মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ১১)

0
377

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ১১)
সায়লা সুলতানা লাকী

সকালে নাস্তার জন্য সবাই আবার একত্রিত হল। কাজিনদের সাথে বোনের দেবররা আসল। সবাই মিলে প্ল্যান করতে ব্যস্ত আজ সারাদিন কী কী করে কাটাবে কোথায় কোথায় যাবে ইত্যাদি। গতকাল কেমন জানি একটু স্থির থাকা লাবন্য আজ বেশ প্রফুল্ল চিত্তে সবার সাথে যোগ দিল আলাপচারিতায়। সকালেই খুব সুন্দর করে সেজেগুজে হিমেলকে শক লাগাতে এসে দেখে ওই বান্দাই এখনও আসে নাই। সাধারণত ও কখনও এভাবে সাজে না। আজ হঠাৎ এমনটা ইচ্ছে হওয়ার কারন আর নাইবা খুঁজল! মামিরা খাবার সার্ভ করার সময় রেশমার খোঁজ করল কারন ও এখনও আসে নাই। লাবন্য কিছু বলার আগেই ওর নানি জানালেন যে রেশমার মাথা ব্যথা করছে তাই শুয়ে আছে পড়ে খাবে। এদিকে রেহেনা বেগমও বেশ থম থমে মেজাজে আছেন। উনি কেঁদেছেন তা ওনার চোখমুখই বলে দিচ্ছে। লাবন্য তার কারন বুঝতে পারছিলো না। এক মন বলতে লাগল নিশ্চয়ই খালুজি কারউ সামনে খালামনিকে ধমকের স্বরে কথা বলেছেন নয়তো তার স্বভাব মতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন যা খালামনি হয়তো সহ্য করতে পারেন নাই। এই চিন্তা মাথায় আসতেই খালুজির উপর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মানুষ এমনটা কীভাবে করে? যেখানে কি না খালুজি পুরোপুরি খালামনির উপর ডিপেন্ডবল সেখানে তাকেই কষ্ট দিয়ে কথা বলে। এটা কি রকমের আচরন হয়? আর কিছু ভাবতে পারল না বড় মামার কথার জন্য, খেতে খেতে তিনি বললেন

“কি লাবন্য তোর খবর কি? শুনলাম গতকাল একাই নাকি বাহিরের সবাইকে খাইয়েছিস? সাব্বাস মেয়ে সাব্বাস, শুধু মুখ না এত দেখছি হাতও বেশ ভালোই চলে তোর।”

“মামা যার চলে তার সবই চলে” বলে হেসে ফেলল লাবন্য।

“তা কেমন লাগল নানাবাড়ি এসে গায়েগতরে খাটতে?”

“বোঝাতে পারব না মামা, এক অন্য রকম আনন্দ পেয়েছি গতকাল। ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে এক পিস মাংস বাড়তি দিতেই কি যে সুন্দর একটা হাসি উপহার দিচ্ছিল তা দেখার মতো ছিল। ”

“বেশি পেলে সবাই খুশি হয়রে মা।”

“উহু, আসলে ওটা বেশি বলা যাবে না। ওটা ওদের নিড ছিল। কারন ওরা কেউই খাবার জুটা করে নাই। একেবারে প্লেট চেটেপুটে খেয়েছে। যদি চাহিদার চেয়ে বেশি হত তাহলে কেউ না কেউ জুটা করতো।”

“খেয়াল করে দেখছো লাবন্য কেমন ভারী ভারী কথা বলে।” বলতে বলতে এরই মধ্যে মিনু চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বসল টেবিলে। সাথে সাথে বড় মামি বলে উঠলেন “এই মিনু, খালি পেটে চা খাওয়ার অভ্যাস কবে করলি? রাখ চা! আগে নাস্তা কর পরে চা পাবি।”
তখন মিনুর দেবর বলে উঠল “ভাবির এত সময় কই যে আগে নাস্তা করবে? ভাইয়ার পিছনেইতো সারা সকাল শেষ, তারপর অন্যদের দিকে ফিরে তাকাতে হয়। আমরা ততক্ষণে তীর্থের কাকের মতো নাস্তার জন্য ওয়েট করি। এর মধ্যে নিজেরটা দেখার সময়, কই?যদি নিজেরটা দেখতে হয় তবেতো আমরা আকাশের দিকে তাকায় থাকব।” বলে হাসতে লাগল।

