উধয়রনী #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-৩০(২য় ভাগ)||

0
581

#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৩০(২য় ভাগ)||

৬১।
লাবীব ক্লাসে ঢুকে দেখলো রাদ বিষণ্ণ মুখে একপাশে বসে আছে। লাবীব তার পাশে এসে বসলো। কিন্তু রাদের সেদিকে খেয়াল নেই। লাবীব এবার রাদের মুখের সামনে হাত নাড়াতেই রাদের ধ্যান ভাঙলো। এরপর সে লাবীবের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত মুখে বলল,
“প্লিজ লাবীব, এসব ফাজলামো ভালো লাগছে না।”

“কেন?”

“কেন মানে? ভালো লাগছে না মানে লাগছে না।”

“তোর হয়েছে টা কি?”

“কিছুই হয় নি।”

লাবীব চোখটা এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে দাঁত বের করে হেসে বলল,
“প্রেমে পড়লে মানুষের এইটাই একটা কমন উত্তর। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে নাক-মুখ সিঁটকে বলবে, না, কিছু হয় নি।”

রাদ চোখ ছোট করে লাবীবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভেঙাচ্ছিস আমাকে?”

“ভেঙাবো কেন? আমি ভাবছি, আহিকে থেরাপি দিতে গিয়ে তুই-ই দেবদাস হয়ে ফিরলি। কি রে এবার তোর জন্য এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে না-কি?”

রাদ বেঞ্চ থেকে উঠে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়তেই লাবীব তার পিছু আসতে লাগলো। রাদ লাবীবের দিকে তাকিয়ে গম্ভীরমুখে বলল,
“আমার পেছন পেছন এসে ঘ্যানঘ্যান করবি না।”

লাবীব রাদকে টেনে আবার বেঞ্চে বসিয়ে রাদের মুখোমুখি বসে বলল,
“আমি জানি তুই আহিকে ভালোবাসিস। এখন তো যথেষ্ট সময় হয়েছে, ভালোবাসার কথা জানানোর। সেই স্কুল থেকেই তুই ওকে পছন্দ করিস। তারপর একই ইউনিভার্সিটিতে অনার্স করেছিস। বন্ধুত্ব হয়েছে। অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করছিস। এখন তো অন্তত বলা যায়।”

“ভয় পাচ্ছি আমি। ও আমাকে ভালোবাসে না। ও অন্য একজনকে ভালোবাসে।”

“পাগল তুই? সে মানুষটা কি আছে ওর জীবনে? তুই তো বলেছিস, ছেলেটা বিয়ে করে নিয়েছে। তাহলে বাঁধা কীসের?”

“তাজওয়ার খান তো আছে।”

“আরেহ, আহি তো আর তাজওয়ার খানকে ভালোবাসে না। তুই একবার বলেই দেখ। যদি রাজি হয়ে যায়!”

“তুই যেটা মুখে বলছিস, এটা এতো সহজ না। আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেলে? পাগল হয়ে যাবো আমি।”

“এজন্যই বলি বন্ধুত্ব না করে একেবারে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে দেওয়া ভালো। একবার বন্ধুত্ব হয়ে গেলে, প্রেম গলার কাঁটা হয়ে যায়।”

“এখন এসব বাদ দে। আগামী মাসে আহির এনগেজমেন্ট। এখন ওর এনগেজমেন্ট কীভাবে আটকাবো?”

লাবীব ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“আরেহ, শুধু এনগেজমেন্ট হচ্ছে। বিয়ে তো আর হচ্ছে না। রিল্যাক্স। আহিকে বল আংকেলকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে।”

“আরেহ ওর বাবাই তো সব ঝামেলা বাঁধাচ্ছে। উনি আস্কারা দিয়েই তো তাজওয়ারকে মাথায় তুলেছে। উনার জন্যই ওই তাজওয়ার খান আহির উপর অধিকার দেখানোর সাহস পাচ্ছে।”

লাবীব চুপ করে রইলো। আসলেই তারা বুঝতে পারছে না আহিকে কীভাবে এই ঝামেলা থেকে বের করে আনবে। অন্তত রিজওয়ান কবির আহির ইচ্ছের প্রাধান্য দিলে আহির জীবনটা আরো সুন্দর হতে পারতো।

(***)

ডেস্ক থেকে উঠে ফাইল নিয়ে সামনে এগুতেই থমকে দাঁড়ালো আফিফ। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে খানস গ্রুপের এমডি তাজওয়ার খান। আফিফ তাজওয়ারকে দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। তা দেখে তাজওয়ার উঁচু গলায় বলল,
“তোমার কি ম্যানার্স নেই? তোমার সামনে এমডি দাঁড়িয়ে আছে, আর তুমি সালাম করছো না? অদ্ভুত!”

