মেঘে ঢাকা চাঁদ (পর্ব ৭)

0
389

মেঘে ঢাকা চাঁদ (পর্ব ৭)
সায়লা সুলতানা লাকী

পরের দিনই ওরা ঢাকার পথে রওয়ানা হয়ে গেল। রাতে অনেকক্ষন কাঁদার পর মনটা নরম হয়ে যায় লাবন্যের। মনকে শক্ত করতে বলে, হেরে যাওয়া মেয়ে ও না। যে করেই হোক খালামনির মনটা জয় করবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। সকালে খালামনির পছন্দ মতো বার্মিজ চাদর, আচার আর কিছু শোপিস কিনে নিল তার জন্য । মনকে বোঝালো এই বলে যে, খালামনি এতটা বছর তুচ্ছতাচ্ছিল্যের মধ্যে থাকায় একটু রুড় মেজাজের হয়ে গেছেন, তাই মনে বলল এখন সে ভালোবাসার মর্ম বোঝেন না। বেশি বেশি ভালেবাসা পেলেই খালামনি ভালোবাসার মর্ম বোঝবেন। আর তা দিয়েই খালামনির মনকে জিততে হবে এছাড়া আর কোন গতি আপাতত চোখে পড়ল না।

সকালে ঢাকা এসে পৌঁছাতেই ওর আব্বুকে পেল বাস কাউন্টারে। বাসায় ফিরে আর কোন কথা না বলেই দিল লম্বা একটা ঘুম। রেশমাও তেমন কিছু জিজ্ঞেস না করেই ওকে ঘুমাতে দিল। দুপুর একটার দিকে ঘুম থেকে উঠে বাসার কারো সাথে কোন কথা না বলেই ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে চলে এল খালামনির কাছে। এখনে আসার উদ্দেশ্যটা ওর ক্লিয়ার, তাই মনস্থির করল তাকে আর ক্ষেপাবে না কোনভাবেই । সে যেই ভাঁজে কথা বলবে ও সেই ভাঁজেই সায় দিয়ে যাবে। ব্যাগগুলো নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই রেহেনা বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন।

“কি ব্যাপার? ঢাকা আসতে না আসতেই এই বাসায় হামলা দেওয়া শুরু করলি?”

“আসসালামু আলাইকুম খালামনি, হামলা করব কেন? আমিতো আসলাম তোমার জন্য কেনা গিফটগুলো দিতে।”

“মায়ের মতো অত ঢং করিস না। তুই কি ভেবেছিস আমি কিছু বুঝি না? দুইটা মেয়ে বড় করে বিয়ে দিয়েছি, বাতাসেতো আর চুল পাঁকেনি। সারাক্ষণ শুধু আমাদের বাসায় ঘুরঘুর করিস কেন? আসলে তোর মতলবটা কি? নিজের তো আর পড়াশোনায় মন নেই, এখন অন্যকেও পড়াশোনায় থাকতে দিতে চাস না। ভিতরে ভিতরে এত বুদ্ধি খাটাস? ”

“খালামনি আমার কোন মতলব নাই—” লাবন্যের কথা শেষ করতে না দিয়েই তিনি আবার বলতে শুরু করলেন

“চুপ মিথ্যুক! তুই কি মনে করিস, এই ট্যুরের প্ল্যান সম্পর্কে আমি কিছু জানি না? এইটুকু মেয়ের নাড়ে নাড়ে বুদ্ধি। কি সাংঘাতিকরে বাবা। সবাই এটা শুনে হাসে কীভাবে তাই আমি ভাবি? এই মেয়েতো বড়ো জটিল, যার ঘরে যাবে সে ঘর তছনছ করে ছাড়বে এর মনমতলবি দিয়ে। ”

লাবন্য স্তব্ধ হয়ে গেল শেষ কথাটা শুনে। খালামনি এতটা কঠিন ভাষায় কথাটা বলতে পারল কি করে? কোন উত্তর দিবে না ভেবেছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কিছু একটা বলা উচিৎ। কিন্তু ও মুখ খোলার আগেই রেহেনা বেগম বলতে শুরু করলেন আবার–