“কি নর্মম তাই না বিষয়টা! ভাইয়া আপনি কি সুন্দর করে বললেন কথাটা। এত নির্মম কথাটা বলে আবার হাসছেন। কেন হাসছেন তা অবশ্য এখনও বুঝি নাই। আপা কখনও নিজের কথা ভাববে, সেই বিষয়ে নাকি নিজেদের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে সেই বিষয়টা চিন্তা করে।”

লাবন্যের কথাটা শুনে মিনুর দেবরের মুখের হাসি মলিন হয়ে গেল। আসলে ও এমন কোন প্রশ্ন শুনবে তা আশা করেনি। অন্য দিকে দেবরের কথার উত্তর দিচ্ছে এতে আবার নতুন কোন ঝামেলা খাড়া হয় সেই ভয়ে মিনু ধমক দিয়ে উঠল লাবন্যকে। “এই লাবন্য তুই আবার কি বলছিস? তুই সংসারের কি বুঝিস? চুপ থাক, সংসারে বৌদের এমনই হয়।”

“হুমম চুপই থাকব, আর বিয়ে নামক সাক্ষরিত চাকরি নেওয়া থেকে একশো হাত দূরেও থাকব।”

“তাই নাকি বিয়াইন আপনি বিয়ে করবেন না? ” মিনুর দেবর আগ্রহ নিয়ে প্রশ্নটা করল।

“না করব না, কারন আমি বিয়ে করলে ওই বাড়ির অন্য সদস্যদের যে সারাজীবন আকাশের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে হবে। কারন আমি যে আগে আমাকে ভালোবাসবো, তারপর অন্যদের ভালোবাসব।”

“মেয়েরা এটা পারে নারে লাবু, মেয়েরা অন্যকে ভালোবাসতে জানে।”

“নানি, দেখো এই সেইম কাজটা তুমিও করেছো, মামিরাও করছে মিনু আপাও করছে কি সাংঘাতিক নিয়ম তাই না? তুমি যখন করছো তখন ভাবছো এটাই নিয়ম, কিন্তু চোখের সামনে যখন তোমার সন্তানকে করতে দেখছো তখন কষ্ট পাচ্ছো। পাচ্ছো না বলোতো মামি?”

“হইছে তোর আর পাকনামি করতে হবে না। তুই চুপ থাক। ” বলে বড় মামি ইশারা করল কোন কথা না বলার জন্য।

“হুমম, চুপইতো থাকে সবাই, চেখের সামনে সন্তানের কষ্ট দেখেও সবাই চুপ থাকে তবুও নিয়মের নামে এই অনিয়ম কেউ ভাঙে না। মাঝে মাঝে মনে হয় পৃথিবীর সব ভালোবাসা আদর মায়া মমতা মেয়েদের মনে, পুরুষের মনে কোন কিছু নাই। সত্যিই পুরুষরা কি কাউকে ভালোবাসে না? আদর করে না? তাদের মনে কি মায়া মমতা নাই?”