আফিফ কাঁপা কন্ঠে বললো,
“সরি স্যার। আসসালামু আলাইকুম।”

তাজওয়ার আফিফের দিকে ঝুঁকে বলল,
“সরি, উত্তরে আমি তোমার শান্তি কামনা করবো না। আমার প্রিয় জিনিসের প্রতি নজর দেওয়া মানুষগুলোকে আমি সহজে ক্ষমা করি না। আর তুমি তো আমার হৃদয়টাই কেঁড়ে নিয়েছো।”

আফিফ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। তাজওয়ার বলল,
“আজকে থেকে তুমি আমার পিএ।”

আফিফ অবাক চোখে তাজওয়ারের দিকে তাকালো। তাজওয়ার সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“মিস্টার আফিফ রাফাত আজ থেকে আমার পিএ। বর্তমানে যিনি আছেন, তাকে অন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।”

আফিফ হতভম্ব হয়ে গেলো। সাধারণ কর্মচারী থেকে হুট করে এমন একটা পদ দিয়ে দেওয়া একমাত্র তাজওয়ারের পক্ষেই সম্ভব। তাজওয়ার সবাইকে আফিফের নতুন পরিচয় দিয়ে আফিফের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে চলে গেলো। এদিকে অফিসের সবাই আফিফকে শুভেচ্ছা দিচ্ছে। সবাই জানতে চায়ছে, কীভাবে সে স্যারকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে। কিন্তু আফিফের কাছে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। সে সোজা এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার সিদ্দিক আহমেদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“স্যার, এমডি স্যার আমাকে পিএ বানিয়ে দিলেন। আমার কাজটা কি?”

সিদ্দিক সাহেব ভ্রূ কুঁচকে আফিফের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“তাজওয়ার স্যারের পিএ তো দু’জন। একজন আমি নিজেই যে কোম্পানির কাজের তথ্য স্যারকে এনে দেই। আর সেক্টরের কাজগুলো দেখি। আমার পদ তো ঠিকই আছে। আরেকজন সোহাগ। ওকে হয়তো সরিয়েছে। ওর কাজ ছিল স্যারের সাথে থাকা। কাজের বাইরেও স্যারকে সময় দেওয়া। তার দ্বারা যে-কোনো কাজ করাতে পারতো স্যার। খুন কর‍তে বললেও ওটাও করতে বাধ্য ছিল। আর অফিসিয়াল কাজে আমার সাথে কথাবার্তা বলতে হতো। বলতে পারো অফিসে আসলে সে আমার এসিট্যান্ট। অফিসের বাইরে স্যারের বডিগার্ড।”

আফিফ চুপসে গেলো। চিন্তিত কন্ঠে বলল,
“আমি তো এসবে এক্সপেরিয়েন্সড নই।”

“ধীরে ধীরে শিখে ফেলবে। স্যালারি কতো শুনলে তোমার মাথা ঘুরে যাবো। তোমাকে বিশ হাজার টাকার জায়গায় মাসে সত্তর হাজার টাকা দেওয়া হবে। সোহাগ মাসে সত্তর হাজার টাকা পেতো। পাঁচ মাস পর স্যালারি বাড়িয়ে দেবে। আর এরপর তোমার কাজের উপর ডিপেন্ড করে স্যালারি বাড়াবে। স্যারকে সন্তুষ্ট করতে পারলে কোটি টাকার মালিক হতে পারবে। নয়তো স্যার পথে বসিয়ে দেবেন।”

আফিফ চুপ করে রইলো। সিদ্দিক সাহেব বললেন,
“এখন বাসায় যাও। তোমার সব কাগজপত্র রেডি করতেও সময় লাগবে। তোমার কেবিন কিন্তু পাশের রুমটা। আর তোমাকে গাড়ি আর একটা ফ্ল্যাট দেবে অফিস থেকে। আপতত বাসায় যাও। বাকীটা তোমাকে আমি ফোন করে জানাবো।”

আফিফ মাথা নেড়ে চলে গেলো। সে যে মারাত্মক বিপদে পড়েছে তা আর কেউ না বুঝলেও আফিফ ভালোভাবেই বুঝে গেছে। এই খবরটা কি খুশির না-কি দুঃখের সেটাই সে বুঝে উঠতে পারছে না।

(***)

ক্লান্ত শরীরে বাসায় ঢুকলো আফিফ। বাসায় ঢুকতেই পদ্মের চিন্তিত মুখ খানি দেখে ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“কিছু হয়েছে?”

