি। আমি তো জাস্ট বললাম।
সিমথি : আমি তোর শালি না। তরী তুই কি তুহিনকে বিয়ে করবি।
তরী : কি বলিস। আমার পেছনে আপাতত একজন ঘুরছে ভাবছি তাকেই করবো। তুহিন ভাই তো আমার ভাইয়া লাগে।
সিমথি কিছু বলার আগে তুহিন বলে উঠে,,,
তুহিন : তুই হলি আমার দুই মাত্র শালী তোকে কেনো বউ বানাবো আমি।
সিমথি : আমি তোর শালী, তরী ও তোর শালী তাহলে তোর বউ,,,
আচমকা সিমথি থেমে যায়। চোখ বড়বড় করে তুহিনের দিকে তাকায়। সায়নরা ও তুহিনের দিকে তাকায়। মেঘারা মিটিমিটি হাসে। তুহিন সামনে চুল গুলো পেছনে ঠেলে সুর তুলে গেয়ে ওঠে,,,,
তুহিন : সুন্দরী বউ আর বুদ্ধিমতী শালী, খুশিতে তুহিন মার হাতে তালি।
সিমথি : শা/লা হারামীর বাচ্চা। তোর শেষ মেষ,, ছিহ তুহিন ( দাঁতে দাঁত চেপে)
তুহিন : আহা শালী ডাক্তার বোনের জামাই পাইবা রাগে না সোনা।
সিমথি : রাখ তোর শা/লী। শেষমেশ বেস্টফ্রেন্ডের বোনের দিকে নজর দিলি। ও তোর বোন হয়।
তুহিন : আহা গো তুমি যখন আদি ভাইয়ার উপর ফিদা খাইছিলা। ইতিহাস ভুইলো না। তোমার পাগলামীর প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমরা।
সিমথি দমে যায়। সবার দৃষ্টি এবার সিমথির দিকে পড়ে। সিমথি ভ্রু কুঁচকায়।
সিমথি : আমি ভাইয়ের বন্ধুর উপর ফিদা হইছিলা। বন্ধুর ভাইয়ের উপর না।
তুহিন : তুমি যাহাকে লঙ্কা বলো আমি তাহাকে মরিচ বলি।
সিমথি : কেনো কেনো। লঙ্কা যা মরিচ ও তো তাই। তাহলে তোর উচিত ছিলো বোনের বান্ধবীর প্রেমে পড়া কিংবা বেস্টফ্রেন্ডের বান্ধবীর প্রেমে পড়া।
তুহিন : নাউজুবিল্লাহ। এই দুইটার উপর আমি সেন্টি খাওয়ার আগে ভাগ্যিস তোর ওই বোকাসোকা বোনের প্রেমে পড়ছি। নয়তো আমার জীবমটা আজ আয়াশ ভাইয়ার মতো কোরবানির গ/রু হতো।
তুহিনের কথায় রোদেলা আর মেঘা তুহিনের চুল টেনে ধরে। তুহিন চেঁচিয়ে উঠে। সবাই হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ে ঢলে পড়ে। বেশকিছু ক্ষণ পর তুহিনকে ছেড়ে দুজনই জায়গায় বসে। তুহিন মাথার চুল ধরে তব্ধা খেয়ে যায়।
তুহিন : আল্লাহ গো। আয়াশ ভাইয়া, ইফাজ ভাইয়া তোমাদের কপালে অশেষ দুঃখ আছে।
রোদেলা আর মেঘা আবারো আসতে নিলে রোজ এসে তরীর পাশে বসে। রোজকে দেখে তুহিন শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। সিমথিরা ভ্রু কুঁচকে তুহিনের দিকে তাকায়। ইফাজ আর সায়ন হালকা করে কাশে।
সিমথি : বোঝেনা সে বোঝেনা, সেতো আজোও বোঝেনা। কাঁদে মনের কথা প্রেম কি শুধু। গান টা সুন্দর না তুহিন।
রোজ : কি হয়েছে সিমথি আপু।
সিমথি : আসলে তুহিনের কোনো বোন নেই তাই বেচারা দুঃখ প্রকাশ করছে। রেড রোজ তুই একটু ওকে ভাইয়া বলে কষ্ট টা কমিয়ে দেতো।
রোজ : কিন্তু আমি তো উনাকে ভাই বলেই সম্বোধন করি।
সিমথি : আহা তুই তো তুহিন ভাই বলিস। ভাই তো পাড়াপড়শি দেরও ডাকা যায়। সায়ন ভাইয়া আর ইফাজ ভাইয়া কে যেমন ভাইয়া বলিস তুহিন চাই তুই ওকেও সেভাবে ভাইয়া ডাক।
রোজ : ঠিক আছে। তুহিন ভাই সরি তুহিন ভাইয়া আজ থেকে আমি আপনাকে ভাইয়া বলবো। ভাইয়া তবুও দুঃখ পাইয়েন না ভাইয়া ।
রোজের কথায় সবাই গলা ফাটিয়ে হেসে উঠে। তুহিন রাগী দৃষ্টিতে একবার সিমথির দিকে তো কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে একবার রোজের দিকে তাকাচ্ছে। তুহিনের ফেস দেখে সবার হাসির বেগ আরো বৃদ্ধি পায়। রোজ বোকার মতো ওদের হাসির দিকে চেয়ে থাকে। রোজ – তুহিনের ফেসে রিয়াকশন দেখে হাসতে হাসতে পেট চেপে যে যেখানে পারছে সেখানে শুয়ে বসে পড়ছে।
চলবে,,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)