“এটা আবার কেমন কথা? পুরুষের মনে ভালোবাসা আদর মায়া মমতা থাকবে না কেন? তাদেরও আছে। কি আবোল তাবোল বলছিস, চুপ করে খেতে বস।সারাক্ষণ শুধু বকবক করে মেয়েটা।”

“মিথ্যে কথা তাদের মনে এগুলো একটাও নাই, যদি থাকতো তবে মিনু আপার বর বুঝতো মিনু আপার কষ্ট। বুঝতো তার জন্য মিনুর সকালে নাস্তাটা অবেলায় করতে হবে। আর বুঝলে নিজে খাওয়ার সময় একটু একটু করে আপার মুখেও তুলে দিত৷ ভালেবাসার মানুষকে ক্ষুধায় কষ্ট পেতে দিতো না।
খুব কাছের পুরুষটাই যখন ভালোবাসে না তখন অন্য পুরুষের মায়া মমতার কথা চিন্তা করারও গুনাহ। তারপরও তাদেরও মায়া মমতা নাই বলতে হবে, থাকলে বুঝত এই মেয়েটা সকাল থেকে খাটছে সবার নাস্তার জন্য, নিজেদের নাস্তার সময় তাকেও নাস্তা করার সুযোগ দেই শুধু শুধু কেন অবেলায় খাবে, মেয়েটা নাস্তা করলে তখন আর আকাশের দিকে তাকিয়ে না থেকে হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দিয়ে একসাথে বসেই নাস্তা করত। আমি কনফার্ম কোন পুরুষেরই মন নেই নেই সেখানে ভালোবাসা। সন্তানের জন্য আদর মায়া মমতাও নাই। থাকলে তারা অন্য মেয়েকে কথায় কথায় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলতো না কথায় কথায় ধমক দিতো না, পদে পদে দোষ ধরতো না। কারন তারা বুঝতো সে যেমন অন্যের মেয়েকে কষ্ট দিচ্ছে, তার মেয়েটাও অন্য পুরুষে দ্বারা সেইম ইস্যুতেই কষ্ট পাচ্ছে । কারন প্রকৃতি তার শোধ নিতে ভুলে না। নিজের সন্তানের সুখে কথা ভেবে সে অন্যের মেয়েকে সম্মান ভালোবাসায় আগলে রাখতো।”

লাবন্য যখন কথাগুলো বলছিলো তখন হিমেল এসে দাঁড়িয়েছিল বারান্দায়। দেখল ওর আব্বু চুপ করে বসে লাবন্যের কথা শুনছে। তাই আর ইচ্ছে করেই ভিতরে ঢুকল না বাহিরেই দাঁড়িয়ে রইল।

“রেশমার মেয়েতো বেশ কঠিন কঠিন কথা শিখেছে দেখছি।” বড় মামা হাসতে হাসতে খাবার শেষ করে উঠলেন।

“মামা আমি মোটেও কঠিন কথা বলছি না, একবারে সত্য কথা বলছি। তুমি নিশ্চয়ই মিনু আপার কষ্টটাই চেয়েছো, তাইতো মামির সাথে—-”

“আহ লাবন্য! এটা তোদের বাসা না, এখানে এত লেকচার দিস না। তুই বেশি জানিস তোর মামা কি চেয়েছে?”

“মামি শুধু শুধু রেগে যাচ্ছো কেন? আমিতো শুধু আয়না দেখালাম। ফেক্ট কিন্তু এটাই। প্রকৃতির শোধ সবটা বুঝলা? সবই প্রকৃতির শোধ।”

“হুমম সবই শোধ, তোর মা পালিয়ে আমাদের মুখে চুনকালি দিয়েছিলো, এবার তুইও তাই করে তোর মায়ের মুখে চুনকালি মাখা “প্রকৃতির শোধ ” বলে কথা তাই নারে লাবন্য।” বলতে বলতে ছোট মামি হাসিতে ফেটে পড়ল।