পদ্ম আফিফের হাত ধরে বলল,
“বাসায় আসুন আগে। তারপর মায়ের রুমে যান।”

আফিফ তার অফিস ব্যাগ পদ্মের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সোজা মায়ের রুমে চলে গেলো। সেখানে গিয়েই স্তব্ধ হয়ে গেলো আফিফ। আফিফা বেগম খাটে পা তুলে মাথায় হাত দিয়ে কাঁদছেন। তার পাশে শুয়ে আছে রেনু। রেনুর মুখে কালসিটে দাগ পড়ে আছে। আফিফ দৌঁড়ে বোনের কাছে আসতেই রেনু কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,
“ভাইয়া উনি আমাকে খুব মেরেছেন। আমি আর ও বাড়িতে যাবো না। মাকে বলো, আমাকে যাতে জোর করে আর ও বাড়িতে না পাঠায়।”

আফিফ রেনুর হাত ধরে তাকে বসিয়ে দিয়ে বলল,
“তোকে যেতে হবে না ও বাড়িতে। আমিই তোকে যেতে দেবো না।”

কথাটি বলেই আফিফ রেনুর গালে হাত রাখতেই রেনু ব্যথায় চোখ-মুখ কুঁচকে বলল,
“ভাইয়া লোকটা নেশাখোর। সারাদিন মেয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর কতো বছর সংসার করবো আমি? আমি কি তোমাদের কাছে বোঝা?”

আফিফ ব্যস্ত হয়ে বলল,
“কখনো না। তুই কেন বোঝা হবি? তুই আমার দায়িত্ব।”

“তাহলে আমাকে আর যেতে দিও না। মা আমাকে বার-বার জোর করে ওই বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।”

আফিফ ভ্রূ কুঁচকে মায়ের দিকে তাকালো। আফিফা বেগম কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললেন,
“হ্যাঁ পাঠিয়ে দেই। আফিফের সংসার চালানোর মতো টাকা থাকতে হবে তো! তোর চারটা বাচ্চা পড়ালেখা করানোর মতো সামর্থ আছে তোর ভাইয়ের? তুই একা আসতে পারলে চলে আয়। আমি তো বলি নি মার খেতে।”

আফিফ মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তার মানে আগেও এমন হয়েছে? রেনুকে আগেও মেরেছিল?”

আফিফা বেগম মুখ ঘুরিয়ে বললেন,
“এতো বছরের সংসারের মাত্র সাত-আটবার।”

“কি বলছো মা এসব? সাত-আটবার! আর আমি এসব কিছুই জানি না?”

আফিফ পদ্মের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমিও তো আমাকে জানাও নি!”

আফিফা বেগম বললেন,
“আমি বারণ করেছিলাম জানাতে। তোকে বাড়তি চাপ দিতে চাই নি।”

আফিফ মাথায় হাত চেপে ধরলো। রেনু বলল,
“শুধু সাত-আটবার মার খেয়ে বাসায় এসেছি। আরো কতো বার মার খেয়ে সহ্য করেছি সেটা আমি ছাড়া কেউ জানে না। একটু উল্টো-পাল্টা হলেই তিনি চড়-থাপ্পড় মারেন। উনি গত সপ্তাহে উনার বন্ধুদের সামনে আমাকে লাথি মেরেছিলেন। আমি তো মাকে এটা জানায়ও নি। ছেলেটা আমার বড় হয়েছে। এসব দেখে দেখে ও বড় হচ্ছে।”

আফিফা বেগম বললেন,
“এতো কাঁদিস না তো। স্বামীরা বউকে মার‍তে পারে। মা-বাবার পরই তো তার স্থান। এসবে পুরুষ মানুষের অধিকার আছে।”

মায়ের কথা শুনে আফিফের এবার রাগ উঠে গেলো। সে রাগী স্বরে বলল,
“কি বুঝে বলছো এই কথা? এতো বছরের সংসারে আমি কি একবারো পদ্মের গায়ে হাত তুলেছি?”