” নিজের যখন একটা বড় ভাই নাই, তখন আর এত বড় ভাইয়ের আশা করিস কেন? আমার হিমেলের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার ইচ্ছেটা ভুলে যা। আমি ওর মা এখনও বেঁচে আছি, ওর ভুলগুলো শুধরে দেওয়ার জন্য বুঝলি? এমন হুটহাট আমার বাসায় আমার হিমেলের আশেপাশে ঘুরঘুর করবি না। তুই আর এখন ছোট লাবন্য নাই। এখন ঢিংগি মেয়ে হইছিস, বিয়ে দিলে দুই বাচ্চার মা হয়ে যাবি। এখন আর আমার বাসায় তোকে না ডাকলে আসবি না। পুরুষ মানুষের চোখ কখন কোন দিকে আটকায় আল্লাহ ভালো জানে, আমি জেনেশুনে কোন রিস্কে যেতে চাই না। তোর মায়েরতো আর এসব বিষয়ে কোন জ্ঞান নাই, নিজের মেয়েকে শাসন করবে সেই মুখওতো নাই। নিজেই করছে এক আকাম আবার কোন মুখে মেয়েকে শাসন করবে? কিন্তু আমিতো আর এগুলো সহ্য করব না। তাই আমিই তোকে খুলে বললাম। তুই আমার কথা বুঝছিস?”

“জি খালামনি বুঝছি।”

“কি বুঝছিস,শুনে?”

“আর তোমাদের বাসায় আসবো না।”

“শুধু কি আমাদের বাসায়? ওরে আল্লাহ, মেয়ে বানাইছো একটা রেশমা! শোন, কান খুলে শোন। আমার হিমেলের আশেপাশে যেন আর না দেখি তোকে। মনে থাকে যেন কথাটা।”

“জি খালামনি মনে থাকবে। আচ্ছা এখন আমি যাই, তবে যাওয়ার আগে এই ব্যাগগুলো রাখো, এখানে তোমার জন্য আর খালুজির জন্য অল্প কিছু গিফট ছিল। পছন্দ হলে পরে নিও।” বলে আর দাঁড়ালো না লাবন্য। কেনজানি ওর খুব কান্না পেতে লাগল। মনে হল এখানে একটু দাঁড়ালেই কেঁদে ফেলবে। হিমেলের সাথে দেখা না করেই নিজের বাসায় চলে এল।

বাসায় আসার পর নিজের রুমে ঢুকে প্রান খুলে অনেকক্ষন কাঁদল। রেশমা কিছুক্ষণ ওর পাশে এসে বসে থেকে আবার চলে গেল। মেয়েকে কিছুই জিজ্ঞেস করল না। কারনটা ও কিছু আঁচ করতে পেরেছে। রেহেনা বেগম যে তাকেও কল দিয়ে বেশ কিছু কটুবাক্য শুনিয়েছিলেন গতকাল। অনেক ভেবেছে রেশমা, কিন্তু এর কোন সুষ্ঠ সমাধান খুঁজে পায়নি। মেয়েটার মন বড় নরম তা ও বোঝে। আর এটাও বোঝে ও বারন করলে মেয়ে আরও বেশি ঝুঁকে পড়বে এই সম্পর্কে। তারচেয়ে মনে হয়েছে ও বাড়ি থেকে লাবন্য নিজেই কিছু শুনুক যাতে নিজেই নিজেকে সংযত করতে পারে। লিখনকে এ বিষয়ে তেমন কিছু জানায়নি ও। ভেবেছে উঠতি বয়সের এই মোহ একটু বুঝতে শিখলেই তা কেটে যাবে।

এরপর আর লাবন্য হিমেলদের বাড়ি মুখি হয়নি। হিমেল কল দিলে হু, হা’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে হিমেলকে বুঝিয়েছে ওর পরীক্ষা তাই লাবন্য নিজেকে ঘরে আটকে রাখছে। হিমেলও নিজের পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় আর বেশি গুরুত্ব দেয়নি বিষয়টাতে।