“ছোট মামি এখানেও একটা সমস্যা আছে আর তা হল আমি আম্মুর মতো না। আর আম্মু নানির মতো না। এখানে একটা বিরাট গ্যাপ আছে। নানি সবসময় কড়া শাসনে মানুষ করেছেন আম্মুকে। কখনও আম্মুর বন্ধু হয়নি। আম্মু কখনও তার মনের কথা নানিকে বলতে সাহস পায়নি। কিন্তু আম্মু আমার বন্ধু হয়েছেন। আমরা দুজন দুজনের কাছে সব কথা শেয়ার করি। আর তাই পালিয়ে যেতে হবে না। কাউকে পছন্দ হলে সরাসরি আম্মুকে বলতে পারব। আমি আম্মুকে কোন কথা বলতে ভয় পাই না। কিন্তু আম্মু নানিকে কোন কথা বলতে ভয় পেতো। আমার আব্বু আমার ভিতরে বিশ্বাস জাগিয়েছেন যে উনি আমার মতামতের সম্মান দিবেন। তাই নির্দ্বিধায় আমি আব্বুকে আমার পছন্দের কথা বলতে পারব।পালানোর প্রশ্নই উঠবে না তখন।”

“এটা ঠিক বলছিস লাবু। আমি কখনোই আমার বাচ্চাদের কাছে সহজ ছিলাম না। ওরা কেউই দরকার ছাড়া আমাদের সাথে কোন কথা বলতো না। ওদের মনে কি চলছে তা কখন বোঝার চেষ্টা করিনি। সবসময় শাসনের উপরই রেখেছি। ওরা আমাকে শুধু ভয়ই পেত। যা এত বড় ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ভুল আমারও ছিল।”

“নানি তুমি আবার আমার কথায় কষ্ট পেও না। আমি তোমাকে হার্ট করার জন্য কিছু বলিনি।আমি–”

“তুই কিছু ভুলও বলিসনি। আর নতুন করে কষ্ট পাওয়ার কিছু নাই। অনেক পরে উপলব্ধি করেছি যখন আমার আর কিছু করার ছিলো না।”

হিমেল দেখল কথা ঘুরে ফিরে সেই পুরোনো সুরেই চলে যাচ্ছে তখনই ভিতরে ঢুকল।
“কি হলো সবার প্ল্যান করা। তো চলো এখন বাস্তবায়নে নামি। কে কে মাছ ধরতে যাবে? জাল ফেলতে কে কে পারে? আমি কিন্তু আগেই বলে দেই আমি জাল ফেলতে পারি না।”

“পারো না তাতে কি? জাল ফেলতে চেষ্টা কর। হয়তো প্রথম প্রথম জালের সাথে তুমিও পুকুরে পড়ে যাবে৷ তখন আবার আমরা মাছের সাথে তোমাকেও তুলে তুলব।” লাবন্যের কথা শেষ হতেই সবাই হেসে উঠল।

জলদি নাস্তা শেষ করে সবাই বের হয়ে পড়ল। মিনু বের হলো না তাই তন্বী আর হিমেলকে বলে দিল দেবরদের খেয়াল রাখতে যাতে লাবন্য কোন কিছু না বলতে পারে ওদের। তন্বী আশ্বাস দিয়ে বের হল।

পুকুর ঘাটে এসে দেখে মামারাই লোক ঠিক করেছে মাছ ধরার জন্য। সবাই সেই আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

লাবন্য ঘাটে এসে বসতেই হিমেল আস্তে করে বলল
“এত সাজসজ্জার কারন কি?”
“বলব না।”
“গতকাল দেখলাম হোপ করে ছিলি আজ এত বেশি বকবক করছিস মনে হচ্ছে হঠাৎ করেই মন ভালো হয়ে গেছে?”

“হলে সমস্যা কি? ”

“সমস্যা একটাই একটু বেশি বকবক করিস। সবাই তা হজম করতে পারে না। একটু চুপ থাকতে পারিস না?”
“ছিলমতো এই কয়দিন।”

“হুমম একেবারে দম বন্ধ হয়ে আসছিল।”

“তাহলে আবার চুপ থাকতে বলছো যে?”

“সবাই তোর কথা বুঝবে না। যারা বুঝবে না তাদের সামনে বলিস না। দেখিস না ঘুরে ফিরে সবাই গিয়ে মিলে ওই এক বিন্দুতে। বিরক্ত লাগে এখন এই বিষয়টা নিয়ে যখন কেউ কথা বলে। কেউ ভালোবাসা দেখে না দেখে শুধু….. অসহ্য।”

“তুমি গতরাতে জেগে ছিলে সারাটা সময়। কেনো?”