আফিফ রেনুর হাত ধরে বলল,
“রেনু, তুই চিন্তা করিস না। আমি ওকে ছাড়বো না এবার। ওকে আমি জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো।”

আফিফা বেগম ব্যস্ত কন্ঠে বললেন,
“এ কথা বলিস না আফিফ। উনার সাথে ঝামেলা করে লাভ নেই। সুন্দরভাবে সমাধান করে ফেল। নিয়ে আয় রেনুকে। জামাই বাবার অনেক প্রভাব। উনার তো কিছুই হবে না। উলটো তোর ক্ষতি হবে। আমি আমার স্বামী হারিয়েছি। একটা মেয়ে হারিয়েছে। তোকে হারানোর মতো শক্তি নেই আমার।”

“তাহলে ওমন ছেলের সাথে রেনুর বিয়ে কেন দিয়েছিলে? আমার বোনটাকে পড়াশুনাটাও করতে দাও নি।”

“কি করবো আমি? চয়ন যেই কাজ করেছে এরপর তোর মনে হয় রেনুকে আর কেউ বিয়ে করতো? দুর্নাম রটিয়ে মরেছিল তোর বড় আপা। ছি! ছি! কতো মাস ভাত খেতে পারি নি আমি।”

আফিফের হাত মুঠো হয়ে গেলো। সে রেনুর দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“তুই আরাম কর। আমি তোকে আর ওই জাহান্নামে যেতে দেবো না। আমরা না খেয়ে থাকি। তাও তুই আমাদের সাথেই থাকবি। আমি তোকে যা খাওয়াতে পারি খাওয়াবো। আর বাচ্চাদের নিয়ে ভাবিস না। আমি ওদের নিয়ে আসবো। ওদের আমিই লেখাপড়া করবো।”

আফিফ এই কথা বলে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। পদ্মও আফিফের পিছু পিছু রুম থেকে বের হলো। এরপর সে আফিফকে গেটের কাছে যেতে দেখে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
“এই মাত্রই তো এলেন। আবার কোথায় যাচ্ছেন?”

“রেনুর সাথে বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে এসব। এর বিহিত তো করতেই হবে।”

“ওরা আপনাকে মেরে ফেললে?”

“মারবে না। আর প্রয়োজনে হলে আমি থানায় যাবো। আমার বোনকে কি ওদের মানুষ মনে হয় না?”

আফিফ হনহনিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো। পদ্ম চিন্তায় পড়ে গেলো। যদি আফিফের কোনো ক্ষতি হয়ে যায়? পদ্ম মনে মনে ভাবলো,
“আহির বাবা তো অনেক বড় মাপের মানুষ। আহি যদি উনাকে বলেন, তাহলে রেনুর সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে।”

পদ্ম এবার আহিকে কল করার জন্য ফোন হাতে নিলো।

এদিকে আহি সিঁড়ি বেয়ে নামতেই শুনতে পেলো মিসেস লাবণি ফোনে বলছে,
“তোর আগামী মাসে আক্দ, অথচ তুই একবারো তোর আপুকে জানালি না? আমার তো তোর সম্পর্কে এখন বাইরের মানুষ থেকে শুনতে হচ্ছে।”

আহিকে নিচে নামতে দেখে লাবণি এক গাল হেসে বলল,
“তোর প্রাক্তন বান্ধবীর সাথে কথা বলবি?”

লাবণি আবার হেসে বলল,
“জানিস ওরও এনগেজমেন্ট তাজওয়ার খানের সাথে।”

আহি শীতল দৃষ্টিতে মিসেস লাবণির দিকে তাকিয়ে রইলো। মিসেস লাবণি হুট করে উঠে আহির কানে ফোন দিয়ে বলল,
“যাও কথা বলো। শুভ কামনা দাও তোমার খালাকে।”

আহি কাঁপা কন্ঠে বললো,
“হাই, লিনু.. লিনাশা।”

ওপাশ থেকে কিছুই শোনা গেলো না। আহি ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো লিনাশা এখনো কল কাটেনি। আহি এবার ফোন কানের কাছে নিয়ে বলল,
“শুভকামনা নতুন জীবনের জন্য।”

লিনাশা ক্ষীণ কন্ঠে উত্তর দিলো, “থ্যাংকস।”

এইটুকু বলেই কল কেটে দিলো লিনাশা। আহি মলিন মুখে মিসেস লাবণির দিকে তাকিয়ে রইলো। লাবণি বাঁকা হেসে বলল,
“কি হলো, বেস্টু ইনভাইটও করলো না?”