এরই মাঝে লাবন্য এন এস ইউতে ভর্তি হয়ে গেল। নিজেও এখন চেষ্টা করতে লাগল পড়াশোনায় একটু মনযোগ দিতে। সময় কাটানোর জন্য রৌশনকে নিয়ে নিজেই কোচিং-এ যায়। ওর পি এস সি পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। রেশমাকে এই কাজটায় হেল্প করতে পেরে নিজের কাছেও বেশ ভালো লাগতে লাগল।
এভাবে কেটে গেল বেশ কিছু সময়।

এদিকে হিমেলের পরিক্ষা শেষ হতেই ও চলে এল একদিন লাবন্যদের বাসায়। সেই লাজুক লাজুক হাসি নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াতেই লাবন্যর মনটা আনচান করে উঠল আবার। কিন্তু এমনটা হোক তা ও চায় না। সম্পর্কের গভীরতা বেড়ে গেলে সেখান থেকে ফেরা অসম্ভব হবে। আর খালামনিকে ছাড়া এ সম্পর্কের পূর্নতা মিলবে না তা রেশমা ওকে একদিন সুন্দর করে বুঝিয়েছে। কিন্তু এখন যখন হিমেল ওর সামনে তখন ও কি করে ওকে এভয়ড করবে তাই ভেবে পাচ্ছে না।

“কিরে তোর আবার নতুন করে কি হল? ট্যুর থেকে অন্য এক বন্য হয়ে ফিরলি মনে হয়? জ্বালানোর মতো নতুন কাউকে খুঁজে পেয়েছিস নাকি?”

“এত প্রশ্ন একসাথে? কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিব?”

“প্রশ্নগুলো একদিনের না অনেকদিন ধরেই জমেছে, সময় করে আসতে পারিনি, তাই ——”

“আহারে বেচারা! প্রশ্নগুলো মনে চেপে ঘরেই বসেছিল। সাহস করে আসতেও পারেনি,আর প্রশ্ন করতেও পারেনি। আহা চু চু চু–”

“ব্যঙ্গ করা ছাড়, সমস্যাটা কি তাই বল?”

“আজ আসার সাহস পেলে কোথায়?”

“মানে?”

“মানে, আজ খালামনি তোমাকে আটকায় নাই?”

“শোন আম্মুকে নিয়ে কোন কথা বলিস না, এটা তুই ভালো করেই জানিস আম্মু এমনই। আর এমনই থাকবেন। যখন আমি জানি আম্মুকে কি করে মেনেজ করতে হয় তখন সে বিষয় নিয়ে তোর এত মাথা ব্যথা কেন? তাতে কি বুঝবো, আমার প্রতি তোর বিশ্বাস কম আস্থা কম? এমন হলে—-”

“আমি কখন বললাম, তোমার প্রতি আমার আস্থা, বিশ্বাস কম?”

“তাহলে আম্মুকে নিয়ে পড়েছিস কেন? বারবার বলি আম্মর বিষয়টা আমি দেখব–”

“সবসময় আমার সাথে চিৎকার করবা না। আমার মাথায় এত কিছু ঢুকে না। আমাকে কেউ কিছু বললে আমার কষ্ট লাগে। খালামনিকে ইগনোর করা যায় না। বিষয়টা খুব সেনসেটিভ। তুমি সবসময় গা ছাড়া কথা বলো। তুমি দেখবে, তুমি বুঝবে? কিন্তু কবে? তোমার পরীক্ষার পরপরই তোমার জন্য মেয়ে দেখা শুরু করবে এটাতো অনেক আগে থেকেই প্ল্যান করা। তাই না?”