কি করব আমার কাজিনরা সব খোলা ছাদে ঘুমিয়ে পড়ল, এখন যদি কোন বদ জ্বিন ওদের উপর নজর দেয়। তাই পাহারা দিয়েছি।”

“ও কাজিনদের জন্য জেগে ছিলে? আর আমি কি না ভাবলাম….”

“কি ভাবলি?”
“কিছু না যাও, আমার সাথে কথা বলবা না। হ্যা আর শোন, আমি আজ সেজেছি মিনু আপার দেবরদের জন্য আর ওই বদ জ্বিনদের জন্য। বুঝছো? ক্লিয়ার?” বলেই লাবন্য উঠে চলে গেল মিনুর দেবরদের সামনে।
হিমেল চুপ করে বসে দেখতে লাগল লাবন্যকে। ওর পাগলামিগুলো দেখতে মনে এক প্রকার সুখ অনুভূত হয়।তাই দূরে বসে সেই সুখ অনুভব করতে লাগল।

সবাই মিলে বাড়ির ভিতরের পুকুরে গোসল করল। লাবন্য সাঁতার শিখেছে ছোটবেলাতেই তাই এখানে এসে এই কাজ মিস করে না কখনও। অনেক সময় নিয়ে পুকুরেই থাকল। তখনও উঠতো না। কিন্তু রেহেনা বেগম এসে ধমক দিয়ে উঠালেন। লাবন্য যতদূর সম্ভব তার থেকে দূরেই থাকছে সেদিনকার কথার পর। কিন্তু আজ খালমনি এমন করে সামনে এসে ধমক দিয়ে উঠাবেন তা ভাবতে পারেনি।

দুপুরে খাওয়ার সময়ও রেশমাকে না দেখে রেহেনা আস্তে করে বলল
“আম্মা তোমার ছোট মেয়ে কি দুপুরেও খাবে না?”

“এভাবে বলিস না, ওর শরীরটা খুব খারাপ। মাথা ব্যথায় শুয়ে আছে।”

“শোনো মা ওর ঢং আমি বুঝি, তুমি আর নতুন করে ওর ঢং আমাকে বুঝিও না। এই লাবন্য যা তোর মা’কে উঠিয়ে নিয়ে আয়। রাতের ট্রেনে ফিরব সবাই এই এক বেলা আম্মার পাশে বসে সবাই খাব এর মধ্যে তার লাগছে যত ঢং।” কথাটা বলে খাবার বেড়ে দেওয়া শুরু করলেন। লাবন্য কি করবে তা বুঝতে পারছিলো না। পরে ওর নানি ইশারা দিলেন ডেকে আনতে। পরে ও মায়ের কাছে গেল ডাকার জন্য।

“আম্মু খেতে আসো”

“খেতে ইচ্ছে করছে না তুই রুশকে খাওয়ায়ে পরে নিজেও খেয়ে নে।”

” জানি তোমার খেতে ইচ্ছে নাই, কিন্তু নানির সাথে বসে সবাই একসাথে খাবে তাই খালামনি তোমাকে ডাকে।”

“বড় বপা ডাকে?”

“হুমম,”

“আগে বলবিতো! সর দেখি উঠতে দে, দেরি হলে আপা আবার বকা দিবে।” বলেই রেশমা উঠে চুলগুলো একটু গুছিয়ে বের হয়ে এল। লাবন্য চুপচাপ মায়ের কান্ড দেখতে লাগল।