আহি ফোনটা টেবিলে রেখে আবার নিজের রুমে চলে গেলো। এদিকে লিনাশা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার ওয়ালপেপারে আহির আঁকা আহি আর তার ছবিটা এখনো আছে। চার বছর ধরে এই একটা ওয়ালপেপার সে কখনোই পরিবর্তন করে নি। লিনাশার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। কাঁপা কন্ঠে বলল,
“আমি হয়তো একটু বেশিই করে ফেলেছিলাম তোর সাথে, আহি। কতোগুলো বছর চলে গেছে জীবন থেকে। কিন্তু তুই ছাড়া আজ পর্যন্ত বেস্ট ফ্রেন্ড কেউ হয় নি। আই লাভ ইউ আহি। আই মিস ইউ সো মাচ।”

অন্যদিকে আহি ঘরে এসে আলমারির চাবিটা হাতে নিলো। তার আলমারির চাবিটির সাথে সবসময় লিনাশার দেওয়া শেষ ফ্রেন্ডশিপ বেল্টটি বাঁধা থাকে। সে কখনোই সেই বেল্টটি খুলে রাখে নি৷ আহি বেল্টটি আলতো হাতে স্পর্শ করে বলল,
“এই সুতার বেল্ট যতোই মলিন হয়ে যাক, তোর স্মৃতি আর তুই সবসময় আমার জীবনে অক্ষত থাকবি। এই অভিশপ্ত আমিটা তো বন্ধু ডিজার্ভ করি না। কিন্তু যাদের পেয়েছি, তারা আমাকে অনেক সুন্দর মুহূর্ত দিয়েছে। ভাগ্যিস, আল্লাহ আমাকে এতো চমৎকার বন্ধু দিয়েছিল, নয়তো আমার আর কোনো অস্তিত্বই থাকতো না। লিনু, আই মিস ইউ এন্ড আই লাভ ইউ সো মাচ।”

(***)

ফোন বেজে উঠতেই আহি কলটা রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে পদ্ম উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো,
“একটা সাহায্য করবি?”

“হুম, বল!”

পদ্ম আহিকে রেনুর ব্যাপারে সবটাই জানালো। সব শুনে আহি বলল,
“রেনুর স্বামীর নাম কি? কি করে?”

“উনার নাম নিয়াজী তালুকদার। যখন বিয়ে হচ্ছিল, তখন রয়েল গ্রুপের ম্যানেজার ছিল। এখন নিজের বিজনেস দাঁড় করিয়েছে। কোম্পানির নামটা মনে নেই৷ কিন্তু ওই যে একটা রেস্টুরেন্ট আছে না, টুইস্ট প্যালেস। ওইটা উনার।”

আহি চমকে উঠে বলল,
“রিয়েলি? টুইস্ট প্যালেসের মালিকের সাথে তাজওয়ারের বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বাবা তো প্রায়ই বিজনেস মিটিং ওখানেই করে।”

পদ্ম বলল,
“এই বিষয়ে কি আংকেল সাহায্য করতে পারবেন?”

আহি মিনমিনিয়ে বলল,
“সব বিজনেসম্যান একই গোয়ালের গরু।”

পদ্ম ভ্রূ কুঁচকে বললো, “কিছু বলেছিস!”

“হ্যাঁ, বললাম সব গুলো এমনই। আচ্ছা, আমি দেখছি। আমাকে একটু সময় দিস।”

পদ্ম বলল,
“তোর গলা ভারী হয়ে আছে, মনে হচ্ছে। মন খারাপ?”

“না।”

“মিথ্যে বলছিস কেন?”

“মিথ্যে বলছি না। ঠান্ডা লেগেছে, হয়তো এজন্য গলা ভারী লাগছে।”

“উহুম, আহি। তুই যতোই কথা ঘুরিয়ে ফেল, ধরা কিন্তু খাবিই। লিনাশা ছাড়া কি কখনো আমাদেরও বন্ধু ভেবেছিস!”

“ভাবি তো। তোরা সবাই আমার বন্ধু।”

“তাহলে বল, কি হয়েছে?”

“শুনলাম লিনাশার না-কি আক্দ। আসলে মিস করছিলাম ওকে। একটু আগে কথা হয়েছে ফোনে। কয়েক বছর পর ওর কন্ঠ শুনলাম। তাই একটু মন খারাপ ছিল।”

পদ্ম বলল,
‘লিনু তো আমাদের বলেই নি। অবশ্য এই কয়েক দিন আমিও ওকে মেসেজ দেই নি। মেয়েটাকে মেসেজ না দিলে, নিজ থেকে কথায় বলবে না।”

আহি মলিন হাসলো। আর মনে মনে বলল,
“আমার জন্যই তো এমন করছে। আমি যদি পুষ্প আর পদ্মের কমন ফ্রেন্ড না হতাম, তাহলে লিনাশা সবার সাথেই যোগাযোগ রাখতো। আমি তো ওর বন্ধুগুলোও কেঁড়ে নিয়েছি। শাপগ্রস্ত মানুষ আমি!”

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here