“ইন্না-লিল্লাহ! এটা কোনো সময় হলো এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার? আমি পাশ করব চাকরি করব, এস্টাবলিশ হব তারপর আসবে এসব কথা। কে কি প্ল্যান করল তাতেই বুঝি সব ঘটে যায়? আমার লাইফ আমি কি চাই, তা কেউ বুঝবে না এমনটা কেন ভাবছিস?” কথাটা বলতে গিয়ে হিমেল বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠল।

“আহ! কি করছিস তোরা? এত চিৎকার করছিস কেন? লাভ তোর দাদু আছেন বাসায়, সেটা কি ভুলে গেছিস?”

“সরি খালামনি।” হিমেল আস্তে করে বলল

“দেখ হিমেল তোরা বড় হয়েছিস, নিজেদের ভালোমন্দ বুঝতে শিখেছিস। তাই বলে কিন্তু তোদের সব ডিসিশন সঠিক তা ভাবিস না। আপা পছন্দ করেন না আমাদেরকে।তাই বলি তুই শুধু শুধু এখানে আর আসিস না। এতে ঝামেলাই শুধু বাড়বে।”

“ঠিক বলো নাই খালামনি, আম্মুর সমস্যা তোমার সাথে। তুমি আম্মুকে অনেক হার্ট করেছো। কিন্তু তার দায়ভার কেন আমাদেরকে ভোগতে হবে বলতে পারো? আমরা কি দোষ করেছি?”

“হিমেল তুই এখন ছোট বাচ্চা না তুই সবই বুঝিস, আমি কেন কি করছি তাও জানিস। তারপরও তুই এই প্রসঙ্গ তুলছিস?”

“হ্যা তুলছি, তুমি কখনওই চেষ্টা করোনি এই ঝামেলা মিটানোর। কখনোই আম্মুর মুখোমুখি হওনি এই ব্যাপারটা নিয়ে। এটা অবশ্যই তোমার করা উচিৎ ছিল। এখন তোমার ভুলের জন্য আমরা সাফার করব তা ভাবছো কেন?”

“তাহলে কি করতে বলিস আমাকে? আপার সামনাসামনি হয়ে এই বিষয়ে কথা বলার মতো সাহস আমার নেই। আমার জন্য আপা অনেক সহ্য করেছে। কি বলবো আমি আপাকে? কীভাবে বলবো?”

“বলার ইচ্ছে থাকলে আমি ব্যবস্থা করতে পারি।”

কীভাবে?

“সামনের মাসে নানার মৃত্যুবার্ষিকী, আমি আম্মুকে মানিয়ে নানাবাড়ি নিয়ে যাব। তোমরাও তখন যাবে। অন্তত দুইদিন হাতে পাবে আম্মুর সাথে এই দূরত্ব মিটাতে।”

“আমি যাব শুনলে আপা যাবে না।”

“বললামতো আমি মানিয়ে নিব। বাকিটা তোমার কাজ। দেখো তুমি কতটুকু পারো।”

লাবন্য চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওর আম্মু আর হিমেলের কথা শুনছিল। আর তাতে মনে একটু একটু আশার পিদিম জ্বলে উঠছিল।

রেশমা হিমেলের কথাটাকে অনেকটা চেলেঞ্জ হিসেবে নিল। যদিও মনে ভয় তারপরও মনে হল নিজের মেয়ের সুখের জন্য মা হিসেবে এতটুকু ওকে পারতেই হবে যেকোনো মূল্যে ।