বিকেলে সবাই মিলে গ্রামের মেলায় গেল। হিমেল ভ্যানে উঠেই পাশের সিটটাতে লাবন্যকে বসার জন্য ইশারা করল। কিন্তু লাবন্য সকালের শোধ নিতে মিনুর দেবরদের ভ্যানে চেপে বসল। হিমেল জানে যে এখন ও যা বলবে লাবন্য সবটাই তার উলটো করবে। তাই বাধ্য হয়ে অন্য পথ ধরল কারন বন্যকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া যায় না। সারাটা রাস্তা দুই ভ্যানের মধ্যে রেস করে পাশাপাশি চলল। চিৎকার আর হৈ হুল্লোড় করতে করতে মেলায় পৌঁছে গেল।
সবাই মিলে নাগরদোলায় চড়তে গিয়ে হিমেল ডাকল “এই বন্য তুই ওদের সাথে উঠিস না বমি করে সবাইকে ভাসিয়ে দিবি। ”
এই কথা শুনে আর কেউ ওর সাথে উঠলো না। পরে হিমেলের সাথেই উঠতে হল ওকে।

“মিথ্যে কথা বললে কেন? আমি বুঝি বমি করি?”
হিমেল কোন উত্তর দিল না শুধু ওর দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসি দিল।
“হাসবা না, একটুও হাসবা না।মিথ্যুক একটা।” বলে নিজেও একটু হাসল। কারন ও নিজেওতো এমনটাই চায়। হিমেল জোর করে ওকে দখল করুক কেউ যেন কোনদিন ওকে ছুঁতে না পারে হিমেলকে টপকে।

মেলা থেকে সবাই চুড়ি কিনল মুঠ মুঠ ভরে। এত মানুষের ভীড়ে হিমেল ঠিকই বন্যর হাত ভরে চুড়ি পড়িয়ে দিল বিভিন্ন রং ধরে ধরে যেমনটা মন চাইলো আর লাবন্য মন ভরে হিমেলের আনন্দ দেখল।

রাতে আবার সবাই রওয়ানা হল ঢাকার পথে।
আসার সময় বড় মামি রেশমাকে খুব কঠিন ভাবেই বললেন “মেয়ে বড় পাকনা হইছে, তুমিতো তবুও সংসার করে খেলে মেয়ে পারে কি না সন্দেহ। এখন থেকেই একটু খেয়াল রেখো পরে হাজার কাঁদলেও কিন্তু আর লাভ হবে না।”

“আরে কি বলো! ওরা হল মর্ডান পরিবার। লাবন্য ওর মতো এমন কিছু করলে ওদের গায়ে লাগবে না। কাকে কি যে বলো না তোমরা! ওদের হল ব্রড মাইন্ডের পরিবার। ওদের কাছে মেয়ের এমন আচরন কোন বিষয় না। আমরা রক্ষনশীল পরিবারের মানুষ, আমাদের মনমানসিকতা আদি আমলের, আমাদের কাছে ঘরের মেয়ে বিয়ের আগে প্রেম করবে, ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবে এটা বড় কষ্ট দায়ক। এত স্বপ্ন নিয়ে কন্যা পেলে তার দ্বারা এতবড় অসম্মানিত হওয়া সহ্য করা শুধুই আমাদের জন্য কষ্টদায়ক আর লজ্জাদায়ক। ওরাই ভালো আছে এসবে ওদের মত আছে, আর মানাইবা করবে কোন মুখে নিজেরাওতো ওই গোয়ালেরই গরু। ওদের এ বিষয় নিয়ে আমাদের মাথা না ঘামালেও চলবে। ” রেহেনা বেগম কেমন ব্যঙ্গ করে কথাগুলো বলে গাড়িতে উঠলেন।

রেশমা চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনলো কোন কথা বলল না। মাথাটা পর্যন্ত তুললো না। মায়ের এমন করুন মুখটা দেখে লাবন্যের মনকে আনচান করে উঠল। ভিতরে দুমড়ে কেঁদে উঠল। মায়ের শক্ত বারনের কারনে কোন উত্তর দিতে পারল না। মনে মনে বলল “আম্মু তুমি দেখে নিও আমি তোমাকে কারউ কাছেই কখনও ছোট হতে দিবো না। ”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here