হিমেল সেদিন সারাবেলা রেশমার বাসাতেই কাটালো। রৌশনের সাথে বসে বেশ কিছুক্ষণ ভিডিয়ো গেমস খেলল। এর মধ্যে ওর মা কল দিলো ও স্পষ্ট জানিয়ে দিল ও রুশের সাথে খেলছে রাতে খেয়ে তারপর বাসায় ফিরবে। ওর মা কি বলল তা আর লাবন্য জানতে পারলো না শুধু হিমেলের কথাগুলো শুনেই মনটা তাজা হয়ে গেল। কি সুন্দর সাহস করে জানিয়ে দিল। মাঝে মাঝে মনে হয় হিমেলের অনেক বুদ্ধি আবার কখনও মনে হয় পুরাই বোকা একটা মানুষ। এই কয়দিনে নিজেকে যতটা গুটিয়ে নিয়েছিল হিমেলের কাছ থেকে আজ এই অল্প সময়ে ততটাই জড়িয়ে গেল মনের জালে বলে মনে হল। গেমস খেলার সময় প্রতিবারের মতো আজও লাবন্যের হাতেই নাস্তা খেয়ে নিল। একটু পর পর শুধু বলে দিচ্ছিল “এই বন্য বেগুনি খাওয়া, এই বন্য পেঁয়াজু চাটনিতে চুবিয়ে দিস।” আর লাবন্যও তোতাপাখির মতো ওর কথামতো কাজ করে যাচ্ছিল। ভুলেই গেল খালামনির কথাগুলো।

হিমেল বাসায় ফিরে ওর আম্মুকে কোন কথা বলার সুযোগই দিলো না। নিজের রুমে ঢুকেই শুয়ে পড়ল। রাতে ওর আব্বু বাসায় থাকেন, তখন ওর আম্মু এমনিতেই থাকেন প্রচন্ড মানসিক চাপে। তাই আর বাড়তি কোন ঝামেলা তিনি করবেন না তা বুঝতে পারে হিমেল। এখন চিন্তার বিষয় মা’কে কীভাবে নানাবাড়িতে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। কি করলে ওর আম্নু নিজ ইচ্ছায় নানাবাড়িতে সুরসুর করে চলে যাবেন একবার খেয়ালও করবেন না যে রেশমা যাচ্ছে কি না!

হিমেল চলে যাওয়ার পর থেকে রেশমার মনে চলতে থাকল নানান জল্পনা কল্পনা। কীভাবে এত বছরের কষ্ট, লজ্জা,গ্লানি এই দুইদিনে দূর করবে। টেনশনে রাতে ঘুমটাও ভালোমতো হলো না। ওর ছটফট ভাবরা লিখনের দৃষ্টি এড়ালো না। লিখন জানে সামনেই র শশুরের মৃত্যু বার্ষিকী আছে। আর তখন সেখানে যাওয়ার জন্য রেশমার মনটা উথাল-পাতাল করে। ও কখনোই মানা করে না। এবারও করবে না মনে মনে ঠিক করে নিল।

লাবন্যের মনটা আজ খুব ভালো। এই কটা দিন দমবন্ধ একটা সময় পার করেছে ও। হিমেল এসে সব দুঃখ কষ্ট যেন এক নিমিষেই দূর করে দিল। মনটা আবার মেতে উঠলো নানান স্বপ্নে বুনতে। নানারবাড়িতে যাওয়া হয় খুব কম। নানা মারা যাওয়ার পর বছরের এই সময়তে সবাই গ্রামে যায়। ওখানে বড় করে মৃত্যু বার্ষিকী পালন করে। এরা নাকি গ্রামবাসীর হক। শহরের মানুষ আর কয়জন নানাজানকে চিনেন, কিন্তু গ্রামের সবাই নানাকে মানিগন্য লোক হিসেবেই জানেন। তাই তারা গ্রামেই চলে যান। রেশমা গেলে রেহেনা বেগম যান না। আবার যখন রেহেনা বেগম যান তখন আগেই জানিয়ে দেন যাতে রেশমা না যায়। এভাবেই চলে আসছে এত বছর। রেশমাকে পেলে ওর ভাইবোনরা কেউ তেমন একটা খুশি হয় না। মা-ও যে খুব খুশি হয় তেমনটা না। তবে গেলে খারাপ আচরন করেন না। আর তাতেই রেশমা খুশি হয়। বছরের এই একটা সময় অন্তত নিজের মা ভাই বোনদের মুখটা দেখা যায়, আপনজনকে কাছে পাওয়া যায়। এই আনন্দ ও কোন মূল্যেই হারাতে চায় না।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here